৫ জানুয়ারির শিক্ষা: সহিংসতা নয়, দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে নির্বাচনই সুরাহা
  2017-01-08 18:40:39  cri
৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বার্ষিকীকে ঘিরে গত কয়েক বছরের মতো এবারো রাজনৈতিক উত্তাপ তৈরি হয় দেশজুড়ে। ২০১৪ সালের এ দিনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারে অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি ওই নির্বাচন বর্জন করে। তার পর থেকে দিনটিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পালন করে গণতন্ত্র রক্ষা দিবস হিসেবে, আর বিরোধী বিএনপি পালন করে গণতন্ত্র হত্যা দিবস হিসেবে। দিনটি দুই দলের জন্য পরিণত হয় প্রেস্টিজ ইস্যুতে।

এবার ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের তৃতীয় বার্ষিকীতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ। দেশের অন্যত্র কর্মসূচি পালন করলেও সংঘাতের আশঙ্কায় ৫ জানুয়ারি রাজধানীতে কোনো কর্মসূচি রাখেনি বিএনপি। বরিশালসহ কিছু জায়গায় বিচ্ছিন্ন সহিংসতা ছাড়া খুব বড় আকারের সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। এতে হাঁপ ছেড়ে বাঁচে দেশের মানুষ। ৫ জানুয়ারির পরিবর্তে ৭ জানুয়ারি রাজধানীতে সমাবেশ করতে চায় বিএনপি। সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে না হলেও নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালের সামনে সমাবেশের ইচ্ছা ছিল তাদের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পুলিশের অনুমতি না মেলায় সমাবেশ করতে পারেনি তারা।

৫ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ও রাসেল স্কোয়ারে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি আওয়ামী লীগ জনসভার আয়োজন করে। এসব জনসভায় দলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ সিনিয়র নেতারা বক্তব্য রাখেন। তারা বিএনপির উদ্দেশে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আর কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করলে বিএনপিকে চরমমূল্য দিতে হবে। বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ কর্মসূচি পালন করে।

অন্যদিকে, রাজধানীতে কর্মসূচি না রাখলও সারাদেশে গণতন্ত্র হত্যা দিবসের ব্যানারে কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, বিভিন্ন স্থানে সভাসমাবেশে বাধা দিয়ে ও হামলা করে সরকারি দল তাদের সংঘাতের দিকে নিয়ে যেতে চাইছে।

৫ জানুয়ারি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতোই বিভক্ত বিশ্লেষক ও বিশিষ্টজনেরা। ৫ জানুয়ারি পরবর্তী সহিংসতার জন্য অনেকে বিএনপিকে দায়ী করেন এবং বলেন এর মাধ্যমে দল হিসেবে বিএনপি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কেউ কেউ এর জন্য সরকারের দায় রয়েছে বলে মনে করেন।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুণ-অর-রশীদ মনে করনে, ৫ জানুয়ারি নির্বাচন পরবর্তী সময়ে আন্দোলনের নামে বিএনপির জ্বালাও-পোড়াও , পেট্রোলবোমায় মানুষ হত্যা দলটিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান ডা. জাফরউল্লাহ অবশ্য মনে ওই সময়ে সহিংসতায় সরকারি দলেরও দায় রয়েছে।

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু মনে করেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে না এসে বিএনপি দেশে সাংবিধানিক সংকট তৈরি করতে চেষ্টা করেছিল। নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বিএনপি প্রস্তাব দিলেও আগামী নির্বাচন নিয়ে দলটির অবস্থান পরিষ্কার নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। তাই আগামীতে বিএনপি নির্বাচনে এলে ভালো তবে না এলেও সরকারকে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে দলটিকে ছাড়াই নির্বাচন করতে হবে। প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার খাতিরে নির্বাচনে যাবার ঘোষণা দিয়েছে এরই মধ্যে।

আর বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রস্তাব অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন আশা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন একটি সহায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক সংকটের সুরাহা হবে।

তবে এ বিষয়ে সবাই একমত যে, ৫ জানুয়ারির শিক্ষা হচ্ছে গণতন্ত্র ও দেশের স্বার্থে সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে আসতে হবে। আর আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অবাধ করতে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করতে হবে সব দলকে।

ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040