0416shenghuo.mp3
|
সম্প্রতি স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবসাইটে বেইজিং প্রবীণ গবেষণালয়ের সাবেক প্রধান অধ্যাপক কাও ফাং খুনের একটি সাক্ষাত্কার প্রকাশিত হয়। অধ্যাপক কাও বলেন, যারা বসন্তকালে জন্মগ্রহণ করেন, তাদের পেটের অবস্থা খানিকটা নাজুক থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মিসৌরি রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরিপে বলা হয়, বসন্তকালে যারা জন্মগ্রহণ করেন, তাদের পেটের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি এবং লেখাপড়ার আগ্রহও তুলনামূলকভাবে কম। ব্রিটেনের রাষ্ট্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর গবেষকরা দেশটির ২০১১ সালের জনগণনার পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে বলেন যে, এপ্রিল মাসে জন্মগ্রহণকারীদের আইকিউ খানিকটা নিম্ন পর্যায়ের হয়ে থাকে। এমনকি, এই মাসে জন্মগ্রহণকারীদের মধ্যে অসুস্থ হবার প্রবণতাও বেশি। কেন এমনটা হয়? দুটো ফ্যাক্টর এ ক্ষেত্রে বিবেচ্য: এক. গর্ভবতী নারী পর্যাপ্ত সূর্যালোক পেলেন কি না; এবং দুই. বসন্তকালে তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং বিভিন্ন খাবারে সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে ব্যাক্টেরিয়ার পরিমাণ। বসন্তকালে জন্ম নেওয়া শিশুকেও এ ধরণের খাবার খেতে হয়। এ সময় নবজাতক শিশুদের পেট সহজেই ব্যাক্টেরিয়ার আক্রমণের শিকার হয়। এই আক্রমণ থেকে তাদের যে ক্ষতি হয় তা বড় হবার পরও তাদের ভোগায়।
যারা গ্রীষ্মকালে জন্মগ্রহণ করেন, তারা তুলনামূলকভাবে আমোদপ্রবণ হন। ঋতু একজনের চরিত্রের ওপর প্রভাব ফেলে। যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন যে, যারা গ্রীষ্মকালে জন্মগ্রহণ করেন, তারা হাসিখুশি থাকেন। কিন্তু শীতকালে জন্ম-নেওয়া মানুষ তুলনামূলকভাবে বেশিই বিষন্ন হয়ে থাকেন। গবেষকরা মনে করেন, এর সম্পর্ক আছে বাইরের তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, সুর্যরশ্মি এবং গর্ভবতী মায়ের খাদ্যাভ্যাসসহ বিভিন্ন মৌসুমী ফ্যাক্টরের সাথে। আরেকটি বিষয় উল্লেখযোগ্য। আর সেটি হচ্ছে, ২ লাখ ৭০ হাজার শিশুর দৃষ্টিশক্তি নিয়ে জরিপ চালানো হয়েছিল ইসরাইলে। জরিপের ফল অনুসারে, গ্রীষ্মকালে জন্ম-নেওয়া শিশুরা গুরুতর ও মাঝারি পর্যায়ের ক্ষীণদৃষ্টি রোগে ভুগে থাকে। গবেষকরা মনে করেন, এটি সম্ভবত গ্রীষ্মকালের প্রচুর সূর্যালোকের প্রভাব।
যারা শরত্কালে জন্মগ্রহণ করেন, তাদের আয়ু তুলনামূলকভাবে বেশি হয়। জার্মানির ম্যাক্স প্লাঙ্ক লোকসংখ্যা গবেষণাকেন্দ্রের প্রকাশিত এক পরিসংখ্যান থেকে জনা গেছে, শরত্কালে যারা জন্মগ্রহণ করেন, তাদের আয়ু তুলনামূলকভাবে বেশি এবং বৃদ্ধাবস্থাতেও তারা সহজে রোগবালাইয়ে আক্রান্ত হন না। এ ছাড়া, ব্রিটেনের এক জরিপের ফল অনুসারে, সেপ্টেম্বরে জন্ম-নেওয়া শিশুর লেখাপড়ার মান সাধারণভাবে অন্যান্য মাসে জন্ম-নেওয়া শিশুর চেয়ে ভালো।
শীতকালে যারা জন্মগ্রহণ করেন, তারা তুলনামূলকভাবে অনিদ্রায় ভুগে থাকেন। বেইজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় হাসপাতালের ঘুমকেন্দ্রের প্রকাশিত 'অনিদ্রা রোগীর জন্মদিনসংক্রান্ত রিপোর্টে' বলা হয়, হাসপাতালের রোগীদের মধ্যে অনিদ্রায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের ৪০ শতাংশের জন্ম শীতকালে। অন্যদিকে গ্রীষ্মকালে জন্ম-নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে এ রোগে আক্রান্তদের হার মাত্র ১৬ শতাংশ। এই ক্ষেত্রে গবেষকরা মনে করেন, শীতকালে আবহাওয়া ঠাণ্ডা এবং দিন-রাত ব্যবধান বেশি থাকাসহ বিভিন্ন কারণে মায়ের পেটে ভ্রুণের মস্তিষ্ক বৃদ্ধির প্রক্রিয়ায় বাধাগ্রস্ত হয়। ডেনমার্কের গবেষকরা আরও আবিষ্কার করেছেন যে, যারা শীতকালে জন্মগ্রহণ করেন, তারা তুলনামূলকভাবে বেশি মানসিক অসুস্থতায় ভোগেন। পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, শীতকালে জন্ম-নেওয়া মানুষের মধ্যে সীত্সফ্রেনীয়্যা ও বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হওয়ার হার অন্যান্য মাসে জন্মগ্রহণকারীদের চেয়ে ৮ শতাংশ বেশি।
জন্মদিনের ওপর দীর্ঘায়ু হওয়া না-হওয়া নির্ভর করে কি না, এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত নন। তাদের মত হচ্ছে, এর ব্যতিক্রম হতে পারে। বেইজিং প্রবীণ চিকিত্সা গবেষণালয়ের সাবেক প্রধান অধ্যাপক কাও ফাং খুন মনে করেন, মৌসুমী ফ্যাক্টর ছাড়াও, বিভিন্ন সামাজিক পরিবেশও মানুষের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। যেমন, সংস্কৃতি, শিক্ষা, পরিবার, অঞ্চল ও স্বাস্থ্যসহ প্রভৃতি। সুতরাং, মানুষের দীর্ঘায়ু হওয়া না-হওয়ার বিষয়টি একটু জটিল। এ জন্য শুধু জন্মমাস বা মৌসুমকে দায়ী করা ঠিক নয়।
(ঊর্মি/আলিম)