দুই সহস্রাধিক বছর আগে এশিয়া ও ইউরোপের পরিশ্রমী ও সাহসী জনগণ এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকাকে সংযুক্ত করেছিলেন যে-পথের মাধ্যমে, সেটাই 'রেশমপথ' নামে বিখ্যাত। এ পথের মাধ্যমেই এ অঞ্চলগুলোর মধ্যে বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান চলতো।
প্রাচীনকালের স্থল রেশমপথ, বিশেষ করে পশ্চিম হান রাজবংশ আমলে (খ্রিষ্টপূর্ব ২০২ থেকে ৮ সাল পর্যন্ত), চাং ছিয়ানের তত্কালীন রাজধানী ছাংআন (বর্তমান সিআন) থেকে শুরু করে কানসু, সিনচিয়াং পার হয়ে মধ্য-এশিয়া, পশ্চিম এশিয়া ও ভূমধ্যসাগরের বিভিন্ন দেশ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এ পথে মূলত চীনের রেশমী কাপড় পরিবহন করে নিয়ে যাওয়া হতো। এ কারণেই পথটির নাম হয়েছে 'রেশমপথ'।
১৮৭৭ সালে জার্মান ভূগোলবিদ Ferdinand Paul Wilhelm Richthofen 'চীন' শীর্ষক একটি গ্রন্থ রচনা করেন। গ্রন্থে তিনি বলেছেন, "খ্রিষ্টপূর্ব ১১৪ সাল থেকে ১২৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চীনের রেশমী কাপড় যে-পথ দিয়ে মধ্য-এশিয়া ও ভারতে যেত, সে-পথকেই 'রেশমপথ' বলা হয়।"
অন্যদিকে 'সামুদ্রিক রেশমপথ'-এর মাধ্যমে প্রাচীনকালে চীনের সাথে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিনিময় হতো। ছিন ও হান রাজবংশ আমল থেকে এ পথের ব্যবহার শুরু হয় এবং সুই ও থাং রাজবংশ আমলে এর সমৃদ্ধি ঘটে। সোং ও ইউয়ান রাজবংশ আমলেও এর প্রভাব ছিল ব্যাপক। আর মিং রাজবংশ আমলের প্রথম দিকে এ পথের ব্যবহার শীর্ষ পর্যায়ে উন্নীত হয়। তবে, মিং রাজবংশ আমলের মাঝামাঝি সময়ে সামুদ্রিক যাত্রার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হবার পর এ সামুদ্রিক পথের ব্যবহার বন্ধ হয়ে যায়।
সামুদ্রিক রেশমপথের শুরু চীনের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চলে। এটি মধ্য-দক্ষিণ উপদ্বীপ, দক্ষিণ চীন সাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ এবং ভারত সাগর ও লোহিত সাগরের মধ্য দিয়ে পূর্ব আফ্রিকা ও ইউরোপে পৌঁছায়। এটা চীনের সাথে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক লেনদেনের গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক পথ ছিল। তখন আশেপাশের বিভিন্ন দেশের ওপরও এ পথের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। (ইয়ু/আলিম)