১৮ এপ্রিল রাষ্ট্রীয় সফরে ভুটান যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সফরসঙ্গী ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী ও অটিজম বিষয়ক বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যাডভাইজরি কমিটির চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ হোসেন। থিম্পুতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে। সফরের প্রথম দিনই ভুটানের রাজপ্রাসাদে আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করা হয় শেখ হাসিনাকে। ভুটানের রাজা জিগমে ন্যামগেল ওয়াংচুক ও রাণী জেটসান পেমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি।
একই দিন সন্ধ্যায় ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দ্বৈত কর প্রত্যাহার, বাংলাদেশের নৌপথ ভুটানকে ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া, কৃষি ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা এবং পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে দুদেশের মধ্যে ৫টি চুক্তি ও সমঝোতাস্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
১৯ এপ্রিল থিম্পুতে অটিজম বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেন শেখ হাসিনা। তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে সম্মেলন উদ্বোধন করেন এবং ভাষণ দেন। প্রধানমন্ত্রী অটিজমসহ প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে কার্যকর নীতিমালা ও কর্মসূচি গ্রহণের জন্য বিশ্বের সকল দেশের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি অটিজম আক্রান্তদের সামাজিক নিরাপত্তা, সম্মান ও যথাযথ চিকিৎসা সেবার ওপর গুরত্ব দেন। শেখ হাসিনা জানান দিকনির্দেশনার অভাবে অটিজমসহ অন্যান্য প্রতিবন্ধীদের যথাযথ সহায়তা দেওয়া যায় না। এ প্রসঙ্গে তিনি অটিজম বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেনের কার্যকর ভূমিকার কথা তুলে ধরেন।
তিন দিনের সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০ এপ্রিল দেশে ফিরে আসেন। ওইদিনই ঢাকা-থিম্পু একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করে। ২৬ দফার যৌথ বিবৃতিতে দুই দেশের সম্পর্ক আরো সংহত করার অঙ্গীকার করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, এ অঞ্চল ও বিশ্বের বৃহত্তর শান্তি-সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য দুই দেশ একত্রে কাজ করতে সম্মত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে তাদের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে পারস্পরিক স্বার্থে বিদ্যুৎ, পানিসম্পদ ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার সুযোগ গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
আঞ্চলিক কাঠামোয় নীতিগত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে জলবিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ-ভুটান ও ভারতের মধ্যে প্রস্তাবিত ত্রিপক্ষীয় সমঝোতাস্মারকের বিষয়টিকে তারা স্বাগত জানান। দুই প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন পরবর্তীতে তিনটি দেশের নেতারা মিলে এ বিষয়ে সমঝোতাস্মারক স্বাক্ষর করবেন।
দুই প্রধানমন্ত্রী আঞ্চলিক যোগাযোগের জন্য বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল- বিবিআইএন ভেহিকেল এগ্রিমেন্টে গুরুত্বারোপ করেন। দ্রুত এ চুক্তি বাস্তবায়নে আগ্রহের কথাও জানান তারা। এছাড়া ভুটানে তৈরি পোষাক, সিরামিক, ওষুধ, পাট, পাটজাত ও চামড়াজাত পণ্য প্রসাধন সামগ্রী ও কৃষিপণ্য রপ্তানির প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ। ভুটান এসব পণ্য আমদানি ও দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য-বিনিয়োগ আরো বাড়াতে সম্মত হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে ভুটানের প্রথম স্বীকৃতি দেওয়ার কথা স্মরণ করেন। তিনি ভুটানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞে বাংলাদেশের মানুষের দুর্ভোগ ও দুর্দশায় সাহনুভূতি ও সহমর্মিতা দেখিয়েছিল ভুটান।
প্রতিবেশি দেশ ভারত সফরের এক সপ্তাহের মাথায় প্রধানমন্ত্রীর ভুটান সফরকে ফলপ্রসু হিসেবে দেখছে সরকার। এতে প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্পর্ক জোরদারের মাধ্যমে আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদারের পথ সুগম হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।