সুর ও বাণী: তাইওয়ানের সুরকার চেন সিয়াও সিয়া
  2017-01-04 17:26:19  cri


প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আপনারা চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান শুনছেন। আমি আনন্দী বেইজিং থেকে আপনাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আজকের সুর ও বাণী আসরে তাইওয়ানের পপ সংগীতের সুরকার ও গায়িকা চেন সিয়াও সিয়ার সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেবো এবং শোনাব তার কয়েকটি গান।

বন্ধুরা, আপনারা শুনছেন চেন ই শুনের গাওয়া 'এক দশক' শিরোনামের গান। গানটির কথা লিখেছেন লিন সি, সুর করেছেন চেন সিয়াও সিয়া। এ গানটি তাদের প্রতিনিধিত্বকারী গান। ২০১১ সালে লাভ রেডিও ১০৩.৭ এফ এম এর অনুষ্ঠান 'নতুন শতাব্দীর প্রথম দশকের সেরা দশটি চীনা ভাষার প্রেমের গানের' প্রথম নির্বাচিত হয় এ গানটি।

চেন সিয়াও সিয়া

বন্ধুরা, চেন সিয়াও সিয়া ১৯৫৪ সালের ৭ মে তাইওয়ানে জন্মগ্রহণ করেন। তার নাম বর্তমান শ্রোতাদের কাছে অপরিচিত হতে পারে, কিন্তু গত শতকের ৮০'র দশক থেকে আজ পর্যন্ত তাইওয়ান ও হংকংয়ের অনেক নামকরা গায়ক ও গায়িকার গাওয়া বহু জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা চেন সিয়াও সিয়া। যেহেতু চেন সিয়াও সিয়ার গান গেয়ে তাদের নাম-যশ বেড়েছে, তাই কেউ কেউ চেন সিয়াও সিয়ার নামের আগে 'স্বর্ণ সংগীত সৃষ্টিকর্তা' যোগ করেছেন। গণমাধ্যম মনে করে, গেল বিশ-ত্রিশ বছরে তাইওয়ানের পপ সংগীত উন্নয়নে চেন সিয়াও সিয়ার বিশেষ অবদান রয়েছে, তার পুরো সংগীতকর্ম তাইওয়ানের আধুনিক পপ সংগীতের প্রায় অর্ধেকের সমান। এ থেকেই বোঝা যায়, পপ সংগীত মহলে চেন সিয়াও সিয়ার বিশেষ মর্যাদা রয়েছে।

বন্ধুরা, এখন আপনারা শুনছেন তাইওয়ানের গায়িকা চাং শাও হানের গাওয়া 'যে স্থানে দাঁড়িয়ে সবচেয়ে দূরে দেখা যায়' গানটি। এ গানের কথা লিখেছেন ইয়াও রুও লোং (姚若龙), সুর করেছেন চেন সিয়াও সিয়া। এ গানটি চীনের সিনেমা 'নির্ভুল' ও দক্ষিণ কোরিয়ার 'প্রেমের মিথ্যাচার' নামের টেলিভিশন নাটকে ব্যবহৃত হয়েছে।

বন্ধুরা, ১৯৮১ সালে চেন সিয়াও সিয়া পপ সংগীত মহলে প্রবেশ করেন। তারপর হাজারখানেক গান সৃষ্টি করেছেন তিনি। প্রথম দিকে গানের কথা লিখতেন, সুর করতেন তিনি। এরপর ১৯৯১, ১৯৯৩ ও ২০০৫ সালে যথাক্রমে তিনটি নিজস্ব অ্যালবাম তৈরি করেন এই শিল্পী। তার নিজের তিনটি অ্যালবাম শ্রোতাদের কাছে হয়তো খুব বেশি পরিচিত নয়, তবে তাইওয়ানের পপ সংগীতের পেশাদার শিল্পীদের দৃষ্টিতে অ্যালবাম তিনটি অত্যন্ত ভালো মানের।

বন্ধুরা, এবার শুনুন মেং টিং ওয়েইয়ের গাওয়া 'তুমি চাঁদ দেখো' নামের গান। এ গান গেয়ে মেং টিং ওয়েই 'চাঁদের কুমারী' খেতাব পান। ১৯৯১ সালে এ গানের ডিস্ক তাইওয়ানে বিক্রি হয় ৫ লাখেরও বেশি। পুরো এশিয়ায় তার বিক্রি সংখ্যা ৫০ লাখ ছাড়িয়ে যায়। তত্কালীন তাইওয়ানের কণ্ঠশিল্পীদের অ্যালবাম বিক্রির সর্বোচ্চ রেকর্ড লাভ করেন তিনি।

এ অনুষ্ঠানের তথ্যসংগ্রহ করার সময় আমি লক্ষ্য করি যে, চেন সিয়াও সিয়া অনেক জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা এবং পপ সংগীত মহলে যথেষ্ট সম্মানের হলেও জনসাধারণের কাছে তিনি সবসময়ই এক অপরিচিত নারী। তাইওয়ানের স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো খুব কমই তার সাক্ষাতকার নিয়েছে! এমনকি তার সবচেয়ে ভালো অংশীদার ইয়াও রুন লোং গত দশ বারো বছরে তার সঙ্গে মাত্র দু'বার সাক্ষাত্ করেছেন। কারণ চেন সিয়াও সিয়া দূরের পাহাড়ে থাকেন। পরিবারের দেখাশোনা করা ও সংগীত সৃষ্টি করার মধ্যেই তার জীবন সীমাবদ্ধ ছিল। এক বিস্ময়কর চিহ্নের মতো পাহাড়ের কোলে, ডিস্কের কভারে তার নাম দেখা যায়, আর কানে ভেসে আসে তার তৈরি করা সুর!

বন্ধুরা, এবার শুনুন 'বন্ধু' নামের গানটি। চেন সিয়াও সিয়া এ গানের কথা লিখেছেন এবং সুর করেছেন। এরপর তিনি আর গান লিখেননি। কারণ তিনি মনে করেন, তার লেখা গানের কথা এ গানকে ছাড়িয়ে যাবে না।

এ গানে বলা হয়েছে, 'আমি দাঁড় ছাড়া নৌকা চালাতে পারি। আমি বাতাস ছাড়া পালতোলা নৌকা চালাতে পারি। কিন্তু বন্ধু, যখন তুমি দূরে চলে যাও, তখন দুঃখ সহ্য করতে পারি না।'

ইয়াও রুও লোং  চেন সিয়াও সিয়ার সঙ্গে প্রায় দশ বছর সহযোগিতা করেছেন। তারা হচ্ছেন ঘনিষ্ঠ অংশীদার। 'বন্ধু' গানের পর চেন সিয়াও সিয়া আর গান লেখেননি। তিনি ইয়াও রুও লোংয়ের লেখা গানের কথা পড়ে খুব পছন্দ করেন। তিনি নিজেই ইয়াও রুও লোংকে ফোন করেন এবং সহযোগিতার প্রস্তাব দেন। এরপর গান রচনার ক্ষেত্রে তাদের দীর্ঘ দশ বছরের সহযোগিতার সম্পর্ক তৈরি হয়। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো এ দু'জন দশ বছরে কেবল দু'বার দেখা করেছেন। তারা সবসময় টেলিফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করেছেন। চেন সিয়াও সিয়া বলেন, 'আমরা হচ্ছি ফোনের বন্ধু। আমি জানি না, কী ভাষা দিয়ে আমাদের সম্পর্ক বর্ণনা করা যায়। আমাদের পরিচয়ের পর টেলিফোনে অনেক কথা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি হলে ছয় সাত ঘণ্টা ফোনালাপ করা যায়। আমরা টেলিফোনের মাধ্যমে নিজের আবেগ ও অনুভূতি প্রকাশ করেছি। অবশেষে আমাদের আলোচ্য বিষয়গুলো সব গানের কথায় পরিণত হয়েছে।'  

বন্ধুরা, এখন আপনারা শুনছেন চেন সিয়াও সিয়ার সুর ও ইয়াও রুও লোংয়ের লেখা একটি গান। গানের নাম 'পর দিন'। এ গানটি গেয়েছেন গুও চিং। তিনি উষ্ণ ও উজ্জ্বল সুরের মধ্যে পবিত্র প্রেমের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন।

একটি সাক্ষাতকারে সংবাদদাতা চেন সিয়াও সিয়াকে প্রশ্ন করা হয়, আপনি অনেক গান লিখেছেন। অনেকে আপনার গান গেয়ে সুনাম অর্জন করেছেন। কিন্তু আপনার নাম তাদের মতো বিখ্যাত হয়নি। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কি?

তিনি উত্তরে বলেন, আমার লেখা গান গেয়ে গায়ক ও গায়িকারা সুনাম ও জনপ্রিয়তা লাভ করায় আমার উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। আমার আর কী চাই? আমি পর্দার পিছনের কাজ করতে পছন্দ করি এবং এ কাজে আমার পূর্ণ আত্মবিশ্বাস আছে।

বন্ধুরা, এবার শুনুন চৌ হুই'র গাওয়া 'প্রতিশ্রুতি' নামের গানটি। এ গান গেয়ে চৌ হুই অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। তত্কালীন চীনা ভাষায় পপ সংগীতের সবচেয়ে জনপ্রিয় চার গায়িকার একজন হন তিনি। এ গানটিরও সুর করেন চেন সিয়াও সিয়া।

ইন্টারনেটে কেউ কেউ চেন সিয়াও সিয়াকে প্রশ্ন করেছেন, আপনি অনেক গান লিখেছেন। কোন গানে আপনি সবচেয়ে সন্তুষ্ট?

এর উত্তরে তিনি বলেন, আমি মনে করি, কোনো শিল্পী এ প্রশ্নের উত্তর দেবে না। কারণ অনেকেই বলতে চায় না, কোনটাতে সবচেয়ে সন্তুষ্ট। কিন্তু আমি বলি, ইয়াং নাই ওয়েনের গাওয়া 'তোমার সুখের কামনা' নামের গানটি আমার প্রিয়। গানটি লেখার পর কেউ ভাবতে পারেনি, আমি এটি ইয়াং নাই ওয়েনকে দিয়েছি। আমি ভেবেছি, এ গানটি তিনি পছন্দ করবেন। আমি ঠিক ভেবেছিলাম।

বন্ধুরা, তাহলে শুনুন ইয়াং নাই ওয়েনের কণ্ঠে 'তোমার সুখের কামনা' নামের গান।

  চেন সিয়াও সিয়া বলেন, সাধারণত তিনি রাত ১২টার পর গান লিখেন। সে সময় চারপাশে সব নীরব থাকে। তার বাচ্চাসহ এ বিশ্বে কেউ জানেনা, তিনি কিভাবে গান সৃষ্টি করেন। কারণ তিনি মনে করেন, গানের সৃষ্টি একান্তই নিজস্ব ব্যাপার। সে সময় কেউ তাকে বিরক্ত করতে পারে না। যদি সে সময় হঠাত্ কেউ আসে বা টেলিফোনের রিং হয়, তাহলে তার মনোযোগ সরে যায় এবং আবার গান সৃষ্টির অবস্থায় ফিরতে অনেক সময় লাগে। এভাবে রাতের আঁধার শেষে যখন দিনের আলো ফুটে ওঠে, তখন তিনি কাজ বন্ধ করেন।

বন্ধুরা, আজকের সুর ও বাণী আসরে আপনারা শুনলেন তাইওয়ানের গুণী সুরকার ও গীতিকার চেন সিয়াও সিয়ার জীবন ও বেশ কিছু গান।

আমি আনন্দী আজ এখানেই আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আবার কথা হবে।

(ইয়ু/তৌহিদ)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040