ভাগাভাগির সাইকেল: সুবিধা ও ঝুঁকি

  2017-04-06 08:48:52  cri



'ভাগাভাগি অর্থনীতি'র অংশ হিসেবে 'ভাগাভাগির সাইকেল' সাইকেল বর্তমান চীনে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আগের অনুষ্ঠানেও আমরা এই 'ভাগাভাগির সাইকেল' সম্পর্কে আপনাদের জানিয়েছি।

শিশির: আমি এখন নিয়মিত 'ভাগাভাগির সাইকেল' চালিয়ে অফিস ও বাড়ির মধ্যে আসা-যাওয়া করি। আমার বাড়ি সিআরআই থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে। সাইকেল চালালে ১৫ মিনিট লাগে। আগে আমি বাসে বা হেঁটে অফিসে আসতাম। এখন এই সাইকেল আমার যাতায়াতকে সহজতর করেছে। বাসের চেয়ে সাইকেলের খচর কম এবং এর জন্য কোথাও অপেক্ষা করতে হয় না।

কোনো সন্দেহ নেই, ভাগাভাগি সাইকেল আমাদের জীবন অনেক সহজ করে দিয়েছে। তবে যে-কোনো একটি নতুন আইডিয়া বাস্তবায়ন করতে গেলে কিছু সমস্যাও মোকাবিলা করতে হয়। এই আইডিয়ার আওতায় যে সেবা দেওয়া হয়, সেটি গ্রহণকারীরাও নানান সমস্যায় পড়তে পারেন। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা 'ভাগাভাগি সাইকেল' সম্পর্কে সাধারণ মানুষের সন্দেহ ও চিন্তা তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

বেইজিং ছিয়ান মেনের কাছে একটি হু থুংয়ে দেখা গেলো ৫-৬টি সাইকেল জমে আছে। এগুলোর একটির আবার গদি নাই। একজন নিরাপত্তা কর্মী সাংবাদিকদের জানান, এখানে একসময় বর্জ্য ফেলা হতো এবং লোকজন এ পর্যন্ত এসে সাইকেল ছেড়ে দেন। এগুলো এখন আর কেউ ব্যবহার করে না।

 

অন্যদিকে, বেইজিং চাও ইয়াং এলাকার নান সি লি চু রোডের দু'পাশে দেখা যায় সর্বত্র সাইকেল। কোথায় কোথায় একটি সাইকেলের ওপর আরেকটি সাইকেল। ৪০০ মিটার রাস্তায় প্রায় ৪ হাজার সাইকেল। একজন বাসিন্দা জানালেন, এলাকায় ভাগাভাগি সাইকেলের মেরামতকেন্দ্র আছে, যা বসন্ত উত্সবের সময় চালু হয়েছে। প্রতিদিন বেইজিংয়ের অন্য জায়গা থেকে হাজার হাজার নষ্ট সাইকেল এখানে পাঠানো হয়।

আমাদের সংবাদদাতা বেইজিংয়ের অন্যান্য জায়গায়‌ও ঘুরে দেখেন। ১.৫ কিলোমিটার দূরেই দেখেন রাস্তায় রয়েছে ১৫টি মোবাইক সাইকেল এবং ৪০টি ওএফও সাইকেল। এগুলোর মধ্যে ৩টি মোবাইক ও ১৫টি ওএফও সাইকেল নষ্ট।

কোনো কোনো সাইকেলের কিউ আর কোড নষ্ট। ফলে স্ক্যান করে সাইকেলের লক খোলার উপায় নেই। কোনো কোনো সাইকেলের টায়ার বা চেন নষ্ট। তা ছাড়া, কেউ কেউ আবার কোনো সাইকেলে নিজের একটি তালা মেরে দেন, যাতে অন্যরা তা ব্যবহার করতে না-পারে।

নাম-প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সাইকেল মেরামতকর্মী জানান, প্রতিদিন অন্তত একশ' এবং সর্বোচ্চ হাজারটি সাইকেল মেরামত করা হয়। কিন্তু সেগুলো আবার কয়েকদিনের মধ্যেই নতুন ত্রুটি নিয়ে ফেরত আসে।

কোনো কোনো সাইকেল নিজে থেকেই নষ্ট হয়। আবার অপব্যবহারের কারণেও সাইকেল নষ্ট হয়। ব্যবহারকারীদের সবাই নৈতিক মানসম্পন্ন নন বা সিরিয়াসও নন।

উ হান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যপক সুন চিন মনে করেন, একটি শহরে ভাগাভাগি সাইকেলের প্রতি মানুষের আচরণ ও মনোভাব সে শহরের সভ্যতার কষ্টিপাথর। সরকারি বিভাগের যেমন নাগরিকদের অসভ্য ও অনৈতিক আচরণ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব, তেমনি নাগরিকদেরও দায়িত্ব নিজেদের নৈতিকতার মান উন্নয়নে সচেষ্ট হওয়ায়।

আজকাল এক শ্রেণির মানুষ ভাগাভাগির সাইকেল নিয়ে কোনো অনিয়ম দেখলে, সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানান। আবার কোনো সাইকেল নষ্ট থাকলে মোবাইলের সংশ্লিষ্ট অ্যাপ থেকেও সে সম্পর্কে কর্তৃপক্ষকে জানানো যায়।

আমরা জানি, 'ভাগাভাগি সাইকেল' ব্যবহার করতে চাইলে মোবাইলের অ্যাপ ব্যবহার করতে হয়। এই অ্যাপ ব্যবহার করেই জামানত এবং ভাড়া দেওয়া হয়। এই অ্যাপ ব্যবহার করে অভিযোগও করা যায়।

ভাগাভাগি সাইকেল বাজারের আকার দিন দিন বাড়ছে এবং প্রতিদিন নতুন ব্যবহারকারী এ বাজারে যোগ দিচ্ছেন। জামানতের টাকা পরিমাণ কতো? আমাদের জামানতের টাকা কোথায় যায়? অনেকের মনে এমন প্রশ্ন আছে।

একজন মোবাইক সাইকেল ব্যবহারকারীকে ২৯৯ ইউয়ান জামানত দিতে হয়। আর ওএফও সাইকেলের জন্য জামানত ৯৯ ইউয়ান। সহজে সাইকেল পাওয়ার জন্য অনেক মানুষ দু'টি অ্যাপই ব্যবহার করেন, তথা ২৯৯ ও ৯৯ ইউয়ান জামানত দেন।

জানা গেছে মোবাইক সাইকেলের ব্যবহারকারী গত বছরের শেষ নাগাদ ১ কোটি ছাড়িয়ে গেছে এবং ওএফওয়ের ব্যবহারকারী ৩ কোটি। দু'টি কোম্পানি জামানত হিসেবে গ্রহণ করেছে অন্তত ৩০০ কোটি ইউয়ানের বেশি।

যদিও দু'টি কোম্পানির দাবি, তারা জামানতের অর্থের বিশেষ হিসাব রাখে এবং এ অর্থ অন্য খাতে ব্যবহার করে না। তবে এ সম্পর্কে চীনে এখনও কোনো আইন বা রীতিনীতি নেই। ভবিষ্যতে এটা সম্ভবত একটি বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিতে পারে।

নতুন একটা আইডিয়া বাস্তবায়ন করতে গেলে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। ভাগাভাগির সাইকেলও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে আশা করা যায়, এ ব্যাপারে সরকার দ্রুত একটা নীতিমালা ঠিক করবে এবং সমস্যার মাত্রা কমে আসবে। (শিশির/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040