গতকাল (বৃহস্পতিবার) ন্যাটোর সদর দফতর ব্রাসেলসে 'ন্যাটোর শীর্ষসম্মেলন ২০১৭' অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের পর ন্যাটোর মহাসচিব ইয়েন্স স্টোলটেনবার্গ বলেন, ইসলামিক স্টেট বা আইএস দমনে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে গঠিত আন্তর্জাতিক জোটে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেবে ন্যাটো। তবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ বড় কথা নয় বলে উল্লেখ করেছে ন্যাটো। তিনি আরো বলেন, সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দায়িত্ব নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সদস্য দেশ বার্ষিক পরিকল্পনা তৈরির বিষয়ে একমত হয়েছে। এদিন ন্যাটোর শীর্ষসম্মেলনে প্রথমবারের মতো অংশ নেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি অনুরোধ জানান, যাদের সামরিক ব্যয় পর্যাপ্ত নয়, তাদের ব্যয় বাড়ানো জরুরি। আজকের সংবাদ পর্যালোচনায় আমরা এ বিষয় নিয়েই আলোচনা করবো।
এবারের শীর্ষসম্মেলন বিকেল আড়াইটা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলে। সম্মেলনের উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো যুক্তরাষ্ট্রের '১১ সেপ্টেম্বর' সন্ত্রাসী হামলা এবং ন্যাটোর পঞ্চম বিধি চালু। এই পঞ্চম নিয়ম-বিধির বিষয়টি হলো, ন্যাটোর সদস্য দেশগুলোর এক বা বহু দেশ সন্ত্রাসী হামলায় শিকার হলে, সব সদস্য দেশের ওপর হামলা চালানো হয়েছে বলে মনে করা হয়। সব সদস্য দেশ ওই হামলার শিকার দেশকে সহায়তা দেবে। '১১ সেপ্টেম্বর' সন্ত্রাসী হামলার পর ন্যাটো এই পঞ্চম বিধি শুরু করেছিল। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, এবারের শীর্ষসম্মেলনে ন্যাটোর এই পঞ্চম নিয়ম বিধি সমর্থনের কথা স্পষ্টভাবে বলেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি শুধু আরেকবার সামরিক ব্যয় বহনের বিষয়টি তুলে ধরেছেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন
'গুরুত্বপূর্ণ নিরাপদ সমস্যার প্রেক্ষাপটে আমি সরাসরি ন্যাটোর মহাসচিব ও মিত্র দেশগুলোকে বলতে চাই, ন্যাটোর সদস্য দেশগুলোর উচিত নিজেদের যথাযথ অবদান রাখা। ২৮টি সদস্য দেশের মধ্যে ২৩টি দেশ এখনো তাদের আনুষঙ্গিক সামরিক ব্যয় বহন করেনি। এটি ন্যায্য নয়'।
আসলে ন্যাটোর সামরিক ব্যয় ইস্যুতে ট্রাম্প তার অবস্থান আরেকবার ঘোষণা করেছেন। একে 'পুরানো সংস্থা' আখ্যায়িত করে ন্যাটোর নিন্দা জানিয়ে ট্রাম্প সদস্য দেশগুলোর প্রতি সামরিক ব্যয় বহনের অনুরোধ জানান। ২০১৪ সালে ব্রিটেনের ওয়েলস শীর্ষসম্মেলনে আগামী ১০ বছরে সামরিক ব্যয় বাড়ানোর বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছেছে ন্যাটোর সদস্য দেশগুলো। ২০২৪ সালে বিভিন্ন সদস্য দেশের সামরিক ব্যয়ের পরিমাণ নিজ দেশের জিডিপি'র ২ শতাংশ হবে। তবে এ পর্যন্ত, শুধু যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, এস্তোনিয়া, পোল্যান্ড ও গ্রিস এ মানদণ্ডে পৌঁছেছে।
শীর্ষসম্মেলনের পর অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে ন্যটোর মহাসচিব বলেন, ইতোমধ্যে সামরিক খাতে ব্যয় বহনে বিভিন্ন সদস্য দেশ অগ্রগতি অর্জন করেছে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন,
'আজ আমরা রাষ্ট্রীয় বার্ষিক পরিকল্পনা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ২০১৪ সালে সামরিক ব্যয় খাতে আমাদের প্রতিশ্রুতি কীভাবে বাস্তবায়িত হবে তা আমাদের বিবেচনা করা উচিত। রাষ্ট্রীয় বার্ষিক পরিকল্পনায় সামরিক ব্যয়, সামরিক সামর্থ্য প্রতিষ্ঠা এবং ন্যাটোর অভিযানে অবদান রাখা, এ তিনটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হবে'।
সন্ত্রাসদমন জোরদার করা হচ্ছে এবারের শীর্ষসম্মেলনের আরেকটি মূল বিষয়। ন্যাটো মহাসচিব বলেন, এক্ষেত্রে ন্যাটোর অভিযান পরিকল্পনায় একমত হয়েছেন সদস্য দেশের নেতারা। তিনি বলেন, আফগানিস্তান ও ইরাকে প্রশিক্ষণের পর আন্তর্জাতিক জোটে সমর্থন দেবে ন্যাটো। এ সম্পর্কে তিনি বলেন,
'আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক জোটে ন্যাটোর অংশগ্রহণে আমি সম্মত। অংশগ্রহণের অর্থ শুধু যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা নয়, বরং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এ জোটের দৃঢ় ইচ্ছার প্রতিফলন।
(ওয়াং হাইমান/তৌহিদ)