20170319yinyue.mp3
|
প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আপনারা চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান শুনছেন। আমি আনন্দী বেইজিং থেকে আপনাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আজকের 'সুর ও বাণী' আসরে চীনের যুব সুরকার শু নানের সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেবো এবং তার সৃষ্টি কয়েকটি গান শোনাবো।
সুরকার শু নান
বন্ধুরা, প্রথমে শুনুন 'জীবনে বা মরণে, আমরা কখনো বিচ্ছিন্ন হবো না' নামের একটি গান। ২০০৮ সালে সিছুয়ানের ওয়েনছুন ভূমিকম্পের পর নিহতদের প্রতি শোক প্রকাশ করে প্রার্থনা সংগীতটি রচিত হয়। এটি গেয়েছেন সুন নান। গানে বলা হয়েছে, 'তোমাকে না দেখলে আমি অস্থির হয়ে যাই। আমি তোমার অপেক্ষায় সময় গুনি। তোমার জন্য প্রার্থনা করি। তুমি যেখানেই থাকো, আমি তোমাকে খুঁজে বের করবো। জীবনে বা মরণে, কখনই আমরা বিচ্ছিন্ন হবো না। দুঃখ-কষ্টে কাঁদবো না। আমার হাতে ধরে তোমার ঘরে ফেরার পথ তৈরি হবে।'
বন্ধুরা, আপনারা শুনলেন 'জীবনে বা মরণে, আমরা কখনো বিচ্ছিন্ন হবো না' নামের গান। গানটির কথা লিখেছেন ওয়াং পিং চিউ, সুর করেছেন শু নান। এ গানটি ২০০৮ সালে চীনের কেন্দ্রীয় টেলিভিশন কেন্দ্রের সংগীত পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে শ্রেষ্ঠ গানের পুরস্কার, ২০০৯ সালে চীনের প্রচার মন্ত্রণালয়ের 'পাঁচটি সেরা প্রকল্প পুরস্কার' এবং ২৬তম চীনা চলচ্চিত্রের সোনালী মোরগ পুরস্কারের সেরা সংগীত হিসেবে পুরস্কৃত হয়।
শু নান চীনের বিখ্যাত যুব সুরকার, বেইজিং চলচ্চিত্র অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য। তিনি বলেন, 'আমি স্বদেশের প্রতি মুহূর্তের আনন্দ ও বেদনা অনুভব করি, আন্তরিকতা দিয়ে দেশের সেবা করি। এটা শিল্পীর জন্য সৌভাগ্যের বিষয়, এটা আমার গর্ব ও কর্তব্য। আমি সুরকার হয়ে গর্বিত বোধ করি।'
বন্ধুরা, এখন আপনারা শুনছেন চলচ্চিত্র 'দেশ প্রতিষ্ঠার মহান ব্রত' নামে চলচ্চিত্রের জন্য সৃষ্টি করা শু নানের একটি সুর।
চলচ্চিত্র 'দেশ প্রতিষ্ঠার মহান ব্রত'
শু নান ১৯৯২ সালে ছুচৌ কলেজের সংগীত বিভাগ থেকে পাশ করেন। এরপর তিনি হুই নান শহরের শিশু কেন্দ্রের সংগীত শিক্ষক হন। এমন একটি সহজ কাজ তার মনকে জয় করতে পারেনি। অল্প দিন পর তিনি চাকরি ছেড়ে পছন্দের গিটার নিয়ে তত্কালীন চীনের পপ সংগীতের কেন্দ্র কুয়াংচৌতে যান। কুয়াংচৌতে পৌঁছানোর পর প্রথম প্রথম তার কিছু সমস্যা হতো। সেখানে তার কোনো আত্মীয়স্বজন ছিলনা। কুয়াংতোংয়ের আঞ্চলিক ভাষা জানতেন না তিনি। তার সবচেয়ে কঠিন সময় তার বান্ধবী তাকে ছেড়ে চলে যায়। জীবনের এতো সমস্যার পরও তিনি সংগীত সৃষ্টি করা থামাননি। ১৯৯৫ সালে তার প্রথম ব্যক্তিগত অ্যালবাম 'তাকে বিয়ে করে তুমি সুখী?' প্রকাশিত হয়। এরপর ধীরে ধীরে সংগীত জগতে তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। বন্ধুরা, শুনুন শু নানের কণ্ঠে 'তাকে বিয়ে করে তুমি সুখী?' নামের গান।
১৯৯৭ সালে শু নান বিমানে বসে একটি গান লিখেন। গানের নাম 'নির্বোধ পাখি প্রথমে ওড়ে'। এ গানটি সে বছর চীনের ৩০০টি বেতারের সেরা গানের তালিকায় চ্যাম্পিয়ন হয় এবং চীনের শাংহাই ও কুয়াংতোংয়ের বার্ষিক সেরা দশটি গানের তালিকায় নির্বাচিত হয়। গানের কথা ও সুর করেছেন শু নান নিজেই।
গানে বলা হয়েছে, 'প্রথম প্রেমের সময় আমি অনেক বোকা ছিলাম। অন্যরা আমাকে নিয়ে হাসতো। আমি জানি না, সবসময় নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করা ভালো কিনা? আন্তরিকতা না চালাকি? কোনটা গুরুত্বপূর্ণ! আমি জানি আমি একটি নির্বোধ পাখি, একা একাই নীরবে উড়ে বেড়াই। এ পৃথিবীতে আমি কীভাবে থাকতে পারবো? আশা করি, আরো ভালো হবো আমি। আমার প্রিয় ব্যক্তি, আমি আগেই উড়ে বেড়াই, এভাবে আমি তোমার সঙ্গে থাকতে পারি। ভবিষ্যতে ঝড়ের মুখে তুমি আমার ওপর নির্ভর করবে।'
শু নান অনেক চলচ্চিত্রে সুর করেছেন এবং অনেক পুরস্কারও পেয়েছেন। তিনি বলেন, 'বহু বছর ধরে আমি প্রতিদিন দু'টি করে সিনেমা দেখি। সিনেমার প্রতি আমার প্রেম, সংগীতের প্রতি আমার প্রেমের চেয়ে একটুও কম নয়। চলচ্চিত্র আমার শিল্পী হওয়ার পথে এক উত্সাহ।'
চলচ্চিত্র 'গুলি উড়ে যাক'
'দেশ প্রতিষ্ঠার মহান ব্রত' আর 'কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠার মহান ব্রত' এর মতো অত্যন্ত ঐতিহাসিক ও সিরিয়াস চলচ্চিত্রের তুলনায় শু নান 'গুলি উড়ে যাক' নামের মিলনান্তক সিনেমাটি বেশি পছন্দ করেন। 'প্রধান ছন্দ' সৃষ্টি পারদর্শী সুরকার হিসেবে হালকা সুর সৃষ্টি করা তার কাছে বেশি চ্যালেঞ্জের মনে হয়। বন্ধুরা, শুনুন 'গুলি উড়ে যাক' নামে সিনেমার 'শুয়ান ছিউয়ের গান'। পুরো গানে শুধু একটি শব্দ আছে, তা হচ্ছে 'শুয়ান ছিউ'। এর অর্থ কী, তা ব্যাখ্যা করা মুশকিল। তবে এ গান প্রচারের পর ইন্টারনেটে বেশ জনপ্রিয় হয়েছে।
শু নান বলেন, 'ঘুমানোর সময় প্রায়শই অনুপ্রেরণা আসে। আমার মাথায় সংগ্রাম শুরু হয়। আমি কী বিছানা থেকে উঠে গান লিখবো, নাকি ঘুমিয়ে পড়বো! যদি উঠে গানটি লিখতে বসি তাহলে সংগীত পরিবর্তন হয়ে যাবে। আর যদি ঘুমিয়ে পড়ি, তাহলে সব শেষ হয়ে যাবে, কিছু মনে থাকবে না। ফলে আমার ঘুম খুব ভালো হয় না। সংগীতের স্বপ্ন আমাকে ব্যথা ও আনন্দ একসাথে উপহার দেয়।'
বন্ধুরা, এখন আপনারা শুনছেন 'আদিম মনকে ভুলে যাবে না' নামের গান। শু নান বলেন, তার মন প্রথম থেকে এখন পর্যন্ত কোনো পরিবর্তিত হয়নি। 'সংগীতের প্রতি, স্বদেশের প্রতি, আত্মীয়ের প্রতি আমার ভালোবাসা কখনো পরিবর্তন হয়নি। হলে আমি অনেক আগেই ব্যবসায়ী হতাম।'
শু নান জানান, ১৩ বছর বয়সে তিনি গিটার পছন্দ করেন। তখন একটানা দশ বারো ঘণ্টা গিটার বাজতেন। প্রেম থাকলে কোনো কাজে ক্লান্তি আসে না। বর্তমান সময়ে সন্তানদের জোর করে পিয়ানো, নাচ বা ছবি আঁকা শেখানো দেখে খুব কষ্ট পান তিনি। তিনি বলেন, বাবা-মা'র উচিত সন্তানের আগ্রহ ও প্রতিভা কোন দিকে, সেটা ভালো করে জানা। তারপর বাচ্চাদের প্রিয় বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া। জোর করে বাচ্চাদের অপছন্দনীয় বিষয় শেখানো ঠিক না।
শু নান আর জ্যাকি চেন
২০১০ সালের জানুয়ারিতে চীনের শান্তিরক্ষী বাহিনীর আট জন শহীদের দেহ বিদেশ থেকে চীনে ফিরিয়ে আনা হয়। তাদের স্মরণে শু নান একটি মনস্পর্শী গান লিখেন। গানের নাম 'তোমাদের ঘরে ফিরিয়ে আনা'। বন্ধুরা, শুনুন এ গান।
২০০৮ সালে বেইজিং অলিম্পিক সাংগঠনিক কমিটি 'একজনের অলিম্পিক' নামে চলচ্চিত্র তৈরি করে। চলচ্চিত্রে গত শতাব্দীর ৩০'র দশকে চীনের স্বল্প-পাল্লার দৌড়বিদ লিউ ছাং ছুন-এর চীনের প্রতিনিধি হিসেবে প্রথম অলিম্পিক গেমসে অংশ নেওয়ার কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। শু নান এ চলচ্চিত্রের সবগুলো সংগীত সৃষ্টি করেছেন। তিনি বলেন, 'এ চলচ্চিত্র আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি নিজের মতো করে বেইজিং অলিম্পিক গেমসে যথাসাধ্য অবদান রাখতে চাই। এটা আমার আজীবনের স্মরণীয় গৌরব। কারণ এটা কেবল আমার এক জনের কর্তব্য নয়, বরং এটা চীনাদের অলিম্পিক গেমস, চীনাদের মর্যাদা। আমি এজন্য অনেক রাত জেগেছি। কিন্তু আমার কোনো কষ্ট হয়নি।'
শু নানের প্রচেষ্টা শ্রেষ্ঠ সংগীত শিল্পীদের স্বীকৃতি পেয়েছে। এ চলচ্চিত্রের সংগীত 'স্বর্ণ মোরগ পুরস্কারের শ্রেষ্ঠ সংগীত পুরস্কার' লাভ করে। বন্ধুরা, এবার শুনুন এ চলচ্চিত্রের থিম সং 'দাঁড়াও'।
শু নান বলেন, 'আমি ভবিষ্যতের এক বিশাল মঞ্চে দাঁড়িয়েছি। একটু অস্থির বোধ করছি। আমি নিজেকে বলি, সযত্নে প্রতিটি পদক্ষেপ নিতে হবে। সংগীত দিয়ে আমার জীবন যাত্রা রেকর্ড করতে হবে।'
বন্ধুরা, আজ চীনের যুব সুরকার শু নানের সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিলাম। তার কয়েকটি গানও আপনারা শুনলেন। আশা করি সবাই উপভোগ করেছেন। 'সুর ও বাণী' আসর আজকের মতো এখানে শেষ করছি। ভালো থাকুন সবাই। আবার কথা হবে।
(ইয়ু/তৌহিদ)