সুপ্রিয় শ্রোতা, শুনছেন চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান। এখন শুনবেন সংবাদ পর্যালোচনা। পরিবেশন করছি আমি জিনিয়া।
চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ ছিয়াং বর্তমানে নিউজিল্যান্ড সফর করছেন। তার এ সফর আন্তর্জাতিক মহলের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বিশেষ করে, এ সফরে দু'পক্ষ দ্বিপক্ষীয় অবাধ বাণিজ্য চুক্তির আওতা বাড়ানোর আলোচনা শুরুর সিদ্ধান্ত নেবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। বাস্তবে তা-ই হয়েছে। গতকাল (সোমবার) ওয়েলিংটনে চীন-নিউজিল্যান্ড প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে এ ব্যাপারে একমত হয়েছে দু'পক্ষ। সিদ্ধান্ত হয়েছে, এপ্রিলের শেষ দিকে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় অবাধ বাণিজ্য চুক্তির আওতা বাড়ানোর তথা চুক্তিটি আপগ্রেড করার আলোচনা শুরু হবে।
চীন ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। এ সম্পর্ক পারস্পরিক কল্যাণের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। নিউজিল্যান্ড পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে প্রথম দেশ হিসেবে চীনের প্রস্তাবিত এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকে যোগ দেয়। তা ছাড়া, নিউজিল্যান্ডই প্রথম উন্নত দেশ যে চীনের সাথে দ্বিপক্ষীয় অবাধ বাণিজ্য চুক্তি আপগ্রেড করার আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছে। সোমবার নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াং বলেন, বহু বছর ধরেই চীন-নিউজিল্যান্ড সম্পর্ক সুষ্ঠুভাবে উন্নত হচ্ছে। এ সম্পর্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো দু'দেশের অবাধ বাণিজ্য চুক্তি।
তিনি বলেন,
"আমার এবারের সফরের লক্ষ্য হচ্ছে নিউজিল্যান্ডের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করা। বিশেষ করে, চীন-নিউজিল্যান্ড অবাধ বাণিজ্য চুক্তির আওতা বাড়ানোর আলোচনা শুরুর ওপর আমরা সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছি। এ চুক্তি আপগ্রেড হলে দু'দেশের সম্পর্ক এক নতুন উচ্চতায় উন্নীত হবে। বিশ্বের কাছে আমাদের অবাধ বাণিজ্য চুক্তি তখন একটি দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবে।"
বর্তমানে চীনের সাথে নিউজিল্যান্ডের দীর্ঘমেয়াদি, স্থিতিশীল ও ভালো অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আছে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণও অনেক বেড়েছে। এখন দু'দেশ বিদ্যমান অবাধ বাণিজ্য চুক্তি আপগ্রেড করার আলোচনা শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা দু'দেশের জনগণের জন্যই শুভ সংবাদ।
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বিল ইংলিশ উইচ্যাটে একটি বিশেষ অ্যাকাউন্টে বলেছেন,
"আমাদের দু'দেশের মধ্যে ভৌগোলিক দূরত্ব থাকলেও, দু'দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক বিনিময় দিন দিন বাড়ছে। আমি খুব আনন্দচিত্তে ঘোষণা করছি যে, চলতি বছরের ২৫ থেকে ২৭ এপ্রিল আমরা দ্বিপক্ষীয় অবাধ বাণিজ্য চুক্তির আপগ্রেডবিষয়ক আলোচনা শুরু করবো। দু'দেশের ভবিষ্যত সহযোগিতার ওপর আমাদের প্রত্যাশা অনেক।"
২০১৬ সালের নভেম্বর মাস থেকেই চীনের সাথে নিউজিল্যাণ্ডের অবাধ বাণিজ্য চুক্তি আপগ্রেড করার বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা শুরু হয়। নিউজিল্যান্ডের বিভিন্ন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এ সম্ভাবনা। চুক্তিটি আপগ্রেড হলে, দু'দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা আরও বাড়বে। আর এ জন্যই প্রধানমন্ত্রী লি'র এবারের সফরকে আলাদা গুরুত্ব দিচ্ছে নিউজিল্যান্ডের বিভিন্ন মহল।
এদিকে, মঙ্গলবার লি খ্য ছিয়াংয়ের সাথে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর দু'দেশের মধ্যে অর্থ ও বাণিজ্য, কৃষি, ডিজিটাল বাণিজ্য, শিক্ষা, মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ ও পরিবেশ রক্ষাসহ ৯টি ক্ষেত্রে চুক্তি ও সমঝোতাস্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এগুলোর মধ্যে 'এক অঞ্চল, এক পথ' কৌশলসংক্রান্ত একটি সমঝোতাস্মারকও রয়েছে। নিউজিল্যান্ডই হচ্ছে প্রথম পশ্চিমা দেশ, যে চীনের সাথে 'এক অঞ্চল, এক পথ'-সংশ্লিষ্ট কোনো সমঝোতাস্মারক স্বাক্ষর করলো। (জিনিয়া ওয়াং/আলিম)