'এক অঞ্চল, এক পথ' সংলগ্ন দেশের শিক্ষার্থীদের ভাষা প্রশিক্ষণে সিনচিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়
  2017-06-10 18:45:39  cri

 


বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠানে চীনের সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ নিয়ে কিছু তথ্য তুলে ধরবো।

আপনারা যে গানটি শুনছেন তা গেয়েছেন ২০১৬ সালের 'চীনা ভাষার সেতু' প্রতিযোগিতার বিজয়ী ব্রিটিশ শিক্ষার্থী সামু গ্রিগস। তিনি উইগুর সম্প্রদায়ের জাতীয় পোশাক পড়ে গানটি গেয়েছেন। গানটির নাম 'চমত্কার সিনচিয়াং'। সামু সিনচিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক বিনিময় একাডেমির মাস্টার্সের শিক্ষার্থী।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন ও মধ্য এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ চ্যানেল ও রেশমপথ অর্থনৈতিক এলাকার কেন্দ্রীয় অঞ্চল হিসেবে সিনচিয়াং ব্যাপক বিদেশি শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করেছে। এসব শিক্ষার্থীরা সামুর মতো চীনে চীনা ভাষা ও চীনা সংস্কৃতি নিয়ে লেখাপড়া করছেন।

চীনের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিদেশি শিক্ষার্থীদের চীনা ভাষা প্রশিক্ষণ দেওয়া সিনচিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বিনিময় কর্মকাণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক বিনিময় একাডেমির উপ-প্রধান ইয়াং হুং চিয়ান বলেন,

'গত বছরের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত আমাদের একাডেমিতে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭৪০ জন, তারা বিশ্বের ৩০টি দেশ ও অঞ্চল থেকে এসেছেন। এদের মধ্যে রাশিয়া ও মধ্য-এশিয়ার ৫টি দেশের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৯০ শতাংশেরও বেশি। এখানে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য চীনা ভাষার ওপর অনার্স, মাস্টার্স ও বিশেষ ভাষা প্রশিক্ষণ কোর্স অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অনার্স ও ভাষা প্রশিক্ষণ কোর্সের শিক্ষার্থীরা প্রধানত চীনা ভাষা পড়া, শোনা, বলা ও লেখাসহ বিভিন্ন ক্লাসে অংশ নেন। এছাড়া, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য কাগজ কাটা, গান গাওয়া, চীনা ক্যালিগ্রাফি ও বাদ্যযন্ত্র গুচেং বাজানোর ক্লাস চালু করেছি আমরা'।

সিনচিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক বিনিময় একাডেমি ২০০৮ সালের জানুয়ারি মাসে প্রতিষ্ঠিত হয়। এ একাডেমি বিদেশি শিক্ষার্থীদের চীনা ভাষা প্রশিক্ষণের দায়িত্ব পালন করে থাকে। ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এ বিশ্ববিদ্যালয় মোট ৪৩৫৩ জন বিদেশি শিক্ষার্থীকে চীনা ভাষা প্রশিক্ষণ দিয়েছে।

নিয়মিতভাবে চীনা ভাষা প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বিদেশি শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক জীবনযাপনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। চমত্কার জীবনযাপনের মধ্য দিয়ে দেশ বিদেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমঝোতা ও আদান-প্রদান জোরদার হবে বলে আশা করেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এভাবে পারস্পরিক ইতিহাস ও সংস্কৃতি ভালভাবে বুঝতে পারা এবং পারস্পরিক শ্রেষ্ঠ অভিজ্ঞতা বিনিময় করা সম্ভব।

এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাউন্সিলর মারিজিয়া আলিম বলেন,

'প্রতি মাসে লেখাপড়া, প্রতিযোগিতা, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। যেমন হস্তলিপি ও চীনা অক্ষর প্রতিযোগিতা এসব অনুষ্ঠানের একটি। তাছাড়া প্রতি বছরের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান বিদেশি শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক উত্সব। প্রতি বছর কমপক্ষে ৫-৬টি দেশের শিক্ষার্থীরা এসব অনুষ্ঠানে অংশ নেন। অনুষ্ঠানে তারা নিজ নিজ দেশের বৈশিষ্ট্যময় খাবার, সংস্কৃতি ও জাতীয় পোশাক তুলে ধরেন। তারা নিজ নিজ দেশের সুস্বাদু খাবার রান্না করেন এবং দর্শকদের বিনা পয়সায় তা পরিবেশন করেন। বিভিন্ন দেশের বিখ্যাত ও জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানের ছবি দিয়ে প্রদর্শনী বোর্ড তৈরি করা হয়, যা দর্শকদের ভীষণভাবে আকৃষ্ট করে।'

আফগানিস্তানের শিক্ষার্থী নাসির সিনচিয়াংয়ে ৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে চীনা ভাষা শিখছেন। সিনচিয়াংয়ের বহুবর্ণের সংস্কৃতি ও সুষম পরিবেশ ভীষণ পছন্দ করেন তিনি। নাসির বলেন,

'অনেক আগে আমার বাবা চীনে ব্যবসা করতেন। তিনি এখানকার বৈশিষ্ট্যময় সংস্কৃতি ও চীনা বন্ধুদের পছন্দ করতেন। তখন থেকে আমাকে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে গড়ে তোলার কথা চিন্তা করেন তিনি। এজন্য চীনা ভাষা আমার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি চীনের হস্তশিল্প দারুণ পছন্দ করি। সিনচিয়াংয়ে অনেক দেখার বিষয় আছে। এখানকার পরিবেশ দারুণ সুন্দর, তা ছাড়া এটি বেশ নিরাপদ একটি জায়গা, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।'

আফগানিস্তান থেকে আসা তাবাসসুম বেশ ভালো চীনা ভাষা বলতে পারেন। তার পরিকল্পনা তিনি স্নাতক হওয়ার পর দেশে ফিরে গিয়ে চীনা ভাষা প্রশিক্ষণ দেবেন এবং স্থানীয় নাগরিকদের চীনকে জানানোর চেষ্টা চালাবেন। তাবাসসুম বলেন,

'আমি খুব সম্ভবত দেশে ফিরে যাবো, সেখানে চীনা ভাষার শিক্ষক হবো। আমি চীনের দর্শন, ইতিহাস ও ঐতিহ্যিক সাহিত্য সম্পর্কে জানতে চাই। এরপর আমি আমার দেশে শিক্ষার্থীদের কাছে চীন সম্পর্কে আরো বেশি তথ্য তুলে ধরতে পারবো এবং তাদের আরো বেশি চীনের ইতিহাস জানাতে পারবো'।

বর্তমানে সিনচিয়াংয়ের বৈদেশিক আন্তর্জাতিক শিক্ষা বিনিময় সুষ্ঠুভাবে চলছে। আঞ্চলিক শিক্ষার উন্নয়ন ও রেশমপথ সংলগ্ন দেশের সাথে যোগাযোগ জোরদার নিয়ে সিনচিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বিনিময় ও সহযোগিতা বিভাগের পরিচালক হাইরিগুল নিয়াজ বলেন,

'সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আন্তর্জাতিক বিনিময় ও সহযোগিতায় অনেক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে উরুমুচিতে চীন ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয় প্রধানদের ফোরাম আয়োজিত হয়। 'এক অঞ্চল, এক পথ' সংলগ্ন ৭টি দেশের ৫১টি বিশ্ববিদ্যালয় এ ফোরামে অংশ নেয়। তার মাধ্যমে একটি উন্মুক্ত ও আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা হয়েছে, যাতে দেশ বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয় তথ্য ও সম্পদ বিনিময় করতে পারে।'

চীন-মধ্য এশিয়া দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সহযোগিতামূলক কাঠামোতে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বিনিময়সহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ সহযোগিতা চালু করেছে। গত বছর সিনচিয়াং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাশিয়া ও কাজাখস্তানে ১২০ জন শিক্ষার্থী পাঠানো হয়েছে। এ সম্পর্কে নিয়াজ বলেন,

'ফোরামের পর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণার সহযোগিতা ও শিক্ষার্থীদের বিনিময়সহ বিভিন্ন খাতে অনেক অগ্রগতি অর্জন করেছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত রাশিয়া, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান ও তাজিকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সহযোগিতা করে আমাদের শিক্ষার্থীদের বিদেশে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তারা এক সেমিস্টার বা এক বছরের মতো বিদেশে লেখাপড়া করে। এ উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের মধ্য এশিয়ার সংশ্লিষ্ট দেশ সম্পর্কে জানতে অনেক সহায়ক ও গুরুত্বপূর্ণ'।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সহযোগিতা গভীরতর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চীনা ভাষা ও ঐতিহ্যিক সংস্কৃতির প্রভাবও দিন দিন বাড়ছে। কয়েকটি দেশ চীনা ভাষার প্রশিক্ষণ দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করেছে এবং চীনা ভাষা শেখার লোকসংখ্যাও অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে রেশমপথ সংলগ্ন দেশগুলো। ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত, কিরগিজস্তানের বিশকেক বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউট ও রাশিয়ার নোভোসিবিরস্ক রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ক্লাসরুমে নিবন্ধিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪০ হাজার ৮৮০ জন। এ সম্পর্কে নিয়াজ বলেন,

'কিরগিজস্তানের বিশকেক ও জালালাবাদ এবং রাশিয়ার নোভোসিবিরস্কে তিনটি কনফুসিয়াস ক্লাসরুম রয়েছে। তা আমাদের বিদেশের সাথে যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। আগামী ৫ বছরের মধ্যে আরো দুই বা তিনটি কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা করবো আমরা। চীনা ভাষার দক্ষ ব্যক্তি প্রশিক্ষণ করার পাশাপাশি চীনা ভাষার প্রভাব সম্প্রসারণ করা হবে এবং চীনের সংস্কৃতিও ব্যাপকভাবে প্রচার করা হবে। এসব কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউট আমাদের দক্ষ জনশক্তি বিনিময়ের প্ল্যাটফর্মে পরিণত হবে।'(সুবর্ণা/টুটুল/আনন্দী)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040