প্রসঙ্গ: চীন-মিয়ানমার তেল ও গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্প
  2017-05-15 09:49:21  cri

বন্ধুরা, 'চীন-মিয়ানমার তেল ও গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্প' বাস্তবায়নকাজ শেষ হয়েছে এবং সম্প্রতি এ লাইন আনুষ্ঠানিকভাবে চালুও হয়। এ প্রকল্প মিয়ানমারের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে এবং জ্বালানি সরবরাহের ক্ষেত্রে দেশটির সামর্থ্য বাড়াবে। অথচ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের আগে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। কেউ কেউ বলেছিলেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আবার কেউ কেউ অভিযোগ তুলেছিলেন এই বলে যে, এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে মিয়ানমারের কোনো লাভ হবে না।

এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের সমস্যা হচ্ছে, এর সাথে অনেক গ্রাম ও থানা এলাকা জড়িয়ে পড়ে। তাই স্থানীয়দের সমর্থন ছাড়া এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা অসম্ভব। স্থাপিত পাইপের নিরাপত্তাও নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট গ্রামবাসীর দৃষ্টিভঙ্গির ওপর। তারা যদি পাইপের নিরাপত্তা দিতে আগ্রহী না-হয়, তবে স্থাপিত পাইপের নিরাপত্তাবিধান করা সত্যিই কঠিন। আর এ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরুর আগে স্থানীয়রা সাধারণভাবে বিরোধিতা করছিলেন। কারণ, তারা প্রকল্পের সুবিধা উপলব্ধি করতে পারছিলেন না। এ সম্পর্কে প্রকল্পের মানদালেই ব্যবস্থাপনাকেন্দ্রের কর্মকর্তা ওয়াং কুয়াং হুই বলেন, "পাইপ নির্মাণের পাশাপাশি এলাকার গাছপালা, জলাভূমি ও ভূমির সুরক্ষায় ব্যবস্থা গ্রহণ করি আমরা। স্থানীয় পরিবেশ সুরক্ষায় আমাদের প্রচেষ্টা ছিল আন্তরিক। এ ছাড়াও, ডিজাইন, উপকরণ, নির্মাণকাজের ক্ষেত্রেও আমরা বিশ্বমান বজায় রাখার চেষ্টা করেছি।"

সংশ্লিষ্টরা স্থানীয় নাগরিকদেরকে বোঝাতে সক্ষম হয় যে, পাইপলাইন নির্মাণের ফলে পরিবেশের কোনো ক্ষতি তো হবেই না, বরং স্থানীয় অর্থনীতি উপকৃত হবে। চীন-মিয়ানমার তেল ও গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী 'দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া পাইপ কোম্পানি' স্থানীয়দের বোঝাতে যথেষ্ট কাজও করে। কোম্পানিটি স্থানীয় নাগরিকদের জীবনমান উন্নয়নের ওপরও গুরুত্ব দেয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ব্যাপক সংখ্যায় স্থানীয় নাগরিক নিয়োগ করা হয়। এ সম্পর্কে ওয়াং কুয়াং হুই বলেন, আমরা প্রকল্প বাস্তবায়নস্থলে প্রচুর জনকল্যাণমূলক কাজ করেছি, যেমন: স্কুল, হাসপাতাল নির্মাণে সহায়তা দিয়েছি। আসলে প্রকল্পটির মাধ্যমে স্থানীয়রা উপকৃত হয়েছেন। তাঁরা কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছেন। এ ছাড়াও, আমরা জনকল্যাণমূক কাজেও অবদান রেখেছি।"

পরিসংখ্যান অনুসারে, পাইপটির নির্মাণকাজ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত কোম্পানিটি স্থানীয় জনগণের জন্য শিক্ষা, চিকিত্সা, পানিসম্পদ, বিদ্যুত, তথ্য যোগাযোগ ও সড়কসহ বিভিন্ন গণকল্যাণমূলক প্রকল্পে প্রায় ২.৫ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে। নুং চিও টাউনশিপ থানার থা পান তাইং গ্রামে একটি স্কুল আছে। স্কুলের মোট ৩৭০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৭৪ জন একক পিতা বা মাতার সন্তান বা পুরোপুরি অনাথ। ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সময়কালে কোম্পানিটি স্কুলটির জন্য একটি ভবন, গ্রন্থাগার ও সড়ক নির্মাণ করে দিয়েছে। স্কুলটির অধ্যক্ষ ডক্টর বাদানদা পানইয়ার লিন কার ইয়া বলেন, আমাদের গ্রন্থাগারে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী বই পড়তে পারে। এখানে ৫৫০০টিরও বেশি বই রয়েছে। গ্রন্থাগারটি অত্র থানার শ্রেষ্ঠ দশটি গ্রন্থাগারের একটি। নতুন ভবনও শিক্ষার্থীদের জন্য সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ যুগিয়েছে। এ ছাড়া, এখানে শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আমরা চীনের সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞ।"

চীন-মিয়ানমার তেল ও গ্যাস পাইপলাইন 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের আওতায় গৃহীত একটি প্রকল্প। এ প্রকল্প 'বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডোর'-এর জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। নুং চিও টাউনশিপ থানার শিক্ষা ব্যুরোর দায়িত্বশীল কর্মকর্তা উ কিয়াউ লার বলেন, প্রকল্পটির ফলে স্থানীয় নাগরিকদের জীবনমান আরও উন্নত হবে। স্থানীয় সমাজ ও অর্থনীতিরও সার্বিক উন্নতি ঘটবে। আমি আশা করি, দু'দেশের মৈত্রী সম্পর্কও আরও উন্নত হবে।" (ছাই)


1  2  3  
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040