সুর ও বাণী : চীনের জাতীয় মহা থিয়েটার
  2017-01-12 15:18:41  cri


চীনের জাতীয় মহা থিয়েটার

চীনের জাতীয় মহা থিয়েটার জনসাধারণকে উচ্চ মানের সংগীতের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য প্রতি সাপ্তাহের ছুটিতে 'উইকেন্ড কনসার্ট' আয়োজন করে। জাতীয় মহা থিয়েটার বিখ্যাত অর্কেস্ট্রা, বাদ্যযন্ত্র বাদক এবং সংগীত পরিচালকদের আমন্ত্রণ জানিয়ে দেশি-বিদেশি নামকরা সিম্ফনি পরিবেশন করে। ব্যাপক সংগীত অনুরাগীদের ক্লাসিক সংগীত শোনার সুযোগ করে দিতে ইউকেন্ড কনসার্টে টিকিটের দাম খুব সস্তা রাখা হয়। এ কনসার্ট সাধারণত সকালে অনুষ্ঠিত হয়। সংগীতানুষ্ঠান চলাকালে পরিচালক বা শিল্পী সহজ ভাষায় সংগীতের ব্যাখ্যা করেন। অনেক বাবা-মা ছুটির দিন সন্তানকে নিয়ে উইকেন্ড কনসার্ট শোনার জন্য জাতীয় মহা থিয়েটারে যান।

গত রোববার সকালে আমি জাতীয় মহা থিয়েটারে গিয়ে 'উইকেন্ড কনসার্ট' শুনেছি।

বন্ধুরা, এখন আপনারা শুনছেন দক্ষিণাঞ্চলের গোলাপের সুর নামে একটি সুর। এ সুরটি জোহান স্ট্রাউস ১৮৮০ সালে সৃষ্টি করেন। তিনি এ সুরটি ইতালির রাজাকে উপহার দেন। সুরটি তার বিখ্যাত সুরগুলোর অন্যতম।

প্রতি বছর ১ জানুয়ারি সকালে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার 'ভিয়েনা সংগীতবন্ধু সমিতি' হলে নববর্ষের সংগীতানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এ সংগীতানুষ্ঠানে প্রধানত 'বাদ্যযন্ত্রের সম্রাট জোহান স্ট্রাউস এবং তার পরিবারের সদস্যের সৃষ্টি করা সংগীত পরিবেশন করা হয়। বিশ্বের সুদীর্ঘ ইতিহাস এবং সর্বোচ্চ মানের অর্কেস্ট্রা ভিয়েনা সংগীতপ্রিয় অর্কেস্ট্রা এসব সংগীত পরিবেশন করে। এ সংগীতানুষ্ঠানে মানব সভ্যতার সবচেয়ে আনন্দময় ও উজ্জ্বল দিক তুলে ধরা হয়।

জোহান স্ট্রাউস

বন্ধুরা, এবার শুনুন 'শিকার' নামে একটি সুর। এ সুরটি অস্ট্রিয়ার সুরকার জোহান স্ট্রাউস ১৮৭৫ সালে সৃষ্টি করেন। ১৯ শতাব্দীতে উচ্চ সমাজে শিকার খুব প্রচলিত ছিল। এ সুরে তা তুলে ধরা হয়। সুরটিতে নানা ধরনের পাখির ডাক শোনা যায়।

প্রিয় শ্রোতা, ভিয়েনায় নববর্ষ উপলক্ষ্যে ১৯৫৯ সালে প্রথমবারের মত টেলিভিশনে সংগীতানুষ্ঠান প্রচার করা হয়। এরপর থেকে এ সংগীতানুষ্ঠান প্রতি বছর নববর্ষে ইউরোপীয় সংস্কৃতির প্রধান ঘটনায় পরিণত হয়েছে। চীনের টেলিভিশন কেন্দ্র ১৯৮৭ সাল থেকে এ সংগীতানুষ্ঠান প্রচার শুরু করে। এ পর্যন্ত প্রতি বছর চল্লিশটির বেশি দেশের টেলিভিশনে ভিয়েনা নববর্ষ সংগীতানুষ্ঠান প্রচার হয়। ১০০ কোটির বেশি দর্শক এ অনুষ্ঠান দেখেন।

বন্ধুরা, এবার শুনুন 'আন্না পোলকা' নামের সুরটি। পোলকা ১৮৩০ সাল চেক প্রজাতন্ত্রে প্রথম শুরু হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে শেষ পর্যন্ত পোলকা গোটা ইউরোপে খুব জনপ্রিয় ছিল। তত্কালীন নামকরা সুরকাররা অনেক পোলকা ভিত্তিক সুর সৃষ্টি করেছেন।

চীনের জাতীয় মহা থিয়েটার

চীনের জাতীয় মহা থিয়েটার বেইজিং শহরের থিয়ান আন মেন মহাচত্বরের পশ্চিমাংশে অবস্থিত। এ থিয়েটার চীনের জাতীয় পর্যায়ের শিল্পকলা প্রদর্শনের সর্বোচ্চ স্থান। দেশি-বিদেশি সংস্কৃতি বিনিময়ের বৃহত্তম প্লাটফর্ম। এছাড়াও চীনের সাংস্কৃতিক শিল্পের গুরুত্বপুর্ণ কেন্দ্র। এ থিয়েটারের ভূগর্ভস্থ স্থাপত্যের গভীরতা ৩২.৫ মিটার। অর্থাত্ মাটির নিচে দশ তলা ভবনের মতো গভীর। এটা বেইজিংয়ে সবচেয়ে গভীর একটি স্থাপত্য। এ থিয়েটারে এশিয়ার সবচেয়ে বড় পাইপ অর্গান রয়েছে। এ বাদ্যযন্ত্রের ৬৫০০টি সাউন্ড টিউব আছে। বাদ্যযন্ত্রটির মূল্য ৩ কোটি ইউয়ান।

প্রিয় বন্ধুরা, এবার শুনুন 'স্কেটিং নৃত্য' নামে একটি সুর। এ সুর ফরাসী সুরকার এমিল ওয়াল্ডটেউফিলের সবচেয়ে জনপ্রিয় সংগীতকর্ম। তিনি চমত্কারভাবে সুরের সাথে স্কেটিংয়ের কৌশল মিলিয়ে একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় সংগীতনৃত্যের ধারা সৃষ্টি করেছেন। এমন কি শীতকালে চীনের নানা অঞ্চলের স্কেটিং করার সময় এ সুর শোনা যায়।

চীনের জাতীয় মহা থিয়েটার চীনের গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক স্থাপত্য এবং বৈশিষ্ট্যপূর্ণ দর্শনীয় স্থান। চীনের ১৬টি প্রতীকী স্থাপত্যের অন্যতম হিসেবে জাতীয় মহা থিয়েটার অনেক আলোকচিত্রশিল্পীদের আকর্ষণ করেছে। এ ভবনের আকার অসাধারণ। বাইরের চার পাশে পরিষ্কার পানির লেক দিয়ে বেষ্টন করা। এ লেক ছাড়াও রয়েছে অনেক গাছপালা, ঘাস ও ফুল। এ ভবনের মাধ্যমে মানুষের সাথে মানুষেরসহ শিল্পকলা ও প্রকৃতির সম্প্রীতিমূলক সহাবস্থানের ধারণা প্রতিফলিত হয়েছে।

বন্ধুরা, এবার শুনুন 'বজ্রপাত পোলকা' নামের সুরটি। এটি খুব দ্রুত ছন্দের এক পোলকা সুর। জোহান স্ট্রাউস ১৮৬৮ সালে এ সুর সৃষ্টি করেন। সুরে ঝড়, বাতাস, বজ্রপাত এবং বৃষ্টির আওয়াজ বর্ণনা করা হয়েছে।

চীনের জাতীয় মহা থিয়েটার শিল্পকলার গুণগত মান উন্নয়ন করা এবং জনসাধারণকে শিল্পকলা শিক্ষাদানের দায়িত্ব পালন করে। ২০১৫ সাল পর্যন্ত এ থিয়েটার ৪৩৫১ বার শিল্পকলা শিক্ষা বিষয়ক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। ৩৭ লাখ দর্শক এ অনুষ্ঠানগুলোতে শিক্ষাগ্রহণ করেছেন। জাতীয় এ থিয়েটার প্রায় প্রতি বছর এ জন্য ৩ কোটি ইউয়ান বরাদ্দ করে। প্রতি সাপ্তাহিক ছুটিতে আয়োজিত 'সাপ্তাহিক ছুটির দিনের সংগীতানুষ্ঠানে' প্রথম শ্রেণির শিল্পীদের দল সংগীত পরিবেশন করে। বিশেষজ্ঞ বা থিয়েটারের কর্মকর্তাবৃন্দ দর্শকদের গভীরভাবে অনুষ্ঠানের তাত্পর্য ব্যাখ্যা করেন। এ সংগীতানুষ্ঠানের টিকিট মাত্র ৪০ ইউয়ান। থিয়েটারের সদস্যদের জন্য টিকিট মাত্র ১০ ইউয়ান। এমন সস্তা দামে ক্লাসিক সংগীত উপভোগ করার সুযোগ থাকায় সাপ্তাহিক ছুটির দিনের সংগীতানুষ্ঠানে থিয়েটারে দর্শক ভরা থাকে। কেউ কেউ ভোর ৫টায় এসে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কিনেন।

সুপ্রিয় বন্ধুরা, অনুষ্ঠানের শেষে শুনুন 'ভিয়েনা বনের গল্প' নামে বাদ্যযন্ত্রের একটি সুর। জোহান স্ট্রাউস ১৮৬৮ সালে এ সুর সৃষ্টি করেছেন। অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার উপকণ্ঠে মনোরম সবুজ বন আছে। সে বন শহর থেকে খুব বেশি দূরে নয়। হাজার হাজার পর্যটক বনে ঘুরতে যান। ভিয়েনায় অবস্থানরত অনেক সুরকারও প্রায় সে বনে যান। বনের সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য তাদের সংগীত সৃষ্টির অনুপ্রেরণা যোগায়। 'ভিয়েনার বনের গল্প' জোহান স্ট্রাউসের তৈরি করা দেশকে নিয়ে একটি প্রশংসনীয় সুর। শুনুন বন্ধুরা।

প্রিয় বন্ধুরা, আজকের সুর ও বাণী আসরে আপনাদের সামনে চীনের জাতীয় মহা থিয়েটারের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিয়েছি। ভিয়েনার নববর্ষের সংগীতানুষ্ঠানের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সুর শুনিয়েছি। আশা করছি, সুন্দর সুরগুলো আপনাদের ভালো লেগেছে। ভালো থাকুন আপনারা। আবার কথা হবে। (ইয়ু/মান্না)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040