20170108yinyue.mp3
|
প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আপনারা চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান শুনছেন। এখন আমি আনন্দী বেইজিং থেকে আপনাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আজ 'সুর ও বাণী' আসরে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেবো চীনের অতি সুন্দর স্থান সিনচিয়াংয়ের সাথে; শোনাবো সিনচিয়াংসম্পর্কিত কয়েকটি সুন্দর গান।
বন্ধুরা, সিনচিয়াং প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ একটি বিশাল প্রদেশ। এটি চীনের বৃহত্তম প্রদেশ। সিনচিয়াং 'নৃত্যের ভূমি', 'ফলমুলের ভূমি' এবং 'স্বর্ণ ও জেড পাথরের রাজ্য' হিসেবে বিশ্ববিখ্যাত। সিনচিয়াংয়ে আরও রয়েছে থিয়ান পাহাড়ের তুষার এবং কানাসের পৌরাণিক কাহিনী। সিনচিয়াং এক অতি সুন্দর জায়গা। শুনুন 'সবচেয়ে সুন্দর সিনচিয়াং' নামের গানটি।
বন্ধুরা, সিনচিয়াং বহু জাতিঅধ্যুষিত অঞ্চল। এখানে মোট ৪৭টি জাতির লোক বসবাস করেন। তবে উইগুর ও কাজাখ জাতির মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এখানকার দশটি সংখ্যালঘু জাতির লোকই হচ্ছেন মুসলিম। সিনচিয়াংয়ে ইসলামের বড় প্রভাব রয়েছে। এখানে ইসলাম সমিতি এবং ইসলামি স্কুলও আছে। তা ছাড়া, মঙ্গোলীয় জাতি, সিপো জাতি আর দাওর জাতি বৌদ্ধ ধর্ম অনুসরণ করে।
এখন আপনারা শুনছেন কুয়ান মু ছুনের গাওয়া 'তুলুফানের আঙুর পেকেছে' শীর্ষক একটি গান। এ গানে আনার্হান নামক একজন উইগুর জাতির মেয়ের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সৈনিক করিমের প্রতি ভালোবাসার কথা বলা হয়েছে।
চীনের হান রাজবংশ আমল থেকে সিনচিয়াং চীনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। ১৮৮৪ সালে ছিং রাজবংশের কেন্দ্রীয় সরকার সিনচিয়াং প্রদেশ প্রতিষ্ঠা করে। 'সিনচিয়াং' অর্থ হলো 'নতুন অঞ্চল'। চীনের অন্বেষকরা সিনচিয়াংয়ের প্রাকৃতিক ও ভৌগোলিক অবস্থা এবং সংস্কৃতি নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেছেন। সিনচিয়াংয়ের বিভিন্ন দিক নিয়ে তারা অনেক গ্রন্থও লিখেছেন। এ বইগুলো সিনচিয়াংকে জানার উল্লেখযোগ্য উপায়। ১৯৫৫ সালের পয়লা অক্টোবর সিনচিয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হয়। সিনচিয়াংয়ে ১৪টি বিভাগ ও শহর এবং ৮৯টি জেলা আছে।
বন্ধুরা, এখন আপনারা শুনছেন চীনের বিখ্যাত বেহালাবাদক শেং চোং কুওর বাজানো 'সিনচিয়াংয়ের বসন্তকাল' নামক সুর। সুরটি মা ইয়াও সিয়ান এবং লি চোং হান ১৯৫৬ সালে সৃষ্টি করেন। সুরের মধ্যে উইগুর সংগীতের বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
সিনচিয়াং ছিল প্রাচীনকালে আন্তর্জাতিক বাজারের দ্বার। প্রাচীন রেশমপথের দক্ষিণ, উত্তর ও মধ্য লাইন সিনচিয়াংয়ে মিলিত হয়েছে। প্রাচীন গ্রীক সংস্কৃতি, ভারতীয় সংস্কৃতি, আরব সংস্কৃতি এবং মধ্য চীনের সংস্কৃতি এখানে মিলেমিশে এক হয়েছে। সিনচিয়াংয়ের খাবারের স্টাইল চীনা, পশ্চিমা এবং অন্যান্য জাতির সংস্কৃতির মিলমিশের স্পষ্ট প্রমাণ।
বন্ধুরা, এবার শুনুন দাও লাংয়ের গাওয়া 'সিনচিয়াং এক ভালো জায়গা' গানটি। ১৯৫১ সালে সুরকার লিউ চি সিনচিয়াংয়ে এসে এ গান লেখেন। গত ৬০ বছর ধরে চীনের বিভিন্ন প্রজন্মের কণ্ঠশিল্পীরা এ গান গেয়ে সিনচিয়াংয়ের প্রতি গভীর আবেগ প্রকাশ করেছেন। গানে বলা হয়েছে: 'আমাদের সিনচিয়াং ভালো জায়গা। থিয়ান পাহাড়ের দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলে ভালো চারণভূমি আছে। তুষার গলে গলে ক্ষেতে সেচের কাজ হয়। আমাদের সুন্দর জন্মস্থান; এখানে বাতাসে ঘাস নড়ে, দেখা যায় গরু ও ছাগলের পাল। এখানকার আঙুর ও তরমুজ খেতে খুব মিষ্টি। কয়লা, লোহা, স্বর্ণ ও রূপা মাটির নিয়ে লুকিয়ে আছে। এই আমাদের প্রিয় জন্মস্থান।'
সিনচিয়াংয়ে অনেক জনপ্রিয় লোকসংগীত আছে এবং ভিন্ন ভিন্ন ধরনের বাদ্যযন্ত্র আছে। যেমন, তোংবুলা, রেওয়াব ও নানা আকারের ঢাক। উইগুর জাতির লোকসংগীত সিনচিয়াংয়ে সবচেয়ে নামকরা। এ সংগীতের মধ্যে প্রাচীনকালের ছিউ চি, কাও ছাং, ই চৌ এবং খোতান সংগীতের প্রভাব লক্ষণীয়।
বন্ধুরা, এখন শুনুন উইগুর জাতির গায়ক এরকান আব্দুল্লাহর গাওয়া 'সিনচিয়াংয়ের মেয়ে' শীর্ষক গান। তিনি চীনা ভাষায় এ গান গেয়েছেন, তবে গানের সুর শুনে আপনারা সিনচিয়াংয়ের লোকসংগীতের বৈশিষ্ট্য অনুভব করবেন।
চীনে কাজাখ জাতির লোকসংখ্যা প্রায় ১৬ লাখ। তারা প্রধানত সিনচিয়াংয়ের ইলি কাজাখ স্বায়ত্তশাসিত বিভাগ, আলথাই , মুলেই কাজাখ স্বায়ত্তশাসিত জেলা এবং বালিখুন স্বায়ত্তশাসিত জেলায় বসবাস করেন। কাজাখ জাতি মূলত গশুপালন করেন। 'মাইলা' হলো কাজাখ জাতির এক জনপ্রিয় লোকসংগীত। 'মাইলা' কাজাখ জাতির এক মেয়ের নাম। তিনি শুধু দেখতে সুন্দর তা নয়, তিনি নাচ-গানেও পারদর্শী। পশুপালকরা তার তাঁবুর পাশে বসে গান শোনেন। বন্ধুরা, শুনুন ইন সিউ মেইয়ের কণ্ঠে 'মাইলা' শীর্ষক গান।
সিনচিয়াংয়ের লোকসংগীতের কথা উঠলে অবশ্যই সুরকার ওয়াং লো বিনের নাম আসবে। তিনি বেইজিংয়ে জন্মগ্রহণকারী হান জাতির শিল্পী। তবে ১৯৩৮ সালে তিনি 'দাবানচেনের মেয়ে' নামক একটি গান ভিন্নভাবে পরিবেশনের মাধ্যমে পশ্চিম চীনের লোকসংগীতের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করেন। তিনি বিংশ শতাব্দীতে চীনের সবচেয়ে নামকরা জাতিগত সংগীতজ্ঞ। তার প্রচেষ্টায় চীনের অনেক লোকসংগীত বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। বলা হয়, যে জায়গায় চীনা লোক আছে, সেখানে ওয়াং লো বিনের গান শোনা যায়।
বন্ধুরা, এখন আপনারা শুনছেন 'সুন্দর গোলাপ ফুল' নামের গান। এ গানটি মধ্য-এশিয়ার তৃণভূমিতে প্রচলিত কাজাখ জাতির লোকসংগীত ছিল। বিংশ শতাব্দীর ৩০'র দশকে চীনের সিনচিয়াংয়ে এসে জনপ্রিয় হয়। ১৯৩৯ সালে ওয়াং লো বিন এ গান শোনার পর চীনা ভাষায় রূপান্তর করেন। গানে একজন রুশ মেয়ে 'মালিয়া' ও কাজাখ জাতির যুবক 'দুদারের' প্রথম দর্শনে প্রেমে পড়ার গল্প বলা হয়েছে।
বন্ধুরা, সিনচিয়াংয়ে তিনটি বড় পর্বতমালা আর ৫০০টিরও বেশি নদনদী আছে। তালিম নদী হচ্ছে চীনের সবচেয়ে বড় ইনল্যান্ড নদী। সিনচিয়াংয়ের তাখলামাকান মরুভূমি হচ্ছে চীনের সবচেয়ে বড় মরুভূমি। এখন সিনচিয়াংয়ের রাজধানী উরুমুচির সাথে চীনের ৫১টি শহর ও ছয়টি দেশের বিমান যোগাযোগ চালু হয়েছে। ২০১৪ সালের ১৬ নভেম্বর লানচৌ থেকে সিনচিয়াংগামী দ্রুতগতির রেলপথও নির্মিত হয়েছে। এখন সিনচিয়াংয়ে যাওয়া খুব সহজ।
বন্ধুরা, অনুষ্ঠানের শেষে শুনুন 'তালিম নদী' শীর্ষক একটি গান। গেয়েছেন উইগুর জাতির বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী করিম।
প্রিয় বন্ধুরা, আজকের 'সুর ও বাণী' আসরে সিনচিয়াংসম্পর্কিত কয়েকটি গান শুনিয়েছি। আশা করি, ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে সিনচিয়াংয়ে যাবেন, স্বচোখে দেখবেন সেই সুন্দর জায়গা।
ভালো থাকুন বন্ধুরা। আমি বিদায় নিই। আবার কথা হবে। --- ২০১৭/১/৮
(ইয়ু/আলিম)