20170427yinyue.mp3
|
প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আপনারা চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান শুনছেন। আমি আনন্দী বেইজিং থেকে আপনাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আজকের 'সুর ও বাণী' আসরে চীনের সুরকার হো মু ইয়াংয়ের সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেবো।
হো মু ইয়াং
বন্ধুরা, প্রথমে শুনুন 'রঙিন মেঘের দক্ষিণাঞ্চল' নামের গান। ইয়ুননানের লোকসংগীতের বেশ কিছু উপাদানে এ গানটি তৈরি করা হয়েছে। গানটিতে ইয়ুননানের স্থানীয় বাদ্যযন্ত্র বাউ-এর ব্যবহার দেখা যায়। পপ সংগীতের সঙ্গে এর স্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। গানের পবিত্র সুরে আপনার হৃদয়ে মুহূর্তে শান্তি নেমে আসবে। গানটিতে ইয়ুননানের প্রশংসা করা হয়েছে। মানুষ ও প্রকৃতির সম্প্রীতিমূলক সহাবস্থানের দৃশ্য এতে বর্ণিত হয়েছে। গানটিকে চীনা সঙ্গীত জগতের 'নতুন লোকসংগীত' বলে মনে করেন সংগীতবিদরা।
বন্ধুরা, আপনারা শুনলেন সুই চিয়ান ইয়ার গাওয়া 'রঙিন মেঘের দক্ষিণাঞ্চল' গানটি। তার স্বামী হো মু ইয়াং এ গানের কথা লিখেছেন এবং সুর করেছেন। আর আজকের অনুষ্ঠানে আমরা হো মু ইয়াং সম্পর্কেই কিছু কথা জানাবো।
হো মু ইয়াং চীনের বিখ্যাত গীতিকার ও সংগীত প্রযোজক। তিনি বেইজিং অলিম্পিক গেমস, শাংহাই বিশ্ব মেলাসহ জাতীয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ নানা অনুষ্ঠানের সংগীত সৃষ্টি করেছেন।
ফিনিক্স লেজেন্ড
২০০৩ সালে গীতিকার হো মু ইয়াং সার্স প্রতিরোধের একটি গান রচনার চেষ্টা করেন। তখন তিনি ফিনিক্স লেজেন্ড নামের ব্যান্ডকে খুঁজে পান। এ ব্যান্ড চীনের লোকসংগীত ও র্যাপ সংগীত বেশ সুন্দর করে গাইতে পারে। হো মু ইয়াং তাদের জন্য 'চাঁদের ওপর' নামে একটি গান লিখেন। এ গানটি ফিনিক্স লেজেন্ডের প্রতিনিধিত্বকারী কর্মে পরিণত হয়। ২০০৭ সালে তারা এ গানের জন্য 'সোনালী ড্রাগন পুরস্কার' পায়। হো মু ইয়াং 'চাঁদের ওপর' নামের গান তৈরির পর চীনে আধুনিক ধাঁচের লোকসংগীত সৃষ্টির হিড়িক পড়ে যায়। বন্ধুরা, এখন শুনুন 'চাঁদের ওপর' নামের গান।
গানে বলা হয়েছে, 'আমি চাঁদকে দেখছি। কত স্বাধীন স্বপ্ন সেখানে ওড়ে। ভুলেছি অতীত! সামনের পথে তোমাকে আবার ফিরে পেতে চাই। দূরে হলেও তুমি থাকলে তা স্বর্গ হয়ে ওঠে। তোমার ভালোকে আমি ঠেকাতে পারি না। তোমার পবিত্রতা আমার মনকে শক্তভাবে বেঁধেছে। তোমার হাসিমুখে আমি চূড়ান্ত বিশ্বাস খুঁজে পাই। আমার প্রেম হোলুনবের তৃণভূমিতে ছুটে বেড়ায়।'
হো মু ইয়াং ছোটবেলায় তাইওয়ানের পপ সংগীত বেশি শুনতেন। মাধ্যমিক স্কুলের প্রথম বছরে তার মা তাকে একটি গিটার ও একটি রেকর্ডার কিনে দেন। তিনি রেডিও অনুষ্ঠান থেকে পপ সংগীতের নানা তথ্য জানতে পারেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠান শুনতে শুনতে তিনি হংকং ও তাইওয়ানের পপ সংগীত উন্নয়নের ধারণা পান।
বিংশ শতাব্দীর ৯০-এর দশকের প্রথম দিকে তিনি সংগীত সৃষ্টি শুরু করেন। ১৯৯৭ সালে তিনি শেনচেনে ফিনিক্স লেজেন্ড, সুই চিয়ান ইয়া, চীনা শক্তি এবং হুয়াং ইং-সহ অনেক গায়ক গায়িকার জন্য সংগীতের অ্যালবাম তৈরি করেন।
বন্ধুরা, এখন আপনারা শুনছেন 'রেলগাড়িতে লাসা গমন' নামের গান। ২০০৬ সালে ছিংহাই তিব্বত রেলপথ তৈরি হয়। হো মু ইয়াং এ রেলপথ নির্মাণ উদযাপনের জন্য গানটি লিখেন। গানটি লোকসংগীত ও আধুনিক সংগীতের মিশ্রিত উপাদানে তৈরি। ২০০৮ সালে স্প্রিট নামে চীনের মূলভূভাগের স্বর্ণ সংগীত পুরস্কার জয় করে গানটি।
চীনামাটি হলো চীনা জাতির সাংস্কৃতিক প্রতীক। বিশ্ব ইতিহাসে এটি দীর্ঘকাল ধরে গুরুত্বপূর্ণ স্থান ধরে রেখেছে। চিয়াং সি প্রদেশের চিং দে চেন চীনের সবচেয়ে বিখ্যাত চীনামাটির নগরী। ২০১৭ সালে হো মু ইয়াং চিং দে চেনের জন্য গান লেখার আমন্ত্রণ পান। তিনি মনে করেন, চিং দে চেনকে বর্ণনা করা মানেই চীনাকে বর্ণনা করা। এ গানের মাধ্যমে তিনি চিং দে চেনের চীনামাটি উত্পাদনের প্রাচীন গুহার কথা বর্ণনা করেন এবং চীনামাটির গুরুত্ব তুলে ধরার চেষ্টা করেন। গানের নাম দেওয়া হয়েছে 'ভালোবাসার অগ্নি পুনরায় জ্বলে ওঠো।' গানে বলা হয়েছে, 'চীনামাটির উজ্জ্বলতা দেখে আমার হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। অতীতের স্মৃতি নীল ও সাদা চীনামাটির মতো সুন্দর। রেশমপথ যত দূরই হোক, সাগর পার হলেও তোমার চিহ্ন আমি খুঁজে পাবো।'
হো মু ইয়াং শুধু অন্যের জন্যই গান লিখেন, তা কিন্তু নয়। তিনি নিজেও খুব ভালো গান করেন। তিনি তথ্যচিত্র 'চীনের সাধারণ পোশাক' এর থিম সং লিখেছেন এবং নিজেই তাতে কণ্ঠ দিয়েছেন। গানের নাম 'তোমাকে কাপড়ের মতো ভালোবাসি'। গানে চীনের পোশাকের সৌন্দর্য আর ঐতিহাসিক সংস্কৃতির পরিবর্তন ফুটে উঠেছে। গানের সুর মর্মস্পর্শী। প্রথমেই তার কণ্ঠে গাওয়া গানটি আমাকে মুগ্ধ করেছে। বন্ধুরা, শুনুন হো মু ইয়াংয়ের গাওয়া 'তোমাকে কাপড়ের মতো ভালোবাসি' নামের গান।
হো মু ইয়াং বলেন, দশ-বারো বছর আগে তিনি ভেবেছিলেন, যদি চীনের বিভিন্ন অঞ্চলের সংগীতের উপাদান দিয়ে একটি গান রচনা করা যায়, তাহলে কেমন হয়? তিনি শেন পেই, ইনার-মঙ্গোলিয়া ও ইয়ুননানের সংগীত নিয়ে এ প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। কিছু জায়গা তিনি কখনো যাননি, তবে সে স্থানের লোকসংগীত তার মনে গভীর দাগ কেটেছে। তিনি মনে করেন, এসব লোকসংগীত চীনাদের রক্তে হাজার বছর ধরে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে তিনি 'চাঁদের ওপর', 'রঙিন মেঘের দক্ষিণাঞ্চল'সহ বেশ কিছু জনপ্রিয় গান লিখেন এবং 'চীনের আধুনিক লোকসংগীতের ধর্মপিতা' খেতাব অর্জন করেন।
জ্যাকি চেন আর থান চিং
২০০৮ সালে তিনি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান 'চীনা গল্পে'র থিম সং তৈরি করেন। গানের নাম 'চীনকে দেখানো'। বেইজিং অলিম্পিক গেমসের সময় এ গানটি সারা বিশ্বের অতিথিদের কাছে চীনের বংশপরম্পরায় সংরক্ষিত সাংস্কৃতিক গল্প তুলে ধরে। বিখ্যাত তারকা জ্যাকি চেন ও কণ্ঠশিল্পী থান চিং গানটি পরিবেশন করেন।
গানের কথা এমন, 'অনেক ভাবে আমি তোমাকে দেখেছি। বিশ্ব তাকে অদ্ভুত বলে। আমি প্রতিদিন তোমাকে পড়ি। তোমার সৌন্দর্য চিরস্থায়ী। আমাকে দেখি, তোমাকে দেখি, তুমি যেনো এক বিশ্ব! আমার জীবনে তুমি আছো। নানা ভাষায় তোমাকে ডাকি। বিশ্বের কেন্দ্রে চীন নিজেকে দেখতে পায়।'
সুই চিয়ান ইয়া
হো মু ইয়াংয়ের স্ত্রী সুই চিয়ান ইয়া একজন ভালো গায়িকা। হো মু ইয়াং তার স্ত্রীর জন্য অনেক শ্রুতিমধুর গান লিখেছেন। দেশের প্রতি এ দম্পতির গভীর ভালোবাসা তাদের সংগীতেই স্পষ্ট বোঝা যায়। সংগীতের মধ্যে পরস্পরের প্রেমও অনুভব করা যায়। অন্যান্য তারকার মতো তারা গণমাধ্যমে খুব একটা আসেন না। তাদের প্রত্যাশা, চীনের পপ সংগীত জগতে শ্রেষ্ঠ স্থান অর্জন করা। সংগীতের মাধ্যমে শ্রোতাদের সঙ্গে মনের বিনিময় করেন তারা।
হো মু ইয়াং পৌরাণিক কাহিনীর নাটক 'পরী হ্রদ' এর থিম সং রচনা করেছেন। এ নাটকে প্রধান চরিত্র সিয়াও ছি নামের পরী আর ফেই ল্য-এর প্রেমের গল্প বর্ণিত হয়েছে। বিশ্বে হাজার রকমের দুঃখজনক ঘটনা রয়েছে। তবে সুখগুলো সবই যেনো একই রকম। হো মু ইয়াং এমন কথা ভেবে 'তোমার সঙ্গে আজীবন থাকবো' নামের গানটি লিখেছেন। গানে পরীর অসাধারণ প্রেমের প্রশংসা করা হয়েছে।
বন্ধুরা, শুনুন হো মু ইয়াং ও তার স্ত্রী সুই চিয়ান ইয়ার কণ্ঠে 'তোমার সঙ্গে আজীবন থাকবো' নামের গান। এটি তাদের প্রেমের কথা।
বন্ধুরা, এতক্ষণ আপনারা চীনের আধুনিক লোকসংগীতের ধর্মপিতা হো মু ইয়াংয়ের সংক্ষিপ্ত পরিচয় এবং তার কয়েকটি গান শুনলেন। আশা করি, গানগুলো আপনাদের ভালো লেগেছে। আজকের সুর ও বাণী আসর এ পর্যন্তই। ভালো থাকুন সবাই। আবার কথা হবে।
(ইয়ু/তৌহিদ)