গত মার্চের প্রথম দিকে চীন সরকার বাঘ ও চিতা সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে জাতীয় পার্ক নির্মাণের খসড়া প্রস্তাব অনুমোদন করে। চিলিন ও হেলংচিয়াং প্রদেশে এ পার্ক নির্মিত হবে। জানা গেছে, জাতীয় পার্কটি দুই প্রদেশের সংযোগস্থল লাওইয়েলিং এলাকায় নির্মিত হবে। পার্কটির মোট আয়তন হবে ১৪.৬ লাখ বর্গমিটার। এর মধ্যে ৭১ শতাংশ চিলিন প্রদেশে ও ২৯ শতাংশ হেলংচিয়াং প্রদেশে পড়বে।
উল্লেখ করা যেতে পারে, এতদঞ্চলে চীনের সবচেয়ে বেশি বাঘ ও চিতার বাস। এ ছাড়া, এলাকাটি গুরুত্বপূর্ণ বন্যপ্রাণী প্রজননকেন্দ্র এবং জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ। চিলিন প্রদেশের হুইছুন ও হেলংচিয়াংয়ের লাওইয়েলিং বাঘ ও চিতা সুরক্ষায় গড়ে তোলা দু'টি গুরুত্বপূর্ণ সংরক্ষিত অঞ্চল। পরিসংখ্যান অনুসারে, বহু বছরের প্রচেষ্টায় চীনের উত্তরপূর্বাঞ্চলে বাঘ ও চিতার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে এবং তা এখন ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। চীনের পরিবেশ বিজ্ঞান গবেষণা একাডেমির বিশেষজ্ঞ লি জুনশেং বলেন, সুরক্ষিত অঞ্চলে বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থা নেই। অঞ্চলটি পরিচালনার জন্য একাধিক বিভাগ থাকলেও, কোন বিভাগের কী দায়িত্ব, তা স্পষ্ট নয়। তাই এখানে প্রাকৃতিক সম্পদ সুরক্ষার কাজটি ঠিকমতো হচ্ছে না। তিনি বলেন, 'আমাদের সুরক্ষিত অঞ্চল জাতীয় পর্যায়ের। কিন্তু স্থানীয় সরকার এ অঞ্চল পরিচালনা করে। তাই এখানে সমস্যা রয়েছে। প্রাকৃতিক সম্পদ সুরক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন—এ দুটির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষিত হচ্ছে না অনেক ক্ষেত্রেই। এ সম্পর্ক অনেক জটিল।'
বেইজিং বন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক সুরক্ষা একাডেমির প্রধান লেই কুয়াংছুন মনে করেন, দেশের উত্তরপূর্বাঞ্চলে বাঘ ও চিতা সুরক্ষার জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় পার্ক নির্মিত হলে তা অনেক কার্যকর প্রমাণিত হবে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'অর্থনীতির উন্নয়ন ও ভূমির ব্যবহারের ধরনে পরিবর্তন বাঘ ও চিতা সুরক্ষার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে থাকে। দেশের উত্তরপূর্বাঞ্চলে বাঘ ও চিতার সংখ্যা আসলে খুবই কম। যদি বিভিন্ন প্রদেশ, শহর ও জেলা নিজ নিজ নিয়ম ও অর্থনীতির উন্নয়নের লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দিয়ে বাঘ ও চিতা সংরক্ষণের ধারণা বাস্তবায়িত করতে থাকে, তবে এ দুটি প্রজাতির সংখ্যা কমতে বাধ্য। কিন্তু জাতীয় পার্ক প্রতিষ্ঠিত হলে হেলংচিয়াং ও চিলিন প্রদেশে একটি পূর্ণাঙ্গ ও বড় প্রাকৃতিক পরিবেশব্যবস্থা গড়ে উঠবে। তখন এখানে বহু সুরক্ষিত এলাকা ও জলাভূমি পার্ক নির্মিত হবে; সংশ্লিষ্ট পরিচালনাব্যবস্থা ও নীতি প্রতিষ্ঠিত হবে।"
২০১৩ সালে চীনে জাতীয় পার্কব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ধারণা বাস্তবায়ন করা শুরু করে। ওই বছরের সরকারি কর্ম-প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতীয় পার্কব্যবস্থা নীতির খসড়া প্রকাশিত হবে। জানা গেছে, বর্তমানে চীনের সানচিয়াংইউয়ান, শেননংচিয়া, উইশান, ছিয়াচিয়াংইউয়ান, নানশান, মহাপ্রাচীর, শাঙ্গরিলাপুদাছুও ও পান্ডার জন্য জাতীয় পার্কব্যবস্থার পরীক্ষামূলক এলাকা রয়েছে। এ সব এলাকা ছিংহাই, হুবেই, ফুচিয়ান, চিলিন ও হেলংচিয়াংসহ মোট ১২টি প্রদেশের অংশ। লি জুন শেং বলেন, জাতীয় পার্ক নির্মাণের লক্ষ্য হচ্ছে, কেন্দ্রীয় সরকারকে সরাসরি প্রাকৃতিক সুরক্ষা এলাকা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'চীনে প্রাকৃতিক সুরক্ষা এলাকা, বন পার্ক, বিখ্যাত্ দৃশ্য এলাকা, জলাভূমি পার্ক ও ভূতাত্ত্বিক পার্ক রয়েছে। জাতীয় পার্কব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এসব এলাকা পরিচালনার অভিন্ন নিয়ম চালু হবে। তখন এসব এলাকায় আইনের আওতায় পর্যটনকেন্দ্রগুলোও পরিচালিত হবে।'
পাশাপাশি, চীনের জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশন অব্যাহতভাবে পরীক্ষামূলক এলাকাগুলো পরিচালনার দায়িত্ব পালন করতে থাকবে।