0419
|
মালদ্বীপ মানেই সাদা সৈকত, পরিষ্কার সমুদ্র এবং নীল আকাশ। মালদ্বীপ তার পর্যটনশিল্পের কল্যাণে দক্ষিণ এশিয়ায় মাথাপিছু জিডিপি'র হিসেবে এগিয়ে আছে। প্রকৃতি মালদ্বীপকে দু'হাতে দিয়েছে। তবে, মালদ্বীপ যেহেতু অনেক ছোটবড় দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত, সেহেতু একটি দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপে যাওয়া সহজ কাজ নয়। এ কঠিন কাজটাকে সহজ করতে চীনা কোম্পানি 'চীন-মালদ্বীপ মৈত্রী সেতু' নির্মাণের দায়িত্ব পালন করছে।
২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং মালদ্বীপ সফর করেন এবং মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লা ইয়ামিন আব্দুল গাইয়ুমের সঙ্গে সাক্ষাত্কালে বলেন, রাজধানী মালের সঙ্গে বিমানবন্দরসমৃদ্ধ দ্বীপের যোগাযোগের সুবিধার জন্য একটি সেতু নির্মাণ করে দেবে চীন। প্রস্তাবিত সেই সেতুর নাম হবে 'চীন-মালদ্বীপ মৈত্রী সেতু'। এ ব্যাপারে তখন দুই প্রেসিডেন্ট একমত হন।
মালদ্বীপে চীনা অস্থায়ী রাষ্ট্রদূত ইয়াং ইন বলেন, এ সেতু মালদ্বীপের উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন ,"মালদ্বীপের মাথাপিছু জিডিপি দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি। দেশটি চীন উত্থাপিত 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগকে বরাবরই সমর্থন দিয়ে আসছে। এ উদ্যোগের আওতায় চীন-মালদ্বীপ মৈত্রী সেতু প্রধান একটি প্রকল্প। এ ছাড়া, বিমানবন্দর ও বাড়িঘরসংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজও চলছে।"
চীন-মালদ্বীপ মৈত্রী সেতু হবে ২১ শতকের সামুদ্রিক রেশমপথের একটি অংশ এবং একটি দৃষ্টান্তমূলক প্রকল্প। মালদ্বীপের গৃহায়ন ও নির্মাণমন্ত্রী মোহামেদ মুইজু জানান, সেতুটি নির্মিত হলে মালের আবাসিক ও পরিবহনব্যবস্থার উন্নতি হবে এবং মালদ্বীপের কেন্দ্রীয় শহর হিসেবে মালের গুরুত্ব বাড়বে। তিনি বলেন "বিশেষ ভৌগোলিক কারণে অন্য যে-কোনো দেশের চেয়ে মালদ্বীপ ভিন্ন। মানুষ বিভিন্ন ছোট ছোট দ্বীপে বসবাস করে এবং দ্বীপের সাথে দ্বীপের যোগাযোগ তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক ব্যাপার। সেতুর সাহায্যে আমরা স্থলপথে দ্বীপগুলোর মধ্যে আসা-যাওয়া করতে পারব।"
কোনো সন্দেহ নেই যে চীন-মালদ্বীপ মৈত্রী সেতু মালদ্বীপের মানুষের জীবনে বড় পরিবর্তন এনে নেবে। তবে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা সহজ নয়। এটি হবে চীনা কোম্পানির জন্য নতুন এক অভিজ্ঞতা। এ প্রকল্পের নির্মাণ প্রযুক্তি দলের প্রধান লিন সু খুই বলেন "উচ্চ বিকিরণ ও তাপমাত্রা, উচ্চ আর্দ্রতা ও উচ্চ লবণাক্ত পরিবেশ আমাদের কাজকে কঠিন করে তুলেছে। প্রতিবছরের বর্ষাকালে এখানে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ দেখা দেয়। চলতি বছরে দেখা দিয়েছিল এজ১এন১ ফ্লুও।"
নির্মাণস্থলে প্রচণ্ড গরম। কিন্তু নির্মাণকর্মীদের ঠিকই সম্পূর্ণ নিরাপত্তা সরঞ্জাম পরেই কাজ করতে হয়। এতে তাদের কষ্ট হয়, তাদের শরীর থেকে প্রচুর পানি বেরিয়ে যায় ঘাম আকারে। প্রতিদিন এক একেকজন কর্মীকে অন্তত ৫ কেজি পানি পান করতে হয়। অন্যদিকে, উচ্চ লবণাক্ততা ও শৈত্যে নির্মাণসামগ্রীর ক্ষতি হয়। নির্মাণাধীন সেতুর নিরাপত্তার জন্যও এটা বড় একটি চ্যালেঞ্জ। চীনা নির্মাণদলের এ ব্যাপারে কোনো পূর্বঅভিজ্ঞতা নেই। এ অবস্থায় চীনা প্রকৌশলীদের মাথা খাটিয়ে সমস্যার সমাধান করতে হয়।
চীনা বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ের চীন-মালদ্বীপ মৈত্রী সেতু প্রকল্পবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি লিউ লিং বলেন, নির্মাণকাজ সুষ্ঠভাবে চলছে। তিনি বলেন"মানুষ মালদ্বীপকে পর্যটনের স্বর্গ বলে ডাকে। তবে জায়গাটি কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নকারীর জন্য নরকস্বরূপ। শুরুতে আমরা যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলাম, সেগুলোর প্রায় অধিকাংশই সমাধান করা হয়েছে। আমরা আমাদের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি ভালোভাবেই।"