চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার বেশি খাওয়ার বিপদ
  2017-05-28 19:23:52  cri

আমরা সবাই সুস্থ জীবন ও তারুণ্য চাই। এমন কোনো কৌশল আছে কি, যা অবলম্বন করলে চিরকাল তারুণ্য ধরে রাখ যায়? এ প্রশ্নের উত্তরে বলতে হয়, দীর্ঘকাল তারুণ্য ধরে রাখার জন্য অনেক কৌশল আছে; কিন্তু চিরকাল তা ধরে রাখা যায় না। অন্তত এখনও তেমন কোনো কৌশল আবিষ্কৃত হয়নি।

অনেকে বলেন, সুস্থ থাকাই বড় কথা। আসলেই তাই। যতদিন বাঁচি, সুস্থভাবে বাঁচি। সুস্থ থাকলে দীর্ঘায়ু হবার সম্ভাবনাও বাড়ে। আর সুস্থ থাকতে চাই নিয়মিত এমন খাবার খাওয়া যাতে শরীরের সকল পুষ্টিচাহিদা পূরণ হয়। পাশাপাশি চাই শরীরচর্চা এবং সুস্থ চিন্তা। আজকাল অবশ্য জলবায়ু পরিবর্তনের কুফল পড়ছে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যের ওপরও। তাই আমাদের খাদ্য নির্বাচনের ক্ষেত্রেও সাবধান হতে হবে।

বলছিলাম সুষম খাদ্যের কথা। সুস্থ থাকার জন্য সুষম খাদ্যের বিকল্প নেই। সুষম খাদ্য কী? যে খাদ্যে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি-উপাদান মজুত থাকে, তাকে সুষম খাদ্য বলে। চিকিত্সকরা বলেন, সব ধরনের খাবার খাওয়া উচিত। বিশেষ করে বিভিন্ন রঙের ফল ও শাক-শবজি খাওয়া উচিত। আবার কোনো খাবারই অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়। ইংরেজিতে একটা কথা আছে যার বাংলা করলে দাঁড়াবে: অতিরিক্ত সবকিছুই খারাপ।

তো, খাদ্যগ্রহণের ক্ষেত্রেও আমাদের পরিমিতিবোধের পরিচয় দিতে হবে। খাদ্য বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও সাবধান হতে হবে। খাদ্যতালিকায় বৈচিত্র্য থাকতে হবে। আবার কোনো খাবারই খুব বেশি খাওয়া ঠিক নয়। এমন হতে পারে যে, কোনো একটা বিশেষ খাবার আপনার খুব পছন্দ। কিন্তু সেটা খুব বেশি বেশি খাওয়া ঠিক হবে না। তবে, কিছু কিছু খাবার আছে, যা বেশি খেলে বেশি ক্ষতি হয়। উদাহরণস্বরূপ, চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা বেশি বেশি চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়ার বিপদ সম্পর্কে আলোচনা করবো।

চিনির মিষ্টি স্বাদ অনেকেরই পছন্দ। জরিপে দেখা গেছে পাঁচটি স্বাদের মধ্যে নোনতা স্বাদ মানুষের বেশি প্রিয়। তবে, চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার পছন্দ করেন এমন মানুষের সংখ্যা বিপুল। বিশেষ করে শিশুরা মিষ্টিজাতীয় খাবার বেশি পছন্দ করে। আসলে শরীরের শক্তির জন্য মিষ্টিজাতীয় খাবার গুরুত্বপূর্ণ। শরীরের এনার্জির ৭০ শতাংশই আসে চিনি বা সুগার থেকে।

চিনির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। মুখের টক বা তিক্ত স্বাদ দূর করতেও চিনির তুলনা নাই। যারা ফুসফুসের সমস্যা বা কাশিতে আক্রান্ত, তারা অল্প পরিমাণ চিনি খেলে উপকার পাবেন। নেশা কাটানোর জন্যও চিনি উপকারি। হাইপোগ্লাইসিমিয়া রোগীদের জন্য চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার জীবনরক্ষাকারী। কিন্তু, সাধারণভাবে চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার বেশি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। আসুন, চিনি সম্পর্কে চিকিত্সকদের পরামর্শগুলো জেনে নিই।

পরামর্শ ১: প্রতিদিন ৫ চামচের বেশি চিনি খাবেন না

খাদ্যতালিকায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে চিনি থাকে। অনেক ধরনের চীনা ও বাঙালি ডিশ রান্নার সময় মিষ্টি সস ব্যবহার করা হয়। আবার মাংসের তরকারিতেও অনেক সময় চিনি দেওয়া হয়। তাই আলাদা করে চিনি খাওয়ার দরকার আমাদের নেই। যদি খেতেই হয়, সর্বোচ্চ ৫ চা-চামচ পরিমাণ চিনি যথেষ্ট। এর বেশি চিনি খাবেন না।

পরামর্শ ২: মুটিয়ে যাওয়া এড়াতে চিনি কম খান

আমরা অনেক সময় চা বা কফিতে অতিরিক্ত চিনি খাই। কেউ কেউ মিষ্টি স্যুপে অতিরিক্ত চিনি যোগ করেন। এ ধরনের অভ্যাস পরিত্যাগ করাই ভালো। চিনি শরীরে প্রবেশ করে গ্লুকোজে রূপান্তরিত হয়। এই গ্লুকোজ শরীরে চর্বিও সৃষ্টি করতে পারে। এক গ্রাম চিনিতে ক্যালরি থাকে প্রায় ৪ সিএএল। শরীর সহজে চিনি গ্রহণও করে। তাই বেশি চিনি খেলে মুটিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সুতরাং, চিনি কম খাবেন।

পরামর্শ ৩: ডায়াবিটিসের রোগীরা মিষ্টিজাতীয় খাবার কম খান

অনেকে একটা ভুল তথ্য জানেন। তারা জানেন যে, চিনি খেলে ডায়াবিটিস হয়। আসলে এটা ভুল তথ্য। চিনি খেলে ডায়াবিটিস হয় না। বরং যারা ইতোমধ্যেই এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের চিনি খাওয়া বলতে গেলে নিষেধ। ডায়াবিটিস হলে রক্তে সুগারের পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই, এ রোগে আক্রান্তদের চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার গ্রহণে অতি অবলম্বন করতে হয়।

পরামর্শ ৪: ক্যান্সার থেকে বাঁচতে চিনি কম খান

এই কথা শুনে অনেকে অবাক হতে পারেন। চিনির সাথে ক্যান্সারের সম্পর্ক কী? হ্যাঁ, চিনি এক ধরণের আম্লিক খাবার। চিনি বেশি খেলে শরীরের অ্যাসিডভিত্তিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। আর অতিরিক্ত অ্যাসিড মানুষের রোগ-প্রতিরোধক ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। পাশাপাশি এ ধরনের মানুষের শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাবও দেখা দিতে পারে। তাই চিনি খাওয়ার ব্যাপারে সাবধান হোন। অতিরিক্ত চিনি আপনার শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে।

পরামর্শ ৫: দাঁত বাঁচাতে চিনি কম খান

অনেক বাবা-মা সন্তানদের বলেন, বেশি চিনি খেলে দাঁত নষ্ট হবে। কথাটা আসলে একদিক দিয়ে ঠিক। দাঁত নষ্ট হয় মুখের ব্যাকটেরিয়ার কারণে। আর চিনি বেশি খেলে মুখে বেশি ব্যাকটেরিয়ার জন্ম হয়। তাই দেখা যায়, যেসব বাচ্চা অতিরিক্ত চকোলেট খায়, তাদের দাঁত ক্ষয়ে যায়। সুতরাং, বেশি চিনি খাওয়া থেকে আপনার শিশুকেও দূরে রাখুন।

পরামর্শ ৬: কৌষ্ঠকাঠিণ্য থেকে বাঁচতে চিনি কম খান

আগেই বলেছি চিনি এক ধরণের অ্যাসিডজাতীয় খাবার। বেশি খেলে পেটের ওপর চাপ পড়ে। যেসব রোগী পেটের পীড়ায় ভুগছেন, তাদের চিনি কম খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। চিনি বেশি খেলে তাদের কৌষ্ঠকাঠিণ্য হতে পারে।

(ওয়াং হাইমান/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040