প্রথমে একটি সাংস্কৃতিক খবর শুনবো।
আগামী মার্চ মাসে চীনের থিয়েন চিনে অনুষ্ঠিত হবে 'সপ্তম লিন চাও হুয়া আন্তর্জাতিক নাট্য উত্সব'। উদ্বোধনী দিনে রাশিয়ার নাট্যনির্দেশক লেভ দোদিনের নির্দেশিত রুশ মহাকাব্য 'ব্রাদার্স অ্যান্ড সিস্টার্স' মঞ্চস্থ হবে। আট ঘণ্টার এই নাটকটি থিয়েন চিন গ্রান্ড থিয়েটারে একটানা ৪ ও ৫ মার্চ প্রদর্শিত হবে। প্রদর্শনী শেষে লেভ দোদিন দর্শকদের কাছে নিজের নাটকবিষয়ক বিশাল অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন।
১৯৮৫ সালের মার্চ মাসে সেন্ট পিটার্সবুর্গের লিটল থিয়েটারে প্রথমবারের মতো 'ব্রাদার্স অ্যান্ড সিস্টার্স' নাটকটি প্রদর্শিত হয়। তিন বছর পর নাটকটি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রদর্শিত হয়। আর এ নাটকের কারণে নির্দেশক দোদিনও বিখ্যাত হয়ে ওঠেন।
নাটকটিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি গ্রামের গল্প তুলে ধরা হয়েছে। এতে গ্রামবাসীদের ভবিষ্যতের আশা ও জীবনের কষ্টের মধ্যে সংঘর্ষ দেখা যায়। নাকটিতে ৪০ জন অভিনেতা অভিনেত্রী অভিনয় করেছেন।
লেভ দোদিন জানিয়েছেন, 'আমার নাটকে সে যুগের পরিবর্তন দেখা যায়। প্রতীকীবাদভিত্তিক এই নাটকটি দেখার সঙ্গে সঙ্গে গভীরভাবে চিন্তাও করবে দর্শকরা'।
বর্তমানে রাশিয়ার একজন বিখ্যাত নাট্যনির্দেশক হিসেবে সবার কাছে ভীষণ জনপ্রিয় লেভ দোদিন। একটি নাটক মঞ্চে নিয়ে আসার আগে প্রায় কয়েকমাস বা একবছর ধরেও তা নিয়ে মহড়া করেন তিনি।
বন্ধুরা, এখন শুনুন 'মিশরে চীনা ভাষা শেখার প্রবণতা' শিরোনামে একটি প্রবন্ধ।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বে চীনে পর্যটকের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এ কারণে বিভিন্ন দেশের পর্যটনবিষয়ক সংস্থাগুলো চীনা পর্যটকদের জন্য বিশেষ প্রস্তুতিও গ্রহণ করছে। যেমন- চীনা ভাষা শেখা। বিশেষ করে মিশরে চীনা ট্যুর গাইড একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে পরিণত হয়েছে।
চলতি বছরের বসন্ত উত্সবে সিআরআই'র সংবাদদাতা দেখেছেন, মিশরের রাজধানী কায়রোতে অনেক ট্যুর গাইড অনর্গল চীনা ভাষা বলছেন। এমনকি তারা চীনের কোনো কোনো আঞ্চলিক ভাষাও বলতে পারেন। মিশরের ট্যুর গাইডের সাথে কয়েক ডজন চীনা পর্যটক রয়েছে। তাদের কাছে চীনা ভাষায় মিশরের লম্বা, সুন্দর সংস্কৃতির পরিচয় তুলে ধরছেন ট্যুর গাইড।
চীনের ছিং দাওয়ের থাং সাহেব বসন্ত উত্সবের সময় পরিবার নিয়ে মিশর ভ্রমণ করেন। তিনি মনে করেন, যদি স্থানীয় ট্যুর গাইড চীনা ভাষা বলতে পারে, তাহলে বিনিময় বা ইতিহাস ব্যাখ্যাসহ বিভিন্ন বিষয় জানা আরো সহজ হয়। তিনি বলেন,
রেকর্ড ১
'প্রথমত বলতে চাই, অবশ্যই মিশরের ট্যুর গাইড স্থানীয় বিভিন্ন তথ্য আরো বেশি জানেন। যদি তারা চীনা ভাষা বলতে পারেন তাহলে আমরা পর্যটকরা তাদের সঙ্গ বিনিময় করতে পারি। তাছাড়া একটি দেশের সংস্কৃতি ও ইতিহাস সে দেশের নিজের নাগরিকদের মুখ থেকে শোনা আরো স্পষ্ট ও বিশেষ'।
২০১২ সালে মিশরে চীনা ভাষা বলার ট্যুর গাইডের সংখ্যা ছিলো প্রায় ১২০জন। চীনা পর্যটক সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ২০১৬ সালে সে ট্যুর গাইডের সংখ্যা এক হাজারেরও বেশি দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে অনেক ট্যুর গাইড আগে অন্য বিদেশি ভাষা শিখেছেন। যেমন ২৪ বছর বয়স্ক মিশরের যুবক মোহাম্মদ হাতামি। চীনা ভাষা শেখার আগে তিনি জাপানি ভাষার ট্যুর গাইড ছিলেন। তিনি বলেন, চীনা পর্যটক সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দ্রুত বাড়ছে। চীনা ভাষা বলতে পারলে আয় আরো বেশি। তিনি বলেন,
রেকর্ড ২
'২০১১ সাল থেকে মিশরে জাপানের পর্যটক সংখ্যা দিন দিন কমতে থাকে। কিন্তু আরো বেশি চীনা পর্যটক মিশরে আসতে থাকে। বর্তমানে, শুধু চীনা-ভ্রমণ ট্যুর গাইডের অনেক কাজ আছে। যদি এখানে কেউ চীনা ভাষা বলতে পারে, তাহলে তার মানে তার অনেক অর্থ আছে। পর্যটন বা বাণিজ্য এখানে বর্তমানে সববিষয়েই চীনা ভাষা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ'।
দীর্ঘদিন ধরে চীনা সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহের কারণেই বিদেশিরা চীনা ভাষা শিখছেন। কিন্তু মিশরে চীনা ভাষা বলা হলো তা কাজের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা। মিশরে চীনা দূতাবাসের কাউন্সিলর ছেন তুং ইয়ুন মনে করেন, বাজারের চাহিদা ও বিনিময় যুক্ত করে সংস্কৃতি প্রচার ভাল ব্যাপার। তিনি বলেন,
রেকর্ড ৩
'সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনা পর্যটক সংখ্যা বেড়ে গেছে। চীনা পর্যটকদের সংখ্যা ও তাদের খরচের ক্ষমতা বেড়েছে বলে ট্যুর গাইডের আয়ও এক সাথে বৃদ্ধি হয়েছে। অবশ্যই আরো বেশি মিশরীয় নাগরিকরা চীনা ভাষা শিখতে আগ্রহী'।
কায়রোতে চীনা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ছাড়াও মিশরের আরো ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়, ২টি কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট ও ৩টি কনফুসিয়াস ক্লাসরুমে চীনা-ভাষা পড়ানো হয়। তাদের মধ্যে অধিকাংশই স্নাতক হবার পর ট্যুর গাইড বা পর্যটন সংশ্লিষ্ট কাজের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন।
মিশরের ফাইয়োম বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্যটন ও হোটেল ম্যানেজমেন্ট কলেজের চীনা বিভাগের পরিচালক ওমাইমা ঘানেম বলেন, মিশরের পর্যটন বিভাগেরও বিশেষ ট্যুর গাইড কোয়ালিফাইং পরীক্ষা প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বলেন,
রেকর্ড ৪
'আরবি ভাষায় প্রাচীন ইতিহাস, আধুনিক ইতিহাস ও স্মৃতিসৌধ ইতিহাস তিনটি কোর্সের পরীক্ষা ছাড়া, ট্যুর গাইড কোয়ালিফাইং পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের কথ্য চীনা ভাষার ওপর গুরুত্ব তৈরি করেছে। আমরা মনে করি, ট্যুর গাইডের আসলে দেশের জাতীয় চরিত্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। কড়াকড়ি পরীক্ষা হলে ট্যুর গাইডের সেবার মান উন্নত হবে, যাতে আরো বেশি চীনা পর্যটক আসবে'।
প্রিয় শ্রোতা, আজকের অনুষ্ঠান আপনাদের কেমন লাগলো? আপনারা যদি 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' বিষয়ক কোনো কিছু জানতে বা আলোচনা করতে চান, তাহলে আমাকে চিঠি লিখবেন বা ই-মেইল করবেন। আপনাদের কাছ থেকে চমত্কার পরামর্শ আশা করছি। আর আপনাদের জানিয়ে রাখি, আমার ইমেইল ঠিকানা হলো, hawaiicoffee@163.com।
চিঠিতে প্রথমে লিখবেন, 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' অনুষ্ঠানের 'প্রস্তাব বা মতামত'। আপনাদের চিঠির অপেক্ষায় রইলাম।
বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠান এখানেই শেষ করছি। অনুষ্ঠান শোনার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আগামী সপ্তাহে একই দিন, একই সময় আপনাদের সঙ্গে আবারো কথা হবে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়ান (জিনিয়া/টুটুল)