একদিন হৌঈ তাঁর ছাত্রদের নিয়ে বনে শিকার করতে যান। আর তখন ফেংমেং অসুস্থ হওয়ার ভান করে বাসায় থেকে যায়। হৌঈ যাওয়ার পর ফেংমেং তলোয়ার নিয়ে হৌঈর বাসায় অনুপ্রবেশ করে এবং সে জোর করে ছাংওয়ের কাছ থেকে মহা-ওষুধ ছিনিয়ে নিতে চায়। ছাংও বুঝতে পারলো যে, ফেংমেংয়ের সঙ্গে তিনি যুদ্ধ করে জয়ী হতে পারবে না আবার কোন ভাবে ফেংমেংয়ের মতো একজন খারাপ লোকের হাতে এই মহা-ওষুধ তুলে দিতেও পারে না। তাই এই উভয় সংকটে পড়ে এবং ভবিষতের মহা বিপদের সম্ভাবনা বুঝতে পেরে ছাংও একটি আকস্মিক সিদ্ধান্ত নেন, তিনি বাক্স খুলে মহা-ওষুধ নিজেই খেয়ে ফেলেন। ওষুধ খেয়ে ছাংও'র শরীর হালকা হয়ে বাতাসে ভাসতে থাকে আর তিনি জানালা থেকে বের হয় আকাশের দিকে উড়ে বেড়াতে থাকে। কিন্তু তাঁর স্বামীর জন্য খুব কষ্ট হতে লাগল, তাই স্বামীর কাছ থেকে যাতে বেশি দূরে থাকতে না হয়, তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে চাঁদের দেশে গিয়ে নামে।
চাঁদে ছাংও অত্যন্ত নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ে, সেখানে তাঁর পরশি হিসেবে রয়েছে শুধুমাত্র দুটি প্রাণী- একটি ওষুধ গুড়া করার খড়গোস এবং উকাং নামে একজন কাঠুরিয়া। চাঁদের কুয়াংহান ভবনে একাকি থাকতে থাকতে ছাংওর মন বিষন্নতায় ঢেকে থাকে। সারাক্ষণ শুধু স্বামীর কথাই তাঁর মনে হয়, বিশেষ করে প্রতি বছরের অষ্টম মাসের পনেরো তারিখে জ্যোত্স্না রাত হচ্ছে সবচেয়ে সুন্দর আর মোহনীয় একটি রাত। সে রাতে ছাংও স্বামীর সঙ্গে তাঁর ভালবাসাপূর্ণ মধুর জীবনযাপনের কথা ভেবে ভেবে চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে, বেদনায় নীল হয়ে ওঠে তার মন। এভাবেই সারাক্ষণ শুধু বিষন্নতাকে সঙ্গী করে চাঁদের দেশের কুয়াংহান ভবনে দিন, মাস আর বছর পার করে দিচ্ছেন। এখানে থেকে ছাংও বার বার উকাংকে দারুচিনি গাছ কাটা এবং খড়গোসকে ওষুধ তৈরি করাতে অনুরোধ করেন। যাতে তিনি বাতাসে উড়ার ওষুধ তৈরি করতে পারেন আর পৃথিবীতে ফিরে গিয়ে তাঁর স্বামী হৌঈর সঙ্গে পুনর্মিলন করতে পারেন।
হৌঈ ও ছাংও দম্পতির আন্তরিকতায় চাঁদের বুড়ি অভিভুত হয় আর তাদের দু'জনের জন্য তাঁর খুব মায়া হতে লাগলো। দু'জনের খাঁটি প্রেম আর ভালবাসায় মুগ্ধ হয়ে অবশেষে তিনি ছাংওকে প্রতি বছর পূর্ণিমার রাতে দারুচিনি গাছের নিচে তাঁর স্বামী হৌঈর সঙ্গে মিলিত হওয়ার অনুমতি দান করে। অনুমতি পেয়ে ছাংও তো মহাখুশী, আর তখন ছাংও স্বামীর কাছে মনের যত দুঃখ ও বেদনার কথা সব খুলে বলতে লাগলেন। তারপর তাদের মধ্যে পুনরায় কিভাবে সুখ-মিলন হবে তার উপায় বলে দিতে থাকেন- "সাধারণ দিনের বেলা আমি আসতে পারি না। আগামীকাল পূর্ণিমার রাতে তুমি ময়দা দিয়ে পূর্ণচন্দ্র একটি পিঠা তৈরি করে ঘরের উত্তর-পশ্চিম দিকে জানালার পাশে রাখবে, তারপর বার বার আমার নাম ধরে ডেকো। তোমার ডাক শুনেই কেবল মধ্যরাতে আমি বাসায় ফিরে আসতে পারবো আর তোমার সাথে দেখা করতে পারবো।"
পরের দিন হৌঈ স্ত্রীর কথা মতো ময়দা দিয়ে পূর্ণচন্দ্র আকারে একটি পিঠা তৈরী করলেন আর জানালার পাশে থেকে স্ত্রীর নাম ধরে বার বার ডাকতে থাকে। স্বামীর এই ডাক ছাংও চাঁদের দেশে থেকে শুনতে পেল আর তখন মধ্য-পূর্ণিমা রাতে ছাংও সত্যি সত্যি আকাশ থেকে উড়ে নেমে আসলেন পৃথিবীতে। অবশেষে হৌঈ আর ছাংও এর দীর্ঘ বিরহ আর কষ্টের আঁধার কেটে গেল। তখন থেকেই চীনারা প্রতি বছর চান্দ্র পঞ্জিকার অষ্টম মাসের ১৫ তারিখ অর্থাত্ মধ্য-শরত্ উত্সব দিনে পূর্ণচন্দ্র পিঠা তৈরি করে ছাংওকে উত্সর্গ করার মধ্য দিয়ে নিজের এবং প্রিয় সকল মানুষের শান্তি ও সুখী জীবন প্রার্থনা করার রীতি প্রচলন হয়।