প্রথমে 'বার্লিন আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলা' শিরোনামে একটি প্রবন্ধ শুনবো।
৮ থেকে ১২ মার্চ পর্যন্ত ৫১তম বার্লিন আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলা জার্মানির রাজধানী বার্লিনে অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বের বৃহত্তম পর্যটন শিল্পের ব্যাপক প্রদর্শনী হিসেবে এবারের মেলায় প্রায় দু'শ দেশ ও অঞ্চলের দশ হাজারেরও বেশি সংস্থা অংশ নেয়। বিস্তারিত শুনবেন সিআরআই'র সাংবাদিকের প্রতিবেদনে।
চলতি মেলায় চীনের জাতীয় পর্যটন ব্যুরো, শাংহাই, চিয়ে চিয়াং, থিয়েন চিন, হু নান, সান তুং, সিন চিয়াং, ইনার মঙ্গোলিয়া ও সান সিসহ বিভিন্ন প্রদেশ, স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল এবং কেন্দ্রশাসিত মহানগরের পর্যটন প্রশাসনিক বিভাগ, পর্যটন কোম্পানি ও বিমান কোম্পানির এক'শরও বেশি সদস্যের এক প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। 'সুন্দর চীন' প্রতিপাদ্য হিসেবে তারা চীনের বিভিন্ন ধরনের বৈশিষ্ট্যময় পর্যটন দ্রব্য প্রচার করে। বৈচিত্র্যপূর্ণ পর্যটন সম্পদ ও সাংস্কৃতিক প্রদর্শন ছাড়া, চীনের প্রতিনিধিদলও এবার মেলায় বিভিন্ন চিত্তাকর্ষক কুংফু, চা ও চীনা ঐতিহ্যগত বাদ্যযন্ত্র পরিবেশন করে।
ফ্রাঙ্কফুর্টে চীনের পর্যটন অফিসের পরিচালক সি সিয়াং বলেন,
রেকর্ড ১
"গত ৩০ বছরের উন্নয়ন ধরে, চীন বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম আন্তর্জাতিক পর্যটন দেশ ও বিশ্বের বৃহত্তম পর্যটক দেশে পরিণত হয়েছে। তা ছাড়া, চীনেরও বিশ্বের বৃহত্তম ডোমেস্টিক পর্যটন বাজার আছে। আমি বিশ্বাস করি এবার পর্যটন মেলার মাধ্যমে আরো বেশী বিদেশি বন্ধু চীনকে ভালোভাবে বুঝতে পারবে।"
ডিজিটাল বাণিজ্যের দ্রুত উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে ইন্টারনেট পর্যটনও দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এবার মেলায় একটি বিশেষ প্রদর্শনী অংশ খোলা হয়, এখানে ইন্টারনেট পর্যটনের বিভিন্ন তথ্য জানতে পারা যায়। এতে চীনের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্টলও অন্তর্ভুক্ত ছিলো।
হোটেল শিল্পের ব্যবসায়ী মাইকেল স্পেন থেকে এসেছেন। এবার মেলায় চীনের পর্যটন স্টল তাকে বিশেষভাবে আকর্ষণ করে। তিনি বলেন, "চীনে প্রযুক্তি ও পর্যটনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডিজিটাল বাণিজ্য এশিয়ায়, বিশেষ করে চীনে দ্রুত উন্নয়ন পাচ্ছে। এই উন্নয়নের গতি ইউরোপ এমনকি বিশ্বের অধিকাংশ দেশের চেয়ে দ্রুত। এর আগে আমি চীনের এক হোটেল-বুকিং 'বিটুবি' প্ল্যাটফর্ম 'হাও সিয়াও নেট'র দায়িত্বশীল ব্যক্তির সঙ্গে বাণিজ্যবিষয়ক বিনিময় করেছি। 'হাও সিয়াও নেট'র পর্যটন বাজারে শুধু কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা আছে, কিন্তু বর্তমানে এ বাজার প্রথম স্থানে দাঁড়িয়েছে। আমি বিশ্বাস করি 'হাও সিয়াও নেট' আমাদের এক ভালো সহযোগিতার অংশীদারে পরিণত হবে।"
'হাও সিয়াও নেট' চলতি বছর প্রথম বারের মতো প্রদর্শক ব্যবসায়ী কোম্পানি হিসেবে বার্লিন আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলায় অংশ নেয়। এ কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইয়ু চিয়াং থাও পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেন, এ দু'দিনে অনেক লোক আমাদের স্টল পরিদর্শন করেছেন। তারা আমাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক সহযোগিতা করতে চায়।
"আমাদের কোম্পানির জন্য বিশ্বের বিভিন্ন হোটেল সম্পদ দরকার। যাতে আমাদের প্ল্যাটফর্ম আরো বিপুল এ আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রবেশ করতে পারবে। এখানে আমরা এ হোটেল সরবরাহ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরাসরি বিনিময় করেছি, আরো বেশী বিশ্বের হোটেল সম্পদ সংগ্রহ করে আরো কার্যকরভাবে আমাদের হোটেল-বুকিং নেটওয়ার্ক ব্যবসা চালাবো। আমরা খুবই খুশি, আশা করি এ ধরনের সুযোগ আরো বেশী আমাদের কাছে আসবে।"
চলতি বছরের ১০ থেকে ১২ মে পর্যন্ত, বার্লিন আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলা প্রথম বারের মতো চীনে এর আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী শাখা আয়োজন করবে। ২০১৭ আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলার উদ্যোগ সংস্থা গ্লোবাল ট্যুরের প্রতিষ্ঠাতা লি ছাও মনে করেন, এবার পর্যটন মেলা খুবই শক্তিশালী ও গুরুত্বপূর্ণ এক সহযোগিতা। জার্মানির আন্তর্জাতিক পর্যটন বাজার ও প্রদর্শন সুবিধা আছে, আর চীনের অভ্যন্তরীণ পর্যটন বাজার ও পরিচালনার ক্ষমতা আছে। তিনি বিশ্বাস করেন, এবারের মেলা দু'পক্ষের পর্যটনের জন্য পারস্পরিক কল্যাণ বয়ে আনবে।
বন্ধুরা, এখন 'সিপিপিসিসি'র সদস্য 'সুন ভিংয়ের পিকিং অপেরা প্রচার' শিরোনামে একটি প্রবন্ধ শুনবেন।
চীনের গণরাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলন (সিপিপিসিসি)-র সদস্য, বেইজিং ফরেন স্টাডিজ ইউনিভার্সিটির আর্টস একাডেমির সভাপতি, বিখ্যাত বেইজিং অপেরাশিল্পী সুন ভিং বরাবরই পিকিং অপেরা প্রচারের চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। চলতি 'দুই অধিবেশনের' সময় সিআরআই'র সাংবাদিককে সাক্ষাত্কার দেওয়ার সময় তিনি বলেন, পিকিং অপেরা হচ্ছে চীনের ঐতিহ্যগত সংস্কৃতির প্রতীক। পিকিং অপেরা বিশ্ববিখ্যাত। তিনি আশা করেন, তিনি সারা জীবন পিকিং অপেরা প্রচারের জন্য অবদান রাখতে পারবেন।
সুন ভিং ছোটবেলা থেকেই নাচ-গান জানেন। তার কণ্ঠস্বর অনেক সুন্দর। কখন এবং কেন তিনি পিকিং অপেরা পছন্দ করা শুরু করেন?
jingju
|
এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "ছোটবেলায় আমার নিজের রেডিও ছিলো। তখন আমি বেতারের অনুষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গে পিকিং অপেরা শুনি আর শিখি। আমার ভালো কণ্ঠস্বর আছে। তখন নিং সিয়া পিকিং অর্কেস্ট্রা ছাত্রদের তালিকাভুক্ত করা শুরু করে। আমি সে সুযোগ ধরে নিজের পিকিং জীবন শুরু করি।"
এরপর কয়েক দশকে সুন ভিং চীনের পিকিং অপেরা পরিবেশনের জন্য নিজের শক্তি ও অবদান রাখেন। তিনি বলেন, পিকিং অপেরার নিজের বিশেষ মোহিনীশক্তি আছে। এর পরিবেশনা সুন্দর, সুরের মূর্ছনা আছে। সেং, তান, চিন, মো ছৌসহ পাঁচটি ভূমিকা আছে। চীনা ঐতিহ্যগত সংস্কৃতির কোষাগার হলো পিকিং অপেরা।
তিনি পরিচয় দিয়ে বলেন, "পিকিং অপেরার উত্পত্তি হলো হুই অপেরা থেকে। বিখ্যাত চারটি হুই অপেরার দল বেইজিং নাগরিকদের কাছে হুই অপেরা নিয়ে আসে। এর পর হুই অপেরার সঙ্গে হান ছু অপেরা, খুন ছু অপেরা, ইইয়াং সুর ও বাঁশির সুর মিশ্রিত পিকিং অপেরা তৈরি হয়। সেজন্য পিকিং অপেরার ইতিহাস লম্বা নয়। এতে চীনের পূর্ব, দক্ষিণ, পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলের সংস্কৃতি মিলিত হয়েছে। তা সম্পূর্ণভাবে এক নতুন শিল্প। সেজন্য পিকিং অপেরা চীনের ঐতিহ্যগত সংস্কৃতির প্রতীক।"
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পিকিং অপেরা শিল্পের উন্নয়নে দেশের উচ্চ পর্যায়ের গুরুত্বারোপ অর্জিত হয়েছে। বিশেষ করে পিকিং অপেরার উন্নয়নে অনেক নীতি প্রকাশিত হয়েছে। অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য উন্নয়নের জন্য দেশের বিপুল পরিমাণ ধন-সম্পদ দিয়ে সমর্থন দিয়েছে। পিকিং অপেরার জন্য তা যেন আরেকটি নতুন বসন্তকাল (চীনা ভাষায় বসন্তকাল মানে নতুন উন্নয়নের সুযোগ) এসেছে।
সুন বলেন, সিপিপিসিসি'র একজন সদস্য হিসেবে, তিনি পিকিং অপেরা প্রচার করার জন্য বরাবরই চেষ্টা করছেন। ২০০৩ সালে তিনি একটি প্রস্তাব পেশ করেছেন, তা হলো প্রাথমিক স্কুলে পিকিং অপেরা চালু করা। এর জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অফিস কয়েকটি স্কুলে পিকিং অপেরার ক্লাস প্রণয়নের পরীক্ষামূলক কাজ শুরু করেছে। এতে দাবি করা হয়েছে যে, পিকিং অপেরা নয়-বছর বাধ্যতামূলক শিক্ষার সঙ্গীত ক্লাসে অন্তর্ভুক্ত হবে।
শিল্পের জগতের কোনো সীমা নেই। পিকিং অপেরা চীনের শিল্প, কিন্তু তাও বিশ্বের শিল্প। সুন ভিং অনেক বার জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও হাঙ্গেরিসহ বিভিন্ন দেশে গিয়ে পিকিং অপেরা পরিবেশন করেছেন। বিশ্বের দর্শকদের জন্য পিকিং অপেরার সৌন্দর্য প্রদর্শন করেছেন। তিনি বলেন,
"অনেক বিদেশি পিকিং অপেরা খুবই পছন্দ করেন। বর্তমানে আমরাও চাই যে চীনা সংস্কৃতি বাইরে যাবে। বিশ্বের দর্শকরা ভিন্ন শিল্প দেখতে চায়। পিকিং অপেরা তাদের ইচ্ছার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।"
সুন আশা করেন, আরো বেশী মানুষ পিকিং অপেরার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবে।
আচ্ছা বন্ধুরা, এতক্ষণ পিকিং অপেরা সম্বন্ধে একটি প্রবন্ধ শুনলেন। এখন আমরা পিকিং অপেরার ছোট একটি সঙ্গীত শুনবো, কেমন?
(পিকিং অপেরা)
প্রিয় শ্রোতা, আজকের অনুষ্ঠান আপনাদের কেমন লাগলো? আপনারা যদি 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' বিষয়ক কোনো কিছু জানতে বা আলোচনা করতে চান, তাহলে আমাকে চিঠি লিখবেন বা ই-মেইল করবেন। আপনাদের কাছ থেকে চমত্কার পরামর্শ আশা করছি। আর আপনাদের জানিয়ে রাখি, আমার ইমেইল ঠিকানা হলো, hawaiicoffee@163.com
চিঠিতে প্রথমে লিখবেন, 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' অনুষ্ঠানের 'প্রস্তাব বা মতামত'। আপনাদের চিঠির অপেক্ষায় রইলাম।
বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠান এখানেই শেষ করছি। অনুষ্ঠান শোনার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আগামী সপ্তাহে একই দিন, একই সময় আপনাদের সঙ্গে আবারো কথা হবে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়ান (জিনিয়া/টুটুল)