সুর ও বাণী: চীনের পাহাড়ী নগর ছোংছিং
  2017-04-25 18:26:31  cri


প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আপনারা চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান শুনছেন। আমি আনন্দী বেইজিং থেকে আপনাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আজকের 'সুর ও বাণী' আসরে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেবো চীনের কেন্দ্রশাসিত মহানগর, দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের বৃহত্তম শিল্প ও বাণিজ্য শহর, ছাংচিয়াং নদী অর্থনৈতিক অঞ্চলের পশ্চিমাংশের কেন্দ্রীয় সংযোগস্থল ছোংছিংয়ের সাথে।

বন্ধুরা, প্রথমেই শুনুন 'ছোংছিংয়ের গতি' গানটি। গেয়েছেন হান লেই। চীনারা 'খুব দ্রুত উন্নতি' বোঝাতে 'ছোংছিংয়ের গতি' টার্মটি ব্যবহার করে থাকে। এ থেকে বোঝা যায়, এ শহরের অর্থনীতি ও পরিবহন খাতে উন্নয়নের অবস্থা খুব ভালো। ১৯৯৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর চেংতু থেকে ছোংছিংগামী এক্সপ্রেস সড়কপথ নির্মিত হয়। এখন পশ্চিম চীনে ছোংছিংয়ের এক্সপ্রেস সড়ক জাল প্রথম স্থানে রয়েছে।

ছোংছিং চীনের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক মহানগর এবং পাইয়ু সংস্কৃতির জন্মস্থান। জাপানি আগ্রাসনবিরোধী যুদ্ধের সময় ছোংছিং ছিল কুওমিনতাং পার্টির সরকারের দ্বিতীয় রাজধানী। গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার পর ছোংচিং চীনের কেন্দ্রশাসিত মহানগরে পরিণত হয়।

ছোংছিং চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে অবস্থিত। ছোংছিং ছাংচিয়াং নদীর উচ্চ অববাহিকা অঞ্চলের বাণিজ্য, পণ্য স্থানান্তর, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উদ্ভাবন এবং জাহাজ পরিবহনের কেন্দ্র। এটি চীনের গুরুত্বপূর্ণ আধুনিক নির্মাণশিল্পের ঘাঁটি। বন্ধুরা, শুনুন 'ছোংছিং' শীর্ষক গান। গেয়েছেন ছিওয়েই।

ছোংছিংয়ের আয়তন ৮২ হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটার। এর আয়তন বেইজিং, থিয়ানচিন ও শাংহাইয়ের মোট আয়তনের ২.৩৯ গুণ। ছোংছিংয়ের উত্তর দিকে দাবা পাহাড়, পূর্ব দিকে উ পাহাড় দক্ষিণ-পূর্ব দিকে উলিং পাহাড়  আর দক্ষিণ দিকে দালো পাহাড়। চারদিকে উচু পাহাড় দিয়ে এ মহানগরটি ঘেরাও হয়ে আছে। তাই এটি 'পাহাড়ী নগর' হিসেবে পরিচিত।

ছোংছিংয়ে অনেক সুস্বাদু স্থানীয় খাবার আছে। হটপট বেশ জনপ্রিয় বলে একে 'চীনের হটপট নগর'-ও বলা হয়। ছোংছিংয়ের কোনো হটপট রেস্তোরাঁয় খাওয়ার পর আপনার কাপড়ে সে খাবারের গন্ধ থেকে যাবে অনেকক্ষণ; এমনকি সারারাত ঘুমানোর পরও আপনি সে গন্ধ পাবেন।

সময় পেলে ইন্টারনেটে 'জিহ্বার ওপর ছোংছিং' শীর্ষক তথ্যচিত্রটি দেখতে পারেন। এতে ছোংছিংয়ের খাদ্য-সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। তথ্যচিত্রটি আপনাকে ছোংছিং ভ্রমণে উত্সাহ যোগাবে। বন্ধুরা, এখন শুনুন এ তথ্যচিত্রের থিম সং 'ছোংছিংয়ের স্বাদ'; গেয়েছেন শু ক্য।

হটপট

ছোংছিংয়ে প্রায়-গ্রীষ্মমণ্ডলীয় মৌসুমি আবহাওয়া বিরাজ করে। এখানকার বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ১৬ থেকে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এখানে যথেষ্ট বৃষ্টিপাত হয়। বিশেষ করে বসন্তকালের শেষ দিক ও গ্রীষ্মকালের শুরুর রাতে প্রায়ই বৃষ্টি পড়ে। তাই শহরটি 'পা  পাহাড়ের রাতের বৃষ্টি' নামেও সুপরিচিত।

ছোংছিংয়ের ভূখণ্ডের প্রকৃতি ও আবহাওয়ার প্রভাবে এখানে বছরে গড়ে ১০৪ দিন ঘন কুয়াশা থাকে। অথচ 'বিশ্বের কুয়াশা নগর' নামে পরিচিত লন্ডনে বছরে ৯৪ দিন কুয়াশা থাকে। অন্যদিকে, ছোংছিংয়ের বিশান  অঞ্চলের ইয়ু উ পাহাড়ে বছরের ২০৪ দিনই কুয়াশা থাকে। একে 'বিশ্বের শীর্ষ কুয়াশা অঞ্চল' বলা যায়।

সিয়ান নুই পাহাড় ছোংছিংয়ের সেরা দশটি পর্যটনকেন্দ্রের অন্যতম। ছোংছিং শহরের কেন্দ্র থেকে সিয়ান নুই পাহাড় ১৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি একটি জাতীয় বন পার্ক। এখানে ২২ হাজার হেক্টর বন, ৬৬৬৬ হেক্টর প্রাকৃতিক তৃণভূমি আছে। গ্রীষ্মকালে এখানকার গড় তাপমাত্রা ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মালভূমিতে দক্ষিণ চীনের অসাধারণ তৃণভূমি আর বিরল তুষারময় বনের দৃশ্য দেখা যায়। জায়গাটি 'প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড' নামেও সুপরিচিত। বন্ধুরা, এখন শুনুন 'সিয়ান নুই পাহাড়ের চাঁদ' শীর্ষক গান। গেয়েছেন চাং লেই। গানে ঠাণ্ডা রাতে বনের সীমান্ত থেকে চাঁদ উঠার দৃশ্য বর্ণনা করা হয়েছে।

সিয়ান নুই পাহাড় 

ছোংছিংয়ে হান জাতির লোক ছাড়া আরও ৫৫টি সংখ্যালঘু জাতির লোক বসবাস করেন। সংখ্যালঘু জাতির লোকসংখ্যা ১৯ লাখ ৩০ হাজার, যা ছোংছিংয়ের মোট জনসংখ্যার ৫.৮ শতাংশ। সংখ্যালঘু জাতিগুলোর মধ্যে থুচিয়া জাতির লোকসংখ্যা সবচেয়ে বেশি; ১৩ লাখ ৯৮ হাজার। দ্বিতীয় স্থানে আছে মিয়াও জাতির লোকসংখ্যা; ৪ লাখ ৮০ হাজার। ছোংছিংয়ের আঞ্চলিক ভাষা 'ছোংছিং ভাষা' বা 'ইয়ু ভাষা' । আমি তা বুঝতে পারি না। তবে এ ভাষা শুনতে ভালো লাগে। বন্ধুরা, এবার শুনুন রুইথার গাওয়া 'আমি ছোংছিংয়ের সন্তান' গানটি। গানটি তিনি গেয়েছেন ছোংছিংয়ের আঞ্চলিক ভাষায়। শুনে বলুন তো, এ ভাষা আর ম্যান্ডারিন ভাষার মধ্যে পার্থক্য বোঝা যায় কি না!

ছোংছিং হলো পাইয়ু সংস্কৃতির জন্মস্থান। পাইয়ু সংস্কৃতি হচ্ছে ছাংচিয়াং নদীর উচ্চ অববাহিকায় সবচেয়ে বৈশিষ্ট্যময় জাতিগত সংস্কৃতিগুলোর অন্যতম। 'পা' সংস্কৃতি হলো 'পা' জাতি আর 'পা' রাষ্ট্রের আঞ্চলিক সংস্কৃতি। 'পা' জাতির লোকেরা দীর্ঘকাল ধরে গভীর পাহাড়ে বসবাস করে আসছেন। কঠোর প্রাকৃতিক পরিবেশ তাদের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। তারা সাহসী ও পরিশ্রমী। প্রাচীনকালে 'পা' জাতির লোকেরা নাচ ও গানেও পারদর্শী ছিলেন। তাদের নাচ ছিল মূলত 'যুদ্ধের নাচ'। পরে তা পাইয়ু নাচে রূপান্তরিত হয়, যা রাজপ্রাসাদে পরিবেশিত হতো। তবে এ নাচের মধ্যেও শক্তিমত্তার বহিঃপ্রকাশ আছে। ছোংছিংয়ের পাহাড়ী গানও মূলত নানা কাজের সাথে সম্পর্কিত। যেমন, বিখ্যাত তিন-গিরিখাতে নৌকা চালানোর সময় 'ছুয়ান চিয়াং হাও জি' নামক এক ধরনের গান গাওয়া হয়। প্রথমে একজন গান ধরেন, পরে অন্যরা তার কণ্ঠে কণ্ঠ মেলান। গান যেন তাদের নৌকা চালানোর শক্তি বাড়িয়ে দেয়। ২০০৬ সালের ২০ মে ছুয়াং চিয়াং হাও জি  চীনের জাতীয় পর্যায়ের অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। বন্ধুরা, শুনুন লি শুয়াং চিয়াংয়ের গাওয়া 'নৌকা টানার গান'।

ছুয়াং চিয়াং হাও জি

২০১৬ সালের ১১ নভেম্বর ছোংছিং 'আন্তর্জাতিক মৈত্রী নগরের বিশেষ অবদান পুরস্কার' পায়। ছোংছিংয়ে একটি বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও ২টি বিশ্ব প্রাকৃতিক ঐতিহ্য আছে। তা ছাড়া, এখানে জাতীয় পর্যায়ের ৬টি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক দর্শনীয় স্থান, ২৪টি জাতীয় বনপার্ক, এবং ৪টি জাতীয় পর্যায়ের প্রাকৃতিক সংরক্ষণ অঞ্চল আছে। এটি বিনোদনের ভালো স্থান। দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের বিশেষ রীতিনীতি অনুভব করার জন্যও জায়গাটি উত্তম। সুযোগ পেলে ছোংছিংয়ে বেড়াতে ভুলবেন না যেন!

বন্ধুরা, অনুষ্ঠানের শেষপ্রান্তে শুনুন 'শুভ রাত্রি, ছোংছিং' নামের গানটি। গেয়েছেন মোনি। এ গানটি একই নামের একটি টিভি নাটকের থিম সং।

প্রিয় বন্ধুরা, এতোক্ষণ দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের কেন্দ্রশাসিত মহানগর ছোংছিংয়ের সংক্ষিপ্ত পরিচয় আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম, শোনালাম কয়েকটি গান। কেমন লাগলো, জানাবেন। তো, 'সুর ও বাণী' আসর আজকের মতো এখানে শেষ করছি। ভালো থাকুন সবাই। আবার কথা হবে। (ইয়ু/আলিম)

 

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040