চীন-বেলারুশ সহযোগিতায় নির্মিত শিল্পপার্ক
  2017-05-03 09:06:15  cri



চীনা নির্মাণকারী মিঃ মা চীন-বেলারুশ শিল্প পার্কে এক বছর ধরে কাজ করছেন। পার্কে একটি ভবন দেখিয়ে তিনি বললেন, "এখানে আগে কিছুই ছিল না। নির্মাণকাজে যে-কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে, তা আমি নিজের হাতে কেটেছি। আমরা পার্কের প্রদর্শনভবন ও বাণিজ্যকেন্দ্র নির্মাণের দায়িত্ব পালন করি। দেখতে দেখতে এ পার্কটি একটা ভিন্ন রূপ নিয়েছে। নিজের হাতের কাজ দেখে আমার মন আনন্দে পরিপূর্ণ হয়।"

চীন-বেলারুশ শিল্পপার্ক বিদেশে চীনাদের দ্বারা নির্মিত বৃহত্তম শিল্পপার্ক। এটি বেলারুশে বৃহত্তম বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রকল্পও বটে। ২০১০ সালের মে মাসে চীনের তত্কালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বেলারুশ সফর করেন। বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দার লুকাশেঙ্কো তখন যৌথ উদ্যোগে একটি শিল্পপার্ক নির্মাণের প্রস্তাব দেন। তার প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দেয় চীন। ২০১২ সালে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট এক ফরমান জারির মাধ্যমে প্রস্তাবিত শিল্পপার্ককে বিশেষ সুবিধা দেন। পরে শিল্পপার্ক নির্মাণের পথে বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে আরও দু'বার উক্ত ফরমানের পরিবর্তন আনেন তিনি।

চীন নির্মাণকাজে ঋণ দেয় এবং পার্কটি নির্মাণের দায়িত্ব নেয়। ২০১২ সালে চীন-বেলারুশ শিল্পপার্ক কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়। কোম্পানির ম্যানেজার লি হাই সিন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা কাঠামো তুলে ধরেন। তিনি বলেন, "চীন ও বেলারুশ সরকারের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সমন্বয় কমিটি আছে। কমিটি পার্ক উন্নয়ন সম্পর্কে পরামর্শ দেয়। তা ছাড়া, বেলারুশ বিশেষ একটি পার্কব্যবস্থাপনা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে। কোম্পানি এ সংস্থার কাছ থেকে সুবিধা ও নীতি সম্পর্কে জানতে পারে বা আইনি পরামর্শ পেতে পারে। আমাদের কোম্পানি পার্কের নির্মাণসংক্রান্ত প্রায় সব কাজ করে। কোম্পানিতে চীন ও বেলারুশের শেয়ারের অনুপাত যথাক্রমে ৬৮ ও ৩২ শতাংশ। "

চীন-বেলারুশ শিল্পপার্কের আয়তন ৯১.৫ বর্গকিলোমটার। বেলারুশের রাজধানী মিনস্কের ২৫ কিলোমিটার দূরে মিনস্ক বিমানবন্দরের কাছাকাছি এলাকায় এটির অবস্থান। মস্কো- বার্লিন আন্তঃমহাদেশীয় সড়কপথ ও বিমানবন্দর হাইওয়ে এ শিল্পপার্কের মধ্য দিয়ে গেছে। বাল্টিক সমুদ্রবন্দর ও শিল্পপার্কের মধ্যে দূরত্ব ৫০০ কিলোমিটার। তা ছাড়া, মালামাল সরবরাহের জন্য স্থাপিত রেলপথটিও এর কাছাকাছি অবস্থিত। ফলে ভবিষ্যতে পার্কটি জলপথ ও রেলপথ—উভয়ের সুবিধাই নিতে পারবে।

পণ্য স্থানান্তর পার্ক চীন-বেলারুশ শিল্পপার্কের প্রথম প্রকল্প। এটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৫ সালে। পণ্য স্থানান্তর পার্কের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার ইউু মিং হুয়া বলেন, বর্তমানে বাণিজ্যকেন্দ্র, প্রদর্শনীকেন্দ্র ও ৩টি গুদামের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। মে মাসে বিভিন্ন কোম্পানি এখানে উত্পাদনকাজ শুরু করবে। তিনি বলেন,"যে কোম্পানিগুলো শিল্পপার্কে কার্যক্রম শুরু করবে তাদের অধিকাংশই পণ্য উত্পাদক কোম্পানি। এসব কোম্পানি শুধু বেলারুশের বাজারের প্রতি দৃষ্টি রেখে পণ্য উত্পাদন করবে না, বরং রাশিয়া, কাজাখস্তান এবং ইউরোপের বাজারের জন্যও পণ্য উত্পাদন করবে।"

বেলারুশ ইউরোপের ভৌগোলিক কেন্দ্রে অবস্থিত এবং এটি রেশমপথ অর্থনৈতিক অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। ভৌগোলিক অবস্থান ও পরিবহন সুবিধার জন্য চীন-বেলারুশ শিল্পপার্কে উত্পাদিত পণ্য ও 'এক অঞ্চল, এক পথ'-সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে উত্পাদিত পণ্য কার্যকারভাবে স্থানান্তর করা সম্ভব হবে।

প্রথম দফায় শিল্পপার্কের ৩.৫ বর্গকিলোমিটার অবকাঠামো নির্মাণকাজ প্রায় শেষ হয়েছে। এ অঞ্চলে পানি, বিদ্যুত, ও গ্যাস এসেছে; যোগাযোগব্যবস্থাও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

চীন-বেলারুশ শিল্পপার্কের ম্যানেজার লি হাই সিন বলেন, পার্কে মূলত যন্ত্রপাতি, ইলেকট্রনিক তথ্য, জৈব-ওষুধপত্র, রাসায়নিকসহ বিভিন্ন পণ্য উত্পন্ন হবে। তিনি বলেন, "৮টি কোম্পানি আনুষ্ঠিকভাবে পার্কে কার্যক্রম চালাতে কর্তৃপক্ষের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে এবং এর মধ্যে ৩টি ইতোমধ্যেই নির্মাণ করা শুরু করেছে। আর ২৫টি কোম্পানি আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং মে মাসে চুক্তি স্বাক্ষর করবে বলে জানিয়েছে। তা ছাড়া, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি কোম্পানিও পার্কে কার্যক্রম চালাবে।"

শিল্প-পার্কের পরিকল্পনা অনুযায়ী, শ্রেষ্ঠ চীনা কোম্পানিগুলো এখানে আসবে এবং স্থানীয় কোম্পানিগুলোর সাথে সহযোগিতার ভিত্তিতে উন্নত পণ্য উত্পাদন করবে। এতে বেলারুশের অর্থনীতি উন্নত হবে এবং দেশটিতে অনেক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৬ সালে পার্কে কার্যক্রম শুরু করা কোম্পানিগুলো ১২ কোটি ডলারের স্থানীয়ভাবে উত্পন্ন সরঞ্জাম ক্রয় করেছে এবং স্থানীয়দের জন্য ৫ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। ভবিষ্যতে বেলারুশের জিডিপি'তে এ শিল্পপার্কের অবদান ২ শতাংশ হবে বলেও আশা করা হচ্ছে।

৯০ বর্গকিলোমিটার শিল্পপার্ক ছিল একটি বন। শিল্পপার্ক নির্মাণের সময় যতদূর সম্ভব গাছপালা সংরক্ষণ করা হয়। শিল্পপার্কের ভিতরের নদী ও গ্রাম সংরক্ষণের নীতির আলোকে ভবিষ্যতে এখানে প্রাকৃতিক পর্যটনশিল্পও উন্নত করা হবে।

৪ বছর আগে ভিক্টোরিয়া শিল্পপার্কে আসেন এবং এখানে একটি চাকরি পান। তার বাবা-মা তার ওই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেননি। এখন শিল্পপার্ক আইন বিভাগে কাজ করেন ভিক্টোরিয়া। তিনি জানান, তার পরিবার এখন তাকে খুব সমর্থন করে। তিনি বললেন, "নানা প্রকল্পের কাজ এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে মানুষ শিল্পপার্ক সম্পর্কে আরও বেশি জানতে পেরেছে। তা ছাড়া, বেতনসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার কথা বিবেচনা করলে, আমার চাকরিটা খুবই ভালো। তাই পরিবারের সবাই এখন আমাকে সমর্থন করছেন।"

চলতি মাসে চীন-বেলারুশ শিল্পপার্ক নির্মাণকাজ শুরুর দু'বছর পূর্তি হবে। ২০১৫ সালে যখন দু'দেশের প্রেসিডেন্টদ্বয় এ শিল্পপার্ক নির্মাণের ব্যাপারে একমত হন, তখন তারা আশা করেছিলেন, দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ এক প্রকল্প হিসেবে শিল্পপার্ককে 'রেশমপথ অর্থনৈতিক অঞ্চলের একটি মুক্তা'-য় পরিণত করা সম্ভব হবে। দেখেশুনে মনে হচ্ছে, তাদের সেই আশা পূরণ হতে যাচ্ছে। (শিশির/আলিম/সুবর্ণা)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040