আজকের টপিক: বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস
  2017-04-03 20:39:08  cri

 


২ এপ্রিল বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। ২০০৮ সাল থেকে এ দিবস পালিত হয়ে আসছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা এ দিবস উদযাপন করার মাধ্যমে অটিজম রোগীদের ব্যাপারে জনসচেতনতা গড়ে তোলার চেষ্টা করে; অটিজম রোগীদের চিকিত্সায় আরও যত্নশীল হতে আমাদের উত্সাহিত করে।

অটিজম রোগীদের আরেকটি নাম 'তারার শিশু'। কারণ, দূরবর্তী ও অন্ধকার আকাশের তারার মতো এরা মানসিকভাবে অনেকটা একা একা বড় হয়। অটিজমকে সাধারণত স্নায়ুতন্ত্রের রোগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অটিজমে আক্রান্তরা অন্যদের সাথে স্বাভাবিক যোগাযোগ করতে পারে না। বিশ্বে প্রায় ৩.৫ কোটি মানুষ এ রোগে আক্রান্ত।

সহজভাবে বললে, অটিজমে আক্রান্ত রোগী যোগাযোগ সমস্যায় ভুগে থাকে। এরা অন্যের সাথে তেমন একটা কথা বলে না। নিজের মতো থাকে। নিজের পছন্দের কাজটিই কেবল করতে থাকে। মানসিকভাবে তারা স্বাভাবিকভাবে বেড়েও ওঠে না। পরিসংখ্যান অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ৫০ জন শিশুর মধ্যে একজন এ রোগে আক্রান্ত। আর চীনে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে একজন এই রোগে কমবেশি আক্রান্ত। তাই বলা যায়, চীনে অটিজম রোগীর সংখ্যা প্রায় ১.৩ কোটি।

আগেই বলেছি, অটিজমে আক্রান্ত শিশুরা স্বাভাবিক বাচ্চাদের মতো সামাজিক হয় না। অন্যের সঙ্গে ভাব বিনিময়ে তারা অনীহা প্রকাশ করে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সমস্যা গুরুতর হয়। কারণ, তার সমবয়সীদের মতো তার আচরণ পরিণত হয় না।

অটিজম রোগীরা অন্যদের সাথে চোখের যোগাযোগ বা আই কনটাক্ট করে না; অন্যের ডাকে সাড়া দেয় না; অন্যের সামনে যেতে চায় না; অন্যদের আচরণ বা কাজ অনুকরণ করে না।

অটিজমের রোগীরা অপরিচিত লোকদের ভয় করে না এবং সমবয়সী বাচ্চাদের সাথেও খেলতে চায় না। যে কোনো ডাক বা শব্দ তাদের আকর্ষণ করে না। তারা হাসিখুশি থাকে না বা অন্যকে দেখে হাসে না। অন্যের সমস্যায় তারা দুঃখিতও হয় না।

বয়স বাড়ার সাথে সাথে তারা পিতামাতা ও স্বজনদের প্রতি খানিকটা বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব প্রদর্শন করলেও, স্বাভাবিক বাচ্চাদের মতো মানসিকভাবে পরিণত হয় না। তারা অন্যের সাথে যোগাযোগ করে নিজের মতো করে, স্বাভাবিক উপায়ে নয়। তারা নিজের কাজ বা খেলা নিয়ে আপনমনে ব্যস্ত থাকে।

বড় হওয়ার পর এ ধরনের রোগী অন্যদের সঙ্গে ভালো আচরণ করে না। প্রেম বা বিয়ে তাদের জীবনে আসার সুযোগই পায় না।

প্রশ্ন হচ্ছে: আমরা অটিজম রোগী বা বাচ্চাদের জন্য কী করতে পারি?

যারা এ রোগে আক্রান্ত হয়, তারা দূরবর্তী তারার মতোই একাকী। তবে তাদের মন অন্যদের মনোযোগ, সম্মান পেতে আগ্রহী। স্বাভাবিক বাচ্চাদের মতোই তারাও আমাদের ভালোবাসা ও মনোযোগ পাওয়ার হকদার।

অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের বিশেষ শিক্ষার ব্যবস্থা আছে। তাদেরকে বিশেষ যত্ন সহকারে ও কৌশলে শিক্ষা দিতে হয়। প্রতিটি অটিজমে আক্রান্ত শিশুর নিজস্ব পছন্দের কাজ বা খেলা থাকে। সেই কাজ বা খেলায় তাকে উত্সাহিত করে ধীরে ধীরে অন্য কাজ বা খেলায়ও তাকে আগ্রহী করে তোলার চেষ্টা করা হয়। তাদেরকে কোলাহলমুক্ত পরিবেশ থেকে দূরে রাখা জরুরি এবং তাদের সঙ্গে ছোট ছোট বাক্য দিয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করতে হবে। অটিজমের মাত্রা কমবেশি হতে পারে। যদি কোনো শিশু কম মাত্রার অটিজমে আক্রান্ত হয়, তবে যথাযথ প্রশিক্ষণ পেলে সে পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।

অটিজমে আক্রান্ত শিশুর পিতামাতার উচিত রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া এবং তার চিকিত্সা ও প্রশিক্ষণের জন্য বিশেষ স্কুলে নিয়ে যাওয়া। এ ক্ষেত্রে অবহেলা করা উচিত নয়। তাদেরকে তাদের বিশেষ শখ বা আগ্রহের ব্যাপারে উত্সাহ দিতে হবে এবং প্রশিক্ষকদের সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে তার জন্য বন্ধুত্বপূর্ণ ও আস্থাশীল পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে।

যদি স্কুলের সহপাঠীদের মধ্যে কেউ অটিজম রোগে আক্রান্ত হয়, তাহলে অন্যদের উচিত লেখাপড়া ও খেলাধুলায় তাকে বিশেষভাবে সহায়তা দেওয়া। ছুটি বা ক্লাসের শেষে তাদের সাথে খেলতে চেষ্টা করা উচিত। সমবয়সীদের উচিত অটিজম রোগীদের সাথে সখ্যতা তৈরির চেষ্টা করা।

আসলে অটিজম একটি ভয়াবহ রোগ নয়। এটা মানসিক রোগ। বছরে শুধু একটি দিনে এই রোগে আক্রান্তদের স্মরণ করলে চলবে না। তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, এ রোগে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে আক্রান্ত হয়নি। (সুবর্ণা/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040