সুর ও বাণী: সিঙ্গাপুরের কণ্ঠশিল্পীদের গান
  2017-05-23 11:57:53  cri

প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আপনারা চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান শুনছেন। আমি আনন্দী বেইজিং থেকে আপনাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আজকের 'সুর ও বাণী' আসরে আপনাদের শোনাবো সিঙ্গাপুরের কয়েকজন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পীর চীনা ভাষার গান।

সিঙ্গাপুরের জনসংখ্যা ৫৫ লাখ ৩০ হাজার, যার ৭৪.২ শতাংশই হচ্ছেন চীনা। সিঙ্গাপুরি চীনাদের পূর্বপুরুষদের অধিকাংশই দক্ষিণ চীন থেকে সেখানে গিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে আবার চীনের ফু চিয়াং, কুয়াং তোং ও হাই নান প্রদেশের মানুষ বেশি। সিঙ্গাপুর সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের দেশ। এখানে বিভিন্ন জাতির মানুষের বাস। তাদের মুখের ভাষা ভিন্ন, কিন্তু একের জন্য অপরের সম্মানবোধ টনটনে।

বন্ধুরা, এখন শুনছেন সিঙ্গাপুরের সুপরিচিত গায়িকা চেন চিয়ে ই'র গান। এ গায়িকা অনেকের কাছে সিঙ্গাপুরের 'জাতীয় সম্পদ' নামে পরিচিত। তার যে গানটি শুনছেন সেটির শিরোনাম 'তোমার শুভ কামনা'।

চেন চিয়ে ই

চেন চিয়ে ই ১৯৭২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৩ সালে তার প্রথম অ্যালবাম বাজারে আসে। ১৯৯৪ সালে তিনি তাইওয়ানের সংগীতমহলে প্রবেশ করেন। ১৯৯৭ সালে তিনি হংকংয়ের বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী চাং শুয়ে ইয়োর  প্রশংসাধন্য হয়ে হংকংয়ের হোংখান স্টেডিয়ামে মঞ্চায়িত গীতিনাট্য 'শুয়ে লাং হ্রদ'-এর প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে তিনি হুনান প্রদেশের টেলিভিশনে 'আমি গায়ক' শীর্ষক গানের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এ অনুষ্ঠানে তার চমত্কার পরিবেশনা চীনা দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এই প্রতিযোগিতায় তিনি পুরস্কার না-পেলেও, ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান। ২০১৭ সালে তিনি ২৪তম প্রাচ্য সংগীত উত্সবে 'সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে জনপ্রিয় গায়ক পুরস্কার' এবং 'বার্ষিক শ্রেষ্ঠ গায়ক পুরস্কার' পান। বন্ধুরা, এবার শুনুন চেন চিয়ে ই এবং হংকংয়ের গায়ক সু ইয়ো খাংয়ের দ্বৈতকণ্ঠে 'সঠিকভাবে ভালোবাসা' শীর্ষক গানটি।

উনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে তত্কালীন চীন অভ্যন্তরীণ ও বাইরের নানা কঠিন চাপে ছিল। চীনা জনগণ যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ ও দারিদ্র্যের কষাঘাতে ছিল জর্জরিত। তখন অনেকে বাধ্য হয়ে জন্মস্থান ত্যাগ করেন। কেউ কেউ জাহাজে করে সমুদ্র পার হয়ে তত্কালীন 'শি ল্য' তথা বর্তমান 'সিঙ্গাপুরে' চলে যান। তখন সিঙ্গাপুর বন্দর সার্বিকভাবে উন্মুক্ত ছিল বিধায় চীনের অনেক বাণিজ্যিক জাহাজ সেখানে যেত। ১৮২১ সালের মধ্যে দেশটিতে চীনাদের সংখ্যা কয়েক ডজন থেকে বেড়ে ১২০০-তে দাঁড়ায়।

বন্ধুরা, এবার শুনুন সিঙ্গাপুরের গায়ক লিন জুন চিয়ের গাওয়া 'দক্ষিণ চীন' গানটি।

লিন জুন চিয়ে

লিন জুন চিয়ে ১৯৮১ সালে সিঙ্গাপুরের এক সংগীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা-মার নির্দেশনায় তিনি ৪ বছর বয়স থেকে ক্লাসিক্যাল পিয়ানো বাজাতে শেখেন। তিনি সাধারণত খুব চুপচাপ স্বভাবের। ১৯৯৬ সালে এক গানের প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার পর তিনি এ পর্যন্ত মোট কয়েক শতাধিক গান লিখেছেন। তিনি নিজেও একজন জনপ্রিয় গায়ক হয়েছেন। ২০১৪ সালে তিনি তাইওয়ানের গোল্ডেন মেলোডি অ্যাওয়ার্ডসের শ্রেষ্ঠ গায়কের পুরস্কার পান। তিনি হলেন চীনা ভাষার পপ সংগীত জগতের এক গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার অর্জনকারী প্রথম সিঙ্গাপুরি গায়ক। বন্ধুরা, শুনুন লিন জুন চিয়ে ও চীনের মূল ভূভাগের গায়িকা চিন শা'র দ্বৈতকণ্ঠে 'গ্রীষ্মের বাতাস' শীর্ষক গানটি।

গত শতাব্দীর আশি ও নব্বই'র দশকে সিঙ্গাপুরের পপ সংগীত চীনের মূল ভূভাগের মানুষকে নাড়া দিত। তখন আমি নিজেও সিঙ্গাপুরের বেশ কয়েকটি টেলিভিশন নাটক দেখতে খুব পছন্দ করতাম। সে নাটকগুলোর গল্প ও গান এখনো আমার মনে আছে।

সুন ইয়ান জি

সিঙ্গাপুরের কণ্ঠশিল্পীদের পরিচয় দিতে গিয়ে সুন ইয়ান জির নাম ভুলে যাওয়া হবে অন্যায়। তিনি পাঁচ বছর বয়স থেকে পিয়ানো বাজাতে শেখেন, দশ বছর বয়সে মঞ্চে উঠে গান পরিবেশন করেন, এবং ১৮ বছর বয়সে তার প্রথম গান 'সামওয়ান'  লেখেন। ২০০০ সালে তার প্রথম অ্যালবাম 'ইয়ান জি' বাজারে আসার পর তিনি চীনা ভাষার সবচেয়ে খ্যাতনামা সিঙ্গাপুরি গায়িকা হিসেবে আবির্ভূত হন। তিনি 'অন্ধকার' শীর্ষক গান গেয়ে তাইওয়ানের দ্বাদশ গোল্ডেন মেলোডি অ্যাওয়ার্ডসের শ্রেষ্ঠ নতুন শিল্পী পুরস্কার লাভ করেন। সু ইয়ান জি দেখতে সাধারণ আর দশটা মেয়ের মতো। কিন্তু গায়িকা হিসেবে তিনি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। বন্ধুরা, এবার শুনুন সুন ইয়ান জির গাওয়া 'থাকলেও দেখা হবে না' গানটি।

আদু

আদু সিঙ্গাপুরের আরেকজন জনপ্রিয় গায়ক। তিনি সামান্য কর্কশ কণ্ঠে অনেক প্রেমের গান গেয়েছেন। গায়ক হওয়ার আগে তিনি একটি নির্মাণ খাতের কর্মীদলের প্রধান ছিলেন। একদিন তিনি তার বন্ধুর সঙ্গে একটি গানের প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। আকস্মিকভাবে তার কন্ঠ বিচারকদের পছন্দ হয়ে যায় এবং তিনি একটি গানের কোম্পানির তালিকাভুক্ত গায়কে পরিণত হন। প্রথম অ্যালবাম থেকেই তিনি চীনা সংগীতমহলের নতুন প্রজন্মের প্রেমের গানের রাজায় পরিণত হন। বন্ধুরা, শুনুন আদুর গাওয়া 'সে নিঃসন্দেহে তোমাকে খুব ভালোবাসে' শীর্ষক গান।

ছাই চিয়ান ইয়া

ছাই চিয়ান ইয়া সম্ভবত তাইওয়ানের গোল্ডেন মেলোডি অ্যাওয়ার্ডসের সবচেয়ে বেশি পুরস্কার অর্জনকারী সিঙ্গাপুরের কণ্ঠশিল্পী। ১৯৯৮ সালে তিনি তাইওয়ানের সংগীতজগতে প্রবেশ করেন এবং তাইওয়ানের সংগীতমহলের সমর্থন লাভ করেন। তিনি গান গাওয়ার পাশাপাশি অনেক শিল্পীর জন্য গান লিখেছেনও। ২০০৮ সালে তার অ্যালবাম 'মাই স্পেস' শ্রেষ্ঠ অ্যালবাম প্রযোজক এবং শ্রেষ্ঠ চীনা ভাষার গায়িকা পুরস্কার পায়। এরপর তিনি তিনবার তাইওয়ানের গোল্ডেন মেলোডি অ্যাওয়ার্ডসের শ্রেষ্ঠ চীনা ভাষার গায়িকা পুরস্কার পেয়েছেন। ছাই চিয়ান ইয়া টানা বিশ বছর ধরে সিঙ্গাপুরে জনপ্রিয়। বন্ধুরা, শুনুন ছাই ইয়ান ইয়ার গাওয়া 'শূন্যস্থান' গানটি।

বন্ধুরা, এতোক্ষণ আপনারা সিঙ্গাপুরের কয়েকজন কণ্ঠশিল্পীর গান শুনলেন। আজকের 'সুর ও বাণী' আসর এ পর্যন্তই। অনুষ্ঠানটি শোনার জন্য ধন্যবাদ। সবাই ভালো থাকুন। আবার কথা হবে। (ইয়ু/আলিম)


© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040