ইতালিতে জি সেভেন গোষ্ঠীর শীর্ষসম্মেলন শুরু
  2017-05-27 14:37:42  cri
মে ২৭: গতকাল (শুক্রবার) ইতালির সিসিলি দ্বীপের তাওর্মিনায় জি সেভেন গোষ্ঠীর শীর্ষসম্মেলন উদ্বোধন করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইতালি, কানাডা ও জাপানসহ ৭টি দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। দু'দিনব্যাপী সম্মেলনে নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসদমন, আর্থিক পরিবেশ ও সমাজের টেকসই উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছেন অংশগ্রহণকারীরা।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী পাওলো গেনতিলোনি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, এবারের শীর্ষসম্মেলন সন্ত্রাসদমন, অভিবাসী, জলবায়ু ও বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ইস্যুতে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।

তিনি বলেন,

'এ শীর্ষসম্মেলন সফল হবে বলে আশা করি। সবাই জানে এটি সহজ ব্যাপার নয়। তাওর্মিনার সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সুন্দর প্রকৃতি এতে সহায়ক হবে বলে আশা করি। আন্তর্জাতিক সমাজ ও জনগণের ব্যাপক মনোযোগী প্রশ্নের উত্তর দেবো আমরা। সর্বপ্রথম সন্ত্রাসদমন ও নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন, অভিবাসী ও শরণার্থী ইস্যু এবং কর্মসংস্থান ও অর্থনীতি সমৃদ্ধের সঙ্গে জড়িত বাণিজ্যিক ইস্যু ইত্যাদি।'

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাকখোঁ এবং ইতালির প্রধানমন্ত্রী পাওলো গেনতিলোনি প্রথমবারের মতো জি সেভেন শীর্ষসম্মেলনে অংশ নিয়েছেন। সদস্যদেশগুলোর সরকার নির্বাচনের পর সংশ্লিষ্ট নীতিমালা ও অবস্থানও পরিবর্তন হয়েছে। তাই শীর্ষসম্মেলনে সফলতা ও মতৈক্য সহজ ব্যাপার নয়। এ সম্পর্কে ইউরোপীয় পরিষদের চেয়ারম্যান ডোনাল্দ তুস্ক বলেন, গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন জি সেভেন শীর্ষসম্মেলন এটি।

'আজ উপস্থিত নেতাদের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ভিন্ন অবস্থান রয়েছে। যেমন জলবায়ু পরিবর্তন ও বাণিজ্যিক ইস্যু, এটি কোনো গোপন বিষয় নয়। বিভিন্ন আলোচ্যবিষয়ে জি সেভেনের সদস্যদেশের একতা বজায় রাখা ইইউ'র অন্যতম কার্যক্রম।'

শীর্ষসম্মেলনের আগে ব্রিটেনের ম্যানচেস্টারে গুরুতর সন্ত্রাসী হামলা ঘটে। ফলে তাওর্মিনা শহরে কারফিউ বলবৎ করা হয়েছে। অন্যদিকে সন্ত্রাসদমন ও নিরাপত্তার ইস্যুতেও আলোচনা করা হয়েছে। সম্মেলনে সন্ত্রাসদমন ও নিরাপত্তার তথ্য বিনিময় ও সহযোগিতা, সন্ত্রাসী সংস্থার অর্থের উত্স বন্ধ করা, ইন্টারনেট সেবার কোম্পানি ও সোশাল মিডিয়ার সন্ত্রাসবাদ জড়িত বিষয়ের সম্প্রচার নিয়ন্ত্রণ করাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একমত হয়েছে জি সেভেনের সদস্যদেশ, বিভিন্ন পক্ষের যৌথ বিবৃতিও স্বাক্ষরিত হয়েছে।

শুক্রবার সম্মেলন নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী গেনতিলোনি। আলোচনার প্রক্রিয়া স্বাধীন ও উন্মুক্ত এবং অনেক ইতিবাচক মতৈক্য ও সাফল্য অর্জিত হয়েছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে মতভেদ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্যান্য ছয়টি দেশের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দৃঢ় অবস্থা প্রতিফলিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র আগামী কয়েক দিন বা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

'জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্যারিস চুক্তি নিয়ে মতৈক্য হয়নি। এ সম্পর্কে মার্কিন প্রেসিডেন্টের আরো বেশি বিবেচনা করা প্রয়োজন। অন্যান্য দশ পুরোপুরি 'প্যারিস চুক্তি'কে সমর্থন দেবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। কারণ, এ বিষয়টি সবার ভবিষ্যতের সঙ্গে জড়িত। সম্পূর্ণ বিবেচনার পর যুক্তরাষ্ট্রও এ চুক্তিতে অংশ নেবে বলে বিশ্বাস করি আমরা। যাতে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। '

ইতালির সিসিলি দ্বীপ আফ্রিকার অভিবাসী ও শরণার্থীদের পুনর্বাসন এলাকার অন্যতম। শীর্ষসম্মেলনের আগের দিন লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে শরণার্থী বহনকারী একটি নৌকা ডুবে যায়। এ ঘটনায় ৩১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। মানবিক সংকটের কারণে কিছু দেশে ব্যাপক শরণার্থী প্রবেশ করায় অর্থনৈতিক চাপ ও সামাজিক সমস্যা দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, শীর্ষসম্মেলনের চূড়ান্ত দলিলের খসড়ায় শরণার্থী ও অভিবাসীদের অধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সীমান্ত এলাকার নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছে। বিভিন্ন দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের মান অনুযায়ী শরণার্থী গ্রহণের সংখ্যাও স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়।

(সুবর্ণা/তৌহিদ)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040