20170329yinyue.mp3
|
প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আপনারা চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান শুনছেন। আমি আনন্দী বেইজিং থেকে আপনাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আজকের 'সুর ও বাণী' আসরে চীনের চলচ্চিত্র পরিচালক ও অভিনেত্রী সুই চিং লেইয়ের সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেবো এবং তার অভিনীত একাধিক চলচ্চিত্রের কয়েকটি গান শোনাবো।
সুই চিং লেই
সুই চিং লেই ১৯৭৪ সালের ১৬ এপ্রিল বেইজিংয়ে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৮ সালে তিনি টেলিভিশন নাটক 'আমাদের প্রেম চিরস্থায়ী হোক'-এ অভিনয় করেন। এ নাটকে গত শতাব্দীর ৯০'র দশকের কয়েকজন শহুরে যুবক-যুবতীর প্রেমের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। নাটকে তাদের ভালোবাসা, স্বপ্ন, রোমান্টিকতা, বাস্তব জীবনে তাদের হতাশা ও বিভ্রান্তি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। নাটকটি প্রচারের পর দর্শকপ্রিয়তা পায়। সুই চিং লেই এ নাটকের প্রধান চরিত্রগুলোর একটিতে অভিনয় করেন এবং দর্শকদের প্রশংসা কুড়ান।
বন্ধুরা, এখন শুনুন নাটক 'আমাদের প্রেম চিরস্থায়ী হোক'-এর থিম সং 'তোমার ভালোবাসার অপেক্ষায় আমি'। গেয়েছেন চেন মিং।
আমাদের প্রেম চিরস্থায়ী হোক
১২ বছর পর সুই চিং লেই 'আমাদের প্রেম চিরস্থায়ী হোক' নামক একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রটি ছিল একই নামের টিভি নাটকের সিকুয়েল। চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্র ইয়াং চেং এবং ওয়েন হুই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করেন। তারপর শুরু হয় তাদের জীবনে প্রেমের পদচারণা। তিন ধরনের প্রেম ফুটিয়ে তোলা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে। চলচ্চিত্রটি প্রেমপ্রত্যাশী প্রতিটি শহুরে যুবক-যুবতীর মনে গভীর আবেগ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে চলচ্চিত্রটি মুক্তি পাওয়ার পর মোট ২০ কোটি ৪০ লাখ ইউয়ান মূল্যের টিকিট বিক্রি হয়। পরিচালক চাং ই পাই এর ফলে এমন ৯ জন চলচ্চিত্র পরিচালকের একজন হিসেবে স্বীকৃতি পান, যাদের চলচ্চিত্র কমপক্ষে ১০ কোটি ইউয়ান আয় করেছে। এ চলচ্চিত্রটির থিম সং 'প্রেমের কারণে' সারা চীনে জনপ্রিয় হয়। বন্ধুরা, শুনুন 'প্রেমের কারণে' গানটি।
সুই চিং লেইর বাবা ও মা বেইজিংয়ের সাধারণ কর্মী ছিলেন। ছোটবেলায় তিনি চীনা হস্তলিপিশিল্প পছন্দ করতেন না। কিন্তু তার বাবা জোর করে তাকে শিশুকেন্দ্রে পাঠান হস্তলিপিশিল্প শিখতে। সেখানে তিনি প্রতিদিন হস্তলিপি চর্চা করতেন। তা ছাড়া, তার বাবা প্রতিদিন তাকে দিয়ে থাং রাজবংশ আমলে রচিত কবিতা আবৃত্তি করাতেন। বড় হওয়ার পর সুই চিং লেই এ শিক্ষার সুফল ভোগ করেন।
সুই চিং লেই একজন জনপ্রিয় অভিনেত্রী। কিন্তু তিনি শুধু অভিনয় নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে চাইলেন না। তিনি ২০০৪ সাল থেকে চলচ্চিত্র পরিচালনা শুরু করেন। তিনি 'এক অপরিচিত নারীর চিঠি' চলচ্চিত্রের জন্য সেন্ট সেবাস্টিয়ান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে 'শ্রেষ্ঠ পরিচালক'-এর পুরস্কার পান। বন্ধুরা, এখন শুনুন 'এক অপরিচিত নারীর চিঠি' চলচ্চিত্রের প্রধান সুর।
এক অপরিচিত নারীর চিঠি
২০০৬ সালের জানুয়ারিতে সুই চিং লেই চীনের সিংহ ফেডারেশনের 'প্রতীকী দূত' হন। ২০০৭ সালে তার সুন্দর ও মার্জিত হস্তলিপির কারণে ফাউন্ডার কম্পিউটার সিস্টেমে 'চিং লেই চীনা ফন্ট' সৃষ্টি করা হয়। ২০০৮ সালে তিনি 'খাই লা'নামক একটি ই-পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১০ সালের জুলাইয়ে চীনের মূল ভূভাগে তার পরিচালিত চতুর্থ চলচ্চিত্র 'গো, লালা গো!'-র ১০ কোটি ইউয়ান মূল্যের টিকিট বিক্রি হয়। তিনি হলেন চীনের মূল ভূভাগে প্রথম নারী চলচ্চিত্র পরিচালক যার পরিচালিত সিনেমার ১০ কোটি ইউয়ান মূল্যের টিকিট বিক্রি হয়। এ ভাবেই সুই চিং লেই নিজেকে একজন জনপ্রিয় অভিনেত্রীর বলয় থেকে বের করে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান, যেখানে তিনি একজন প্রতিভাবান নারী হিসেবে সকলের শ্রদ্ধা পান। বন্ধুরা, এখন শুনুন সিনেমা 'গো, লালা গো'-এর একটি গান; গেয়েছেন মো ওয়েন ওয়েই।
গো, লালা গো
২০১৪ সালে সুই চিং লেই 'এ জায়গা সম্পর্কে শুধু আমরা জানি' শীর্ষক একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। চলচ্চিত্রের পটভূমি রোমান্টিক নগর প্রাগ। চলচ্চিত্রে চীন ও চেক প্রজাতন্ত্রের দুই প্রজন্মের মানুষের ভিন্ন সময়ের প্রেমের গল্প বলা হয়েছে। চলচ্চিত্রটি একাধারে রোমান্টিক ও আধুনিক। সুই চিং লেই বলেন, 'সিনেমা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকলা ও ব্যয়বহুল। এ চলচ্চিত্রটি আমি নির্মাণ করেছি আরও বেশি দর্শকের জন্য। আগে আমি কেবল শৈল্পিক দৃষ্টিকোণ থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে পছন্দ করতাম। ধীরে ধীরে গল্পটি ফুটিয়ে তুলতাম পর্দায়। কিন্তু পাঁচ বছর আগে আমি দ্রুতলয়ের চলচ্চিত্র নির্মাণের কথা ভাবি। শৈল্পিক ও ধীরলয়ের চলচ্চিত্রের দর্শক কম। অনেক সিনেমাহল তা প্রচার করতে আগ্রহ দেখায় না। টিকিট বিক্রিও কম হয়। এ ধরনের চলচ্চিত্র এমনকি ওয়েবসাইটে দেখার লোকও খুব কম। তাই প্রকারান্তরে সে চলচ্চিত্র ব্যর্থ। তাই আমি চলচ্চিত্র তৈরির ক্ষেত্রে শিল্প ও বাণিজ্য—দুটোকেই বিবেচনায় নিতে শুরু করলাম। আগে আমি খুব ভালো শ্বৈল্পিক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছি। এখন নতুন কিছু চেষ্টা করতে চাই।' এই হলেন সুই চিং লেই। তিনি সবসময় নতুন কিছু করতে চান এবং তার সকল নতুন প্রচেষ্টাই সফল হয়েছে। বন্ধুরা, এখন শুনুন 'এ জায়গা সম্পর্কে শুধু আমরা জানি' শীর্ষক সিনেমার থিম সং 'একটি জায়গা আছে'; গেয়েছেন উ ই ফান।
এ জায়গা সম্পর্কে শুধু আমরা জানি
২০০৬ সালে সুই চিং লেই sina.com.cn এই ওয়েবসাইটে মাইক্রোব্লগ খোলেন। মাইক্রোব্লগটি খোলার ১১২ দিনের মধ্যে হিটের সংখ্যা ১ কোটি ছাড়িয়ে যায়। একই সালের ২৩ ডিসেম্বর তার মাইক্রোব্লগের হিটের সংখ্যা ৬ কোটি ৮০ লাখের বেশি ছিল। সেই সালে তিনি চীনের মাইক্রোব্লগারদের মধ্যে মোট হিট বিবেচনায় প্রথম স্থান অধিকার করেন।
২০১১ সালের ২৭ এপ্রিল তিনি টেনসেন্ট মাইক্রোব্লগ খোলেন। সে সালের জুন মাস পর্যন্ত তার টেনসেন্ট মাইক্রোব্লগের শ্রোতার সংখ্যাও এক কোটির বেশি ছিল। ওয়েবসাইটে তিনি কিছু বললেই ব্যাপক সাড়া পান। বস্তুত সামাজিক মাধ্যমেও তার প্রভাব প্রবল।
২০০৫ সালের জুনে মার্কিন 'টাইমস' পত্রিকায় 'চীনের নতুন বিপ্লব' নামক প্রবন্ধে সুই চিং লেই সম্পর্কে লেখা হয়। প্রবন্ধে তাকে 'চীনের চলচ্চিত্র জগতের বিপ্লবী প্রতিনিধি' আখ্যায়িত করা হয়। ২০০৬ সালের জুনে তার পরিচালিত সিনেমা 'স্বপ্নের আলোয় বাস্তব জীবনে' মুক্তি পায়। বন্ধুরা, এখন শুনুন সুই চিং লেইয়ের কণ্ঠে 'স্বপ্নের আলোয় বাস্তব জীবনে' গানটি। এ গানের মতোই যেন তিনি নিজের একেকটি স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন এবং করবেন।
সুই চিং লেই একাধারে অভিনেত্রী, পরিচালক, ব্লগার, পত্রিকার সম্পাদক এবং কোম্পানির মালিক। তিনি নিজেকে খুব সৌভাগ্যবান মানেন। উন্মুক্ত মন নিয়ে তিনি অনেক মজার কাজ করেছেন। তিনি সবসময় পরিবর্তন অন্বেষণ করেন। তিনি কখনো শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হতে চাননি, পুরস্কার অর্জনের প্রচেষ্টা চালাননি। তিনি কেবল নিজের মনের ইচ্ছা অনুসারে কাজ করতে চেয়েছেন। ফল হিসেবে তিনি অভিনেত্রী হিসেবে, সিনেমা পরিচালক হিসেবে অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। এমনকি, কেউ কেউ বলেন, তিনি হলেন এ বিশ্বের সবচেয়ে দয়ালু বস। তিনি তার কোম্পানির সব কর্মীকে একবার দু'বছরের সবেতন ছুটি দিয়েছিলেন। এটা হয়তো অনেকে ভাবতেও পারেন না। সুই চিং লেই এমনি একজন নারী, যিনি আপনাকে সবসময় অবাক করে দেবেন।
বন্ধুরা, অনুষ্ঠানের শেষে শুনুন সুই চিং লেইয়ের অভিনীত 'বসন্তের সাবওয়ে' নামক সিনেমার থিম সং। গেয়েছেন ইয়ু ছুয়ান।
বন্ধুরা, আজ চীনের সিনেমা পরিচালক ও অভিনেত্রী সুই চিং লেইয়ের সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিলাম। তার অভিনীত নাটক ও সিনেমার কয়েকটি গানও আপনারা শুনলেন। আশা করি অনুষ্ঠানটি ভালো লেগেছে। 'সুর ও বাণী' আসর আজকের মতো এখানে শেষ করছি। ভালো থাকুন সবাই। আবার কথা হবে। (ইয়ু/আলিম)