চীন 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের প্রস্তাব করেছে তিন বছর। অবকাঠামোসহ বিভিন্ন খাতে বাস্তব সহযোগিতা নতুন পর্যায়ে উঠেছে। সম্মেলনে চীনা পরিবহনমন্ত্রী লি সিয়াও ফেং বলেন, অবকাঠামোর সংযুক্তি 'এক অঞ্চল, এক পথ' সহযোগিতার ভিত্তি হিসেবে সংশ্লিষ্ট দেশ ও আঞ্চলিক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। এ সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, 'এশিয়া ও ইউরোপে করিডোর নির্মাণের গতি আরো দ্রুত হচ্ছে। প্যান এশিয়া রেলওয়ে নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে। আঞ্চলিক সড়ক নির্মাণ ইতিবাচকভাবে উন্নত হচ্ছে। সমুদ্র ও বিমান পরিবহন দ্রুত উন্নত হচ্ছে। জ্বালানিসম্পদ খাতে সহযোগিতা সার্বিকভাবে উন্নত হচ্ছে। বিদ্যুত্, তেল ও গ্যাস, পারমাণবিক বিদ্যুত খাতের সহযোগিতা সফল হয়েছে। আন্তঃদেশীয় স্থল কেবল, সামুদ্রিক কেবল এবং তেল ও গ্যাস পাইপলাইন অব্যাহতভাবে বাড়ছে।'
অবকাঠামো সংযুক্ত হওয়ায় বিভিন্ন দেশের জনকল্যাণ হচ্ছে, তাই নয়, বরং বিভিন্ন দেশকে সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা মোকাবিলার জন্য নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করছে। ইন্দোনেশিয়ার সরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান-বিষয়ক মন্ত্রী রানি সোয়েমার্নো এ সম্পর্কে বলেন, 'অবকাঠামো সংযুক্তি খুবই জরুরি। এর মাধ্যমে সমাজ ও অর্থনীতির ভারসাম্য জোরদার করা যায়। আরো সুবিধাজনক ও কার্যকর অবকাঠামো আমাদের ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান ও কৃষি খাতকে দ্রুত উন্নত করবে। আমরা বিশ্বাস করি, রেলওয়ে ও সড়ক নির্মাণ আর্থিক বৃদ্ধি জোরদার করবে।'
ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রতিনিধি কারেন এল্লেমান বলেন, 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ ডেনমার্কসহ এ অঞ্চলের দেশগুলোর টেকসই উন্নয়নের সুযোগ দেবে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'এক অঞ্চল, এক পথ উদ্যোগের বিরাট সুযোগ রয়েছে। সারা বিশ্বের একশ' কোটি মানুষ এর সঙ্গে জড়িত। ডেনমার্ক চীনের অবকাঠামোসহ বিভিন্ন প্রস্তাবকে সমর্থন দেয়। কারণ এর মাধ্যমে এশিয়া ও ইউরোপ সংযুক্ত হবে। এ অঞ্চলের টেকসই উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।'
কারেন আরো বলেন, ডেনমার্কের পরিবহন ও জ্বালানি সম্পদ খাতে অগ্রসর প্রযুক্তি রয়েছে। ডেনমার্কের অনেক প্রতিষ্ঠান এশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা চালাচ্ছে। তিনি মনে করেন, 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের মাধ্যমে ডেনমার্ক চীনের সঙ্গে ভালোভাবে অংশীদারি সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।
সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী ও হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা কমিশনের এশিয়াবিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের পরিচালক ম্যাট ফাটিঙ্গার বলেন, মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো যেকোনো সময়ে 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগে অংশ নিতে পারবে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'অবকাঠামোর সংযুক্তি জোরদার হলো, 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, উচ্চ মানদণ্ড ও অবকাঠামো উন্নয়নে অর্থনীতি উন্নত হবে। তাই যুক্তরাষ্ট্র এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে জন্য চীনসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সহযোগিতা চালাতে চায়।'
উজবেকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী রুস্তম আজিমোভ মনে করেন, 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের প্রধান কাজ হলো আধুনিক পরিবহন অবকাঠামো নির্মাণ। এর ফরে ব্যাপক পণ্য, সেবা, অর্থবিনিয়োগ হবে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে চীন মধ্যএশিয়া ও রাশিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত হবে। চীন, কিরগিজস্তান ও উজবেকিস্তানের মধ্যে রেলওয়ে নির্মাণ করা উচিত। পরিবহনের মাধ্যমে পাকিস্তান ও ইরানের ভারত মহাসাগরের বন্দরগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত হবে। এর মাধ্যমে এসব দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন হবে এবং আঞ্চলিক ও বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতা জোরদার হবে।'
তিনি আরো বলেন, এ ছাড়া জ্বালানি সম্পদ ও তথ্য যোগাযোগ জোরদার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান চীনের সঙ্গে মধ্যএশিয়ার প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইন ৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করেছে। তিনি আশা করেন, ভবিষ্যতে আরো জ্বালানি সম্পদ প্রকল্প 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগে অন্তর্ভুক্ত হবে।
উল্লেখ্য এবারের সম্মেলনের প্রাসঙ্গিক বিষয় হলো, 'পারস্পরিক পরিবহন ও যোগাযোগ সংযুক্ত ও যৌথ সমৃদ্ধি বাস্তবায়ন'। সম্মেলনে পরিবহন, জ্বালানি সম্পদ ও তথ্য যোগাযোগ খাতে অবকাঠামো প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে ও সংশ্লিষ্ট চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।