20170129yinyue.mp3
|
প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আপনারা চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান শুনছেন। আমি আনন্দী বেইজিং থেকে আপনাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এখন পুরো চীনে বসন্ত উত্সবের আনন্দের আমেজ বইছে। বসন্ত উত্সব হলো পুনর্মিলনের উত্সব। চীনের মানুষ এখন যে যেখানে আছে, সেখান থেকে ঘরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। নানা জায়গা থেকে সবাই নিজ ঘরে ফিরে যাচ্ছে। আজকের সুর ও বাণী আসরে আপনাদের 'ঘরে ফেরা' সম্পর্কিত কিছু গান শোনাবো।
বন্ধুরা, এখন শুনছেন ইয়াও পেই না ও চাং চিয়াংয়ের গাওয়া 'ঘরে ফিরে যাওয়া' নামের গান। গানে বলা হয়েছে,
'কার ঘরে আজ চাঁদের আলো পড়েছে! কে মায়ের কোলে শুয়ে কিশোর বেলা স্মরণ করেছে! ফিরে যাই ঘরে। ফেরার পথ কেন এতো দূর!'
প্রতি বছর বসন্ত উত্সবের এক মাস আগে চীনারা দেশের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে পড়ে! কারণ বসন্ত উত্সবের জন্য চীন সরকার সাত দিনের লম্বা ছুটি দেয়। চীনারা দেশের বাড়িতে ফিরে যাওয়া অথবা কোথাও ঘুরতে যাওয়ার জন্য রেলগাড়ির টিকিট বা বিমানের টিকিট কিনেন। ফলে এ সময় রেল ও বিমানের টিকিট এবং পর্যটন হোটেলগুলোর ভাড়া অনেক বেড়ে যায়। তারপরও কোনো বাধা চীনাদের ঘরে ফেরা ঠেকাতে পারে না। পথ যত দূরেরই হোক না কেন, বসন্ত উত্সবের সময় বাবা-মা ও আত্মীয়স্বজনের সান্নিধ্য পেতে ঘরে ফিরতেই হবে।
বন্ধুরা, এখন শুনছেন মার্কিন বিখ্যাত স্যাক্সোফোন বাদক কেনি জি'র বাজানো 'বাসায় ফিরে যায়' সুরটি। মনোরম এ সুর সারা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের শ্রোতাদের কাছে বেশ সুপরিচিত।
বন্ধুরা, আমরা ছোট বেলায় প্রতিদিন মায়ের হাতে রান্না করা খাবার খেয়েছি, তাইনা? বড় হওয়ার পর শিক্ষাগ্রহণ বা চাকরির জন্য বাসা ছেড়ে দূরে যেতে হয়েছে। একই শহরে থাকলে হয়তো সাপ্তাহিক ছুটিতে বাসায় ফিরে মায়ের রান্না খাওয়া যায়। কিন্তু যদি অন্য শহরে থাকেন, তাহলে হয়তো বছরে মাত্র দু'এক বার বাসায় ফেরা যায়। বাইরে থাকতে থাকতে রেস্তোরাঁর ভিন্ন স্বাদের খাবার খাওয়ার সুযোগ হয়। কিন্তু বাইরের খাবার খেতে খেতে অরুচি হয়ে যায়। তখন সবাই মায়ের রান্না খুব মিস করে।
বন্ধুরা, এখন আপনারা শুনছেন 'বাসায় ফিরে খাবার খাও' নামের গান। গেয়েছেন চাও চাও। এ গানটির বিশেষ উষ্ণতা ও মুগ্ধতা সহজেই টের পাওয়া যায়। গানে বলা হয়েছে,
'মনে পড়ে? কৈশোরে বাড়ির দুয়ারে দাঁড়িয়ে মা ডাকতেন! সে ডাক আর হাসিমুখ দেখে ছোট পাখির মতো ঘরে ফিরে যেতাম। ঘরের খাবারে ছিল অতুলনীয় স্বাদ। আজও সেই স্বাদ লেগে আছে মুখে!'
বন্ধুরা, বাসা এমন একটি স্থান, দেশ-কাল-পাত্র ভেদে সবার কাছেই তার একই আবেদন। আমার মনে আছে, বিশ বছরেরও বেশি আগের কথা। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলাম। এক রাতে হঠাত্ খবর পাই, আমার এক বাঙালী বন্ধুর বাবা অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। আমরা অনেক বন্ধু একটা মিনিবাসে করে তার বাড়িতে যাই। কিন্তু তার বাড়ি পৌঁছে প্রচণ্ড আবেগে আমি ভিতরে ঢুকতে পারিনি। তখন আমি নিজের কান্না নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলাম না। তখন আমার দেশে ফিরে আসার জন্য খুব মন টানছিল। নিজের বাবা-মার কথা খুব মনে পড়ছিল। সে সময় আমি উপলব্ধি করেছিলাম যে, আমাদের জীবনে বাসা আর বাবা-মা কত গুরুত্বপূর্ণ! যা হারানোর কষ্ট সহ্য করা যায় না।
বন্ধুরা, এখন শুনুন ব্রাজিলে জন্মগ্রহণকারী জাপানি কণ্ঠশিল্পী লিসা ওনোর গাওয়া 'বাসা' নামের গানটি।
শুধু মানুষের নয়, পশুপাখি ও পোকারও বাসা আছে। আপনি কখনও কোনো মা পাখিকে মুখে ছোট পোকা নিয়ে ছোট পাখিকে খাওয়াতে দেখেছেন? ছোট পাখির কাছে ঘাস ও গাছের শুকনো ডাল দিয়ে তৈরি ঘরটি হলো তাদের বিশ্ব।
বন্ধুরা, এখন শুনুন 'ঘরে ফিরছে সোয়ালো পাখি' নামের গানটি। এটি গেয়েছেন চাং চিয়ে এবং চাং লিয়াং ইং। এ গানটি ২০১৫ সালে ১৫তম বিশ্ব চীনা গানের তালিকায় 'সবচেয়ে জনপ্রিয় দ্বৈত কণ্ঠের গানের পুরস্কার' পায়। গানটি লিখেছেন শু সোং। তিনি চীনের ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র পিপা ও বাঁশি দিয়ে গানের সুর বাজিয়েছেন। গানের কথায় প্রাচীন সাহিত্যের ছায়া পড়েছে। গানটি চীনের ঐতিহ্যবাহী ছবির মতো, বাইরে থাকা সন্তানের স্বদেশ অনুভবের আবেগ ফুটে উঠেছে।
বন্ধুরা, চীনের একটি প্রবাদ এমন, 'পাতা গাছ থেকে পড়ে শিকড়ের কাছে ফিরে যায়'। যারা কৈশোরে বাসা ত্যাগ করে লেখাপড়া বা চাকরির জন্য অন্য শহরে বা অন্য দেশে চলে যান। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের স্বদেশের কথা খুব মনে পড়ে। তখন ছোট বেলার খাবার খেতে ইচ্ছা হয়। ছোট বেলায় যেসব জায়গায় বড় হয়েছে, সেখানকার আঞ্চলিক ভাষাও আবার মুখে ফিরে আসে। এটাই বাসার শক্তি। বাসা হলো মানুষের শিকড়। আমরা যত বড়ই হই না কেন, একদিন বাসায় ফিরে যেতেই হয়।
বন্ধুরা, এখন শুনছেন ওয়াং লি হোংয়ের গাওয়া 'পাতা শিকরের কাছে ফিরে যায়' নামের গান। এ গানটি ২০০৭ সালে সপ্তম বিশ্ব চীনা গানের তালিকায় 'জনপ্রিয় সেরা বিশ স্বর্ণ গানের অন্যতম' নির্বাচিত হয়েছে। গানটিতে যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া এক ব্যক্তির চীনা সংস্কৃতির পথে যাত্রার বর্ণনা আছে।
বন্ধুরা, গত শতাব্দীর ৮০'র দশক থেকে চীনে এক সন্তান নীতি চালু হয়। এর ফলে এখন চীনের অধিকাংশ পরিবারে মাত্র একটি সন্তান। একটি সন্তান হওয়ায় সে বাবা-মা, দাদা-দাদী আর নানা-নানীসহ কমপক্ষে ছয় জন ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের সম্পূর্ণ স্নেহ ও আদর পায়। তাই জন্মের পর চীনের ছোট ছেলেমেয়েরা জীবনে কোনো অভাব দেখতে পায় না। কোনো কিছু চাইলে বাবা-মা তা পূরণের চেষ্টা করে। বড় হওয়ার পথে তাদের বাবা-মায়ের ছোটবেলার মতো কষ্ট করতে হয় না। তারাও জানে, বাসার মূল্য কী? বাবা-মায়ের পরিশ্রম কিসের জন্য?
২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চীন সরকার সার্বিকভাবে দুই সন্তান নেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে। বিদ্যমান পারিবারিক সমস্যা সমাধানে এ নতুন নিয়ম সহায়তা দেবে। তবে আমরাও জানি সমস্যা সমাধানে সময় লাগে।
বন্ধুরা, আজ হয়ত আপনি বাবা-মার কাছে যাবেন। মনে রাখবেন, বাবা-মা দিনে দিনে বৃদ্ধ হয়েছে। তাদের চিন্তাভাবনা হয়ত এখন পুরানো হয়ে গেছে। কিন্তু সন্তানের প্রতি ভালোবাসা কিন্তু পুরানো হয়নি! এ বিশ্বে তারা সবসময় আপনার সবচেয়ে কাছের মানুষ। যেখানে বাবা-মা আছেন, সেখানেই আমাদের বাড়ি। সেখানেই আদর, স্নেহ, ভালোবাসা আছে; আবেগ আছে, উষ্ণতা আছে। সেটাই আমাদের ঘর, সেটাই আমাদের পিছুটান!
বন্ধুরা, আপনারা যদি লেখাপড়া বা চাকরির ব্যস্ততায় বাসায় ফিরতে না পারেন, তাহলে এ মাসের একদিন সময় করে বাসায় ফিরে যান। আপনার বাবা-মা অথবা সন্তানকে বলুন, 'আমি তোমাদের ভালোবাসি।'
বন্ধুরা, অনুষ্ঠানের শেষে শুনুন 'আজ ঘরে ফিরে যাই' নামের গান। গেয়েছেন চুয়াং সিন ইয়ান।
প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আজকের 'সুর ও বাণী' এ পর্যন্তই। এ অনুষ্ঠান শোনার পর আপনার কোনো মতামত থাকলে বা এ অনুষ্ঠানে আর কী ধরনের গান শুনতে চান, আমাকে ইমেইল লিখে জানাবেন। ইমেইল করুন yuguangyue@cri.com.cn এই ঠিকানায়
বন্ধুরা, ভালো থাকুন। আবার কথা হবে।
(ইয়ু/তৌহিদ)