কমিউনিটি চিকিত্সক: সাধারণ মানুষের অভিভাবক
  2017-03-29 10:47:30  cri



তাঁরা সাধারণ চিকিত্সক। তাঁরা বিশেষজ্ঞ নন। চিকিত্সাবিদ্যায় তাদের কোনো বড় ডিগ্রিও নেই। বড় কোনো হাসপাতালে নয়, বরং সাধারণ কমিউটিতে কাজ করেন তাঁরা। তাঁরা আকুপাংচার করেন বা পুরাতন ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীদের চিকিত্সা করেন।

তবে কমিউনিটির বাসিন্দারা তাদেরকে সম্মান করেন, গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি মনে করেন। অসুস্থ হলে প্রথমেই তাদের মনে পড়ে কমিউনিটি চিকিত্সকের কথা।

বর্তমানে সাংহাইতে ৫৭০০ জনের বেশি কমিউনিটি চিকিত্সক সাধারণ মানুষকে চিকিত্সাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। লোকজন তাদের 'কমিউনিটির হুয়া থুও' এবং 'ডাক্তার বন্ধু' বলে ডাকে। 'হুয়া থুও' ছিলেন প্রাচীন চীনের একজন বিখ্যাত চিকিত্সক।

সাধারণ চিকিত্সকের অসাধারণ ক্ষমতা

একদিন সাংহাই হুয়াং পু এলাকার রুই চিন এ্য+

লু কমিউনিটি চিকিত্সাকেন্দ্রের ডাক্তার ওয়ে ওয়ে একজন রোগী দেখতে তার বাড়িতে আসেন। ৮৪ বছর বয়সি এই রোগীর নাম হু। তিনি একা বাস করেন। তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত। মিস্টার হু তার বাড়িতে ওয়ে ওয়ের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তৃতীয় তলার জানালা দিয়ে ওয়ে ওয়েকে দেখে মিস্টার হু নিজের বাড়ির চাবি নীচে নিক্ষেপ করেন। চাবি দিয়ে ভবনের দরজা খুলে তৃতীয় তলায় উঠে আসেন ওয়ে ওয়ে।

মিস্টার হু'র শারিরীক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন ওয়ে ওয়ে এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ লিখে দেন। ওয়ে ওয়ে তাকে ওষুধগুলো ঠিকমতো খেতে পরামর্শ দেন। ফেরার সময় ডাক্তার ওয়ে ওয়ে মিস্টার হু'কে বলেন: প্রয়োজন হলে আমাকে ফোন করবেন। আর মিস্টার হু ডাক্তারকে বলেন: আপনি সাবধানে যাবেন। চিকিত্সক ওয়ে ওয়ে এবং রোগী মিস্টার হু'র ঘটনা একটি উদাহরণ মাত্র। এ দৃশ্য সব কমিউনিটিতে সাধারণ ঘটনা।

অন্য একটি কমিউনিটি চিকিত্সাকেন্দ্রের দৃশ্য। ডাক্তার ইয়াং হং সিন সকাল ৭টা থেকে টানা চিকিত্সাসেবা দিয়ে থাকেন। কমিউনিটি চিকিত্সাকেন্দ্রগুলোতে এ দৃশ্য কমন। এখানে যেমন রোগীরা দ্রুত সেবা পান, তেমনি তাদের খরচও কম হয়।

৭৭ বছর বয়সী সেন তে পিন ৩৫ বছরের একজন ডায়াবেটিক রোগী। ২০১৬ সালে তিনি শহর থেকে একটি জেলায় আসেন। বড় হাসপালের বদলে তিনি কমিউনিটি চিকিত্সাকেন্দ্রে আসতে বেশি পছন্দ করেন। তিনি তার বন্ধুদেরকেও কমিউনিটি চিকিত্সাকেন্দ্রে আসার পরামর্শ দেন। তিনি জানান, আগে বড় হাসপাতালে যেতে তাকে পাতাল রেলে দু'বার ট্রেন পরিবর্তন করে আবার বাসে চড়তে হতো। এতে অনেকটা সময় লেগে যেতো। আর কমিউনিটি চিকিত্সাকেন্দ্রে মাত্র কয়েক মিনিটেই চিকিত্সা পাওয়া যায়। তা ছাড়া, হাসপাতালে একেকবার একেকজন ডাক্তার দেখেন। ফলে রোগীকে নতুন করে বুঝতে হয়, জানতে হয়। কিন্তু কমিউনিটি চিকিত্সক সবাইকে চেনেন, জানেন। এখানে দীর্ঘ লাইনেও দাঁড়াতে হয় না। কখনও প্রয়োজনে ফোনেও কমিউনিটি চিকিত্সক পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এখন তো তার একজন ডাক্তার বন্ধুও আছেন। যে কোনো সময় তাকে ফোন করে পরামর্শ নিতে পারেন তিনি।

সাং হাই মিন হাং এলাকার লং বাই গ্রামে ৭১ বছর বয়সী লি ফেং একজন হৃদরোগী। কমিউনিটি চিকিত্সাকেন্দ্রে নিবন্ধন করানোর পর তাকে এখন ওষুধের খরচের ১০ শতাংশ বহন করতে হয়। বড় হাসপাতালে বহন করতে হতো ৩০ শতাংশ ব্যয়। এখন তার ও তার স্ত্রীর ওষুধের খরচ প্রতি বছর ৩ হাজার ইউয়ান কম হয়।

কমিউনিটি চিকিত্সাসেবা ব্যবস্থায় রোগীদের সাথে ডাক্তারদের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০১৬ সালে যারা কমিউনিটি চিকিত্সাসেবাকেন্দ্রে নিবন্ধিত হন, তাদের ৭০ শতাংশকেই বড় কোনো হাসপাতালে যেতে হয়নি।

সম্প্রতি সাংহাইয়ে দু'জন ডাক্তার ২০১৬ সালের জন্য সেরা চিকিত্সকের পুরস্কার পান। তাদের একজন চীনা একাডেমি অফ সায়েন্সের বিজ্ঞানী উ মেং ছাও এবং আরেকজন সাংহাই সু হুই এলাকার সিয়ে সি কমিউনিটি চিকিত্সাসেবাকেন্দ্রের ডাক্তার চু লান।

চু লান বলেন, 'এ পুরস্কার হচ্ছে কমিউনিটি চিকিত্সকদের জন্য স্বীকৃতি। বিশেষজ্ঞরা ডাক্তাররা যেখানে মানুষকে পানি থেকে উদ্ধার করেন, আমরা সেখানে মানুষ যাতে পানিতে না-পড়েন, তার জন্য চেষ্টা করি।"

কমিউনিটি চিকিত্সকের মূল দায়িত্ব রোগীর সেবা করা, তাদের চিকিত্সা দেওয়া। চু লান নিজে ১০৭০টি পরিবারের ২৮০০ জন মানুষকে চিকিত্সাসেবা দিয়ে থাকেন। পুরস্কার পেলেও তিনি আগের মতোই নিজের কাজ করে যাচ্ছেন।

চীন সরকার ২০২০ সালের মধ্যে কমিউনিটি চিকিত্সক-ব্যবস্থা গোটা দেশে জনপ্রিয় করে তোলার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। সাংহাই শহরে ২০১১ সাল থেকে কমিউনিটি চিকিত্সাব্যবস্থা চালু হয়। এখন সারা শহরের সব কমিউনিটিতে এ ব্যবস্থা চালু হয়েছে এবং এক কোটি মানুষ এ ব্যবস্থার আওতায় এসেছেন।

কমিউনিটি চিকিত্সাসেবাকেন্দ্র ছাড়া, একজন বাসিন্দা আরও একটি আঞ্চলিক পর্যায় ও একটি শহর পর্যায়ের হাসপাতালে নিবন্ধিত হতে পারেন। ১+১+১ কাঠামোতে মানুষ সাধারণ সব চিকিত্সাসেবা গ্রহণ করতে পারে।

২০১৬ সালে সাংহাইয়ের ১০টি সেবাশিল্পের মধ্যে কমিউনিটিস্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র সবচেয়ে সন্তোষজনক শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি পায়। সংশ্লিষ্ট এক জড়িতে দেখা যায়, ৯৩.৮ শতাংশ উত্তরদাতা কমিউনিটি স্বাস্থসেবা কেন্দ্রে চিকিত্সা গ্রহণ করতে আগ্রহী। আবার ৯৫.৩ শতাংশ উত্তরদাতা অন্যদের এ চিকিত্সাসেবা গ্রহণ করতে পরামর্শ দেন।

চীনে প্রবীণদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ফলে চিকিত্সাসেবার চাহিদাও বাড়ছে। এ প্রেক্ষাপটে কমিউনিটি চিকিত্সাসেবাব্যবস্থা আমাদের আশার আলো দেখাচ্ছে, দেখাচ্ছে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত। (শিশির/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040