নিজের কোম্পানি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া পর লি'র সামনে প্রথম প্রশ্ন ছিল: কোন ধরনের প্রতিষ্ঠান তিনি গড়ে তুলতে চান? এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে তিনি আরেকটি সিদ্ধান্ত নেন। আর সেটি হলো: যা-ই করেন, আজীবন ওই একই কাজ করবেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'আমি খেতে ভালবাসি। আমার মনে হয়, খাদ্যের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে দূরত্ব কমে। সেজন্য আমি রান্নাবান্নার ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নিই। আমার মনে হয়েছে, আমার তৈরি স্বাস্থ্যকর খাবার অতিথিরা পছন্দ করবেন।'
একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা একটি সন্তানের জন্ম দেয়ার মত। প্রথম বিষয় হল নাম দেয়া। লি ছুনসিয়াও কোম্পানির নাম দিয়েছেন 'ছাংগে খাদ্য প্রচার'। 'ছাং' মানে 'আশা', 'গে' মানে 'শৈলী'।
লি ছুনসিয়াও-কে তার আগের কাজের সূত্র ধরে অনেকেই চিনতেন। সেজন্য নিজের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রথম দুই থেকে তিন বছর তার জন্য তুলনামূলকভাবে সহজতর ছিল। এসময় তার আয়ও যথেষ্ট হয়। পাশাপাশি তিনি কোম্পানির আকার বৃদ্ধি করেন। দু'তিন বছর পর তিনি কোম্পানির ভবিষ্যত উন্নয়ন সম্পর্কেও ভাবতে শুরু করেন। তিনি প্রতিষ্ঠানের সামাজিক দায়িত্বের কথাও বিবেচনায় নেন। তিনি বলেন, এটি কোনো সহজ দায়িত্ব না। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'যে কোনো প্রতিষ্ঠাতার জন্য ভালভাবে সামাজিক দায়িত্ব পালন করা অনেক কঠিন। প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের পাশাপাশি সামাজিক দায়িত্ব পালন করতে হয় এবং কর্মীদের প্রয়োজন পূরণ করতে হয়। এটা কঠিন কাজ। কিন্তু করা উচিত।'
বিগত কয়েক বছরে চীনে 'ওয়েবসাইট প্লাস' ভাবনাটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। লি ছুনসিয়াওকেও নতুন ক্ষেত্রে কাজ করতে হয়েছে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'আমি প্রথমে জানতাম না, কীভাবে কোম্পানির ওয়েবসাইট মেইনটেইন করতে হয়। শুরুর দিকে আমরা অনেক ভুল করেছি। শুরুর দিকে আমরা একাধানে খাদ্যপণ্য প্রস্তুত, প্যাকেজিং ও বিক্রয়ের কাজ করতাম। কিন্তু এক সময় দেখলাম, প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রে আমাদের দক্ষতা বেশি। তাই পরে আমরা শুধু প্যাকেজিংয়ের দিকে মন দিই।'
লি ছুনসিয়াও'র নেতৃত্বে ছাংগে খাদ্য প্রচার কোম্পানি ক্রমান্বয়ে টেলিভিশন, নতুন গণমাধম্য, সেল্ফ-মিডিয়া, বিমানে মিডিয়ামসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচার-প্রচারণা চালাতে থাকে। টেলিভিশনে তাঁর একটি বিখ্যাত অনুষ্ঠান আছে। এ অনুষ্ঠানে রান্না, সাধারণ জ্ঞান, সরাসরি প্রচার ও প্রর্দশকদের মতামত প্রচার করা হয়। অনুষ্ঠানটির কয়েক লাখ দর্শক আছে। অনুষ্ঠানটি পৃথক পৃথকভাবে চীনা টেলিভিশন শিল্প যোগাযোগ সমিতির ২০১২ সালের পুরস্কার এবং এশীয় বেতার, চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন সমিতির ২০১৩ ও ২০১৪ সালের পুরস্কার লাভ করে।
লি ছুনসিয়াও'র বই পড়া, রান্না ও কফি তৈরিতে আগ্রহ বেশি। তিনি তাঁর সহকর্মীদেরকে পছন্দ করেন। তিনি বলেন, সহকর্মীরা অধিকাংশ তরুণ-তরুণী, তাঁরা তার পরিবারের মতো। 'আমার কোম্পানিতে হাসি-খুশি মানুষের সংখ্যা বেশি। আসলে আমাদের কাজের চাপ রয়েছে। কিন্তু আমি সবার জন্য সুখী পরিবেশ সৃষ্টি করতে পেরেছি। এ জন্য গর্ব করি। আমার কোম্পানির সাফল্যের জন্যও আমি গর্বিত।'
লি ছুনসিয়াও প্রতিদিন দুপুরে পেশাদার শেফ দিয়ে সহকর্মীদের জন্য খাবার রান্না করেন। সবাই একসাথে সুস্বাদু লাঞ্চ করেন। এর মাধ্যমে সবাই একে অপরের আরও কাছে আসতে পারে।
কাজের সূত্রে লি ছুনসিয়াওর বহু খাদ্যবিশেষজ্ঞ এবং দেশি-বিদেশি পাচকের সঙ্গে যোগাযোগ আছে। বিখ্যাত্ পাচকদের সঙ্গে আলোচনা তার রান্নার ধারণায় মাঝে মাঝে পরিবর্তন আনে। তিনি মনে করেন, পাচকরা মহান শিল্পী। তাঁরা রান্নার মাধ্যমে নিজেদের দক্ষতা প্রদর্শন করেন। যে কোনো রান্না করা খাবার খেলে সংশ্লিষ্ট পাচকের মনোভাব টের পাওয়া যায়। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'ক্যান্টোনিজ খাবারের বিখ্যাত্ পাচক গু চিহুই'র রান্না অনেক সূক্ষ্ম। তাঁর রান্নায় যে ভালবাসা মিশিয়ে দেওয়া হয়। আমার আরেকজন পছন্দের পাচক হলেন দুয়ান ইউ। তিনি একটি ডিশ নিয়ে প্রায় দশ মাস গবেষণা করেছিলেন। তিনি এ সময় খাবারটি নিয়ে একশ'রও বেশি পরীক্ষা চালান। সবশেষে চীনের বিখ্যাত্ একটি ডিশ তিনি রান্না করেন। আর শাংহাইয়ের মেয়ে ডানি আগে ডিজাইনার ছিলেন। কিন্তু রান্নায় তাঁর আগ্রহ আরো বেশি। তিনি ডিজাইনের জ্ঞান কাজে লাগিয়েছেন রান্নায়। তাঁর ডিশে শিল্পের উপকরণ রয়েছে।'
লি ছুনসিয়াও অন্যের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নিজের রান্না উন্নত করেন। তিনি ফ্রান্সের বিশ্ববিখ্যাত Le Cordon Bleu একাডেমি আয়োজিত রান্না প্রতিযোগিতায় অংশ নেন এবং ফাইনাল রাউন্ডে উন্নীত হয়েছিলেন। যদিও তিনি কোনো পুরস্কার লাভ করেননি, তবুও সেখানে তিনি অনেক বন্ধু পেয়েছেন।
লি ছুনসিয়াও বলেন, আসলে ছাংগে সমৃদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়ায় অতিথি, পাচক, ও গণমাধ্যমের সমর্থন পাওয়া গেছে। তিনি সবাইকে অনেক ধন্যবাদ জানান। তাঁদেরকে ধন্যবাদ জানানোর জন্য লি ছুনসিয়াও ২০১৫ সালে একটি পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান আয়োজন করেন। তিন শতাধিক খাদ্যবিশেষক, ২০ জন পাচক, ৩০ জনেরও বেশি সমালোচক ও ৩০টিরও বেশি গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য ছিল তাঁদেরকে ধন্যবাদ জানানো। তাঁরা আমাদেরকে সমর্থন দিয়েছেন, সহায়তা করেছেন। আমরা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁদেরকে শ্রদ্ধা জানিয়েছি।'
চলতি বছরের অনুষ্ঠানটি গত ১৯ ডিসেম্বর আয়োজিত হয়। শাংহাই, বেইজিং ও হংকংয়ের অনেক প্রথম পর্যায়ের পাচক অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
এ ছাড়াও ছাংগে'র টেলিভিশন অনুষ্ঠান ২০১৭ সালে বেইজিং, শাংহাই, কুয়াংতং, ছিংদাও, ছেংদু ও খুনমিংয়ের দর্শকদের সামনে রেকর্ডিং করা হবে।