সবাই জানেন, নবায়ন ও উদ্ভাবন হচ্ছে উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার মূল হাতিয়ার। থিয়েনচিন বেইজিংয়ের মত একটি কেন্দ্রশাসিত মহানগর। থিয়েনচিনের স্থানীয় সরকার থেকে শুরু করে শ্রমিক পর্যন্ত সবাই এ মহানগরের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। আজকের অনুষ্ঠানে আমি এ নিয়ে কিছু কথা বলবো।
বেইজিং-থিয়েনচিন-হ্য পেই রেলওয়ে নেটওয়ার্ক পরিকল্পনা গত বছরের শেষ দিকে অনুমোদিত হয়। বর্তমানে বেইজিং থেকে হ্য পেইয়ের একাধিক অঞ্চলকে সংযুক্তকারী রেলপথের নির্মাণকাজ চলছে। ইতোমধ্যেই রাজধানী অঞ্চল দ্রুতগতি লুপের হ্য পেই প্রদেশের লাংফাং লাই, বেইজিং থেকে হ্য পেই প্রদেশের ছিনহুয়াংদাও হাইওয়েই'র থিয়ানচিন লাইন ও বেইজিং-তাইওয়ান হাইওয়েই'র বেইজিং লাইন চালু হয়েছে। থিয়েনচিনের আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তি এলাকায় অবস্থিত প্রতিষ্ঠান কেইভিয়া ইলেস্ট্রিক এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজে অংশ নেয়। কোম্পানির বহুমুখী পরিচালনা বিভাগের পরিচালক মাদাম চাও ছিন বলেন, পরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি দায়িত্ব পালন করে। তিনি বলেন, 'আমাদের প্রতিষ্ঠানটি আধুনিক। কিন্তু আমাদের উত্পাদিত পণ্যের সংখ্যা কম। আমরা মূলত নকশা, গবেষণা, প্রযুক্তিগত সমর্থন ও পরিসেবার দায়িত্ব পালন করি। বর্তমানে আমরা নির্মাণপ্রক্রিয়া তত্ত্বাবধায়ক ও পরামর্শকের দায়িত্ব পালন করছি। এটিই আমাদের মূল কাজ। এ ছাড়া, আমরা কেন্দ্রীয় প্রযুক্তি এবং সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার গবেষণার কাজ করি।'
এ প্রতিষ্ঠানের গবেষণা যে শুধু চীনের প্রধান দু'টি রেলওয়েই--বেইজিং-কুয়াংচৌ ও বেইজিং-চিওলংতে ব্যবহৃত হয়েছে তা নয়, বরং বেইজিং-থিয়েনচিনসহ বিভিন্ন আন্তঃনগর লাইন এবং বেইজিং পাতালরেলের ছয় নম্বর, নয় নম্বর ও বিমানবন্দর লাইনেও ব্যবহৃত হয়।
প্রতিষ্ঠানটি জার্মানির আধুনিক প্রযুক্তি আমদানি করে। কিন্তু ওই প্রযুক্তির ভিত্তিতে চীনে কাজ করায় ব্যয় কমেছে অর্ধেক। এ সম্পর্কে চাও ছিন বলেন, 'আমরা আধুনিক প্রযুক্তি আমদানি করেছি। কিন্তু চীনে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করা ও এর জন্য বাজার পাওয়া কঠিন। অবশ্যে আমরা বাজার পেয়েছি। থিয়েনচিন শহরের পাঁচ নম্বর পাতালরেল নির্মাণে আমাদের প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া, বেইজিং, নিংপো, ছাংশা শহরের অধিকাংশ সংশ্লিষ্ট পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আমাদের প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়। আমাদের প্রযুক্তি পূর্বের আমদানিকৃত বিদেশি প্রযুক্তির স্থলাভিষিক্ত হয়। এর মাধ্যমে ব্যয় অর্ধেক কমেছে।'
বেইজিং, থিয়েনচিন ও হ্য পেই চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নবায়ন ও উদ্ভাবনের কেন্দ্রীয় অঞ্চল। কেইভিয়ার মতো বিদেশি আধুনিক প্রযুক্তি আমদানিনির্ভর প্রতিষ্ঠান ছাড়াও টিডিকিউএস'র মতো প্রযুক্তি রফতানি প্রতিষ্ঠানও আছে এ সব অঞ্চলে।
চীনের স্মার্ট গ্রিড ও ডিস্ট্রিবিউশান মাইক্রোগ্রিড বাজারে টিডিকিউএস'র অবস্থান এক নম্বরে। এ ছাড়া, টিডিকিউএস হল বিশ্বের প্রাচীনতম বিদ্যুত্ কনসালটিং প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি। প্রতিষ্ঠানটির মাইক্রোগ্রিড প্রযুক্তি আন্তর্জাতিক মানের। কানাডার প্রথম মাইক্রোগ্রিড পরিকল্পনা টিডিকিউএস প্রণয়ন করে। প্রতিষ্ঠানটির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার লি সিয়াও ইউ বলেন, টিডিকিউএস বেইজিং, থিয়েনচিন ও প্য পেইয়ের বহু বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করছে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে উত্পাদন ও গবেষণা নিয়ে আমাদের সহযোগিতার সম্পর্ক আছে। সেজন্য মৌলিক তত্ত্ব গবেষণা, প্রধান প্রযুক্তি উন্নয়ন, প্রযুক্তি উত্পাদনে পরিবর্তন ও পণ্যদ্রব্যের প্রকৌশলের ক্ষেত্রে আমরা বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করি।'
মাইক্রোগ্রিড প্রযুক্তির মাধ্যমে আরো কার্যকরভাবে জ্বালানিসম্পদ ব্যবহার করা যায়। এ প্রযুক্তি বেইজিং, থিয়েনচিন ও হ্য পেইকে একযোগে ধোঁয়াশা ও পরিবেশদূষণ মোকাবিলায় সাহায্য করবে। এ সম্পর্কে লি সিয়াও ইউ বলেন, 'মাইক্রোগ্রিড এক ধরনের প্রযুক্তি। বেইজিং, থিয়েনচিন ও হ্য পেইয়ের ধোঁয়াশা মোকাবিলার একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা হল কয়লার ব্যবহার কমানো। অথচ কয়লা থেকে বিদ্যুত হয়। আসলে মাইক্রোগ্রিড হচ্চে জ্বালানিসম্পদের বহুমুখী ব্যবহারের ধারণা। আসলে মাইক্রোগ্রিড নেট, মাইক্রো জ্বালানি প্রযুক্তি, জ্বালানি সংস্কার ও জ্বালানিসম্পদের বহুমুখী ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশি ভূমিকা পালন করে।'
টিডিকিউএস'র মত প্রতিষ্ঠান থিয়েনচিনে প্রায় ৯০ হাজারটি রয়েছে। এর মধ্যে প্রতি বছর ১০ কোটি ইউয়ান মূল্যের পণ্য উত্পদান করে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার।
জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, বেইজিং, থিয়েনচিন ও হ্য পেই সংস্কার এবং নবায়ন ও উদ্ভাবন পরিকল্পনা অব্যাহতভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। নবায়ন ও উদ্ভাবন এবং প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলাকে সমর্থন করা হল জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কারের একটি দায়িত্ব। এ সম্পর্কে জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনের মুখপাত্র চাও ছেন সিন সম্প্রতি বেইজিংয়ে বলেন, 'বেইজিং, থিয়েনচিন ও হ্য পেই অঞ্চলে সার্বিক নবায়ন ও উদ্ভাবন এবং সংস্কারের পরীক্ষামূলক পরিকল্পনা অনুমোদন করে রাষ্ট্রীয় পরিষদ। বেইজিং, থিয়েনচিন ও হ্য পেইয়ে ব্যবসায়ী ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর ইউনিয়ন গড়ে উঠেছে। তিনটি শহর ও প্রদেশে নবায়ন ও উদ্ভাবন এবং প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলাকে সমর্থন দিতে দুই শতাধিক প্ল্যাটফর্মও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।'
এ ধরণের প্ল্যাটফর্মের লক্ষ্য হল অভিজ্ঞতা বিনিময় করা। কিন্তু শুধুমাত্র বেইজিং, থিয়েনচিন ও হ্য পেই অঞ্চলে নয়, বরং সারা বিশ্বের প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাত দিনের জন্য বিনামূল্যে অফিস সরবরাহ করে এ প্লার্টফর্মগুলো।
গত মার্চে আয়োজিত এনপিসি'র অধিবেশনে থিয়েনচিন শহরের মেয়র ওয়াং দং ফেং সরকারি কর্মপ্রতিবেদনে বেইজিং, থিয়েনচিন ও হ্য পেই একত্রীকরণ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, 'আমরা বেইজিংয়ের সাথে থিয়েনচিন বিনহাই-চুকুয়ানছুন বিজ্ঞান প্রযুক্তি ক্ষেত্র নির্মাণের সহযোগিতাচুক্তি স্বাক্ষর করেছি। দুই শহর একসাথে ভবিষ্যত্ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনগরসহ ধারাবাহিক প্ল্যাটফর্ম নির্মাণকাজে সহযোগিতা চালায়। আমরা হ্য পেইয়ের সাথেও সহযোগিতাচুক্তি স্বাক্ষর করেছি। এ পর্যন্ত বেইজিংয়ের প্রতিষ্ঠাগুলো থিয়েনচিনে বিনিয়োগ করেছে ১৭০০০ কোটি ইউয়ান এবং হ্য পেইয়ের প্রতিষ্ঠানগুলো থিয়েনচিনে বিনিয়োগ করেছে ২৯৪০ কোটি ইউয়ান। থিয়েনচিনের প্রতিষ্ঠানগুলো হ্য পেই প্রদেশে বিনিয়োগ করেছে ৪০০০ কোটি ইউয়ানেরও বেশি।'
দেশের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২০ সালে বেইজিং, থিয়েনচিন ও হ্য পেইকে নিয়ে গড়ে উঠকে প্রথম পর্যায়ের আন্তর্জাতিক বিমানচক্রকেন্দ্র ও বিশ্ব পর্যায়ের আধুনিক বন্দরগোষ্ঠী। থিয়েনচিন উত্তর চীনের গুরুত্বপূর্ণ বন্দরশহর হিসেবে আরও সমৃদ্ধ হবে।