সুর ও বাণী: সুন্দর ছিংহাই নিয়ে গান
  2017-03-15 18:31:41  cri


প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আপনারা চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান শুনছেন। আমি আনন্দী বেইজিং থেকে আপনাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। আজকের 'সুর ও বাণী' আসরে চীনের ছিংহাই প্রদেশের সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেবো; শোনাবো এ প্রদেশসম্পর্কিত কয়েকটি সুন্দর গান।

বন্ধুরা, ছিংহাই চীনের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। পৃথিবীর ছাদ --- ছিংহাই-তিব্বত মালভূমির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আছে। ছিংহাই প্রদেশের আয়তন ৭ লাখ ২১ হাজার বর্গকিলোমিটার। এর রাজধানী শিনিং। ছিংহাই হচ্ছে ছাংচিয়াং, হোংহো এবং লানছাং— এ তিনটি নদীর উত্সস্থল। ফলে একে 'তিন নদীর উত্স' এবং 'চীনের ওয়াটার টাওয়ার' বলে ডাকা হয়। চীনের মালভূমিতে সবচেয়ে বড় অন্তর্দেশীয় লোনা পানির হ্রদও আছে এখানে। ফলে এ এলাকার নামকরণ হয়েছে 'ছিংহাই', মানে 'সবুজ সাগর'। এখন শুনুন লি চিং হুই'র বাজানো 'আকাশ পানি একই রঙের ছিংহাই হ্রদ' সুরটি।

২০১৪ সালের অগাস্ট মাসে আমি ছিংহাইয়ে বেড়াতে যাই। সেখানকার উঁচু পাহাড়, পরিষ্কার নীল আকাশ ও সাদা মেঘ, বড় বড় হলুদ ক্যানোলা ফুল, এবং অতি সুন্দর ছিংহাই হ্রদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমার মনে গভীর দাগ কাটে। ছিংহাই হ্রদের তিব্বতি নাম 'ছোওয়েনবু'যার অর্থ 'সবুজ সাগর'। এটি চীনের বৃহত্তম অন্তর্দেশীয় লোনা পানির হ্রদ। ১৯৬৪ সালে ছিংহাই হ্রদকে চীনের জাতীয় পর্যায়ের সংরক্ষিত প্রাকৃতিক অঞ্চলগুলোর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বর্তমানে হ্রদটিতে ২২২ ধরনের পাখি দেখা যায়। এদের সংখ্যা ১ লাখ ৬০ হাজারের বেশি। ছিংহাই হ্রদের পাশ দিয়ে সাইকেল চালিয়ে ভ্রমণ করতে অনেক মজা লাগে। এ হ্রদের মাছও খুব সুস্বাদু। যদি সুযোগ পান, আপনারা অবশ্যই একবার বেড়াতে আসবেন এখানে। বন্ধুরা, শুনুন শু ছিয়ান ইয়ার গাওয়া 'ছিংহাই হ্রদ' শীর্ষক গান।

বন্ধুরা, ছিংহাইয়ের সাথে চীনের কানসু, সিছুয়ান, তিব্বত আর সিনচিয়াংয়ের অভিন্ন সীমান্ত আছে। এ প্রদেশে তিব্বতি, হুই, মঙ্গোলীয়, থু এবং সালাসহ ৪৩টি সংখ্যালঘু জাতির লোক বসবাস করেন। জনসংখ্যা প্রায় ৬০ লাখ।

ছিংহাইয়ের লোকসংগীতের মধ্যে 'হুয়া এর' নামক গানগুলো সবচেয়ে জনপ্রিয়। যুবকের কণ্ঠে গাওয়া 'হুয়া এর' নামকরণ করা হয়েছে 'কিশোর'। আর যুবতীর কণ্ঠে গাওয়া 'হুয়া এর' নাম 'হুয়া আর'। এই লোকসংগীতের ইতিহাস অন্তত চার'শ বছরের। 'হুয়া আর' ছিংহাই, কানসু, নিংসিয়াংয়ের অধিকাংশ স্থান এবং সিনচিয়াংয়ের কিছু এলাকায় বেশ প্রচলিত। একে 'উত্তর-পশ্চিম চীনের আত্মা' বলা হয়। ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ এ লোকসংগীতকে 'মানবজাতির অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার' হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

বন্ধুরা, এখন শুনুন 'হুয়া আর'-এর ভিত্তিতে রচিত 'চার ঋতু' শীর্ষক গান। গেয়েছেন লিউ চি লিং। গানে বসন্তকাল, গ্রীষ্মকাল, শরত্কাল এবং শীতকালে কী কী ফুল ফোটে?—এমন প্রশ্ন করার মাধ্যমে একটি মেয়ে তার প্রেমিকের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করেছে।

ছিংহাইয়ের পূর্বাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল এবং পশ্চিমাঞ্চলে তিনটি বড় পর্যটনকেন্দ্র গড়ে উঠেছে। এ প্রদেশে প্রাচীন মন্দির, দেওয়ালচিত্র, প্রাচীন দুর্গ এবং সমাধিসহ অনেক ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান ও পুরাকীর্তি রয়েছে। এখানে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধাও আছে। এখানকার বিভিন্ন জাতির রঙিন রীতিনীতি ও ঐতিহাসিক ঐতিহ্য আছে। প্রতিবছরের মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়টা ছিংহাইতে ভ্রমণের স্বর্ণ সময়। মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে তৃণভূমির ঘাস সবুজ হতে শুরু করে। তখন বিভিন্ন ধরনের যাযাবর পাখি বিভিন্ন দিক থেকে ছিংহাই হ্রদে চলে আসে। পাহাড়ের তুষার গলে যায়। এই মালভূমি আবার প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। জুলাই মাসে ছিংহাই সবচেয়ে গরম, বিশেষ করে ছাইদামু উপত্যকার ছার্হান  অঞ্চলের তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হতে পারে। তবে ছিংহাইয়ের পূর্বাঞ্চল খুব আরামদায়ক। গ্রীষ্মকালে সেখানে গেলে কোনো কষ্ট হবে না। গ্রীষ্মকালে ছিংহাইয়ে রাস্তাঘাটও অপেক্ষাকৃত ভালো থাকে। অন্য সময় তাপমাত্রার কারণে ভ্রমণকারীদের একটু কষ্ট বোধ হবে।

বন্ধুরা, এবার শুনুন 'সে সুদূর স্থান' শীর্ষক গান। এ গানটি সৃষ্টি করেছেন ওয়াং লো বিন। এ গানের জন্য তিনি ইউনেস্কোর প্রাচ্য ও পশ্চিমা সংস্কৃতি বিনিময়ের বিশেষ অবদান পুরস্কার পেয়েছেন। এটি সুরকার ওয়াং লো বিনের সবচেয়ে প্রিয় গান। গানটিকে 'রাজকীয় মুকুটের ওপর মুক্তা' নামে অভিহিত করা হয়। গানে ওয়াং লো বিন ছিংহাইয়ের সুন্দর নদনদী ও পাহাড় এবং ছিংহাইয়ের বিভিন্ন জাতির জনসাধারণের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন। গানটি তিব্বতি ও হান জাতির মানুষের মধ্যে সংহতির প্রতীক। এ গানের জন্য ওয়াং লো বিন 'পশ্চিম চীনের গানের সম্রাট' খেতাব অর্জন করেন। বন্ধুরা, শুনুন 'সেই সুদূর স্থান' গানটি।

ছিংহাইয়ে পশুপালনশিল্পের জন্য চমত্কার পরিবেশ আছে। পরিসংখ্যান অনুসারে, গোটা প্রদেশে প্রায় ৭৫ ধরনের ঘাস পশুদের খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এখানে প্রতিবছর প্রায় ৭ কোটি ৯৮ লাখ টন খাওয়ার ঘাস উত্পাদিত হয়। এখানকার পশুপালনশিল্প থেকে যেসব পণ্য উত্পাদিত হয় সেগুলোর মধ্যে আছে: গোমাংস ও খাসির মাংস, পশম, কাশ্মীরী শাল, গরু ও উটের প্লাশ্ এবং দুধ। ছিংহাই হচ্ছে চীনের প্রধান পশুপালন অঞ্চল এবং পশম উত্পাদনের প্রধান অঞ্চলগুলোর অন্যতম। এখানকার প্রধান খাদ্যশস্য হচ্ছে বসন্ত গম, যব, আলু, সীম ও ডাল। অর্থকরী ফসল হচ্ছে তেলবীজ।

ছিংহাইতে ভ্রমণের সময় আমি দেখেছি পাহাড়ে বা তৃণভূমিতে দল বেঁধে গরু, ছাগল বা বড় আকারের সাদা চমরি গাই আরাম করে ঘাস খায়। শহরবাসীদের কাছে এমন প্রাকৃতিক দৃশ্য খুব ভালো লাগার কথা; আমার ভালো লেগেছে।

বন্ধুরা, এবার শুনুন লিউ চিয়া লিয়াংয়ের গাওয়া 'ছিংহাইকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি' শীর্ষক গানটি।

ছিংহাইয়ে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ মিলেমিশে বাস করে। এখানে বৌদ্ধ, তাও, ইসলাম, ও খ্রিস্ট ধর্মের অনুসারী আছেন। তবে এখানে তিব্বতি বৌদ্ধ ধর্ম ও ইসলাম ধর্মের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। ছিংহাইয়ের মানুষ সহজ-সরল। তারা অতিথিপরায়ণ, সহনশীল। অন্যের সংস্কৃতির ভালো অংশ গ্রহণে তারা পিছপা হন না। তারা প্রতিটি ঐতিহ্যবাহী উত্সবকে খুব গুরুত্ব দেন এবং ভালোভাবে ঐতিহাসিক রীতিনীতি অনুসরণ করেন।

আমি ছিংহাইয়ের রাজধানী সিনিংয়ের বৌদ্ধ ধর্মের মন্দিরে দেখেছি, অনেক তিব্বতি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী অতি আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করেন এবং মন্দিরে অনেক টাকা অনুদান দেন। মন্দিরে টাকা দেওয়া জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য মনে করেন তারা। তৃণভূমি থাকলে তৃণভূমির গান থাকবে। তৃণভূমি সবসময় শিল্পীদের অনুপ্রেরণা দেয়। ছিংহাই এক সুন্দর ও অদ্ভুত অঞ্চল, ভ্রমণের ভালো জায়গা। একবার সেখানে গেলে বার বার জায়গাটির কথা আপনার মনে পড়বে। আপনারা ছিংহাই যেতে চাইলে চীনের বড় বড় শহর থেকে বিমানে করে যেতে পারেন অথবা রেলগাড়িতেও যেতে পারেন। বন্ধুরা, অনুষ্ঠানের শেষে শুনুন 'তৃণভূমির প্রেমের গান'।

প্রিয় বন্ধুরা, 'সুর ও বাণী' আসর আজকের মতো এখানে শেষ করছি। সুযোগ পেলে আপনারা ছিংহাই ভ্রমণে আসবেন আশা করি। আপনাদের ভালো লাগবে বলেই আমার বিশ্বাস। আজ তাহলে এখানেই বিদায় নিই। ভালো থাকুন সবাই। আবার কথা হবে। (ইয়ু/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040