20170421yinyue.mp3
|
প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আপনারা চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান শুনছেন। আমি আনন্দী বেইজিং থেকে আপনাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আজকের 'সুর ও বাণী' আসরে চীনের সংগীত মহলের আদর্শ দম্পতি তোং তোং তোং ও চেন সির সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেবো।
তোং তোং তোং আর চেন সি
২০১৪ সালে চীনের কেন্দ্রীয় টেলিভিশন কেন্দ্র বসন্ত উত্সবের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে 'সময় কোথায় চলে গেল' নামের একটি গান প্রচার করে। এ গানটি সারা দেশের দর্শকদের মন জয় করে নেয়। এ গানটিকে সে সময়ের সবচেয়ে মনমুগ্ধকর গান বলা হয়। গানের কথা লিখেছেন চেন সি। সুর করেছেন তার স্বামী তোং তোং তোং। এ গানের মাধ্যমে তারা চীনা দর্শকদের কাছে সুপরিচিত হয়ে ওঠেন। বন্ধুরা, শুনুন 'সময় কোথায় চলে গেল' নামের গান। গেয়েছেন ওয়াং চেং লিয়াং।
সুরকার তোং তোং তোং ও গীতিকার চেন সি হচ্ছেন বেইজিং চলচ্চিত্র একাডেমির রেকর্ডিং বিভাগের সহপাঠী। তারা ১৪ বছর ধরে সহযোগিতা করে অনেক জনপ্রিয় গান লিখেছেন। 'সময় কোথায় চলে গেল' গানটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে এ দম্পতি চীনা দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। গান সৃষ্টির অভিজ্ঞতা স্মরণ করতে গিয়ে স্বামী তোং তোং তোং বলেন, 'চেন সির লেখা গানের সুর করতে আমার কখনো দু'ঘণ্টার বেশি সময় লাগে না। তার গান কবিতার মতো। আমাকে সুর করার অনুপ্রেরণা দেয়।'
একবার রাশিয়ার একটি তথ্যমাধ্যম চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং'র সাক্ষাত্কার নেয়ার সময় প্রেসিডেন্ট সিও এ গানের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, 'আমাকে যদি প্রশ্ন করা হয় আমার ব্যক্তিগত সময় সব কোথায় গেল? এর উত্তর অবশ্যই সময়গুলো সব কাজের জন্য ব্যয় হয়েছে।' তাহলে বোঝা যায়, এ গানটি চীনে কেমন প্রভাব ফেলেছে।
বন্ধুরা, এখন শুনুন লেই টিংয়ের গাওয়া 'সময় কোথায় চলে গেল' গানটি। গানের কথা এমন, 'বাড়ির সামনের পুরোনো গাছে নতুন পাতা উঠেছে। প্রাঙ্গণে মৃত কাঠে আবার ফুল ফুটেছে। অর্ধেক জীবন চলে গেল, সময়ের সাথে কথা ও স্মৃতি মাথার সাদা চুলের ভিতরে লুকিয়েছে। মনে স্পষ্ট আছে, বাচ্চার ছোট হাত পা আর মোটা মোটা মুখ। পুরো জীবনের ভালোবাসা তাকে দিয়েছি। কেবল তার মুখ থেকে 'বাবা-মা' শোনার জন্য। সময় কোথায় চলে গেল? ভালোভাবে অনুভব করার আগে বৃদ্ধ হয়েছে। হঠাত্ মুখ ভাঁজে ভরে গেছে।'
তোং তোং তোং আর চেন সি
১৪ বছর ধরে তোং তোং তোং ও চেন সি দম্পতি অনেক চলচ্চিত্রের জন্য সংগীত সৃষ্টি করেছেন। যেমন 'বেইজিংয়ের প্রেমের কাহিনী', 'আমরা বিয়ে করি', 'নেকড়ে', 'সিয়া লো খুব বিরক্তিকর', 'পাগল রেসিং কার' ইত্যাদি। ২০১৫ সাল পর্যন্ত যে চলচ্চিত্রে তারা সংগীত সৃষ্টি করেছেন, সে চলচ্চিত্রগুলোর মোট টিকিট আয় হয়েছে ৫৫০ কোটি ইউয়ান। ফলে এ দম্পতিকে বলা হয় '৫৫০ কোটি ইউয়ান স্বর্ণ দম্পতি'।
চলচ্চিত্র 'সিয়া লো অতি বিরক্তিকর' ২০১৫ সালে চীনের উত্পাদিত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে টিকিট আয়ের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। এ চলচ্চিত্র দেখার পর দর্শকরা সিনেমা হল থেকে বাইরে যাওয়ার সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিনেমার গানের সুর মুখে আসে। আমারও একই অবস্থা। কারণ সে গান শুনে মনে হয়, কেউ তোমাকে স্নিগ্ধভাবে আলিঙ্গন করছে, তোমার ক্লান্ত মনকে সান্ত্বনা দিচ্ছে। বন্ধুরা, শুনুন এ সিনেমার থিম সং 'একবার যথেষ্ট', গেয়েছেন ইয়াং চোং ওয়েই।
'একবার যথেষ্ট' গানটি 'সিয়া লো অতি বিরক্তিকর' সিনেমায় তিন বার প্রচারিত হয়। প্রথম দু'বার প্রধান অভিনেতা সিয়া লো ক্যাম্পাসে তার প্রিয় সহপাঠীর জন্য গেয়েছেন। কিন্তু সে সহপাঠী সিয়া লোকে পছন্দ করে না। সিয়া লো অনেক প্রচেষ্টা চালিয়েও তার মন জয় করতে পারে না। অথচ আরেকজন মেয়ে মা তোং মেই সবসময় সিয়ে লোর পিছনে অপেক্ষা করে এবং নীরবে তাকে ভালোবাসে। এ গান মা তোং মেইর জন্য সৃষ্টি না হলেও তার সবচেয়ে প্রিয় গানে পরিণত হয়। সিনেমা শেষে মা তোং মেই হাসপাতালে গিয়ে রোগশয্যায় চিকিত্সাধীন সিয়া লোর জন্য এ গানটি গেয়েছেন। বন্ধুরা, শুনুন মা তোং মেই'র অভিনেত্রী মা লির কন্ঠে গাওয়া 'এক বার যথেষ্ট' নামের গান। গানে বলা হয়েছে, 'তোমার হাসিমুখ দেখতে চাই। তোমার সঙ্গে খেলতে চাই। তোমাকে আমার কোলে নিতে চাই। আগের মিনিটে ঝগড়ায় আমাদের মুখ লাল হয়ে ছিল, পরের মিনিটে আমরা আবার মিলিত হয়েছে। তোমার চিত্কার ও কান্না আমি ভয় করি না। কারণ তুমি আমার গর্ব। আমার দৃষ্টি কেবল তোমার ওপর পড়ে। আমার মন অনেক আগে তোমার জন্য প্রস্তুত। তোমাকে নিয়ে পৃথিবী দেখার সুযোগ আমাকে দাও। আমরা সূর্যালোকের নিচে হাসবো। আমার একমাত্র চাওয়া তুমি।'
সিনেমা হলে 'সিয়া লো অতি বিরক্তিকর' দেখার সময় লক্ষ্য করবেন, প্রথমে দর্শকরা অনেক হাসছেন। কিন্তু চরিত্রের কাহিনী দেখতে দেখতে অনেকে চোখের পানি ফেলতে শুরু করেন। এ সিনেমায় প্রেমের অনুমান করা হয়েছে যে, যদি তোমাকে আরেকবার সুযোগ দেন, তুমি নিজের পছন্দের লোককে নির্বাচন করবে, নাকি তোমাকে ভালোবাসেন এমন লোককে নির্বাচন করবে?
তোং তোং তোং আর চেন সি
চেন সি আর তোং তোং তোং এ কথা ভেবে 'তোমাকে ভালোবাসেন এমন লোক পাওয়া সহজ নয়' নামে গান সৃষ্টি করেন। চেন সি লিখেছেন, 'তুমি মনে করো, জীবনে সব কিছু ঠিক মতো বাছাই করো নি। তোমার চাওয়া আর পাওয়া একই নয়। তুমি মনে করো, সময় আবার ফিরে আসতে পারে। আরেকজন তোমার সঙ্গী হলে দু'জনের প্রেম চিরস্থায়ী হবে। তুমি জানো না, এ বিশ্বে কে তোমার জন্য ভালো। তোমার জন্য সে সবকিছু ত্যাগ করতে পারে। তুমি তাকে কিছু না দিলেও সে কখনো বিরক্ত হবে না। সে সবসময় তোমার জন্য পরিশ্রম করতে ইচ্ছুক। তোমাকে এত ভালোবাসেন, এমন লোক পাওয়া খুব কঠিন। তুমি তাকে কষ্ট দিও না।'
চেন সি সবসময় বিশ্বাস করেন, তোং তোং তোং একজন সেরা সুরকার হবেন। যদিও অনেক দিন ধরে তার খ্যাতি ছিল না, তবে দু'জন কখনো এর জন্য চিন্তা করেন না। তারা কখনো সংগীত প্রতিযোগিতায় অংশ নেন না। তারা দৃঢ় মনোভাব নিয়ে সত্যিকার চলচ্চিত্র সংগীতজ্ঞ হতে চান।
২০১৪ সালে তারা টেলিভিশন নাটক 'আমরা বিয়ে করি' এর থিম সং লিখেছেন। গানটি সে সালে ২১তম 'প্রাচ্য বিলবোর্ড' এর শ্রেষ্ঠ রচয়িতা পুরস্কার পেয়েছে। তোং তোং তোং বলেন, আমাদের আশেপাশে অনেক বন্ধু আছে, বিয়ের বয়স হয়েছে, কিন্তু বিয়ের লোক খুঁজে পায় নি। আমি আর আমার স্ত্রী প্রেমের সময়ও সবসময় পরস্পরকে হারানোর ভয় ছিল। বিয়ের পর আমি ভাবি, হ্যাঁ, তুমি থাকলে কত ভালো। আমার ভাগ্য এতো ভাল।'
চেন সি বলেন, 'কেউ কেউ বলেন, আমাদের গান সরল। জটিলতা নেই। ঐতিহাসিক ভারী বিষয় নেই। কিন্তু আমাদের আসল জীবনও খুব সরল। এমন সরল বিষয় শ্রোতাদের মন আরো সহজে স্পর্শ করে।' বন্ধুরা, শুনুন তাদের গান 'অপেক্ষা করতে করতে অবশেষে তুমি এসেছো'। গেয়েছেন চাং লিয়াং ইং।
তোং তোং তোং ১৯৮১ সালে বেইজিংয়ে জন্মগ্রহণ করেন। চেন সি ১৯৮২ সালে শানতুংয়ে জন্মগ্রহণ করেন। এখন তারা চীনের টেলিভিশন নাটক ও সিনেমার সংগীত সৃষ্টির প্রধান শক্তিতে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের সংগীত সৃষ্টি করতে পারেন বলে তারা অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। তোং তোং তোং বলেন, 'আমি রক সংগীতও শুনি। তবে পপ সংগীত বেশি পছন্দ করি। আমি সিনেমা ও চলচ্চিত্রের জন্য সংগীত সৃষ্টি করা নিজের পেশা হিসেবে মেনে নেওয়ার পর সবসময় পরিবর্তনের প্রচেষ্টা চালাই। আমরা অনেক অনেক সিনেমার জন্য সংগীত সৃষ্টি করবো। প্রত্যেক কাজ আমাদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ'।
বন্ধুরা, অনুষ্ঠানের শেষে শুনুন তোং তোং তোং আর চেন সি সিনেমা 'সন্ন্যাসী পাহাড় থেকে নেমেছে' এর জন্য সৃষ্ট গান 'এক মুহূর্তের চিন্তাভাবনা'। গেয়েছেন চাং চিয়ে আর মো ওয়েন ওয়েই। এ গানটি ২০১৬ সালে ২০তম বিশ্ব চীনা গানের বিলবোর্ড আর এশিয়ায় প্রভাবশক্তি অনুষ্ঠানে বার্ষিক সেরা চলচ্চিত্র সংগীত নির্বাচিত হয়েছে।
বন্ধুরা, এতোক্ষণ আপনারা চীনের সংগীত মহলের নামকরা দম্পতি তোং তোং তোং ও চেন সির সংক্ষিপ্ত পরিচয় আর তাদের সৃষ্ট কয়েকটি গান শুনলেন। 'সুর ও বাণী' আসর আজকের মতো এখানে শেষ করছি। ভালো থাকুন সবাই। আবার কথা হবে। (ইয়ু / টুটুল)