হ্যালো চায়না: ৭৩. থু লৌ
  2017-05-05 17:29:15  cri


 

'থু লৌ' চীনের বৈশিষ্ট্যময় আবাসিক ভবন। এর চীনা নাম থেকেই বোঝা যায়, এ ভবন মাটি দিয়ে তৈরি (চীনা ভাষায় 'থু' মানে 'মাটি' এবং 'লৌ' মানে 'বহুতল ভবন')। হাক্কানিজরা এ ধরনের ভবনে বাস করতো।

'থু লৌ'-এর দেখা মিলবে মূলত চীনের ফু চিয়েন প্রদেশে। এমনিতে প্রাচীনকালে ব্যবহৃত চীনা আবাসিক ভবনগুলো ছিল বৈচিত্র্যময়। সি হো ইউয়ান, মঙ্গোলিয়ান ইয়ার্ট এবং গুহাঘর ইতোমধ্যেই বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছে। তবে হাক্কানিজদের 'থু লৌ' যেন খানিকটা রহস্যময়। 'থু লৌ'র আয়তন চীনের আবাসিক ভবনগুলোর মধ্যে সবচে বেশি। সাধারণভাবে বলা যায়, একটি 'থু লৌ' ভবনে একসঙ্গে কয়েক শ' মানুষ বসবাস করতে পারতেন।

'থু লৌ' কেন এতো বড়? কেন এতো বেশি লোকের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন করে এ ধরনের ভবন তৈরি করা হতো? কিভাবেইবা তৈরি করা হতো এতো বড় আবাসিক ভবন? এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে হাক্কানিজদের ইতিহাসের দিকে।

প্রাচীনকালে 'হাক্কানিজ' বলা হতো চীনের কেন্দ্রীয় সমতলভূমিতে বসবাসকারী মানুষজনকে। এরা ছিলেন হান জাতির অন্তর্ভুক্ত। যুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষসহ বিভিন্ন কারণে তাদেরকে একসময় চলে যেতে হয়েছিল দেশের দক্ষিণাঞ্চলে। এসময় তাদেরকে কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয়েছে। আর এই মোকাবিলার কাজটা তারা করেছেন ঐক্যবদ্ধভাবে। নতুন জায়গায় এসে তাঁরা মাটি ও পাথর দিয়ে শত্রুর আক্রমণ থেকে বাঁচার উপযোগী করে তৈরি করা শুরু করলেন 'থু লৌ'। ধাপে ধাপে গড়ে ওঠা এ ভবন পেল একধরনের বিশিষ্টতা।

'থু লৌ' সুদৃঢ় দুর্গের মতো। এর অভ্যন্তরে খাদ্যশস্য জমা করে রাখা যায়, পশুপালন করা যায়। আর যখন শত্রু র আক্রমণ হয়, তখন ভবনের মূল দরজা বন্ধ করে দিয়ে তা রক্ষার ব্যবস্থা করলেই হলো।

প্রথম দিকে নির্মিত 'থু লৌ' ছিল বর্গাকৃতির। কিন্তু বর্গাকৃতির 'থু লৌ'-এর অভ্যন্তরে সব জায়গায় সমানভাবে আলো পড়তো না বলে, হাক্কানিজরা স্টেডিয়ামের মতো গোলাকৃতির 'থু লৌ'র নকশা করে। এই গোলাকৃতির 'থু লৌ'-ই হাক্কানিজদের ঐতিহ্যে পরিণত হয়।

চীনের ফু চিয়েন প্রদেশের 'ইয়োং তিন' জেলায় মোট ৩৬০টি গোলাকৃতির 'থু লৌ' আছে। বৃহত্তম 'থু লৌ'র ব্যাস ৮২ মিটার এবং সবচে ছোট থু লৌ'র ব্যাস ১৭ মিটার।

'ছেং ছি ভবন' সবচে পুরাতন 'থু লৌ' হিসেবে পরিচিত। এটি ১৭৯০ সালে নির্মিত। একসময় এই ভবনটিতে ৮০টিরও বেশি পরিবারের ৬০০ জনেরও বেশি সদস্য বসবাস করতেন।

'থু লৌ'র গ্র্যান্ড প্যাটার্ন এবং হাক্কানিজদের জীবনযাপন পদ্ধতি আধুনিক বিশ্বের পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। আর জাতিসংঘের ইউনেস্কো 'থু লৌ'-কে ঘোষণা করেছে 'ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ' বা 'বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য' হিসেবে।(স্বর্ণা/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040