বসন্ত উত্সবে পরিবার থেকে দূরে কাজ করা চীনা মানুষদের গল্প
  2017-02-01 16:03:15  cri


আজ বসন্ত উত্সবের পঞ্চম দিন এবং চীনের ঐতিহ্য অনুসারে আজও সপরিবারে খাওয়ার সময়।

তবে আজ আমি পরিবারের সঙ্গে থাকেতে পারিনি, কারণ আমি শ্রোতাদের সঙ্গে থাকব এবং আপনাদের অনুষ্ঠান শোনাব। বসন্ত উত্সবে আমার মতো পরিবার থেকে দূরে থেকে কাজ করার মানুষের সংখ্যা চীনে অনেক বেশি। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা পরিবার থেকে দূরে কাজ করা চীনা মানুষদের গল্প তুলে ধরব।

প্রথমে আপনাদের নিয়ে যাব লেবাননে। সেখানে চীনের নিরাপত্তা বাহিনীর ৪০০ জনেরও বেশি সেনা রয়েছেন।

প্রথমে আমরা সেনাদের পক্ষ থেকে জানাই বসন্ত উত্সবের শুভেচ্ছা। সবার সুস্বাস্থ্য ও সুখী জীবনের শুভেচ্ছা জানান তারা।

ছু সি, বসন্ত উত্সবের সন্ধ্যা। লেবাননে নিযুক্ত চীনের ১৫তম নিরাপত্তা বাহিনীর মাইন অপসারণ দলের সেনা ভূমধ্য সাগর থেকে বসন্ত উত্সবের শুভেচ্ছা জানান।

২০০৬ সালে জাতিসংঘের অনুরোধে চীনের ৪৮০০ জন সেনা লেবাননে মোতায়েন করা হয়েছে। টানা ১০ বছর ধরে তারা সেখানে রয়েছেন। সেখানে মাইন অপসারণ, চিকিত্সা, মানবিক ত্রাণ এবং বিভিন্ন প্রকল্প তৈরিসহ নানা কাজ সফলভাবে করেছেন তারা। মাইন অপসারণের কাজে ১০ বছরে চীনা সেনারা ১০ হাজারেরও বেশি মাইন ও বিস্ফোরক অপসারণ করেছে। অন্যান্য সব দেশের সেনাদের মধ্যে চীনা সেনারাই সবচেয়ে দ্রুত ও সবচেয়ে বেশি মাইন নিষ্ক্রিয় করেছে। উল্লেখ্য, যখন মাইন অপসারণ করা হয় তখন সফলভাবে দুর্ঘটনা ও হতাহত হওয়া এড়িয়েছেন তারা।

লেবাননে ১৫তম চীনা নিরাপত্তা বাহিনীর ৪০৮জন সদস্য ৮ মাস ধরে কাজ করছেন। প্রতিদিনই তাদের ব্যস্ত থাকতে হয়। তাই বসন্ত উত্সবের সময় বিশেষ কিছু দিনের ছুটি আবেদন করেছেন তারা। এক কর্মকর্তা জানান তারা জাতিসংঘের কাছে এক দিন ছুটির আবেদন করেছেন এবং তারপর সাপ্তাহিক দু'দিন ছুটির সঙ্গে মিলিয়ে বসন্ত উত্সব উদযাপন করেছেন।

ছুটি হলেও সেনারা যে কোনো সময় সাড়া দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। কোনো বিশেষ অবস্থায় বিশেষ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তারাও দ্রুত কাজের জন্য প্রস্তুত হয়ে যান।

ছুসি'র দুপুরে শিবিরের সেনারা একসাথে খাবার রান্না করেন। তারা চীনের বিভিন্ন স্থানের মানুষ তাই নিজ নিজ জন্মস্থানের জনপ্রিয় খাবারগুলো রান্না করেন তারা।

চীনের সিছুয়ান প্রদেশের এক সেনা সবার জন্য মা ইউয়ান নামে একটি খাবার রান্না করেন। তিনি জানান সিছুয়ানের মানুষ বসন্ত উত্সবের সময় এ খাবার খেয়ে থাকে। মা ইউয়ান মানে পুনর্মিলন।

সেখানে চীনা সেনাদের সঙ্গে থাকেন বিশেষ এক অতিথি। তিনি আরবি ভাষার অনুবাদক, লেবাননের মানুষ মোহাম্মদ। তিনি টানা ১০ বছর ধরে অনুবাদক হিসেবে চীনা সেনাদের সঙ্গে কাজ করছেন। তিনিও চীনা ঐতিহ্য ও খাবারের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছেন। ছুসি'র দিন তিনি কয়েকজন লেবানিজ কর্মীকে নিয়ে চীনা শিবিরে এসে সেনাদের সঙ্গে বসন্ত উত্সব উদযাপন করেন।

তিনি বলেন 'আমারা চীনা সংস্কৃতির অনেক ঐতিহ্য শিখেছে এবং কিছু চীনা ভাষাও বলতে পারি।'

তারা চীনা ভাষায় বসন্ত উত্সবের শুভেচ্ছা জানান।

প্রতি বছরের ছুসিতে বেইজিং সময় রাত ৮টায় শুরু হয় চীনের জনপ্রিয় টিভি শো, বসন্ত উত্সবের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠান উপভোগ করা চীনা মানুষের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। লেবাননে অবস্থিত সেনারাও এ অনুষ্ঠান দেখতে টিভির সামনে জড়ো হন।

কেউ কেউ চীনা সময় হিসেব করে পরিবারের সঙ্গে ফোনে বা ভিডিওতে কথা বলেন। যখন কেউ একজন নিজ পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলে তখন অন্য সেনারাও সে পরিবারকে শুভেচ্ছা জানান। কারণ দেশের বাইরে থাকা চার শতাধিক সেনা সবাই এক পরিবারের মতো।

লি চিয়াং ২০১০ সালে চীনা বাহিনীতে কাজ শুরু করেন। তিনি বিয়ে করেননি। তাই তিনি যেখানেই দায়িত্ব পালন করেন, সেখানকার সেনাদের বাড়ি ফেরার সুযোগ করে দেন। বসন্ত উত্সবের সময় এবার প্রথম তিনি দেশের বাইরে রয়েছেন। তার সবসময় মায়ের কথা মনে পড়ে। তিনি বলেন, 'আমি প্রথম বিদেশে কাজ করছি এবং প্রথম এখানে বসন্ত উত্সব উদযাপন করছি। পরিবারের কাছ থেকে অনেক দূরে বসে আমার মার কথা খুব মনে পড়ছে। মার বয়স প্রায় ৬০ বছর এবং শেষ কয়েকটি বসন্ত উত্সবে আমি তার পাশে থাকতে পারিনি। মাকে বলতে চাই, 'আমি দুঃখিত।' আশা করছি, চীনে ফিরে মার সঙ্গে কিছু সময় কাটাতে পারব।'

সেনাদের কিছু সময় পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সুযোগ করে দিতে প্রতি বসন্ত উত্সবে তাদের বদলে বাহিনীর অফিসাররা পাহারা দেন। এটাও চীনা সেনাদের একটি ঐতিহ্য।

তিন দিন ছুটির পর আমাদের সেনারা আবার তাদের কাজ শুরু করবেন। নিরাপত্তা রক্ষায় তারা অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করছে। চীনের গর্ব তারা।

বন্ধুরা, এতক্ষণ আপনারা লেবাননে দায়িত্ব পালনরত চিনা নিরাপত্তা বাহিনী সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন শুনলেন।

তৌহিদ, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর সেনাদের গল্প শুনে আপনার কেমন লাগছে? আপনিও তো দেশের বাইরে কাজ করছেন, উত্সবের সময় পরিবার সঙ্গে থাকার সুযোগ পেয়েছেন? আপনার অনুভূতি কি?

আর শিশির, আপনিও তো এবার প্রথম বসন্ত উত্সবের সময় পরিবার থেকে দূরে বেইজিংয়ে বসে কাজ করছেন। কেমন লাগছে আপনার?

হ্যাঁ, অবশ্যই আমার কষ্ট হচ্ছে। তবে আমি বলতে চাই, যে কোনো উত্সবের মতোই বসন্ত উত্সবেও যারা বিশেষ ধরনের কাজ করে, তারা সাধারণ মানুষের মতো ছুটি পায় না। যেমন ডাক্তার, পুলিশ ও গণমাধ্যমকর্মী। সমাজের অন্যান্য মানুষের জন্য তাদের ব্যক্তিগত ছুটি বিসর্জন দিতে হয়। আমি তাদেরকে শ্রদ্ধা করি এবং তাদের মতো একজন হতে পেরে নিজেও গর্ব বোধ করি।

সাংবাদিকতাও এমনি একটি পেশা। শ্রোতাদের জন্য নিত্য নতুন খবরাখবর সংগ্রহ ও প্রচার করা আমাদের দায়িত্ব। এজন্য আমি গর্বিত, আমার পরিবার এজন্য আমাকে সমর্থন দিয়ে থাকে।

বসন্ত উত্সবে দোকান বা রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকে। তাই মা আমার জন্য এক সপ্তাহ আগে খাবার রান্না করে পাঠিয়ে দেন। প্রতিদিন আমি রেফ্রিজারেটর খুলে দেখি আমার মার হাতের রান্না করা খাবার। এতে আমার দারুণ খুশি লাগে। এভাবে, পরিবারের সঙ্গে না থাকার কষ্ট একটু হলেও দূর হয়ে যায়।(শিশির/তৌহিদ)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040