'এক অঞ্চল, এক পথ': মানবজাতিকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ, সুষম ও সমৃদ্ধ বিশ্ব তৈরি করছে চীন
  2017-01-12 14:22:15  cri


তিন বছর আগে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং 'রেশমপথ অর্থনৈতিক অঞ্চল' ও 'একবিংশ শতাব্দীর সামুদ্রিক রেশমপথ'-এর প্রস্তাব উত্থাপন করেন। স্থল ও সমুদ্রবিষয়ক এ দু'টি প্রস্তাব এখন চীন এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর অর্থনীতির উন্নয়ন নিয়ে ডানা মেলে উড়ছে।

২০১৬ সালে 'এক অঞ্চল, এক পথ' প্রস্তাবসম্পর্কিত প্রকল্পে সাফল্য অর্জিত হয়েছে এবং ২০১৭ সালে চীনে অনুষ্ঠেয় 'এক অঞ্চল, এক পথ' আন্তর্জাতিক শীর্ষসম্মেলন সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সহযোগিতা নতুন এক পর্যায়ে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

আজকের অনুষ্ঠানে আমরা গত বছরে 'এক অঞ্চল, এক পথ' প্রস্তাবসম্পর্কিত কয়েকটি প্রকল্প তুলে ধরবো।

চীনের সিন চিয়াংয়ের কাশি একটি পুরাতন শহর এবং শহরটি রেশমপথের গুরুত্বপূর্ণ একটি শহর। এখন চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের সূচনা হিসেবে কাশি নতুন একটি মাত্রা পেয়েছে। ২০১৬ সালের শরত্কালে, ৫০টি ট্রাকের একটি বহর কাশি থেকে ৩০০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে পাকিস্তানের গোয়াদার বন্দরে পৌঁছায়। আর সেখান থেকে চীনের পণ্য জলপথের মাধ্যমে চলে যায় বিশ্বের কাছে।

বন্দরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নেওয়াজ শরিফ এ দিনটিকে নতুন যুগের ভোর হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি আশা করেন, চীন ও পাকিস্তানের পণ্যস্থানান্তর যুক্ত করা এ বন্দরটি ভবিষ্যতে সেন চেন ও দুবাইয়ের মতো সমৃদ্ধ একটি বন্দরে পরিণত হবে।

শুধু পাকিস্তানিরা নয়, অন্য দেশের মানুষও বুঝতে পারে পরিবহনব্যবস্থার উন্নয়ন সবসময়ই অর্থনীতি উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

২০১৬ সালের ডিসেম্বরে চীনা কোম্পানির নির্মিত উজবেকিস্তানের অ্যাংরেন-প্যাপ সুরঙ্গ চালু হয়। এটি মধ্য এশিয়ায় বৃহত্তম সুরঙ্গ। এ প্রকল্প উজবেকিস্তানে চীন কোম্পানির সুনাম অনেক বৃদ্ধি করেছে। সুরঙ্গটি দেশের দু'টি ভাগকে যুক্ত করায় এখন অভ্যন্তরীণ পরিবহনে অন্য দেশের সাহায্য নিতে হচ্ছেনা দেশটিকে। তাই উজবেক জনগণ উল্লাস করে বলেন, 'আমাদের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে'।

গত তিন বছর ধরে 'এক অঞ্চল, এক পথ' প্রস্তাবের কাঠামোতে এশিয়া-ইউরোপ মহাদেশের দেশগুলোর বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতা দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে। চীন-বেলারুশ শিল্পপার্ক (বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকা)-র পূর্ণাঙ্গব্যবস্থাপনা দিন দিন গড়ে তোলা হয়েছে। চীন, হাঙ্গেরি ও সার্বিয়া-এ তিনটি দেশের যৌথভাবে নির্মিত হাঙ্গেরি–সার্বিয়া রেশমপথ প্রকল্প শুরু হয়েছে। চীন–মধ্য ও পূর্ব ইউরোপ সহযোগিতাব্যবস্থার গভীরতা ও ব্যাপকতাও বাড়ছে। ইউরোপীয় দেশগুলোর লোকজনের 'এক অঞ্চল, এক পথ' প্রস্তাব সম্পর্কে জানাশোনা বেড়েছে।

মার্কিন ফোর্বস ম্যাগাজিন জানিয়েছে, ইউরোপীয় দেশগুলো 'এক অঞ্চল, এক পথ' প্রস্তাবকে গ্রহণ করেছে এবং ইতিবাচকভাবে এতে অংশ নিয়েছে। এর বড় একটি কারণ হল পশ্চিম অভিমুখে ট্রেন চালু হওয়া। পশ্চিম অভিমুখে ট্রেন মানে চীন-ইউরোপ ট্রেন।

২০১৬ সালের জুন মাসের শেষ নাগাদ, চীন ও ইউরোপের মধ্যে ১৮৮১টি ট্রেন আসা যাওয়া করে এবং এতে রপ্তানি ও আমদানির পরিমাণ দাঁড়ায় ১৭০০ কোটি ডলার। এসব ট্রেনের রং একইরকম, লোগোর রং লাল ও কালো, বগির রং গভীর নীল। এ প্রতীক দেখলে বোঝা যায়, এ ট্রেন চীন-ইউরোপ ট্রেন।

২০১৬ সালের ২৫ ডিসেম্বর লাওসের প্রধানমন্ত্রী দেশটির উত্তরাঞ্চলের লুয়াং প্রাবাং রাজ্যে চীন-লাওস রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২১ সালে এ রেলপথটি চালু হবে এবং তখন চীনের সীমান্ত থেকে লাওসের রাজধানী ভিয়েনতিয়েনে মাত্র ৪ঘণ্টায় পৌঁছানো যাবে।

মূলত এক একটি পয়েন্ট নিয়ে একটি লাইন গঠিত হয় এবং এক একটি লাইন নিয়ে গঠিত হয় একটি নেট বা জাল।

২০১৬ সালের ১০ অগাস্ট এথেন্স স্টক বিনিময়কেন্দ্রে চীনা কোম্পানি ও গ্রিসের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। গ্রিসের বৃহত্তম বন্দর পিরায়ুস এর ৬৭ শতাংশ স্টক কিনে নেয় চীনা কোম্পানি।

আসলে 'এক অঞ্চল, এক পথ' কৌশলের পরিকল্পনা থেকে কার্যক্রম এবং প্রস্তাব থেকে বাস্তবায়নের যে গতি এবং সাফল্য তা বিশ্বের প্রশংসা পেয়েছে। মার্কিন 'দ্য ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট' ম্যাগাজিনের এক প্রবন্ধে বলা হয়, 'এক অঞ্চল, এক পথ' শুধুমাত্র একটি মহান অর্থনৈতিক পরিকল্পনাই নয়, এ প্রস্তাব বিশ্ব সম্পর্ক ও শাসনের একটি দৃষ্টান্ত। চীন মানবজাতিকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ, সুষম ও সমৃদ্ধ বিশ্ব তৈরি করছে।

আফ্রিকায় চীনা কোম্পানির নির্মিত আদ্দিস আবাবা-জিবুতি রেলপথটি চালু হয়েছে এবং যা চীন, ইথিওপিয়া এবং জিবুতি-এ তিনটি দেশের সহযোগিতার একটি মাইলফলক।

এ ছাড়া, 'এক অঞ্চল, এক পথ' প্রস্তাবের কাঠামোয় কম্বোডিয়ায় সিহানউক বন্দর অর্থনৈতিক বিশেষ এলাকায় নিযুক্ত হয়েছে শতাধিক কোম্পানি।

মিয়ানমারে চীন ও অন্য দেশের কোম্পানিরা একটি যৌথ শিল্পপার্ক (বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল) ও গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে অংশ নেয়। এর সাহায্যে স্থানীয় অবকাঠামো,কর্মসংস্থান ও জনগণের জীবনযাপনের ব্যাপক উন্নতি হবে।

ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা ও বান্দুংয়ের মধ্যে রেলপথ প্রকল্প শুরু করেছে চীনা কোম্পানি।

শ্রীলংকায় চীনের বিনিয়োগে কলম্বো বন্দর শহর প্রকল্প পুনরায় চালু এবং হালনাগাদ হয়েছে। ভবিষ্যতে এই প্রকল্পটি দক্ষিণ এশিয়া এমনকি বিশ্বের আর্থিক ও নৌপরিবহন কেন্দ্রে পরিণত হতে পারবে।

মূলত এখন সময় হলো এশিয়া থেকে ইউরোপ পর্যন্ত, স্থল থেকে সমুদ্র পর্যন্ত প্রাচীন সামুদ্রিক রেশমপথ পুনরুদ্ধারের। এখন সময় 'এক অঞ্চল, এক পথ' প্রস্তাব বাস্তবায়নের।

এ পর্যন্ত বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশ ও সংস্থা 'এক অঞ্চল, এক পথ প্রস্তাব' সমর্থন এবং এতে অংশ নেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। চীন ইতোমধ্যেই ৪০টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে এ বিষয়ে সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

২০১৬ সালের জুন মাসে উজিবেকিস্তানের পার্লামেন্টে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ঘোষণা করেন, ২০১৭ সালে চীনে অনুষ্ঠিত হবে 'এক অঞ্চল, এক পথ' প্রস্তাবসম্পর্কিত আন্তর্জাতিক শীর্ষসম্মেলন।এ সম্মেলনের মাধ্যমে অংশীদারি দেশের সঙ্গে আন্তরিক আলোচনা এবং 'এক অঞ্চল, এক পথ' প্রস্তাবের বাস্তবায়ন নিয়ে পরিকল্পনা করা হবে।

আমরা বিশ্বাস করি, এ সম্মেলন চীনের 'এক অঞ্চল, এক পথ' প্রস্তাবের নতুন একটি সূচনা হবে এবং এতে খুলে যাবে বিশ্বের মানুষের উন্নয়নের দরজা। (শিশির/টুটুল)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040