এ সম্পর্কে এনপিসি'র প্রতিনিধি, চীনের সামরিক বিজ্ঞান একাডেমির গবেষক মেজর জেনারেল ছেন চৌ সাংবাদিকদের সাক্ষাত্কার দেওয়ার সময় বলেন, চীনের প্রতিরক্ষা বাজেটের প্রবৃদ্ধির পরিমাণ যুক্তিযুক্ত ও স্থিতিশীল।
আসলে প্রতি বছরের বার্ষিক প্রতিরক্ষা বাজেটের প্রতি সংবাদমাধ্যমের বিশেষ আগ্রহ থাকে। শনিবার আয়োজিত এনপিসি'র প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনে এ বিষয় নিয়ে অনেক প্রশ্ন করা হয়। এ সম্পর্কে মুখপাত্র ফু ইং বলেন,
'প্রতি বছর প্রতিরক্ষা নির্মাণের চাহিদা ও জাতীয় অর্থনীতি উন্নয়নের মান অনুসারে প্রতিরক্ষা বাজেট নির্ধারণ করে চীন সরকার। চলতি বছর এ প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ৭ শতাংশ। চীনের অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, জিডিপিতে প্রতিরক্ষা বাজেটের হার প্রায় ১.৩ শতাংশ, গত কয়েক বছরে এ পরিমাণ বজায় রয়েছে।'
জানা গেছে, ২০১২ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত চীনের প্রতিরক্ষা বাজেটের পরিমাণ পরপর ১১.২, ১০.৭, ১২.২, ১০.১ এবং ৭.৬ শতাংশ দাঁড়িয়েছে। এ সম্পর্কে এনপিসি'র প্রতিনিধি, গবেষক ও মেজর জেনারেল ছেন চৌ বলেন, প্রতিরক্ষা বাজেটের প্রবৃদ্ধি জাতীয় কৌশল, সেনাবাহিনীর কার্যক্রমের পরিবর্তন ও সেনাবাহিনীর সংস্কারের চাহিদার সঙ্গে যুক্ত। তিনি বলেন,
'আমাদের প্রতিরক্ষা বাজেটের প্রবৃদ্ধি যুক্তিযুক্ত, স্থিতিশীল ও টেকসই। প্রতিরক্ষা নির্মাণ ও অর্থনীতির নির্মাণের সাথে খাপ খাওয়ানো এবং প্রতিরক্ষার চাহিদা ও জাতীয় অর্থনীতি উন্নয়নের মানের সাথে তা যুক্ত। ১৯৯৯ সালে চীনের প্রতিরক্ষা বাজেটের পরিমাণ ছিলো ১০ হাজার কোটি ইউয়ানেরও বেশি। চলতি বছর এর পরিমাণ ১ লাখ কোটি ইউয়ানেরও বেশি। ১০ বছরের বেশি সময়ের মধ্যে ১০ গুণ বেড়েছে, তা থেকে বোঝা যায়, চীনের প্রতিরক্ষা নির্মাণ ও অর্থনীতির উন্নয়ন নতুন পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে।'
জানা গেছে, চীনের প্রতিরক্ষা বাজেট প্রধানত সেনাদের জীবনযাত্রা, প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম-এ তিনটি ব্যয়ের অংশ নিয়ে গঠিত। বিশ্বের অন্যান্য বড় দেশের তুলনায় চীনের প্রতিরক্ষা বাজেটের পরিমাণ যে-কোনো দিক বিবেচনায় নিম্ন পর্যায়ে অবস্থিত। গত ১০ বছরে এ পরিমাণ চীনের জিডিপির ১.৩২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, তা বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে কম এবং বৈশ্বিক গড়পড়তা ২.৪ শতাংশেরও চেয়েও কম।
২০১৭ সালে চীনের সেনাবাহিনী সংস্কারের গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে প্রবেশ করে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, নতুন বছরের প্রতিরক্ষা বাজেটে সংস্কারের জন্য শক্তিশালী সমর্থন প্রদান করা হবে। এ সম্পর্কে মেজর জেনারেল ছেন মনে করেন, বর্তমানে প্রতিরক্ষা ও সেনাবাহিনীর সংস্কার ব্যাপক ও বৈপ্লবিক, তা সেনাবাহিনীর পুনরায় গঠন। এ সংস্কারে অবশ্য কাঠামো ও স্কেল পরিবর্তন করা হবে এবং সেনাবাহিনীর অসামরিক কর্মীদের সংখ্যা কমানো হবে। তিনি বলেন,
'সেনাবাহিনীর কার্যক্রম পরিবর্তন হয়েছে, স্থলবাহিনীর প্রবাহরেখা দরকার, পুরনো সরঞ্জাম নিষ্কাশন করতে হবে এবং নৌ, বিমান, রকেট ও কৌশলগত সেনাবাহিনী নির্মাণ প্রয়োজন। উন্নত অস্ত্র ও সরঞ্জাম অতি প্রয়োজন। এবারের সংস্কারে প্রায় ৩ লাখ সেনাকে নিরস্ত্রীকরণ করতে হবে এবং নীতিমালা ও ব্যবস্থাপনার সংস্কার চালু করতে হবে।'
যদিও প্রতি বছর বিশ্বের সামনে প্রতিরক্ষা বাজেট প্রকাশ করে বেইজিং এবং প্রতি দু'বছর পর প্রতিরক্ষাবিষয়ক শ্বেতপত্র প্রকাশের মাধ্যমে চীনের সেনাবাহিনীর উন্নয়ন ও নির্মাণ তুলে ধরা হয়, তবে চীনের সামরিক কিছু বিষয় নিয়ে অনেকের অনেক সন্দেহ রয়েছে। এ সম্পর্কে গবেষক ছেন বলেন,
'প্রতিরক্ষা আইন ও বাজেট আইন অনুসারে প্রতিরক্ষা বাজেট প্রণয়ন করে চীন এবং তা জাতীয় গণকংগ্রেস তত্ত্বাবধান করে থাকে। এর সঙ্গে সঙ্গে চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদ ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)-র কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশন তাতে অনুমোদন দিয়ে থাকে। তাই চীনের অদৃশ্য কোনো প্রতিরক্ষা বাজেট নেই।' (সুবর্ণা/টুটুল)