২০১৭ সালের পহেলা জানুয়ারি চীন আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিকস দেশসমূহের পালাক্রমিক সভাপতিদেশের দায়িত্ব গ্রহণ করে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সিয়ামেনে অনুষ্ঠেয় ব্রিকস দেশগুলোর নেতৃবৃন্দের নবম বৈঠকের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য গতকাল (বৃহস্পতিবার) ব্রিকস শীর্ষসম্মেলনের প্রথম সমন্বয়কারী সম্মেলন নানচিং শহরে অনুষ্ঠিত হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রীয় কাউন্সিলার ইয়াং চিয়ে ছি গত দশ বছরে ব্রিকস দেশগুলোর উন্নয়ন সারসংকলন করে বলেন, ব্রিকস দেশগুলোর সহযোগিতা ব্যবস্থা ধাপে ধাপে নবোদিত বাজার এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর সহযোগিতার দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন,
'দশ বছর পার হয়ে গেছে। ব্রিকস দেশগুলোর সহযোগিতা ব্যবস্থা বিশ্ব পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে ক্রমশই আন্তর্জাতিক সমাজের অভিন্ন স্বার্থের সঙ্গতিপূর্ণ হয়ে উঠছে। এই ব্যবস্থা বিশ্বের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, বিশ্বের পরিচালনা পূর্ণাঙ্গ করে তোলা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গণতান্ত্রিকীকরণকে বেগবান করার গুরুত্বপূর্ণ শক্তিতে পরিণত হয়েছে।'
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালে বিশ্বের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে ব্রিকস দেশগুলোসহ নবোদিত বাজার দেশগুলো এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর অবদান রাখার হার ৮০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বিগত ১০ বছরের মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির দিকে ব্রিকস দেশসমূহের অবদান রাখার হার ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। অন্যদিকে বিশ্ব অর্থনীতির ভিত্তি এখনও দৃঢ় নয়, অর্থনীতির বিশ্বায়নের প্রক্রিয়ায় দাঙ্গাহাঙ্গামাও দেখা দিয়েছে। বিশ্বের রাজনীতি ও অর্থনীতির অনিশ্চয়তাও স্পষ্টভাবেই বেড়েছে।জটিল এবং পরিবর্তনশীল এই পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ব্রিকস দেশগুলোর আস্থা বজায় রেখে হাতে হাত ধরে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা এবং অভিন্ন উন্নয়নের সুযোগ আকড়ে ধরা উচিত্ বলে ইয়াং চিয়ে ছি জোর দিয়ে বলেন। তিনি আরো বলেন,
'ব্রিকস দেশগুলোর ভূমিকা বিশ্বের পরিচালনার অংশীদার থেকে নির্দেশিকায় রূপান্তর হচ্ছে। ব্রিকস দেশগুলোর বিশ্বের অন্য দেশের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গড়ে তুলে বিশ্ব পরিচালনার নতুন পদ্ধতি খুঁজে বের করা উচিত্। সমন্বয়কারী ব্যবস্থা হলো ব্রিকসের সহযোগিতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রধান চ্যানেল। এর প্রধান দায়িত্ব হলো নেতৃবৃন্দের বৈঠকের জন্য রাজনৈতিক প্রস্তুতি নেওয়া। প্রতি বছর সভাপতি রাষ্ট্রে বহুবার সমন্বয়কারী সম্মেলন আয়োজন করা হয়। এতে ব্রিকসের সহযোগিতা এবং নেতৃবৃন্দের বৈঠকের প্রস্তুতি কাজ নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবারের সম্মেলনে চীনে নিযুক্ত সংশ্লিষ্ট দেশের রাষ্ট্রদূতসহ বিভিন্ন প্রতিনিধিরা 'ব্রিকস অংশীদারিত্বের সম্পর্ক গভীরতর এবং আরো উজ্জ্বল ভবিষ্যত সৃষ্টি' এই প্রসঙ্গ কেন্দ্র করে বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি, বিশেষ করে রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করবেন।'
রাশিয়ার সমন্বয়কারী ও উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই রিয়াবকোভ মনে করেন, চীনের সভাপতিরাষ্ট্রের দায়িত্ব পালনকালে ব্রিকস দেশগুলোর সহযোগিতা অবশ্যই উন্নয়নের নতুন সময়ে প্রবেশ করবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। তিনি বলেন,
'আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা সুরক্ষা এবং বিশ্বের অর্থনীতি ও বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি বেগবান করাসহ ব্যাপক ক্ষেত্রে চীন নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করবে। চীন ব্রিকস দেশগুলোর জন্য আরো উজ্জ্বল ভবিষ্যত সৃষ্টি করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।' (লিলি/টুটুল)