20170507yinyue.mp3
|
প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আপনারা চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান শুনছেন। আমি আনন্দী বেইজিং থেকে আপনাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আজকের 'সুর ও বাণী' আসরে চীনের নবীন গীতিকার ও সঙ্গীত প্রযোজক লিউ ছিনের সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেবো।
লিউ ছিন
বন্ধুরা, এখন আপনারা শুনছেন 'তুমি তাড়াতাড়ি ফিরে আসো' নামের গান। ১৯৯৯ সালে গীতিকার লিউ ছিন কণ্ঠশিল্পী সু নানের বাস্তব প্রেমের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এ গান লিখেছেন। গানে বলা হয়েছে, 'তুমি না থাকলে এ পৃথিবীতে আমি একটি ধাপও এগিয়ে যেতে পারি না। অন্ধকার রাতে আমি তাড়াতাড়ি ভোর আসার প্রার্থনা করি। কেবল তুমি আমাকে উষ্ণতা দিতে পারো। আমার মনের ভিতরে চিত্কার করে তোমাকে ডাকছি। তুমি তাড়াতাড়ি ফিরে আসো। তুমি না থাকলে আমি একা এ সব বিষয় বহন করতে পারি না। তুমি তাড়াতাড়ি ফিরে আসো, আমার জীবন কেবল তোমার জন্য উজ্জ্বল হতে পারে।' এ গানটি এ দু'জনের প্রতিনিধিত্ব কর্মে পরিণত হয়েছে এবং 'চোখ বন্ধ হবে না' নামে টিভি নাটকের সমাপ্তী গান হয়েছে।
লিউ ছিন ১৯৭৫ সালে চিয়াংসু প্রদেশের নান চিংয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সংগীত ইনস্টিটিউটের শিক্ষক বলে পিয়ানো, চেলো, বেহালা আর সুষির যন্ত্র সবই বাজাতে পারেন। লিউ ছিন চার বছর বয়সে শাস্ত্রীয় পিয়ানো বাজাতে শেখেন। ৯ বছর বয়সে তিনি চীনের শিশু পিয়ানো বাদক হিসেবে জাপানে গিয়ে পিয়ানো প্রতিযোগিতায় অংশ নেন এবং প্রথম পুরস্কার পান। তখন থেকেই সংগীত তার জীবনে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত হয়ে পড়ে।
বন্ধুরা, শুনুন হো লুর গাওয়া 'তাকে পড়তে দাও' নামের গান। লিউ ছিন এ গানের কথা লিখেছেন এবং সুর করেছেন। গানটি হলো টিভি নাটক 'অভিজাত পরিবারের গল্প' এর সমাপ্তী গান। গানে বলা হয়েছে, 'সে আতশবাজির মতো উজ্জ্বল নয়। পাখির মতো যাযাবর হতে পারে না। সে আকাশে উড়ন্ত ঘুড়ির মতো, সে ঘুড়ির সুতা সবসময় তোমার হাতে। যদি তুমি তাকে পড়তে দাও, সে অসীম স্বাধীনতা পাবে। যদি তুমি সাগর হও, সে নৌকার মতো তোমার মনে থাকবে।'
ছোট বেলা থেকে লিউ ছিন ক্লাসিক সংগীত সাগরে ডুবে ছিলেন। কিন্তু বড় হওয়ার পর তিনি কিছু নতুন বিষয় সৃষ্টি করতে চান। তার কৌতুহল প্রচুর। তিনি ক্লাসিক সংগীত ছেড়ে পপ সংগীত সৃষ্টির পথে অনেক দূরে চলে যান। তাইওয়ানের বিখ্যাত সংগীত প্রযোজক লি চোং শেং লিউ ছিনের প্রতিভার বড় প্রশংসা করেন এবং হংকংয়ের রক রেকর্ডস কোম্পানির সঙ্গে গীতিকার হওয়ার স্বাক্ষর করেন। তখন কেউ ভাবেন নি, অল্প বয়সী লিউ ছিন অন্য জনের জন্য গান লেখার পাশাপাশি নিজেও একজন গায়িকা হয়েছেন।
লিউ ছিন
বন্ধুরা, এখন শুনুন লিউ ছিনের নিজের কণ্ঠে গাওয়া 'আমি খুব ভালো' নামের গান। এ গান হলো টিভি নাটক 'সংগ্রাম' এর থিম সং। গানে লিউ ছিন লিখেছেন, 'তুমি থাকলে শীতকালে প্রায়শই তুষার পড়তো। কিন্তু আমার কখনো শীত লাগতো না। বসন্তকাল এসেছে, ফুল ফুটেছে, তবে তুমি চলে গেছো। আমি এখানে থেকে কোথাও যাবো না। আমি তোমাকে ভালোবাসি। চিরকালে তোমার সঙ্গে থাকতে চাই। তবে তুমি বিশ্বের অন্য দিকে আছো। আমি কীভাবে তোমাকে জানাবো?'
কেউ লিউ ছিনকে জিজ্ঞেস করলে সংগীত সৃষ্টির কারণটা কি? তিনি সবসময় একই উত্তর দেন। তিনি বলেন, 'গানের জন্য জন্ম হওয়া, স্বাধীনতার জন্য গান গাই।' এ কথা হলো তার জীবনের ক্ষুদ্র চিত্র।
ওয়েবসাইট থেকে লিউ ছিন সম্পর্কে খুব কম তথ্য পাই। তিনি চুপচাপ নিজের মতো গান লিখেন। তবে তার মনে সমৃদ্ধ আবেগ আছে। অন্য শিল্পীর সংগীতের ওপর তার স্পষ্ট পর্যালোচনা আছে। তিনি কখনো অস্পষ্ট কথা বলেন না। এটাই তার জীবনের ধারা।
বন্ধুরা, এবার শুনুন 'তোমাকে আমার দরকার' নামের গান। গেয়েছেন মান ওয়েন জুন। এ গান ছিল টিভি নাটক 'কী দিয়ে তোমাকে উদ্ধার করবো, আমার প্রেমিকা' এর গান। গানের কথা এমন, 'প্রতি বার আমি চেষ্টা করি যে, তোমাকে বলি, আমার সঙ্গে থেকো। তোমাকে আমার দরকার। তোমাকে ভালোবাসি, এটা আমার জীবনের তাত্পর্য। তুমি যেতে পারো না। তোমাকে বিদায় করার পর রাতে তারা থাকলেও তা সুন্দর ও রোমান্টিক নয়।'
১৯৯৮ সালে লিউ ছিন 'অনুগ্রহ' নামে নিজের অ্যালবাম মুক্ত করেন। এ অ্যালবাম সংগীত মহলে অত্যন্ত ভালো মূল্যায়ন পেয়েছে। তিনি ১৯৯৯ সালে গোল্ডেন মেলোডি অ্যাওয়ার্ডসের 'সেরা নতুন শিল্পী' পুরস্কার পেয়েছেন। তার সংগীতের মোহিনীশক্তি শ্রোতাদের মধ্যে ছড়িয়ে যায়। তবে তার ভক্তরা কেবল তার শ্রুতিমধুর গান শুনতে পারেন, তার পটভূমি তেমন জানতে পারেন না। কারণ তথ্যমাধ্যমে তার খবর খুব কম।
২০০৮ সালের এপ্রিলে চেচিয়াং টিভি, ড্রাগন টিভি আর কুইচৌ টিভি একসাথে 'আমাদের যৌবন কোথায় রাখা যায়' নামে টিভি নাটক সম্প্রচার করেছে। লিউ ছিন এ টিভি নাটকের সব সুর করেছেন। শুনুন প্রধান অভিনেতা তোং দা ওয়েইর গাওয়া একই নামে গান।
লিউ ছিনের এক ছোট ভাই আছে। তারা দু'জন একসাথে সংগীত শিখতেন। ১৩ বছর বয়সে লিউ ছিন সমবয়সী বন্ধুদের সঙ্গে একটি ব্যান্ড গঠন করেছেন। তিনি মদের দোকানে কিছু দিন গান পরিবেশন করেন। বড় হওয়ার পর তিনি প্রেমিক ও ছোট ভাইয়ের সঙ্গে সংগীত গবেষণা করতেন এবং তার মনে সংগীত বিশ্বের জানালা আরো বড় করে খুলেছে। তাইওয়ানের পপ সংগীত লিউ ছিনের সংগীত পথে বড় প্রভাব ফেলে। তিনি তাইওয়ানের কণ্ঠশিল্পী চাও ছুয়ান , সিন সিয়াও ছি আর লিন ই লিয়ানের গান বিশেষ করে পছন্দ করেন। তিনি তাদের গান শোনার পাশাপাশি তাইওয়ান ও হংকংয়ের শিল্পীদের জন্য অনেক গানও লিখেছেন। এখন তিনি বেইজিংয়ে থাকেন। তিনি আশা করেন, একদিন তাইওয়ানে গিয়ে সেখানকার ভক্তদের সঙ্গে দেখা করবেন।
বন্ধুরা, এবার শুনুন লিউ ছিন আর লো চোং শুইর গাওয়া 'আমি এখানে আছি' নামের গান। লিউ ছিন এ গান লিখেছেন। তিনি লিখেছেন, 'যখন আমি ঘুম থেকে জেগে উঠি, সূর্যালোক রুমের ভিতরে ঢুকে। সূর্যালোকের উষ্ণতা দেখে তোমার প্রেম আমার মনে পড়ে। তোমার মুখের ভাব সবসময় শান্ত। বিশ্বাস করো, যে কোনো সময়, যে কোনো স্থানে, আমাদের মন একসাথে। আমি চিরস্থায়ীভাবে এখানে তোমার সঙ্গী হবো। যদি তুমি চাও, আমি সবকিছু ত্যাগ করতে পারি। আমি সবসময় এখানে আছি। এ হাসি ও সূর্যালোক ভরা স্থানে তোমার সঙ্গে আছি আমি।'
লিউ ছিন মনে করেন, সংগীত সৃষ্টি করা এক আনন্দের কাজ। তিনি সংগীত থেকে অনেক কিছু শিখতে পারেন। এখন তার ছোট ভাই তার সঙ্গে সংগীত মহলে থাকেন না। তিনি এক হটপট রেস্তোরাঁ খুলেছেন। লিউ ছিন বলেন, 'এটা জীবন। হয়তো তিনি হটপট রেস্তোরাঁর মালিক হওয়ার পর আবার সংগীত জগতে ফিরে আসতে পারে। তার আরো বেশি অনুপ্রেরণা থাকতে পারে। কে জানে?'
লিউ ছিন কখনো সংগীত শেখানোর জন্য বিদেশে যান নি। তবে তিনি নিখুঁতভাবে চীনের সংগীত, পশ্চিমা সংগীত আর নিগ্রোর সংগীত মিশ্রণ করতে পারেন। কেউ কেউ বলেন, পূর্বজীবনে তিনি হয়তো একজন নিগ্রো মেয়ে ছিলেন। নাহলে তার সংগীত কেন এতো পরিবর্তনশীল ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। তার কন্ঠ পানির মতো শ্রোতাদের মনে ঢুকে যায়। তার প্রতিটি গান শ্রোতাকে ভিন্ন তাপমাত্রার অনুভূতি দেয়।
বন্ধুরা, অনুষ্ঠানের শেষে শুনুন শা পাও লিয়াংয়ের গাওয়া 'আমি এখনো তোমাকে ভালোবাসি' নামের গান।
প্রিয় বন্ধুরা, এতোক্ষণ আপনারা চীনের গীতিকার ও সংগীত সংযোজক লিউ ছিনের সংক্ষিপ্ত পরিচয় আর তার সৃষ্ট কয়েকটি গান শুনলেন। 'সুর ও বাণী' আসর আজকের মতো এখানে শেষ করছি। ভালো থাকুন সবাই। আবার কথা হবে। (ইয়ু/টুটুল)