মে ১৪: চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেছেন, তার দেশ অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে না বা চীনা বৈশিষ্ট্যের সমাজব্যবস্থাও রফতানি করবে না। তিনি আজ (রোববার) রাজধানীতে আয়োজিত 'এক অঞ্চল, এক পথ' আন্তর্জাতিক সহযোগিতা শীর্ষফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ প্রতিশ্রুতি দেন।
শীর্ষফোরামের মূল ভাষণে তিনি 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগকে শান্তি, সমৃদ্ধি, উন্মুক্ততা, ও উদ্ভাবনের স্বার্থে বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়ে বলেন, চীন শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচ নীতির ভিত্তিতে এ উদ্যোগে অংশগ্রহণকারী সকল দেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতার সম্পর্ক চায়। চীন 'ভূ-রাজনৈতিক খেলা' পরিহার করে ও স্থিতিশীলতা-পরিপন্থি ক্ষুদ্র গোষ্ঠী গঠন না-করে, সম্প্রীতিমূলক সহাবস্থানের নীতিতে বিশ্বাসী একটি 'বড় পরিবার' গড়ে তুলতে আগ্রহী।
প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেন, প্রাচীন রেশমপথ হাজার হাজার মাইল দূর পর্যন্ত বিস্তৃত এবং হাজার বছর সক্রিয় ছিল। শান্তিপূর্ণ সহযোগিতা, উন্মুক্ততা ও সহনশীলতা, পরস্পরের কাছ থেকে শিক্ষাগ্রহণ, ও পারস্পরিক কল্যাণ ছিল প্রাচীন রেশমপথের চেতনা। এটা মানবসভ্যতার মূল্যবান সম্পদ।
শান্তি, উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনার ঘাটতিকে গোটা মানবজাতির 'মূল চ্যালেঞ্জ' আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, 'এক অঞ্চল, এক পথ' প্রস্তাব উত্থাপিত হবার পর বিগত চার বছরে চীনের সাথে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ গভীরতর হয়েছে, সুস্থ বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নতি ঘটেছে, আর্থিক খাতে সহযোগিতা সম্প্রসারিত হয়েছে, এবং মানবিক যোগাযোগ বেড়েছে। ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত চীনের সাথে 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগসংশ্লিষ্ট দেশগুলোর বাণিজ্যের মোট পরিমাণ ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যায়। এ সময়কালে চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে প্রায় ১১০ কোটি মার্কিন ডলার কর দিয়েছে এবং ১ লাখ ৮০ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। এ থেকে প্রমাণিত হয়, 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ যুগের চাহিদা, উন্নয়নের সূত্র, ও বিভিন্ন দেশের স্বার্থের সাথে সংগতিপূর্ণ। এ উদ্যোগের ভবিষ্যতও উজ্জ্বল।
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং
ভাষণে সি চিন পিং 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ বাস্তবায়নে বেশকিছু ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণাও দেন। তিনি জানান, চীন রেশমপথ তহবিলে ১০০ বিলিয়ন ইউয়ান রেনমিনপি যোগান দেবে এবং আর্থিক সংস্থাগুলোকে রেনমিনপির বিদেশি তহবিল গঠনে উত্সাহ দেবে। তিনি আরও জানান, চীনের জাতীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও চীনের আমদানি-রফতানি ব্যাংক যথাক্রমে ২৫০ বিলিয়ন ও ১৩০ বিলিয়ন ইউয়ান সমমূল্যের বিশেষ ঋণ দেবে, যা দিয়ে 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের আওতায় অবকাঠামো নির্মাণ, সক্ষমতা বৃদ্ধি, ও আর্থিক খাতে সহযোগিতা করা হবে। তা ছাড়া, চীন সক্রিয়ভাবে 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগসংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সাথে 'অবাধ বাণিজ্য জাল' প্রতিষ্ঠা করবে; 'এক অঞ্চল, এক পথ' বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে; বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং সংস্কৃতি ক্ষেত্রে বিনিময় বাড়াবে; যৌথ-পরীক্ষাগার প্রতিষ্ঠা করবে; বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিল্প এলাকা গড়ে তুলতে সহযোগিতা করবে; এবং প্রযুক্তি বিনিময় করবে। আগামী তিন বছরে চীন 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগে অংশগ্রহণকারী উন্নয়নশীল দেশগুলো ও সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে ৬০ বিলিয়ন ইউয়ান সহায়তা দেবে, যা জীবিকা উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যয় হবে।
উল্লেখ্য, এবারের শীর্ষফোরামের প্রতিপাদ্য হচ্ছে: "আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার, যৌথভাবে 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ বাস্তবায়ন, অভিন্ন কল্যাণ ও উন্নয়ন অর্জন"। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেহিসসহ ২৯টি দেশের শীর্ষনেতৃবৃন্দ, ৭০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক সংস্থার দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও প্রতিনিধি, এবং শতাধিক দেশের রাজনীতি ও বাণিজ্য মহলের প্রতিনিধিরা ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। (আনন্দী/আলিম)