প্রসঙ্গ: মহাকাশ স্টেশান প্রতিষ্ঠার পথে চীনের নতুন যাত্রা
  2017-04-21 19:46:58  cri

গত ২০ এপ্রিল সন্ধ্যায় চীনের প্রথম মালবাহী নভোযান 'থিয়ানচৌ-১' সাফল্যের সঙ্গে মহাশূন্যে উত্ক্ষেপণ করা হয়। উত্ক্ষেপণের নির্ধারিত সময় পর সেটি মহাশূন্যে নির্ধারিত কক্ষপথে প্রবেশ করে। 'থিয়ানচৌ-১'-এর সফল উত্ক্ষেপণকে মহাশূন্যে চীনের নিজস্ব মহাকাশ স্টেশন স্থাপনের পথে একটি বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বেইজিং সময় ২০ এপ্রিল রাত ৭টা ৪১ মিনিটে লং মার্চ-৭ সিরিজের 'ইয়াও-২' নামক পরিবাহক রকেটের সাহায্যে 'থিয়ানচৌ-১' উত্ক্ষেপণ করা হয়। এটি চীনের প্রথম মালবাহী নভোযান।

উত্ক্ষেপণের প্রায় ২০ মিনিট পর 'থিয়ানচৌ-১' উড্ডয়নকেন্দ্রের পরিচালনা বিভাগের প্রধান চাং শুয়ে ইয়ু বলেন, "বেইজিং মহাকাশ উড্ডয়ন নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র জানাচ্ছে যে, লং মার্চ-৭ রকেট স্বাভাবিকভাবে কাজ করেছে। 'থিয়ানচৌ-১' মালবাহী নভোযান নিখুঁতভাবে নির্ধারিত কক্ষপথে প্রবেশ করেছে। সৌর অ্যারে স্বাভাবিকভাবে খুলেছে। 'থিয়ানচৌ-১' উত্ক্ষেপণ প্রক্রিয়া সফল হয়েছে।"

চীনারা 'থিয়ানচৌ-১'-কে 'স্পেস কুরিয়ার' বলে ডাকে। কারণ, এ নভোযানটি মহাশূন্যে প্রদক্ষিণরত মহাকাশ গবেষণাগারের জন্য পণ্য পরিবহনের দায়িত্ব পালন করছে। চীনের প্রথম মালবাহী নভোযান হিসেবে 'থিয়ানচৌ-১' -এর দুটি অংশ আছে: পণ্য কেবিন এবং পরিচালনা কেবিন। উড্ডয়নের সময় এর ওজন ছিল প্রায় ১৩ টন, ধারণক্ষমতা ৬.৫ টন। 'থিয়ানচৌ-১'-এর উপপ্রধান প্রকৌশলী সুই সিয়াও পিং বলেন, মানববাহী নভোযান প্রকল্পের তিনটি পদক্ষেপের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে 'থিয়ানচৌ-১' -এর উড্ডয়নের গুরুত্বপূর্ণ তাত্পর্য আছে।

তিনি বলেন, "মালবাহী নভোযান হলো চীনের বৃহত্তম নভোযান। এ নভোযানে বিভিন্ন পণ্য বহন করা হয়েছে। এটি ভবিষ্যতে বড় আকারের চীনা মহাকাশ স্টেশন স্থাপনের ভিত্তি স্থাপন করেছে।"

এর আগে মানুষবাহী নভোযান উত্ক্ষেপণ করেছে চীন। কিন্তু 'থিয়ানচৌ-১'-এর উত্ক্ষেপণ ছিল প্রযুক্তিগতভাবে আরও কঠিন ও জটিল। বিশেষ করে এ নভোযানকে আরও নিখুঁত করা হয়েছে; এর ধারণক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। পরিচালনা বিভাগের প্রধান চাং শুয়ে ইয়ু বলেন, "'থিয়ানচৌ-১' কক্ষপথে প্রবেশের সঠিকতা অতি উচ্চ মাত্রার হওয়া প্রয়োজন ছিল। তাই উত্ক্ষেপণকেন্দ্রের ব্যবস্থাপনাও নির্ভরযোগ্য ও উন্নত করতে হয়েছে। নিক্ষেপের সময় নিখুঁত হওয়া ছিল জরুরি। এটা কোনো অবস্থাতেই স্থগিত বা পরিবর্তনযোগ্য ছিল না।"

বেইজিং মহাকাশ উড্ডয়ন নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলীর সহকারী ছুই সিয়াও ফাং জানান, 'থিয়ানচৌ-১'-এর তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ আগের মত নয়। তিনি বলেন, "প্রথমে, এ নভোযান আগেকার নভোযানগুলোর চেয়ে বড়। একে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করার চ্যালেঞ্জও ছিল বড়। 'থিয়ানচৌ-১' উত্ক্ষেপণের লক্ষ্য মহাকাশে নজিরবিহীন কিছু পরীক্ষা চালানো। যেমন, কক্ষপথে প্রোপেলেন্ট যোগ করা। এ কাজ হচ্ছে মহাকাশ স্টেশন দীর্ঘমেয়াদে মহাকাশে রাখার পূর্বশর্ত। তা ছাড়া, 'থিয়ানচৌ-১' নভোযানকে থিয়ানকোং-২-এর সাথে দ্রুত সংযুক্ত করা হবে।"

'থিয়ানচৌ-১' মালবাহী নভোযান পৃথিবী থেকে প্রায় ৩৮০ কিলোমিটার উঁচুতে মহাশূন্যের কক্ষপথে প্রবেশ করে। এরপর কক্ষপথে প্রদক্ষিণরত থিয়ানকোং-২ মহাকাশ পরীক্ষাগারের সঙ্গে এটি তিন বার সংযুক্ত হবে। কক্ষপথে এটি তিন বার প্রোপেলেন্ট যোগ করবে। মহাকাশে এটির অবস্থানকাল হবে তিন মাসের বেশি।

চীনের মানুষবাহী মহাকাশযান প্রকল্পের তিন ধাপ কৌশল অনুসারে, 'থিয়ানচৌ-১'-এর উড্ডয়ন হচ্ছে মহাকাশ পরীক্ষাগারের চূড়ান্ত কর্তব্য এবং মহাকাশ স্টেশন প্রকল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এরপর চীন মহাকাশ স্টেশনের কেন্দ্রীয় কেবিন ও পরীক্ষা কেবিন উত্ক্ষেপণ করবে। ২০২২ সালে মহাশূন্যে চীনের মহাকাশ স্টেশন নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হবে। (ইয়ু/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040