ড্রাগনের মাথা ওপরে তোলা দিবস
  2017-02-27 17:44:42  cri

 


আজ চীনের চান্দ্র পঞ্জিকার ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় দিন।চীনের রীতিনীতি ও কৃষি কাজের সাথে জড়িত 'চিয়েছি' অনুসারে ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় দিন বিভিন্ন পোকামাকড় শীতের তীব্রতা থেকে দীর্ঘদিন পর জেগে ওঠে। উত্তর চীনে এ দিবসকে 'লোং থাই থৌ' বা 'ড্রাগনের মাথা ওপরে তোলা' উত্সব বলা হয়। আজকের টপিক অনুষ্ঠানে এ উত্সব সম্পর্কে কিছু তথ্য তুলে ধরবো।

প্রায় ১০০০ বছর আগে চীনের থাং রাজবংশ থেকে 'লোং থাই থৌ দিবস' উদযাপন শুরু হয়। চীনের একটি প্রচলিত প্রবাদ অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় দিন ড্রাগনের মাথা ওপরে তোলার মধ্য দিয়ে বসন্তকাল এবং সময় মতো কৃষি কাজ শুরু হয়।

চীনাদের কাছে ড্রাগন এক ধরনের সুখী পশু, যা বৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। চান্দ্র পঞ্জিকার ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় দিন হলো ড্রাগনের আকাশে ওড়ার সময়। চীনের কৃষি কাজের সাথে জড়িত চিয়েছির দিক বিবেচনায় ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে চীনের অনেক এলাকা মৌসুমে প্রবেশ করে থাকে। যদিও তা প্রাকৃতিক নিয়ম, তবে প্রাচীনকালে চীনারা তা ড্রাগনের সাফল্য হিসেবে আখ্যায়িত করতো। তাই চীনাদের মনে ড্রাগনের অবস্থান অতুলনীয়।

কাহিনী অনুসারে, চীনের থাং রাজবংশের সময় রাণী উ চে থিয়ান তার স্বামীকে হত্যা করে দেশের প্রধান হন। তখন স্বর্গের রাজা তাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য তিন বছর বৃষ্টি না হওয়ার নির্দেশ দেন। তবে বৃষ্টির নিয়ন্ত্রক জেড ড্রাগন সাধারণ মানুষের কষ্টে সহানুভূতি প্রকাশের জন্য স্বর্গের রাজার অনুমতি ছাড়াই বৃষ্টি পড়ার ব্যবস্থা করেন। এ খবর শুনে স্বর্গের রাজা অনেক রাগান্বিত হন। তাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য একটি বড় পাহাড়ের নিচে পাঠিয়ে দেন।

পাহাড়ের উপরে একটি লিপি লেখা থাকে, তাতে বলা হয়, ড্রাগন রাজা অনুমতি ছাড়াই বৃষ্টি তৈরি করেছেন,তাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য মানুষের দুনিয়ায় পাঠানো হয়েছে। যদি পুনরায় স্বর্গে ফিরে আসতে চায়, তাহলে স্বর্ণের বিচির ফুল ফুটতে হবে। তখন লোকজন স্বর্ণের বিচির ফুল খোঁজার জন্য প্রচেষ্টা চালায়। ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় দিন ভুট্টা দেখে লোকজন মনে করে তা যেন স্বর্ণের চিবির মতো। তখন লোকজন ভুট্টার বিচি দিয়ে পপকর্ন রান্না করে। ড্রাগন রাজা এ দৃশ্য দেখে স্বর্গের রাজার কাছে উচ্চস্বরে বলেন, স্বর্ণের বিচির ফুল ফুটেছে, এখন আমাকে মুক্তি দিন! স্বর্গের রাজা এ দৃশ্য দেখে তাকে মুক্তি দেন এবং তখন থেকে প্রতি বছর সময় মতো বৃষ্টি পড়ার অনুমোদন দেন। তাই প্রতি বছর চান্দ্র পঞ্জিকায় ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় দিন লোকজন ভুট্টা দিয়ে পপকর্ন তৈরি করে থাকে।

প্রাচীনকালে এ উত্সব উদযাপনের জন্য গ্রামাঞ্চলে বিভিন্ন শ্রদ্ধানিবেদন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হতো। যেমন এদিন মন্দিরে ড্রাগন দেবতার উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠান আয়োজিত হতো। নারীদের এদিন সূচিকর্ম নিষিদ্ধ, কারণ সুচ সহজেই ড্রাগনের চোখে আঘাত হানতে পারে।

শীতের তীব্রতা শেষে পোকামাকড় জেগে ওঠার পর গ্রামাঞ্চলের বাড়িঘরে প্রবেশ করে। পোকামাকড় ও দুর্ভাগ্য দূর করার উদ্দেশ্যে সাধারণত চুলার ছাই বাড়িঘর ও কুয়ার চারপাশের ছিটানো হয়। এসব রীতির মাধ্যমে নতুন বছরের সৌভাগ্য কামনা করা হয়।

তা ছাড়া, প্রতি বছর 'লোং থাই থৌ উত্সবে' চুল কাটানোর রীতিনীতি রয়েছে। কারণ চীনারা বিশ্বাস করে এ উত্সবে চুল কাটলে সারা বছর সৌভাগ্য আসবে। তাই হাজার বছর ধরে এদিনটিতে লোকজন চুল কেটে আসছে। চীনের কিছু কিছু এলাকায় এদিন ধূপ জ্বালিয়ে বাসার পোকামাকড় দূর করার রীতিনীতিও রয়েছে। এ ছাড়া, পোকামাকড় দূর করতে লাঠি দিয়ে ঘরের ছাদে আঘাত করা হয়, যাতে সব পোকামাকড় দূরে চলে যেতে পারে। (সুবর্ণা/টুটুল)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040