২০১৭-১৮ অর্থবছরে আসছে ৪ লাখ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট
  2017-05-28 19:01:37  cri
আসছে জুনে আগামী অর্থবছর অর্থাৎ ২০১৭-১৮ সালের জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। এরই মধ্যে অর্থমন্ত্রী আভাস দিয়েছেন এবারের বাজেটের আকার হবে ৪ লাখ কোটি টাকার বেশি। আর বার্ষিক উন্নয়ন বাজেট হবে ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার বেশি। অর্থমন্ত্রী যথারীতি তার বাজেটকে উচ্চাভিলাসী বলেছেন। তবে বরাবরের মতোই বলেছেন বাস্তবায়নযোগ্য।

অর্থমন্ত্রীর বাজেট পেশের আগে বিগত কিছু দিন ধরে সম্ভাব্য বাজেট নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। বাজেট আকার, এডিপি বাস্তবায়নের সক্ষমতা, ভ্যাট হার কমানো, ভ্যাটের ভিন্ন ভিন্ন হার চালু, সম্পূরক শুল্ক বহাল রাখাসহ নানা বিষয় উঠে আসছে বিশেষজ্ঞদের আলোচনায়। বাজেটে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন মহল তুলে ধরছেন নিজেদের দাবি দাওয়া।

প্রথমেই আলোচনায় এসেছে বাজেট ও এডিপির আকার। অর্থমন্ত্রীর বড় আকার বাজেট নিয়ে বরাবরের মতো আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা না বাড়িয়ে আকার বাড়ানোটা কোনো কাজের কথা নয়। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক হাসান মনসুর বলেন, ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন বাজেট প্রয়োজনের তুলনায় ছোট, কিন্তু বাস্তবায়ন সক্ষমতার তুলনায় অনেক বড়।

এ বিষয়ে ২২ মে রাজধানীতে এক আলোচনায় উঠে এসেছে সরকারে অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের ধীরগতির বিষয়টি। সরকারের বৃহত্তম প্রকল্প পদ্মা সেতুর জন্য চলতি বাজেটে বরাদ্দ ছিল ৬ হাজার ২৬ কোটি টাকা। কিন্তু প্রথম ৮ মাসে ব্যয় হয়েছে ২ হাজার কোটি টাকারও কম। সরকারের বাস্তবায়ন পরীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম ৮ মাসে অগ্রাধিকারমূলক ৮টি প্রকল্পের বাস্তবায়নের সার্বিক অগ্রগতি মাত্র ২৯.৮ শতাংশ।

হতাশাব্যঞ্জক এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য বাজেটে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনায় দুটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীকে প্রতিদিনের অগ্রগতি অবহিত করার ব্যবস্থা এবং বাস্তবায়ন তদারকির জন্য একটি শক্তিশালী টিম গঠনের জন্য পরামর্শ তাদের।

ভ্যাট আইন ২০১২'র বাস্তবায়নই এবারের প্রাক-বাজেট আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। প্রাক-বাজেট আলোচনায় এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের নানা দাবি-দাওয়া উঠে আসছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় দাবিটি হচ্ছে পণ্য ভেদে ভ্যাটের বহুমুখী হার ধার্য করা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সবার জন্য একই ভ্যাট হার না রেখে তামাকজাত ও বিলাসবহুল পণ্যের জন্য উচ্চ ভ্যাট হার এবং নিত্যপণ্য ও ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য নিম্ন ভ্যাট হার আরোপ করা যেতে পারে।

কিন্তু পণ্যভেদে ভ্যাট হার কমালে তা রাজস্ব আয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা সরকারের নীতি নির্ধারকদের। তাই একই ভ্যাট হার রেখে তা কমানোর আভাস পাওয়া যায় সরকারের তরফে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ ব্যবসায়ীদের এ দাবির প্রতি সমর্থন জানান। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিন সবার উপরে একই ভ্যাট আরোপের পক্ষে মত দিয়েছেন। ২৭ মে বেসরকারি থিঙ্কট্যাঙ্ক সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ এক প্রতিবেদনে ভ্যাট হার ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১২ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে।

একই দিন সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ আও ২ বছর সরকারের সহায়তা দাবি করেছে। আগামী বাজেটে বিদ্যমান শূণ্য দশমিক ৭ শতাংশ উৎসে কর প্রত্যাহার, করপোরেট ট্যাক্স ২০ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা, ৫ শতাংশ নগদ প্রণোদনা চান পোশাকশিল্প মালিকরা। আর পুঁজি বাজারকে চাঙ্গা করতে তিন বছর ট্যাক্স হলিডে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যবসায়ীরা।

তবে আগে ভ্যাট হার কমানোর আভাস দিলেও তা কমছে না বলে ২৭ মে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। আগামী মাসে পেশ করতে যাওয়া বাজেটে ব্যবসায়ীদের অন্য দাবিদাওয়া আর বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অর্থমন্ত্রী কতটা রাখেন তাই এখন দেখার বিষয়।

ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040