চিয়াং চিন ছান ও স্বাধীন সঙ্গীত
  2017-02-14 10:23:35  cri
সুপ্রিয় বন্ধুরা, আপনারা শুনছেন চীন আন্তর্জাতিক বেতার থেকে প্রচারিত বাংলা অনুষ্ঠান 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি'। আর এ অনুষ্ঠানে আপনাদের সঙ্গে আছি আমি আপনাদের বন্ধু ওয়াং ছুই ইয়াং জিনিয়া।

প্রথমে কয়েকটি সাংস্কৃতিক খবর শুনবো।

০১. শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোয় সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয় পাঁচ দিনব্যাপী 'আনন্দময় বসন্ত উত্সব' শীর্ষক ইউয়ানসিয়াও লণ্ঠনমেলা। প্রথমবারের মতো আয়োজিত এই মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শ্রীলঙ্কার জাতীয় সংসদের স্পিকার কারু জয়াসুরিয়া এবং কলম্বোয় চীনা রাষ্ট্রদূত ই সিয়ান লিয়াং উপস্থিত ছিলেন।

মেলা-প্রাঙ্গণ চীনা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বিভিন্ন রঙের লণ্ঠন দিয়ে সাজানো হয়। মেলায় চীনের ১২টি রাশিচক্র ও জাতীয় পশু পান্ডার প্রতিকৃতিও স্থান পায়। এ ছাড়া, মেলায় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও চীনা খাদ্য খাওয়ার ব্যবস্থাও রাখা হয়।

উল্লেখ্য, চীন-শ্রীলঙ্কা কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৬০তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত ধারাবাহিক অনুষ্ঠানমালার একটি এই লণ্ঠনমেলা।

০২. চীনের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে 'আনন্দময় বসন্ত উত্সব' নামের একটি সাংস্কৃতিকদল অনেক বছর ধরে নববর্ষকালে ফরাসি দর্শকদের জন্য চমত্কার অনুষ্ঠান পরিবেশন করে আসছে। চলতি বছর চীনের খুবই জনপ্রিয় শিল্পী মেং চিন হুই'র নাটক 'লিয়েন আই দ্য সি নিউ'ও ফ্রান্সে 'আনন্দময় বসন্ত উত্সব'-এর অনুষ্ঠানে পরিবেশন করা হয়। ফ্রান্সের ১৩টি থিয়েটার হলে একটানা ৪ দিন ধরে তা পরিবেশন করা হয়। 'লিয়েন আই দ্য সি নিউ' নাটকটি শিল্পী, পরিচালক মেং চিন হুই এবং তার স্ত্রী, চিত্রনাট্যকার লিয়াও ই মেই ১৯৯৯ সালে যৌথভাবে সৃষ্টি করেন।

নাটকটিতে 'অনন্ত ভালবাসার কথা' বলা হয়েছে। নাটকে চীনের কয়েক প্রজন্মের ভালবাসার গল্প, স্বপ্ন ইত্যাদি ফুটে উঠেছে।

২০১৪ সালে ফ্রান্সের আভিগনন থিয়েটার উত্সবে 'লিয়েন আই দ্য সি নিউ' নাটকটি ব্যাপক স্বীকৃতি পায়। ফরাসি তথ্যমাধ্যমগুলো মন্তব্য করে, এ কল্পনাপ্রসূত নাটক খুবই সুন্দর। এতে চীনা সংস্কৃতি দেখা যায়, মনের গভীরে অনুভব করা যায় ভালবাসার গল্প।

ফরাসি দর্শকরা নাকটটি দেখার পর অনেক কথা বলতে চায়। যেমন ৮০ বছর বয়স্ক এক ফরাসি দর্শক বলেন, এ নাটক শুধুমাত্র তরুণ-তরুণীদের জন্যই নয়, আমিও এ নাটকের উদ্যম অনুভব করতে পারি। অন্য একজন নারী দর্শক এর আগে চীনের ক্লাসিক্যাল সংস্কৃতি উপভোগ করেছেন। তিনি বলেন, নাটকটি দেখার পর চীনের তরুণ-তরুণীদের ভালবাসার ধারণা জানতে পেরেছি।

উল্লেখ্য, ফ্রান্স ত্যাগ করার পর এ 'আনন্দময় বসন্ত উত্সব' দলটি অস্ট্রিয়ায় যাবে।

০৩. ফেব্রুয়ারি মাসের ৮ তারিখে ব্রিটেনের রানী হিসেবে দ্বিতীয় এলিজাবেথের ক্ষমতায় থাকার ৬৫তম বার্ষিকী পালিত হয়। এ উপলক্ষ্যে এদিন লন্ডনের গ্রিন পার্কে তোপধ্বনী দেয় ব্রিটিশ রাজকীয় গোলন্দাজ বাহিনী।এ ছাড়া, ব্রিটিশ রয়্যাল মেইল স্মারক ডাকটিকিট ও দ্য রয়্যাল মিন্ট নতুন স্মারক মুদ্রা প্রকাশ করে। উল্লেখ্য, ১৯৫২ সালে সাবেক ব্রিটিশ রাজা ষষ্ঠ জর্জ মারা যাওয়ার পর ২৫ বছর বয়সী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ব্রিটিশ রানী হন। সারা বিশ্বে জীবিত রাজা-রানীদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় আছেন। ২০১৫ সালে সাবেক ব্রিটিশ রানী ভিক্টোরিয়ার ৬৪ বছরের রাজত্বের রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলেন দ্বিতীয় এলিজাবেথ।

বন্ধুরা, এখন 'চিয়াং চিন ছান ও স্বাধীন সঙ্গীত' শিরোনামে একটি প্রবন্ধ শুনবেন।

২০১৪ সালের জুলাই মাসে, বেইজিং শহরের পূর্বাঞ্চলের সান লাও হু থংয়ের 'ডাস্ক ডাউন' নামক একটি ক্লাব আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবসা শুরু করে। এর প্রতিষ্ঠাতা হলেন চিয়াং চিন ছান। তিনি চীনের সিয়া মেন শহর এবং বেইজিংয়ের বিভিন্ন অঞ্চলে বার ব্যবসা সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা সঞ্চিত করার পর স্বাধীন এ 'লাইভ হাউস' ক্লাবটি প্রতিষ্ঠা করেন।

'লাইভ হাউস' শব্দটির প্রথম সূচনা ঘটে জাপানে। এর পর তা অতি দ্রুত জাপান, ইউরোপ ও আমেরিকা অঞ্চলে জনপ্রিয় হয়ে উঠে। এর অর্থ হলো ছোট আকারের লাইভ পারফরমেন্স এলাকা, এতে আকর্ষণীয় আলোকসজ্জা এবং চমত্কার আবহসঙ্গীত থাকে।

চিয়াংয়ের আরেকটি শিল্পী নাম আছে, তা হলো ৬৯। তিনি চীনের প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন। লোকজন মনে করেন, কেন ভিন্ন একটি বিষয়ে লেখাপড়া করে একজন সঙ্গীত শিল্পীতে পরিণত হয়েছেন চিয়াং।

আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই তিনি নিজের সঙ্গীত ব্যান্ড প্রতিষ্ঠা করেন। তখন ক্লাস শেষ করে তিনি সঙ্গীত চর্চা করতেন। তিনি কোনো দেশে না গিয়েই বিভিন্ন দেশের অবস্থা, সংস্কৃতি ও সঙ্গীত সম্পর্কে জানেন। কারণ 'ডাস্ক ডাউন' ক্লাব ব্যবস্থাপনা করার প্রক্রিয়ায়, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, ইসরাইল, মিশর, ইয়েমেন, সোমালিয়াসহ বিভিন্ন আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য দেশগুলোর ব্যান্ড ক্লাবটিতে পারফর্ম করে। চিয়াং তাদের সঙ্গীত ও সংস্কৃতি গবেষণা করেন। এমনকি সঙ্গীতের পেছনের ইতিহাস তিনিও জানেন।

ক্লাব ছাড়াও চিয়াংয়ের নিজের সঙ্গীত ব্যান্ড আছে।তার ব্যান্ড প্রথমদিকে শুধুমাত্র ৪০জন দর্শকের সামনে গান পরিবেশন করতো, এখন তার ব্যান্ডের নিয়মিত দর্শকসংখ্যা প্রায় ৪'শ জন। সারা বছর টিকিট বিক্রির আয় এক মিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়ে যায়। তিনি স্বাধীন সঙ্গীতের ওপর আস্থা রাখেন।তিনি মনে করেন, সাধারণ সঙ্গীতানুষ্ঠানের চেয়ে ভিন্ন, স্বাধীন সঙ্গীতানুষ্ঠান আরো বেশি ইন্টারেক্টিভ হয়। তা জনগণের সাংস্কৃতিক জীবনের অপরিহার্য একটি অংশ। এর বিশাল ভবিষ্যত আছে।

কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় (মে ১৯, ১৯০৮ - ডিসেম্বর ৩, ১৯৫৬) ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক। তার প্রকৃত নাম প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীজুড়ে মানবিক মূল্যবোধের চরম সংকটময় মুহূর্তে বাংলা কথা-সাহিত্যে যে কয়েকজন লেখকের হাতে সাহিত্যজগতে নতুন এক বৈপ্লবিক ধারা সূচিত হয় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম।তার রচনার মূল বিষয়বস্তু ছিল মধ্যবিত্ত সমাজের কৃত্রিমতা, শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম, নিয়তিবাদ ইত্যাদি। ফ্রয়েডীয় মনঃসমীক্ষণ ও মার্কসীয় শ্রেণিসংগ্রাম তত্ত্ব দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন যা তার রচনায় ফুটে উঠেছে। জীবনের অতি ক্ষুদ্র পরিসরে তিনি রচনা করেন বিয়াল্লিশটি উপন্যাস ও দুই শতাধিক ছোটোগল্প। তার রচিত 'পুতুলনাচের ইতিকথা, 'দিবারাত্রির কাব্য', 'পদ্মা নদীর মাঝি' ইত্যাদি উপন্যাস ও 'অতসীমামী', 'প্রাগৈতিহাসিক', 'ছোটবকুলপুরের যাত্রী' ইত্যাদি গল্পসংকলন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ বলে বিবেচিত হয়। ইংরেজি ছাড়াও তার রচনাসমূহ বহু বিদেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ৩রা ডিসেম্বর, মাত্র আটচল্লিশ বছর বয়সে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শক্তিশালী এই কথাসাহিত্যিকের জীবনাবসান ঘটে।

প্রিয় শ্রোতা, আজকের অনুষ্ঠান আপনাদের কেমন লাগলো? আপনারা যদি 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' বিষয়ক কোনো কিছু জানতে বা আলোচনা করতে চান, তাহলে আমাকে চিঠি লিখবেন বা ই-মেইল করবেন। আপনাদের কাছ থেকে চমত্কার পরামর্শ আশা করছি। আর আপনাদের জানিয়ে রাখি, আমার ইমেইল ঠিকানা হলো, hawaiicoffee@163.com।

চিঠিতে প্রথমে লিখবেন, 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' অনুষ্ঠানের 'প্রস্তাব বা মতামত'। আপনাদের চিঠির অপেক্ষায় রইলাম।

বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠান এখানেই শেষ করছি। অনুষ্ঠান শোনার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আগামী সপ্তাহে একই দিন, একই সময় আপনাদের সঙ্গে আবারো কথা হবে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়ান (জিনিয়া/টুটুল)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040