সাহিত্য ও সংস্কৃতি--আন্তর্জাতিক থাইচি ও ইয়োগা সম্মেলন-২০১৭
  2017-01-10 13:58:21  cri

ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে ভারত-চীন অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাউন্সিল (আইসিইসি-কাউন্সিল)-র প্রতিনিধিরা চীনের হুনান প্রদেশ সফর করে। সফরে কাউন্সিলের সচিব মোহাম্মদ সাকিব প্রাদেশিক বাণিজ্য উন্নয়ন সমিতির সঙ্গে 'বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতাবিষয়ক স্মারকলিপি'-তে স্বাক্ষর করেন।

সাকিব আশা করেন, হুনান প্রদেশের বাণিজ্য উন্নয়ন সমিতির সঙ্গে যোগাযোগ জোরদারের মাধ্যমে বিনিময় ও সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে। তিনি চীনের শহর-নির্মাণ প্রযুক্তি ও ক্ষমতা সম্পর্কে জানার আগ্রহও ব্যক্ত করেন।

হুনান প্রদেশের বাণিজ্য উন্নয়ন সমিতির পরিচালক হে চিয়ান বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের দ্রুত উন্নয়ন হচ্ছে। বিশেষ করে চিকিত্সা ও তথ্যসহ বিভিন্ন শিল্পের উন্নয়ন হয়েছে। ভারতের বাজারকে হুনান প্রদেশ গুরুত্ব দেয় বলেও জানান তিনি।

আসলে আমি বলতে চাই যে, চীনের ইয়ুন নান প্রদেশ ছাড়াও, সম্প্রতি হুনান প্রদেশ দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি ও অনেক বিনিময় করেছে। যেমন ২০১৫ সালের অগাস্ট মাসে ছিয়াং সা শহরের একাডেমি অফ ফাইন আর্টস বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দু'দেশের তরুণ শিল্পীদের একটি বিনিময় প্রকল্প আয়োজন করে। দু'পক্ষের খুব মেধাবী শিল্পীরা পারস্পরিক দেশ সফর এবং বিনিময় করে।

সার্বিকভাবে জানা যায়, সংস্কৃতি ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার অন্য বাজারের ওপরও গুরুত্ব দিয়েছে হুনান প্রদেশ। আমিও আশা করি, বাংলাদেশ, ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর বন্ধুরা যদি চীনে আসেন, তাহলে অবশ্যই হুনান প্রদেশে সফর করবেন। কারণ প্রদেশটি খুবই আকর্ষণীয় এবং সুন্দর।

ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে বেইজিংয়ে চীনের বৈদেশিক গণমৈত্রী সমিতির শান্তি প্রাসাদে 'আন্তর্জাতিক থাইচি ও ইয়োগা সম্মেলন-২০১৭' উদ্বোধন হয়। চীন-ভারত মৈত্রী সমিতির মহাসচিব লুয়ান ইয়ু থাও, চীনা বৈদেশিক গণমৈত্রী সমিতির উপ-প্রধান চাং ফাং, চীনের আন্তর্জাতিক থাইচি ও ইয়োগা সম্মেলনের মহাসচিব লিন সিয়াও হাই প্রমুখ এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

সম্মেলনে মহাসচিব লিন সিয়াও হাই বলেন, চীন-ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ বিনিময়ের সেতু হিসেবে এ সম্মেলন সাফল্যের সঙ্গে দশম বারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আগামী বছরের জুনে একাদশ সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হবে 'ইয়োগা দিয়ে বিশ্বের সংযুক্তি ও থাইচিতে একত্রীকরণ।'

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২০ থেকে ২২ জুন পর্যন্ত চীনের আন্তর্জাতিক থাইচি ও ইয়োগা সম্মেলন রাজধানী বেইজিংয়ের ক্রীড়া একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হবে।

২৩ ডিসেম্বর চীনের ছেংদু ও ভারতের আগ্রা শহরের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতা সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। চুক্তি অনুসারে, দু'পক্ষ পর্যটনবিষয়ক শিল্প-প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগ ও সহযোগিতা বৃদ্ধি, পর্যটনের প্রচারবিষয়ক সম্মেলন ও সাংস্কৃতিক প্রদর্শনী আয়োজন এবং পুরাকীর্তি রক্ষার যোগাযোগ জোরদার করবে।

এ ছাড়া, দু'পক্ষ অর্থনীতি, শিক্ষা ও ইলেক্ট্রনিক বাণিজ্যসহ নানা ক্ষেত্রে এবং বেসরকারি শিল্প-প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগ ত্বরান্বিত করবে।

পল্লী কবি জসীম উদ্দীন

জসীম উদ্দীন (জানুয়ারি ১, ১৯০৩ - ১৩ মার্চ, ১৯৭৬) একজন বিখ্যাত বাঙালি কবি। তিনি বাংলাদেশে পল্লী কবি হিসেবে পরিচিত। তার লেখা কবর কবিতাটি বাংলা সাহিত্যে এক অবিস্মরণীয় অবদান। পুরো নাম জসীম উদ্দীন মোল্লা হলেও তিনি জসীম উদ্দীন নামেই পরিচিত। নকশী কাঁথার মাঠ ও সোজন বাদিয়ার ঘাট কবির শ্রেষ্ঠ দুইটি রচনা। জসীম উদ্দীনের কবিতা বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে।

প্রাথমিক জীবন

তিনি ১৯০৩ সালের পহেলা জানুয়ারি ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার বাড়ি ছিল একই জেলার গোবিন্দপুর গ্রামে। বাবার নাম আনসার উদ্দিন মোল্লা। তিনি পেশায় একজন স্কুল শিক্ষক ছিলেন। মা আমিনা খাতুন ওরফে রাঙাছুট।

শিক্ষাজীবন

জসীম উদ্দীন ফরিদপুর ওয়েলফেয়ার স্কুল ও পরবর্তীতে ফরিদপুর জেলা স্কুলে পড়ালেখা করেন। এখান থেকে তিনি তার প্রবেশিকা পরীক্ষায় ১৯২১ সনে উত্তীর্ণ হন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা থেকে বি. এ. এবং এম. এ. শেষ করেন যথাক্রমে ১৯২৯ এবং ১৯৩১ সনে।

কর্মজীবন

১৯৩৩ সনে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. দীনেশ চন্দ্র সেনের অধীনে রামতনু লাহিড়ী গবেষণা সহকারী পদে যোগ দেন। এরপর ১৯৩৮ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৯ সনে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কবিকে সম্মান সূচক ডি লিট উপাধিতে ভূষিত করে।

নকশী কাঁথার মাঠ

– জসীম উদ্দীন

সখী দীন দুঃখীর যারে ছাড়া কেহ নাই

সেই আল্লার হাতে আজি আমি তোমারে সঁপিয়া যাই।

মাকড়ের আঁশে হস্তী যে বাঁধে, পাথর ভাসায় জলে

তোমারে আজিকে সঁপিয়া গেলাম তাঁহার চরণতলে।

মৃত্যু

তিনি ১৩ মার্চ ১৯৭৬ সনে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। পরে তাকে তার নিজ গ্রাম গোবিন্দপুরে দাফন করা হয়।

কবর

– জসীম উদ্দীন

এইখানে তোর দাদীর কবর ডালিম গাছের তলে,

তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে।

এতটুকু তারে ঘরে এনেছিনু সোনার মতন মুখ,

পুতুলের বিয়ে ভেঙে গেল বলে কেঁদে ভাসাইত বুক।

এখানে ওখানে ঘুরিয়া ফিরিতে ভেবে হইতাম সারা,

সারা বাড়ি ভরি এত সোনা মোর ছড়াইয়া দিল কারা।

সোনালী ঊষায় সোনামুখে তার আমার নয়ন ভরি,

লাঙ্গল লইয়া ক্ষেতে ছুটিতাম গাঁয়ের ও-পথ ধরি।

যাইবার কালে ফিরে ফিরে তারে দেখে লইতাম কত,

এ কথা লইয়া ভাবি-সাব মোর তামাশা করিত শত।

কাব্য

নিমন্ত্রণ

– জসীমউদ্দীন

তুমি যাবে ভাই – যাবে মোর সাথে, আমাদের ছোট গাঁয়,

গাছের ছায়ায় লতায় পাতায় উদাসী বনের বায়;

মায়া মমতায় জড়াজড়ি করি

মোর গেহখানি রহিয়াছে ভরি,

মায়ের বুকেতে, বোনের আদরে, ভাইয়ের স্নেহের ছায়,

তুমি যাবে ভাই – যাবে মোর সাথে, আমাদের ছোট গাঁয়,

গ্রন্থাবলী:

কাব্যগ্রন্থ

রাখালী (১৯২৭)

নকশী কাঁথার মাঠ (১৯২৯)

বালুচর (১৯৩০)

ধানখেত (১৯৩৩)

সোজন বাদিয়ার ঘাট (১৯৩৪)

হাসু (১৯৩৮)

রঙিলা নায়ের মাঝি(১৯৩৫)

রুপবতি (১৯৪৬)

মাটির কান্না (১৯৫১)

এক পয়সার বাঁশী (১৯৫৬)

সকিনা (১৯৫৯)

সুচয়নী (১৯৬১)

ভয়াবহ সেই দিনগুলিতে (১৯৬২)

মা যে জননী কান্দে (১৯৬৩)

হলুদ বরণী (১৯৬৬)

জলে লেখন (১৯৬৯)

কাফনের মিছিল ((১৯৮৮)

নাটক

পদ্মাপার (১৯৫০)

বেদের মেয়ে (১৯৫১)

মধুমালা (১৯৫১)

পল্লীবধূ (১৯৫৬)

গ্রামের মেয়ে (১৯৫৯)

ওগো পুস্পধনু (১৯৬৮)

আসমান সিংহ (১৯৮৬)

আত্মকথা

যাদের দেখেছি ((১৯৫১)

ঠাকুর বাড়ির আঙ্গিনায় (১৯৬১)

জীবন কথা ( ১৯৬৪)

স্মৃতিপট (১৯৬৪)

উপন্যাস

বোবা কাহিনী (১৯৬৪)

ভ্রমণ কাহিনী

চলে মুসাফির (১৯৫২)

হলদে পরির দেশে ( ১৯৬৭)

যে দেশে মানুষ বড় (১৯৬৮)

জার্মানীর শহরে বন্দরে (১৯৭৫)

সঙ্গীত

জারি গান (১৯৬৮)

মুর্শিদী গান (১৯৭৭)

অন্যান্য

বাঙালির হাসির গল্প

ডালিমকুমার (১৯৮৬)

পুরস্কার

প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড ফর প্রাইড অফ পারফরমেন্স ১৯৫৮

একুশে পদক ১৯৭৬

স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার ১৯৭৮ (মরণোত্তর)

১৯৭৪ সনে তিনি বাংলা একাডেমী পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন।

রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি. লিট ডিগ্রি (১৯৬৯)

(বাংলা উইকিপিডিয়া)

প্রিয় শ্রোতা, আজকের অনুষ্ঠান আপনাদের কেমন লাগলো? আপনারা যদি 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' বিষয়ক কোনো কিছু জানতে বা আলোচনা করতে চান তাহলে আমাকে ইমেইল করবেন। আপনাদের কাছ থেকে চমত্কার পরামর্শ আশা করছি। আর আপনাদের জানিয়ে রাখি,আমার ইমেইল ঠিকানা হলো, hawaiicoffee@163.com।

চিঠিতে প্রথমে লিখবেন, 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' অনুষ্ঠানের 'প্রস্তাব বা মতামত'। আপনাদের চিঠির অপেক্ষায় রইলাম।

শ্রোতাবন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠান এখানেই শেষ করছি। অনুষ্ঠান শোনার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আগামী সপ্তাহে একই দিন, একই সময় আবারো কথা হবে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়ান। (জিনিয়া/টুটুল)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040