গত সপ্তাহে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশে। সপ্তাহজুড়ে গণমাধ্যম জুড়ে ছিল পাঠ্যপুস্তকে ভুল ও বিকৃতি নিয়ে সংবাদ। মিয়ানমারের বিশেষ দূতের বাংলাদেশ সফর সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্ব পেয়েছে। আজকের সংবাদ পর্যালোচনায় আমরা নজর দেব বিষয়গুলোর দিকে।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে গত কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশে ঢুকছে সেদেশের রোহিঙ্গারা। এ নিয়ে বাংলাদেশ একাধিকবার মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এ বিষয়ে পদক্ষেপ দাবি করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে ১০ জানুয়ারি ঢাকা সফরে আসেন মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সুচির বিশেষ প্রতিনিধি সেদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিয়াও তিন। সফরের দ্বিতীয় দিনে ১১ জানুয়ারি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তিনি পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন। এছাড়াও মিয়ানমার দূত দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। এসব বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাওয়া হয়।
এ বিষয়ে ১২ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী। বৈঠকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ইস্যুতে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের কারণে দেশের নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে বলে জানানো হয় মিয়ানমারের প্রতিমন্ত্রীকে। এতে কক্সবাজার পর্যটন এলাকার পর্যটন ও সার্বিকভাবে অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে নিবন্ধিত ও নিবন্ধহীন প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানামারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
একইসঙ্গে মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চলে অস্থিরতার কারণ অনুসন্ধান করে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে একটি স্থায়ী কর্মকৌশল প্রণয়নের পরামর্শ দেয়া হয় বাংলাদেশের তরফে। দুদেশের সদিচ্ছা ও কার্যকর উদ্যোগের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান সম্ভব বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
একই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন মিয়ানমার দূত। এসময় প্রধানমন্ত্রী দ্ব্যর্থহীনভাবে মিয়ানমারের প্রতিনিধিকে জানিয়ে দেন যে, বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী সব রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নিতে হবে। ঢাকার প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারে নাগরিকদের যাচাই বাছাই করে ফিরিয়ে নেয়ার বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানান মিয়ানামারের পররাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কঠোর সমালোচনার মুখে বাংলাদেশে এ সফর করলেন মিয়ানমারের প্রতিনিধি। তবে তার এ সফর শুধু লোক দেখানো হবে না এবং রোহিঙ্গাদের বিষয়ে ইয়াঙ্গুন সত্যিকার অর্থেই গঠনমূলক ভূমিকা নেবে বলে আশা বাংলাদেশের মানুষের।
এদিকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদে হাতে বছরের প্রথম দিনটিতে নতুন বই তুলে দিয়েছে সরকার। গত কয়েক বছর ধরে চলমান এ কর্মসূচির জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সরকার প্রশংসা পেয়েছে সকল মহলে। তবে, এবার শিক্ষার্থীদে নতুন বইয়ের আনন্দ স্থায়ী হতে পারেনি। কারণ পাঠ্যবইয়ে প্রচুর ভুল, অসম্পূর্ণ ও বিকৃত তথ্য রয়েছে। এ নিয়ে বিভ্রান্ত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে সরকারও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে রয়েছে।
ভুলে ভরা এসব বই প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন দেশে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, পাঠ্যবইয়ে ভুল হতেই পারে। কিন্তু এবার কিছু ভুল করা হয়েছে যা অমার্জনীয়। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানি মনে করেন, কর্মকর্তাদের গাফলতির পাশাপাশি ইচ্ছাকৃতভাবে শিক্ষাব্যবস্থাকে সাম্প্রদায়িকীকরণে হীন উদ্দেশ্য জড়িত রয়েছে এসব ভুলের পিছনে।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদও স্বীকার করেছেন, বিগত বছরের চেয়ে এবার সব স্তরের পাঠ্যবইয়ে ভুলত্রুটি বেশি রয়েছে। কিছু কিছু ভুল ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করেন তিনি। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, তদন্তে বেরিয়ে আসবে এজন্য কারা দায়ী। আর দোষীর বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি হুঁশিয়ারি দেন।
নতুন পাঠ্যপুস্তকে ভুল নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন ও পর্যালোচনায় দুটি কমিটি করেছে সরকার। কমিটি দুটি সামগ্রিকভাবে শিক্ষাখাত পর্যালোচনা করবে বলে জানিয়েছেন গবেষক মনজুর আহমেদ। তবে, নিরাময়ের চেয়ে প্রতিরোধ যেমন উত্তম পন্থা- তেমনি ভুল হবার বা ভুল করবার শাস্তি দেয়ার চেয়ে ভুলের পথটা বন্ধ করাটাই বিবেচ্য হওয়া উচিত বলে মনে করেন এই গবেষক।
ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।