প্রথমে চীনের 'দুই অধিবেশন' সমন্ধে বিশেষ পর্ব শুনবো।
চীনের দ্বাদশ গণরাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলন (সিপিপিসিসি)-র পঞ্চম অধিবেশনকালে 'সাংস্কৃতিক আত্মবিশ্বাসে অটল থাকা, ভালোভাবে চীনা গল্প বলা' প্রতিপাদ্য হিসেবে এক সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজিত হয়। এতে সিপিসিসি'র ৫ জন সদস্য ভালোভাবে চীনা গল্প বলা, ঐতিহ্যবাহী গ্রাম সংরক্ষণ, ক্যালিগ্রাফি শিক্ষা জোরদারকরণ, চীনা চলচ্চিত্র উন্নয়ন এবং চমত্কার ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিক যোগাযোগসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন।
'ভালোভাবে চীনা গল্প বলা' নিয়ে ফিনিক্স স্যাটেলাইট টেলিভিশন হোল্ডিংস লিমিটেড বোর্ডের চেয়ারম্যান, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, সিপিপিসিসি'র সদস্য লিউ ছিয়াং লে বলেন, বিশ্বকে এক সত্যি, বহুত্ববাদী চীন দেখানো দরকার।
লিউ ছিয়াং লে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেন, "ইতালীয় অপেরা রচনাকার পুচিনি গত শতাব্দীর প্রথম দিকে অপেরা 'তুরানদোত' সৃষ্টি করেন। অপেরাটির মূল সঙ্গীতউপাদান তিনি চীনা লোক সুর 'মো লি হুয়া খাই' থেকে সংগ্রহ করেছেন। যখন 'তুরানদোত' ইতালিতে প্রথম বারের মতো পরিবশন করা হয় তখন তা ভীষণ প্রশংসা লাভ করে। বর্তমানে ইতালির প্রায় প্রত্যেক অপেরাপ্রিয় মানুষ এ অপেরাটির সঙ্গীত জানেন। তখন চীনা সঙ্গীত ইতালিতে খুবই জনপ্রিয়। এখন পর্যন্ত এ সঙ্গীতগুলো ইতালির লোকজন তাদের মন দিয়ে অনুভব করেন।"
লিউ মনে করেন, 'মো লি হুয়া খাই' গল্পে চীনা বৈশিষ্ট্যময় জাতির সংস্কৃতি দেখা যায়, যাতে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, গত বছর আন্তর্জাতিক হান্স ক্রিশ্চিয়ান আন্ডার্সন পুরস্কার বিজয়ী চীনা শিশু সাহিত্যের লেখক ছাও উয়েন সুয়ান'র সাহিত্যকর্ম 'ছাও ফাং জি' হলো ভালোভাবে চীনা গল্প বলার একটি প্রতিনিধি। উপন্যাসটিতে তিনি শিশুর অনেক কষ্ট তুলে ধরেছেন কিন্তু কখনও কোনো কিছু ছেড়ে দিতে বলেনি। এতে একটি শিশুর বড় হয়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় এক সত্যি ও চীনা বৈশিষ্ট্যময় জাতির সংস্কৃতি দেখা যায়।
ঐতিহ্যবাহী গ্রাম সংরক্ষণ বিষয় নিয়ে সিপিপিসিসি সদস্য ফেং বলেন, বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী গ্রাম সংরক্ষণ ব্যাপারটি দু'টি প্রধান সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। একটি হলো খালি বাড়ি, অন্যটি হলো অধিক পর্যটন উন্নয়ন।
ফেং বলেন, প্রথমে ঐতিহ্যবাহী গ্রাম সংরক্ষণে মানদণ্ড ব্যবস্থার অভাব হচ্ছে। তা ছাড়া, প্রজন্মের পর প্রজন্মের গ্রামবাসী ঐতিহ্যবাহী গ্রামের মূল্য জানে না। সেজন্য এসব গ্রাম সংরক্ষণ সচেতনতার অভাব রয়েছে। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য যেন টর্চ রিলের মতো এর প্রক্রিয়া বন্ধ হতে পারে না। সেজন্য ফেং সংশ্লিষ্ট বিভাগ প্রতিষ্ঠা করে কোনো অপ্রযুক্তি পর্যটন উন্নয়নের অনুমোদন দেবে না। এর সঙ্গে অবকাঠামো নির্মাণ কাজে নাগরিকদের সহায়তা দেবে।
ফেং আরো বলেন, তরুণ-তরুণীদের সাংস্কৃতিক প্রশিক্ষণও খুব গুরুত্বপূর্ণ। সংস্কৃতি শুধু জ্ঞান নয়। সাংস্কৃতিক শিক্ষার সেরা পদ্ধতি হলো অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করা। সংস্কৃতি অনুভব ও উপভোগ করার সঙ্গে সঙ্গে তাদের নিজ সংস্কৃতি সংরক্ষণে সচেতন হতে হবে।
চীনের ফিল্ম অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস-চেয়ারম্যান ছেন লং ভালোভাবে চীনা চলচ্চিত্র নির্মাণ নিয়ে বলেন, "আমার চলচ্চিত্র অনেক দেশে সাফল্য পেয়েছে। অনেক মানুষ আমাকে বলেছে যে আমি চীনা চলচ্চিত্রের ব্যবসায়িক কার্ড। এর পর আমি জানতে পেরেছি যে, আমার চলচ্চিত্র অনেক বেশী লোকের জীবনের ওপর প্রভাব ফেলেছে। সেজন্য তখন থেকে আমি ভাবছি, কীভাবে চলচ্চিত্রের মাধ্যমে চীনা সংস্কৃতি বাইরে প্রচার করা যায়।" তিনি আরো বলেন, "আমাদের দেশে এত বড় জনসংখ্যা আছে, যদি আমরা মন দিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করি, চীনা সংস্কৃতি প্রচার করি, তাহলে আমি মনে করি, সব স্বপ্ন আমাদের দারজার সামন চলে আসবে।"
বর্তমানে আরো বেশী বিদেশি চলচ্চিত্র চীনা চলচ্চিত্র বাজারে প্রবেশ করেছে। তা অবশ্যই চীনা চলচ্চিত্র শিল্পের ওপর অনেক চাপ ফেলেছে। কিন্তু এ ধরণের চাপ ভালো চাপ, কারণ এ চাপে চীনা চলচ্চিত্র নির্মাতারা পশ্চিমা চলচ্চিত্র থেকে শিখবে, অগ্রগতি অর্জন করবে এবং আরো চেষ্টা করে ভালো চীনা চলচ্চিত্র তৈরি করবে।
ছেন বলেন "যদি কোনো প্রতিযোগিতা ছাড়া, দরজা বন্ধ করে নিজের চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয় তাহলে আমরা বর্তমানে চীনা চলচ্চিত্রের কোনো সাফল্য দেখতে পারবো না। "
(ছোট সঙ্গীত)
বন্ধুরা, এখনো যদি চীনের 'দুই অধিবেশন' সম্পর্কিত তথ্য সম্পর্কে আপনাদের কোনো অস্পষ্ট ধারণা থাকে তাহলে নিচের তথ্য আপনাদেরকে দুই অধিবেশন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দিতে সহায়ক হবে।
দুই অধিবেশন অর্থাত্ জাতীয় গণকংগ্রেস (এনপিসি) ও চীনা গণরাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলন (সিপিপিসিসি) বর্তমানে বেইজিংয়ে চলছে। গত ০৩ মার্চ শনিবার সকালে বেইজিংয়ে শুরু হয়েছে চীনের দ্বাদশ জাতীয় গণকংগ্রেসের পঞ্চম অধিবেশন। মূলত গণরাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের অধিবেশন ৩ মার্চ বিকেলে এবং জাতীয় গণকংগ্রেসের পঞ্চম অধিবেশন ৫ মার্চ শুরু হয়। এ দুই অধিবেশন হচ্ছে চীনের গণকংগ্রেস ও চীনের গণরাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের সংক্ষিপ্ত নাম। প্রতি বছরের মার্চ মাসে এ দুটি অধিবেশন পর পর অনুষ্ঠিত হয়। গণকংগ্রেস ও পরামর্শ সম্মেলনের কার্যমেয়াদ পাঁচ বছর। প্রতি বছর একবার জাতীয় পর্যায়ের বার্ষিক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। 'দুই অধিবেশন' চীনের ব্যাপক ভোটারদের স্বার্থ ও অধিকারের প্রতিনিধিত্ব করে। অধিবেশন চলাকালে অধিবেশনে উপস্থিত প্রতিনিধিরা জনগণের পক্ষ থেকে নানা মতামত ও প্রস্তাব করেন।
গণকংগ্রেস ব্যবস্থা চীনের এক মৌলিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা। জাতীয় গণকংগ্রেস চীনের সর্বোচ্চ ক্ষমতা সংস্থা। জাতীয় গণকংগ্রেস বিভিন্ন প্রদেশ, স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল, কেন্দ্রশাসিত মহানগর, বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল ও সেনাবাহিনীর গণকংগ্রেস-প্রতিনিধদের নয়ে গঠিত। জাতীয় গণ কংগ্রেস দেশের আইন প্রনয়নের অধিকার প্রয়োগ করে এবং দেশের রাজনৈতিক জীবনের বড় বড় সমস্যা সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত নেয়।
বন্ধুরা, এখন 'চীনা সংস্কৃতি বাইরে প্রচারের চেষ্টা, রাশিয়ায় জনপ্রিয় চীনা থিম বুকস্টোর' শিরোনামে একটি প্রবন্ধ শুনবেন।
'চীন প্রকাশনা প্রচার'-র একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হিসেবে, 'চীনা বই বাইরে প্রচার পরিকল্পনা' প্রায় ১১ বছর পার করে ফেলেছে। এ প্রকল্পটি বইকে একটি মিডিয়া হিসেবে ব্যবহার করে আরো বেশি বিদেশিদের চীনের প্রতি আকৃষ্ট করে তোলে।
২০১৬ সালের জুলাই মাসে রাশিয়ায় প্রথম 'চীনা থিম বুকস্টোর' চালু হয়। রুশদের কাছে এ বুকস্টোর চীনকে জানার একটি গুরুত্বপূর্ণ জানালা। এখানে অনেক বার বিভিন্ন ধরনের চীনা সাংস্কৃতিক আড্ডা আয়োজিত হয়। সেজন্য এ বুকস্টোর রাশিয়ায় খুবই জনপ্রিয়। এখন বিস্তারিত শুনবেন রাশিয়ায় সিআরআইয়ের সাংবাদিকদের পরিদর্শনে।
এ বুকস্টোরের একটি সুন্দর নাম আছে, বাংলা ভাষায় তা হলো 'সুযোগ বুকস্টোর'।
'সুযোগ বুকস্টোর' মস্কোর সবচেয়ে বৈশিষ্ট্যময় আরবাত রাস্তায় অবস্থিত। এর কাছাকাছি ইউরোপীয় শাস্ত্রীয় স্থাপত্য দেখা যায়। চালু হওয়ার অর্ধ বছরে এ বুকস্টোর দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এ বুকস্টোর যেন একটি হালকা বাতাসের মতো, শুধু রুশ জনগনই এটিকে পছন্দ করে তা নয়, অনেক বিদেশি পর্যটকও মস্কোয় এসে এ বুকস্টোর পরিদর্শন করে। সেখানে তারা বই পড়ে, সঙ্গীত শোনে, বন্ধুদের দেখে ইত্যাদি। তারা এখানে গভীর চীনা ঐতিহ্যগত সাংস্কৃতিক পরিবেশে সুন্দর সময় অতিবাহিত করে।
রেকর্ড ১
'সুযোগ বুকস্টোর' একটি ছোট বুকস্টোর, কিন্তু এখানে সবকিছু আছে। স্টোরে বিভিন্ন ক্ষেত্রের পাঁচ হাজারেরও বেশি বই আছে। এতে বিপুল পরিমাণে মূল চীনা বই এবং রুশ ভাষায় অনুদিত চীনের পরিচয় সমন্ধে বই রয়েছে। রাশিয়ার চীন বিশেষজ্ঞ এবং চীনা শিক্ষার্থীদের জন্য এ বুকস্টোর যেন এক জ্ঞানের সাগর। বুকস্টোরে নিয়মিতভাবে সাংস্কৃতিক পার্লার, লেকচার ও বুক লঞ্চসহ বিভিন্ন তত্পরতা অনুষ্ঠিত হয়। কখনো কখনোও ছোট আকারের চ্যারিটি কনসার্টও আয়োজিত হয়। বুকস্টোরের মালিক সাংবাদিকদের জানায়, এখানে সাংস্কৃতিক পার্লার সবচেয়ে জনপ্রিয়।
রেকর্ড ২
"আমরা চীনা ভাষার প্রশিক্ষণ ক্লাস, চীনা চিত্রকলার ক্লাস ও ক্যালিগ্রাফিবিষয়ক ক্লাস আয়োজন কি। রুশ ও চীনা শিক্ষক এখানে ক্লাস নেন। শিক্ষকদেরও সাক্ষাত্কার নিয়েছি আমরা। তা ছাড়া, প্রায় প্রতি সপ্তাহে এখান চায়ের অনুষ্ঠানও থাকে। পাঠকরা এখানে বিভিন্ন ধরনের চীনা চা উপভোগ করতে পারে। তারা চা সংস্কৃতি অনুভব করতে পারে।"
রুশ সুন্দরী এভিগেনিয়া সেদিন এখানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি অনেক চীনা ঐতিহ্যিক বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারেন। চীনা চিত্রকলা সম্পর্কেও তারা জানাশোনা আছে। আসলে তার অনেক চিত্রকর্ম অনেক বার রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পেয়েছে। কয়েক মাস আগে, তিনি জানতে পারেন যে, রাশিয়ায় চীনের থিম বুকস্টোর আছে, তারপর তিনি অনেক বার এ বুকস্টোরে এসে চিত্রকলাবিষয়ক অ্যালবাম কেনেন। এর পর তিনি স্টোরের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পার্লারের স্থায়ী অতিথি হন। তিনিও বুকস্টোরে অনেক নতুন বন্ধু এনে দিয়েছেন।
রেকর্ড ৪
"মস্কোয় চীনা চিত্রকলাবিষয়ক অ্যালবাম খুবই অল্প। সেজন্য আমি অবশ্যই এখানে আসি। আমাদের চিত্রকর্মও বুকস্টোরের স্বীকৃতি পেয়েছে। যেমন চলতি বসন্ত উত্সবকালে এখানে আমরা একটি চিত্র প্রদর্শনী আয়োজন করেছি। তখন অনেক দর্শক এসেছে। আমি খুবই খুশি।"
বুকস্টোরের বিভিন্ন চীনা সাংস্কৃতিক পার্লার অনেক রুশ তরুণ-তরুণীদের আকর্ষন করেছে। যেমন শারাপাত, তিনি আনন্দ নিয়ে সাংবাদিককের কাছে তার অনুভূতি শেয়ার করেছেন।
"আমি চায়ের অনুষ্ঠান খুবই পছন্দ করি। ২০১৫ সালে আমি চীনে গিয়ে শিখেছি। তখন আমি চীনের ইয়ুন নান প্রদেশ থেকে অনেক চা এখানে নিয়ে আসি। এখনও আমার পরিবারে সেসসব চা কিছু আছে। আমি এখন চীনা ভাষা শিখছি। অনেক চীনা গান শুনি।"
রাশিয়ার পাঠকদের জন্য 'সুযোগ বুকস্টোর' শুধু একটি বইয়ের দোকান তা নয়, তা আসলে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের একটি জানালা। বুকস্টোরের প্রতি বছর ৫০টিরও বেশি রুশ ভাষার বই অনুবাদ ও প্রকাশনা করার পরিকল্পনা আছে। এ বুকস্টোর আরো ভাল বই বিদেশি পাঠকদের কাছে তুল ধরতে পারবে বলে আশা করে।
প্রিয় শ্রোতা, আজকের অনুষ্ঠান আপনাদের কেমন লাগলো? আপনারা যদি 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' বিষয়ক কোনো কিছু জানতে বা আলোচনা করতে চান, তাহলে আমাকে চিঠি লিখবেন বা ই-মেইল করবেন। আপনাদের কাছ থেকে চমত্কার পরামর্শ আশা করছি। আর আপনাদের জানিয়ে রাখি, আমার ইমেইল ঠিকানা হলো, hawaiicoffee@163.com
চিঠিতে প্রথমে লিখবেন, 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' অনুষ্ঠানের 'প্রস্তাব বা মতামত'। আপনাদের চিঠির অপেক্ষায় রইলাম।
বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠান এখানেই শেষ করছি। অনুষ্ঠান শোনার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আগামী সপ্তাহে একই দিন, একই সময় আপনাদের সঙ্গে আবারো কথা হবে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়ান (জিনিয়া/টুটুল)