0222
|
আমাদের গল্পের গাড়িমালিকের নাম সুয়ে চান মিন এবং ছাত্রের নাম ছেন ই ফান। সেদিন ছিল ৪ঠা ফেব্রুয়ারি, বসন্ত উত্সবের নবম দিনের রাত। ছুটিতে নিজের জন্মস্থানে এসেছেন সুয়ে চান মিন। তার দামী বিএমডাব্লিউ গাড়িটি তিনি রাস্তার নির্ধারিত স্থানে পার্ক করিয়েছিলেন। পরের দিন তিনি গাড়ির কাছে এসে দেখলেন, তার সুন্দর গাড়ির বাম পাশের ভিউ মিরর ভাঙ্গা এবং গাড়ির গায়েও বেশ কয়েটি আঁচড় পড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই তার সুন্দর ও দামী গাড়ির এ হাল দেখে সুয়ে চান মিন ক্ষুব্ধ হলেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি পুলিশকে জানালেন। যথাসময়ে পুলিশ এলো। গাড়ির হাল পর্যবেক্ষণের সময় পুলিশ দেখলো যে, গাড়ির দরজার হাতলের সাথে আটকে আছে একটি খাম। খামটিতে ৩১১ ইউয়ান এবং একটি চিঠি।
চিঠি পড়ে ক্ষুব্ধ সুয়ে চান মিন অবাক হলেন; তার রাগ হঠাত করেই পড়ে গেলো। চিঠিতে লিখা ছিল, "কাকা, গতকাল সাইকেল চালানোর সময় আমার সাইকেলের সাথে ঘষা লেগে আপনার গাড়িতে আঁচড় পড়েছে, ভিউ মিরর ভেঙেছে। আমি খুবই লজ্জিত এবং দুঃখিত। আমি খনি ব্যুরো স্কুলের একজন ছাত্র। শীতকালের ছুটিতে আমি এখানে কিছু কাজ করি। যা হোক, আপনার গাড়ির ক্ষতি পুষিয়ে দিতে আমি কিছু টাকা এখানে রেখে গেলাম। জানি এ টাকা যথেষ্ট নয়। কিন্তু আমার কাছে এ কয়টা টাকাই ছিল। দুঃখিত।" চিঠির শেষে 'দুখিত' লেখা হয়েছে বড় বড় অক্ষরে।
চিঠি পড়ে সুয়ে চান মিনের মন দয়াদ্র হলো। তিনি ভাবলেন, কে এই ছেলে? যাকে পড়াশুনার ফাঁকে কাজ করতে হয়? ছেলেটা কি বেশ দরিদ্র। তিনি মনে মনে ঠিক করলেন যে, ছেলেটাকে খুঁজে বের করবেন এবং তাকে ৩১১ ইউয়ান ফিরিয়ে দেবেন। এমনকি, প্রয়োজনে ছেলেটিকে লেখাপড়ার জন্য আর্থিক সাহায্য দেবেন।
সুয়ে চান মিন আবার পুলিশের শরণাপন্ন হলেন। পুলিশ সিসি ক্যামেরায় তোলা ছবি বিশ্লেষণ করে দেখলো, ৫ ফেব্রুয়ারি ভোর ৩টায় একটি ছেলে ইলেকট্রিক সাইকেল চালিয়ে যাবার পথে সুয়ের গাড়িকে ধাক্কা দেয় এবং না-থেমেই চলে যায়। ঘটনার দেড় ঘন্টা পর দু'টি ছেলে ঘটনাস্থলে ফিরে আসে। তারা প্রথমে টাকা ও চিঠিসমৃদ্ধ একটি খাম গাড়ির হাতলের সাথে আটকে দেয় এবং আশপাশটি পরিষ্কার করে রাখে।
তারপর পুলিশ ছেলেটিকে খুঁজতে শুরু করে এবং বিভিন্ন সূত্র ধরে শেষমেষ তার সন্ধান পায়। ছেলেটি সিন মি দ্বিতীয় উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, তার নাম চেন ই ফান। ১৭ বছর বয়সী ছেন ই ফান ছুটির সময়ে খাদ্য বিতরণের কাজ করে। সে সাংবাদিকদের জানান, এ কাজ করে প্রতিদিন সে ৬০-৭০ ইউয়ান অর্জন করতে পারে। কিন্তু ঘটনার দিন তার হাতে কেবল ওই ৩১১ ইউয়ানই ছিল।
ছেন ই ফান আরও বলে, তার মনে একবারও মনে হয়নি, ক্ষতিপূরণ না-দিয়ে পালিয়ে যাই। ঘটনার সময় সে একটা ডেলিভারির কাজে যাচ্ছিল। দুর্ঘটনার পরও সে তার দায়িত্ব আগে পালন করেছে এবং গাড়ির কাছে ফিরে এসেছে।
ফান আরও জানায়, দুর্ঘটনার পর সে খুব ভয় পেয়ে যায়। তাই সে গাড়ির মালিকের সঙ্গে সরাসরি দেখা করেনি বা করার চেষ্টা করেনি। সে গাড়ির মালিকের ফোননম্বর টুকে নেয় এবং মনে মনে ঠিক করে যে, ভবিষ্যতে বাকি টাকাটা সে পরিশোধ করবে।
ফান জানালেন, তার বাবা-মা তাকে সবসময় দায়িত্বশীল মানুষ হওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করেন। সে-ও একজন দায়িত্বশীল মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে চিঠি ও টাকা রেখে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
গল্প কিন্তু এখনও শেষ হয়নি! ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে, সুয়েন চান মিন ও ছেন ই ফান ফোনে কথা বলেন। ফোনে চেন ই ফান আবারও দুঃখ প্রকাশ করে। কিন্তু সুয়ে চান মিন তাকে বলেন, 'ভয় পাওয়ার কিছু নাই। আমাকে তোমার কোনো ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না। এভাবে ভাগ্যই আমাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। তুমি ভালো করে লেখাপড়া করো। কোনো প্রয়োজন হলে আমাকে পাশে পাবে।"
পরে সুয়ে চান মিন চেন চিয়াং সাও সিংয়ে নিজের কর্মস্থলে ফিরে যান। পরে তিনি উইচ্যাটের মাধ্যমে চেন ই ফানকে ৩১১ ইউয়ান ফিরিয়ে দেন। শুধু তাই নয়, তিনি চেন ই ফানকে ১০ হাজার ইউয়ানের একটি ব্যক্তিগত বৃত্তি প্রদান করেন। তার স্ত্রী ওয়াং হাই সিয়াও তার এ সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন। তিনি বলেন, 'এটা খুব বড় ব্যাপার নয়। আমরাও শুধু নিজেদের দায়িত্বটুকুই পালন করেছি।'
সুয়ে চান মিনের মেয়ে তার বাবাকে একজন হৃদয়বান হিসেবে সম্মান করে এবং চেন ই ফানের শিক্ষক ও সহপাঠীরা তাকে ন্যায়পরায়ণ ছেলে হিসেবে ভালোবাসে। তারা মনে করেন, চেন ই ফানের অর্থ নেই, কিন্তু সাত রাজার ধন মন আছে।
ছেন ই ফান ও সুয়ে চান মিন সাধারণ মানুষ। কিন্তু মনের দিক দিয়ে দু'জনই অসাধারণ। একজন নিজের দায়িত্ব পালনে সাহসী এবং আরেকজন অন্যের ভুল ক্ষমা করে দেওয়ার মানসিকতা পোষণকারী। এমন মানুষই পারে আমাদের এই বিশ্বকে আরও সুন্দর করতে ।
সুপ্রিয় শ্রোতা, দু'জন সাধারণ মানুষের অসাধারণ গল্প শুনলেন। এবার আপনাদেরই লেখা একটি চিঠি পড়ে শোনাচ্ছি।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ মিতালি লিসনার্স ক্লাবের শিবেন্দু পাল তার ইমেইলে লিখেছেন:
প্রিয় শিশির ও আলিম ভাই
চীনের নববর্ষ ও বসন্ত উৎসব-এর শুভেছা জানাই । সেই সঙ্গে বিশ্ব বেতার দিবস ২০১৭-এর শুভেছাও রইল।
পুবের জানালাঅনুষ্ঠান খুবই ভাল লাগছে। চীনের বসন্ত উৎসব নিয়ে আলোচনা ভাল লাগলো। বসন্ত উতসবে অনলাইন-এ কেনাকাটা অনেক বেড়েছে, আমাদের দেশেও বিভিন্ন উৎসবে অনলাইন-এ কেনাকাটা বেড়েছে। বসন্ত উৎসবে ছুটি ও ভ্রমণ চীনাদের পরিচিত ছবি, আমাদের দেশেও শারদীয় পূজা উপলখ্যে ছুটি থাকে ও ভ্রমণপিপাশু মানুষ নানা জায়গায় বেড়াতে যায়। চীনে গাড়ি ভাগাভাগির গল্প শুনে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনাদেরকে 'পুবের জানালা' মতো সুন্দর একটি অনুষ্ঠান উপহার দেওয়ার জন্য। আজ এই পর্যন্ত। উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম ।
ভাই শিবেন্দু পাল, আপনাকের চিঠির জন্য ধন্যবাদ। আমাদের অনুষ্ঠান আপনার ভালো লাগে জেনে অনেক খুশি হয়েছে। আপনাদের ভালো লাগা আমাদের আরও ভালো অনুষ্ঠান তৈরিতে অনুপ্রাণিত করবে। অনেক অনেক ভালো থাকবেন।
(শিশির/আলিম)