সুন্দর চীন-২০১৭ রেশমপথ পর্যটন বছর
  2017-04-18 16:07:10  cri
সুপ্রিয় বন্ধুরা, আপনারা শুনছেন চীন আন্তর্জাতিক বেতার থেকে প্রচারিত বাংলা অনুষ্ঠান 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি'। আর এ অনুষ্ঠানে আপনাদের সঙ্গে আছি আমি আপনাদের বন্ধু ওয়াং ছুই ইয়াং জিনিয়া।

প্রথমে হংকংয়ে অনুষ্ঠিত 'সুন্দর চীন-২০১৭ রেশমপথ পর্যটন বছর' শিরোনামে একটি সাংস্কৃতিক প্রবন্ধ শুনবো।

চীনের জাতীয় পর্যটন ব্যুরোর উদ্যোগে 'সুন্দর চীন—২০১৭ রেশমপথ পর্যটন বছর' অথাত্ 'হু-খুন দ্রুত গতির রেল পর্যটন নাইট' অনুষ্ঠান ৭ এপ্রিল হংকংয়ের ক্রাউন প্লাজা হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়। হংকংয়ে চীনের কেন্দ্রীয় সরকারের লিয়াজোঁ অফিসের অর্থনৈতিক বিভাগের নেতৃবৃন্দ এবং মূলভূভাগের ২৪ টি প্রদেশ ও শহরের পর্যটন কমিটি ও ব্যুরোর সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তি, শতাধিক পর্যটন শিল্প ও মিডিয়া ব্যক্তিসহ দুই শতাধিক লোক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

'হু-খুন দ্রুত গতির রেল পর্যটন নাইট' হলো 'সুন্দর চীন—২০১৭ হংকং ও ম্যাকাও প্রচারণামূলক কার্যক্রমের দ্বিতীয় স্টেশন। 'হু-খুন দ্রুত গতির রেল পর্যটন নাইট'-এ অংশগ্রহণকারী অতিথিদের সামনে এক বৈশিষ্ট্যময় হাইনান জাতির সংস্কৃতি এবং হু-খুন দ্রুত গতির রেল লাইনের সমৃদ্ধ পর্যটন সম্পদ ও বিভিন্ন পর্যটন পণ্য প্রদর্শন করা হয়।

হু-খুন দ্রুত গতির রেল হলো চীনের পূর্ব-পশ্চিম দিকের দীর্ঘতম দূরত্বে, সবচেয়ে বেশি প্রদেশ অতিক্রম করার একটি দ্রুত গতির রেল। এর মধ্যে রয়েছে শাংহাই, চিয়ে চিয়াং, চিয়াং সি, হু নান, কুই চৌ ও ইয়ুন নানসহ ছয়টি প্রদেশ। হু-খুন দ্রুত গতির রেল লাইনটি সংশ্লিষ্ট লাইন বরাবর পর্যটন উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ এনেছে।

৮ থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত 'সুন্দর চীন—২০১৭ রেশমপথ পর্যটন বছর' প্রচার অনুষ্ঠান হংকংয়ের লি হুও মহাচত্বরে অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যময় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে হংকং নাগরিকদের কাছে মূলভূভাগের রঙিন পর্যটন সম্পদ ও পণ্য প্রদর্শন করা হয়।

বন্ধুরা, এখন 'বেলজিয়ামে 'চীনা সাংস্কৃতিক সপ্তাহ' আয়োজিত শিরোনামে একটি প্রতিবেদন শুনবেন।

বেলজিয়ামে চীনের দূতাবাস ও বেলজিয়ামের হু-ই শহরের সরকারের যৌথ উদ্যোগে 'চীনা সাংস্কৃতিক সপ্তাহ' স্থানীয় সময় ৮ এপ্রিল বিকেলে জাকজকমপূর্ণভাবে উদ্বোধন হয়। বেলজিয়ামে চীনা রাষ্ট্রদূত ছু সিং অনুষ্ঠানে বলেন, 'চীনা সাংস্কৃতিক সপ্তাহ' বহু দৃষ্টিকোণ চীনা সংস্কৃতি প্রদর্শন করা ছাড়া দু'পক্ষের পারস্পরিক সমঝোতার সুযোগ বয়ে এনেছে। বিস্তারিত শুনবেন সিআরআই'র প্রতিবেদনে।

রেকর্ড ১

হু-ই শহরের 'চীনা সাংস্কৃতিক সপ্তাহ' অনুষ্ঠানে শাংহাই শহরের মু অও নাটকের দল প্রথমে অনুষ্ঠান পরিবেশন করে। প্রায় এক ঘণ্টার অনুষ্ঠানে নাটক দলটি দর্শকদের সামনে শাংহাইয়ের নানান রকম ক্লাসিক পুতুল নাটক পরিবেশন করে, যা দর্শকদের ভীষণ মুগ্ধ করে।

সংবাদদাতার কাছে বসা এক বৃদ্ধা দর্শক ভীষণ খুশি নিয়ে সংবাদদাতাকে বলেন, অনুষ্ঠানের কোনো কোনো নাট্যোক্তি চীনা ভাষায় বলা হলেও ইংরেজি ভাষার ধারাবিবরণী আছে। এই অনুষ্ঠান এত চিত্তাকর্ষক যে তিনি খুবই উপভোগ করেছেন।

তিনি বলেন, "আগে আমি টেলিভিশনে এ ধরণের অনুষ্ঠান দেখেছি, কিন্তু এবার প্রথম বারের মত ঘটনাস্থলে চীনা পুতুল নাটক দেখি। অনেক অনেক ভালো লেগেছে। পুতুলগুলোর কাপড় খুব চমত্কার। এমনকি পুতুলের মুখও খুব সুন্দর ও জীবন্ত।"

বেলজিয়ামে চীনা রাষ্ট্রদূত ছু সিং, হু-ই শহরের মেয়র ক্রিস্টোফার ও শহরের অন্য এক কর্মকর্তা এক সঙ্গে চীনা পুতুল নাটক উপভোগ করেন। চীনা ঐতিহ্যবাহী শিল্প ও আধুনিক উপাদান তাদের মনে গভীর ছাপ ফেলে। তার পর তারা রন্ধন প্রক্রিয়া দেখেন, হু-ই শহরের নাগরিকদের সঙ্গে চীনা খাবার খান এবং চীনা খাদ্য সংস্কৃতি জানতে পারেন।

জানা গেছে, ৮ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত 'চীনা সাংস্কৃতিক সপ্তাহে' চীনা আলোকচিত্র প্রদর্শনী, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, চীনা ঐতিহ্যবাহী নৃত্য ও লোকসঙ্গীতসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে। হু-ই শহরের পৌর ভবন ও অনুষ্ঠানস্থলে ব্যাপকভাবে চীনা পতাকা চোখে পড়ে। এতে চীনা সংস্কৃতির প্রতি হু-ই শহরের গুরুত্বারোপ দেখা যায়।

চীনা রাষ্ট্রদূত ছু সিং সিআরআই'র এক সাক্ষাত্কারে বলেন, হু-ই একটি প্রভাবশালী শহর। 'চীনা সাংস্কৃতিক সপ্তাহ' কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দু'পক্ষের সমঝোতা বাড়বে। তিনি বলেন,

"সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, হু-ই শহরে সাংস্কৃতিক চেতনার গুরুত্ব অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। চীনের বহু পর্যটক বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা ভ্রমণ করেছে। তাদের দেখে আমরা বাণিজ্যিক সুযোগ দেখেছি। আমরা জানতে পেরেছি যে, চীনের স্থিতিশীল, দ্রুত ও সমৃদ্ধ উন্নয়ন অবশ্যই হু-ই শহরের শিল্প ও কৃষিশিল্পের জন্য সহযোগিতার সুযোগ বয়ে আনতে পারবে। একই সঙ্গে চীনা দূতাবাসও মনে করে, বেলজিয়ামের বিভিন্ন শহরকে জানানোর প্রয়োজন আছে যে, সাংস্কৃতিক বিনিময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দু'পক্ষের সহযোগিতার ভিত্তি হলো উভয়ের সাংস্কৃতিক সমঝোতা, তার পর সহযোগিতা আরো সুষ্ঠুভাবে চালতে পারবে। সেজন্য এবার 'চীনা সাংস্কৃতিক সপ্তাহ' আমরা আয়োজন করি।"

হু-ই শহরের মেয়র বলেন, তার শহরে 'চীনা সাংস্কৃতিক সপ্তাহ' আয়োজন করে তিনি খুব খুশি । তিনি বলেন,

"চীনা সাংস্কৃতিক সপ্তাহ আয়োজন করা আমাদের জন্য সৌভাগ্যের একটি বিষয়।"

এদিন এক ভাষণে তিনি আরো বলেন, চীনের উন্নয়নের গতি আমাদের মনে গভীর ছাপ ফেলেছে। তিনি আশা করেন হু-ই শহরের প্রচুর সাংস্কৃতিক সম্পদ ও দ্রব্য জানতে পারবে চীনারা।

সুপ্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠান শেষের আগে কয়েকটি সাংস্কৃতিক খবর শুনবো।

১৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় ভারতে চীনের দূতাবাস, চীনের দিয়াওয়ুতাই রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ও ভারতের তাজ প্যালেস হোটেলের যৌথ উদ্যোগে 'চীন দিয়াওয়ুতাই সুস্বাদু খাদ্য উৎসব' নয়াদিল্লির তাজ প্যালেস হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়। ভারতে চীনের রাষ্ট্রদূত লুও চাও হুই ও তার স্ত্রী চিয়াং ই লি, দিয়াওয়ুতাই রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনের পরিচালক চিয়াং চুন সাই এতে উপস্থিত ছিলেন। তা, ছাড়া ভারতের রেলমন্ত্রী, সরকারি কর্মকর্তা, থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ও মিডিয়ার বিভিন্ন ব্যক্তি এবং ভারতে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতসহ শতাধিক অতিথি এতে অংশ নেন।

প্রাণবন্ত সিংহ নাচ এবং আলো প্রদর্শনীর পর চীনা ঐতিহ্যবাহী খাবার পর্ব শুরু হয়। দিয়াওয়ুতাই রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনের ৫ জন সেফ ১২টি সুস্বাদু খাবারের পাত্র অতিথিদের সামনে পরিবেশন করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত লুও এক ভাষণে বলেন, খাবার চীনা সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তিনি বলেন, ইতিহাসে চীন ও ভারতের খাবার সংস্কৃতিতে পারস্পরিক সম্মান রয়েছে, পারস্পরিক প্রভাবও ফেলেছে। এবার এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভারতীয় জনগণ চীনা খাবার ও সংস্কৃতি সম্পর্কে আরো ভালোভাবে জানতে পারবে। এ অনুষ্ঠান দু'দেশের পর্যটন সহযোগিতা এগিয়ে নিয়ে যাবে। দু'দেশের জনগণের বিনিময় ও মৈত্রীর উন্নয়ন বেগবান করবে।

ভারতের রেলমন্ত্রী ভাষণে চীনা খাবারের উচ্চ পর্যায়ের প্রশংসা করেন। তিনি আশা করেন, ভারতে আরো বেশি চীনা রেস্তোরাঁ চালু হবে।

সংস্কৃতি 'এক অঞ্চল, এক পথ'-এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, যা দেশ ও দেশের সম্পর্কের উন্নয়নের উৎস। সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যমে বেসরকারি বিনিময় উন্নত হয়, জনগণের মধ্যে আরো ভালো সমঝোতা তৈরি হয়। চলতি বছর মালয়েশিয়ায় একটি চীনা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা দু'দেশের সাংস্কৃতিক বিনিময়ের নতুন ব্র্যান্ড ও প্ল্যাটফর্মে পরিণত হবে। বিস্তারিত শুনবেন মালয়েশিয়ায় সিআরআই'র সংবাদদাতার প্রতিবেদনে।

ইতিবাচক প্রস্তুতি ও চেষ্টার মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় চীনা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র চলতি বছর নির্মিত হবে। মালয়েশিয়ায় চীনা দূতাবাসের সাংস্কৃতিক বিভাগের পরিচালক চিয়াং চিয়ে সিন বলেন, "২০১৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত, দু'বছর সময়ের মধ্যে, আমরা ইতিবাচকভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় চীনা সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট প্রাথমিক গবেষণা ও প্রাথমিক সাইট নির্বাচন কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। আমরা আশা করি একটি আরো নিখুঁত, আধুনিক, অপেক্ষাকৃত বড় চীনা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে পারবো।"

চিয়াং চিয়ে সিন বলেন, চীন ও মালয়েশিয়ার সম্পর্ক বরাবরই ভালো বলে সে দেশে চীনা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দু'দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, সাংস্কৃতিক ও সামরিক নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের সম্পর্কের দ্রুত ও কার্যকর উন্নয়ন হয়েছে। বিশেষ করে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে। দু'দেশের সরকারি বা বেসরকারি বিনিময় যথেষ্ট তত্পর ছিল। মালয়েশিয়া বহুজাতিক একটি দেশ, বহুসংস্কৃতির একটি দেশ। দু'দেশের সাংস্কৃতিক যোগাযোগ কয়েক'শ বছর ধরে বজায় রয়েছে। এ শক্তিশালী ভিত্তি দু'দেশের ভবিষ্যতের সাংস্কৃতিক বিনিময়ের একটি সুভবিষ্যত তৈরি করেছে।

মালয়েশিয়ায় চীনা সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পাঁচটি প্রধান লক্ষ্য আছে। তা হলো- দেশের অবস্থা প্রচার, ধারণা বিনিময়, সংস্কৃতি প্রদর্শন, শিক্ষা প্রশিক্ষণ ও তথ্য সেবা। উচ্চ পর্যায়ের সাংস্কৃতিক প্রদর্শন, বিভিন্ন সামাজিক মহলের দর্শকদের প্রস্তুতিমূলক চীনাভাষা ক্লাস, প্রচুর বই সম্পদের গ্রন্থাগার ও ডিজিটাল গ্রন্থাগারসহ বিভিন্ন চীনা সাংস্কৃতিক সম্পদ মালয়েশিয়ার জনগণের কাছে তুলে ধরা।

প্রিয় শ্রোতা, আজকের অনুষ্ঠান আপনাদের কেমন লাগলো? আপনারা যদি 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' বিষয়ক কোনো কিছু জানতে বা আলোচনা করতে চান, তাহলে আমাকে চিঠি লিখবেন বা ই-মেইল করবেন। আপনাদের কাছ থেকে চমত্কার পরামর্শ আশা করছি। আর আপনাদের জানিয়ে রাখি, আমার ইমেইল ঠিকানা হলো, hawaiicoffee@163.com

চিঠিতে প্রথমে লিখবেন, 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' অনুষ্ঠানের 'প্রস্তাব বা মতামত'। আপনাদের চিঠির অপেক্ষায় রইলাম।

বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠান এখানেই শেষ করছি। অনুষ্ঠান শোনার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আগামী সপ্তাহে একই দিন, একই সময় আপনাদের সঙ্গে আবারো কথা হবে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাইচিয়ান। (জিনিয়া/টুটুল)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040