0103topic
|
১। মহাকর্ষীয় তরঙ্গ প্রমাণিত
মহাকর্ষীয় তরঙ্গ এই প্রথমবারের মতো সরাসরি শনাক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর ফলে মহাবিশ্বকে এখন নতুন এক চোখে দেখা সম্ভব। দুটো ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বরের মধ্যে সংঘর্ষের মতো সহিংস মহাজাগতিক ঘটনা থেকে এই তরঙ্গের সৃষ্টি হয়ে থাকে।
একশো বছর আগে আলবার্ট আইনস্টাইন এই তরঙ্গের ধারণা দিয়েছিলেন। গণিতের মাধ্যমে এই ধারণা তিনি দিয়েছিলেন তার থিওরি অফ রিলেটিভিটি বা আপেক্ষিকতার তত্ত্বে, ১৯১৫ সালে। কিন্তু এই ধারণার পক্ষে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছিলো না। এখন সেটাই প্রমাণিত হলো। বিজ্ঞানীরা যে তরঙ্গ শনাক্ত করেছেন সেটা তৈরি হয়েছিলো একশো কোটিরও বেশি বছর আগে দুটো কৃষ্ণগহ্বরের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে।
এই দুটো ব্ল্যাক হোলের আকার সূর্যের চেয়ে তিরিশ গুণেরও বেশি বড়ো। সারা বিশ্বে এক হাজারের মতো বিজ্ঞানীর গবেষণা থেকে এই তরঙ্গের অস্তিত্ব ধরা পড়েছে। এই প্রকল্পটির নাম – লিগো কোলাবোরেশন। বিশ্বের কয়েকটি গবেষণাগারে এনিয়ে পরীক্ষা চালানো হয়েছে। এই প্রকল্পের নির্বাহী পরিচালক ডেভিড রিৎজ এক সংবাদ সম্মেলনে এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের কথা ঘোষণা করেছেন।
তিনি বলেন, এর ফলে উত্তেজনাকর এক সম্ভাবনার দরজা উন্মুক্ত হয়েছে।
"এই লিগো প্রকল্প যা করেছে সেটা হলো, স্পেস-টাইমে যে তরঙ্গ প্রবাহিত হচ্ছে সেটাকে একটা ফটো ডিটেক্টরের মধ্যে ধরতে পেরেছে। এখন আপনি চাইলে সেটা শুনতেও পারেন। এই মহাকর্ষীয় তরঙ্গের মাধ্যমে মহাবিশ্ব এই প্রথম আমাদের সাথে কথা বললো। এর আগে আমরা ছিলাম বধির, এই তরঙ্গকে আমরা শুনতে পাইনি, কিন্তু এখন আমরা এটা শুনতে পেলাম।"
২। ইউরোপের শরণার্থী সংকট বাড়ছে। বহু দেশে পপিউলিজম ট্রেন্ড জেগে উঠেছে
বহু শরণার্থীর চাপে ইউরোপে সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশ শরণার্থী নীতি জোরদার করেছে। মে মাসে ইউরোপীয় কমিশন শেনগেন অঞ্চলের দেশসমুহ অস্থায়ী সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ দীর্ঘায়িত করেছে। অক্টোবরে ইউরোপীয় কমিশন আবারো এ ব্যবস্থাকে লম্বা করার প্রস্তাব করেছে। ডিসেম্বরে ইতালিতে সংবিধান নিয়ে গণভোট ব্যর্থ হয়েছে। এতে শেষ পর্যন্ত দেশটির প্রধানমন্ত্রী মাত্তেও রেনজিকে পদত্যাগ করতে হয়। ফরাসি ন্যাশনাল ফ্রন্ট, জার্মান চয়েস পার্টিসহ নানা রাজনৈতিক দলের জনসমর্থন বেড়েছে। এ কারণে জনসাধারণের আবেগ-অনুভূতি বা ভয়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত সরকার বা রাজনীতি ফের প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।
৩। গণভোটের রায়ে ব্রিটেনের ই.ইউ ত্যাগ, ইউরোপের একত্রীকরণের কঠোর চ্যালেঞ্জ সম্মুখীন
জুনে ব্রিটেনের গণভোটের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে, অর্ধেকেরও বেশি নাগরিক ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগের পক্ষে রায় দিয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন পদত্যাগ করেছেন। ব্রিটিশ পালার্মেন্টের নিম্ন পরিষদের গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০১৭ সালের মার্চ মাসের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে ই.ইউ থেকে সরে যেতে হবে ব্রিটেনকে। ইউরোপীয় দেশগুলো অর্থনৈতিক পতন, শরণার্থী সংকট ও সন্ত্রাসী হামলাসহ নানা সমস্যা বেশ কঠিন আকার ধারণ করেছে। জনসাধারণের উদ্বেগ বেড়েছে। এসব কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা জোট আজ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।
৪। দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, উত্তর কোরিয়া ও জাপানের নানা নতুন ব্যবস্থা, উত্তর-পূর্ব এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতি পরিবর্তনশীল
৮ জুলাই দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করে যে, তারা দক্ষিণ কোরিয়ায় 'থাড' ক্ষেপণাস্ত্র-বিরোধী ব্যবস্থা মোতায়ন করবে। এ ঘোষণার আগে ও পরে উত্তর কোরিয়া দু'বার পরমাণু পরীক্ষা করেছে। মার্চ মাস থেকে জাপান যথাক্রমে নতুন নিরাপত্তা আইন জারি করেছে, নতুন 'প্রতিরক্ষা শ্বেতপত্রের' মাধ্যমে জাপানের প্রতিরক্ষা দলকে 'দূরে গিয়ে প্রতিরক্ষা'র অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ থেকে প্রতিপন্ন হয়েছে যে, জাপান তার শান্তিপূর্ণ সংবিধান এবং 'শুধুমাত্র আত্মরক্ষার' নীতি বাতিল করেছে। উত্তর-পূর্ব এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতি সারা বিশ্বের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
৫। চীন দৃঢ়তার সঙ্গে আন্তর্জাতিক আইন রক্ষা করেছে, দক্ষিণ চীন সাগরসংক্রান্ত অবৈধ সালিশ ব্যর্থ
তথাকথিত দক্ষিণ চীন সাগর ইস্যুতে ফিলিপিন্সের একতরফা সালিশের রায় অকার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। চীন শুরু থেকেই এটি অগ্রাহ্য করে আসছে। চীনের ন্যায়সংগত অবস্থান প্রায় ১২০টি দেশ ও ২৪০টিরও বেশি দেশের রাজনৈতিক দলের সমঝোতা ও সমর্থন পেয়েছে। অক্টোবরে ফিলিপিন্সের নতুন প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতের্তে চীন সফরের সময় নতুন মতৈক্য হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যৌথভাপবে দক্ষিণ চীন সাগর সমস্যা সমাধানের জন্য দ্বিপক্ষীয় সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টা চালাবেন।
৬। সন্ত্রাসী হামলার নতুন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, সন্ত্রাস-দমনে নতুন কৌশল দরকার
১৪ জুলাই ফ্রান্সের নিসে সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ৮৪ জন প্রাণ হারিয়েছে। ১৯ ডিসেম্বর তুরস্কে রুশ রাষ্ট্রদূত আততায়ীর গুলিতে নিহত হয়েছেন। ২০১৬ সালে বেলজিয়াম, তুরস্ক ও মিশরসহ বহু দেশে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। ইরাক ও সিরিয়ায় চরমপন্থী শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে। সন্ত্রাসবাদ বৈশ্বিক, স্থানীয় ও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে যাওয়ার নতুন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। চীন প্রস্তাব করেছে যে, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস দমনে জাতিসংঘের সমন্বয়ের ভূমিকা আরও জোরদার করে সন্ত্রাস-দমনের যৌথ প্রচেষ্টা চালানো দরকার। এ প্রস্তাব আন্তর্জাতিক সমাজের ব্যাপক স্বীকৃতি পেয়েছে।
৭। জি-২০ হাংচৌ শীর্ষসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে, বৈশ্বিক পরিচালনায় চীন বুদ্ধি দিয়েছে
জি-২০'র নেতাদের ১১তম শীর্ষ সম্মেলন ৪ থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হাংচৌতে অনুষ্ঠিত হয়। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং যৌথভাবে উদ্ভাবনশীল, উন্মুক্ত, সংযুক্ত ও সহনশীল বিশ্ব অর্থনীতি গড়ে তোলার নতুন প্রস্তাব করেছেন এবং সার্বিকভাবে চীনের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিচালনা তত্ত্ব ব্যাখ্যা করেছেন। হাংচৌ শীর্ষসম্মেলন বৃদ্ধির পদ্ধতি উদ্ভাবন করা, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংস্কার সুসম্পন্ন করা, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করা আর সহনশীলতা ও সংযুক্ত উন্নয়ন অগ্রসর করাসহ নানা ক্ষেত্রে যুগান্তকারী সফলতা অর্জন করেছে।
৮। রেনমিনপি এসডিআর বাস্কেটে অন্তর্ভুক্ত হয়ে বিশ্ব আর্থিক ব্যবস্থায় মিশেছে
১ অক্টোবর রেনমিনপি আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের স্পেশাল ড্রয়িং রাইটস বা এসডিআর বাস্কেটে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। মার্কিন ডলার, ইউরো, জাপানি ইয়েন আর পাউন্ডের পাশাপাশি রেনমিনপিও আন্তর্জাতিক লেনদেনে ব্যবহৃত হওয়ার এ সিদ্ধান্ত বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছে। এসডিআর প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথম উন্নয়নশীল দেশের কোনো মুদ্রা এতে অন্তর্ভুক্ত হলো। রেনমিনপিকে 'মুদ্রা ঝুড়ি'তে অন্তর্ভুক্ত করার বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থায় চীনের গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এ থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের অভ্যন্তরীণ আর্থিক সংস্কার ও বৈশ্বিক আর্থিক সংস্কারে অংশগ্রহণের প্রক্রিয়ার পর্যায়ক্রমে সফলতা অর্জন করেছে।
৯. জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা সংক্রান্ত প্যারিস চুক্তি কার্যকর হয়েছে।
গত ৪ নভেম্বর জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা সংক্রান্ত 'প্যারিস চুক্তি' আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়। বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার বহু-পক্ষীয় ব্যবস্থাপনার নতুন যুগের সুচনা হলো। এ মাসে মারাকেশে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে সংশ্লিষ্ট পক্ষ আবারো প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ণ দৃঢ় প্রতিজ্ঞা প্রকাশ করেছে। প্যারিস চুক্তি কার্যকরে চীনের ইতিবাচক ভূমিকার উচ্চ প্রশংসা করেছে আন্তর্জাতিক সমাজ ।
১০. ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতেও পোপুলিজমের প্রবণতা দেখা দিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হলেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
মার্কিন রিপাবলিকন প্রার্থী ডোনাল্ড ট্র্যাম্প ডেমক্রিটিক প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টন'কে পরাজিত করে ৯ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছে। এবারের নির্বাচন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক পোপুলিজমের প্রবণতা ও জনসাধারণের চিন্তাধারার বিছিন্নতা ফুটে উঠেছে।